নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিহঙ্গ...

তাশমিন নূর

পথ ছাড়া নাই কিছু অনন্ত পথের অন্তর্ধানে।

তাশমিন নূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৌরাণিক ফুলঃ ১ম পর্ব

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৫

সারা পৃথিবী জুড়ে কত বর্ণের, কত গন্ধের, কত মনোলোভা ফুল যে ফোটে তার হিসেব করা কঠিন। অনেক ধর্মেই দেবতার অর্ঘ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফুল। গ্রীক এবং হিন্দু পুরাণে রয়েছে ফুল নিয়ে নানান চমকপ্রদ কাহিনী এবং বিশ্বাস। আজ সেরকম চারটি ফুলের কথাই বলি।



Adonis:

এডোনিস নামের এক শিকারপ্রেমী সুদর্শন যুবার প্রেমে পড়ে যান একবার স্বয়ং প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি। দেবী এডোনিসকে তার জন্মের সময়েই দেখেছিলেন, তবু নিজের প্রেমের বানে তিনি নিজেই বিদ্ধ হন। তিনি সর্বদাই এডোনিসের খেয়াল রাখতেন। আবার পাতালপুরীর দেবী পারসিফোনিও ভালোবাসতেন এই এডোনিসকে। দুই দেবীর কেউ আর দাবী ছাড়েন না প্রেমিকের। শেষে দেবরাজ জিউসের শরনাপন্ন হলেন দুজনেই। জিউস সমাধান দিলেন- বছরের অর্ধেক সময় এডোনিস প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির সাথে কাটাবে এবং বাকী অর্ধেক সময় কাটাবে মৃত্যুপুরীর রানী পার্সিফোনির সাথে। আফ্রোদিতির সাথে যতক্ষণ থাকে আনন্দেই থাকে এডোনিস। সে শিকার ভালোবাসে। দেবী তাকে আনন্দ দিতে নিজেও শিকারে নেমে যান মাঝে মধ্যে। দেবী বেশিরভাগ সময় তার সাথে সাথেই থাকতেন। কিন্তু একদিন দেবীর অনুপস্থিতিতে একটি বন্য শুকরকে তাড়া করছিল এডোনিস। বর্শা ছুঁড়ে মারতেই আহত হল শুকরটি, কিন্তু সেটা প্রান হারাল না। আহত এবং যন্ত্রণাক্লিষ্ট শুকরটি এডোনিস সরে যাবার আগেই তাকে আক্রমন করে বসে। হিংস্র শুকর দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলল তাকে। আফ্রোদিতি তখন আকাশপথে উড়ে যাচ্ছিলেন তাঁর রথে চড়ে। এডোনিসের করুন আর্তনাদ কানে পৌঁছাল তাঁর। দেবী উড়ে এসে নামলেন সেই স্থানে। ততক্ষণে এডোনিস মৃত্যু পথের যাত্রী হল। প্রেমিকের মৃত্যুশোকে হাহাকার করে উঠলেন দেবী। কিন্তু পার্সিফোনির রাজ্য থেকে সেই কান্না শুনতে পেল না এডোনিস। আর জানতেও পারল না, সেখানে সেই রক্তভেজা মাটিতে গজিয়ে উঠেছে একটি অনিন্দ্য সুন্দর ফুল। সিঁদুর রঙা সেই ফুল নাম পেল- এডোনিস। প্রতি বছর প্রাচীন গ্রিসের মেয়েরা এডোনিসের জন্য তিন দিনের শোক উৎসবে মেতে উঠত, আবার গ্রীষ্মে যখন রঙ-বেরঙের এডোনিস ফুটত, তখন তারা আনন্দময় উৎসব করত। এই ফুল এনিমোনি নামেও পরিচিত। অনেক রকমের এনিমোনি আছে পৃথিবীতে, প্রায় ২১-২২ জাতের। কিন্তু মূলতঃ রক্ত রঙা এডোনিসের সাথেই জড়িয়ে আছে সেই করুন কাহিনী। অনেক স্থানে এই ফুল ভাঙন এবং দুর্বলতার প্রতীক।



Hyacinthus:

হায়াসিন্থ ফুলের কাহিনীও একই রকম হৃদয় বিদারক। হায়াসিন্থাস নামে এক যুবকের করুন মৃত্যু কাহিনী জড়িয়ে আছে এই ফুলের সাথে। কথিত আছে যে, হায়াসিন্থাস নামের এক সুদর্শন যুবকের প্রতি আকর্ষণ ছিল সূর্যদেব এপোলো এবং উত্তরীয় বায়ুর দেবতা জেফিরস এর। উভয় দেবতাই সব সময় হায়াসিন্থাসের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করতেন। এপোলোর সাথে হায়াসিন্থাস ডিসকাস(এক ধরনের চাকতি) ছোঁড়াছুঁড়ির খেলা খেলত। একদিন এপোলো তাকে ডিসকাস ছোঁড়ার নিয়ম শেখাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাক্রমে ডিসকাস হায়াসিন্থাসের কপালে গিয়ে লাগে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করে। এক সময় মাটিতে গড়িয়ে পড়ে হায়াসিন্থ। এপোলোর কোলে নেতিয়ে পড়ে যুবক। দেবতা অনেক চেষ্টা করলেন, রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। তিনি নিজেই হায়াসিন্থের হত্যাকারী এই ভেবে এপোলো কাঁদতে লাগলেন এই অকালমৃত সুন্দর তরুনের জন্য।

আর সেই রক্ত মাখা স্থানের ঘাস হঠাত সবুজ হয়ে উঠল। দেবতা দেখলেন, সেখানে জন্ম নিয়েছে গভীর বেগুনি-লাল বর্ণের এক অপরূপ ফুল। তিনি সেই ফুলের নাম দিলেন হায়াসিন্থাস। অন্য আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, বায়ুদেব জেফিরস, এপোলো এবং হায়াসিন্থাসের বন্ধুত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে এপোলোর চাকতিকে ভুল দিকে পরিচালিত করেন, যেটা হায়াসিন্থাসকে আঘাত করে। যাই হোক, আজকের দিনে আমরা যে হায়াসিন্থ দেখি এগুলোর সাথে সেই হায়াসিন্থকে মেলানো যাবে না। সেটা ছিল বেগুনি-লাল বর্ণের লিলি ফুলের আকৃতির ফুল। অনেকে এই ফুলকে সরলতা এবং অকৃত্রিমতার প্রতীক হিসেবে দেখেন।



Nurcissus:

নার্সিসাস নামের এক যুবক ছিল অতুলনীয় রূপের অধিকারী। যে কোন মেয়ে তাকে দেখা মাত্রই তার প্রেমে পড়ে যেত। কিন্তু নার্সিসাসের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ ছিল না। নারীর প্রেম পায়ের নিচে মাড়িয়ে চলে যেত সে। শেষে এক অপমানিতা নারী দেবতাদের কাছে এর বিচার চাইলেন। দেবতারা বললেন, “যে অন্যের প্রেমে পড়ে না, সে যেন শুধু নিজের প্রেমে পড়ে।” ন্যায়পরায়ন প্রতিহিংসার অধিষ্ঠাত্রী দেবী নেমেসিস। তিনি ঐ দেবাজ্ঞা পালনের ভার নিলেন। একদিন এক বনের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল নার্সিসাস। প্রচণ্ড জল তেষ্টায় সে থামল এক ঝিলের কাছাকাছি। পানি পান করতে উপুড় হতেই পানিতে নিজের ছায়া দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল নার্সিসাস। এর আগে নিজেকে কখনোই দেখে নি সে। কারন- নার্সিসাসের মা তাকে বলেছিলেন, সে দীর্ঘজীবী হবে, যদি সে কখনোই নিজের অপরূপ কায়া না দেখে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রেমেই পড়ল নার্সিসাস। কিন্তু জল-দর্পনে বিম্বিত সেই অসহ্য সুন্দরকে আলিঙ্গনের ক্ষমতা ছিল না তার। সেভাবে সেই ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ক্ষয়ে গেল নার্সিসাসের প্রাণ।

আরেকটি কাহিনী মতে, যেহেতু নার্সিসাস কখনোই নিজেকে দেখে নি, তাই জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেকে সে চিনতে পারেনি। সে ঐ প্রতিবিম্বকে জলপরী ভেবে নিল, এবং তার রূপের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকে আলিঙ্গন করতে চাইল। আর তখন ঝিলের জলে ডুবে প্রাণ হারাল নার্সিসাস। সেই স্থানে একটি সুন্দর স্নিগ্ধ কুসুম জন্ম নিল, যেটি পরিচিতি পেল নার্সিসাস নামে। বাংলায় এই ফুলের নামই নার্গিস। আর এটি সবচে বেশি পরিচিত ড্যাফোডিল নামে। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘I Wandered Lonely as a Cloud’ এর আরেকটি শিরোনাম কিন্তু ‘Daffodils’, যেটা ঐ ফুলের কথা স্মরণ করেই লিখেছিলেন তিনি। সারা বিশ্বে অনেক স্থানেই নার্সিসাস ফুল পুনর্জন্ম এবং শুভারম্ভের প্রতীক। আবার অনেক স্থানে এটিকে অহঙ্কার এবং প্রতিহিংসার প্রতীক মনে করা হয়।



Peony:

পিওনিকে বলা হয় ‘আরোগ্যের ফুল’। এই উদ্ভিদ ভেষজ গুণসম্পন্ন। অনেক দেশেই সুখী জীবন এবং সমৃদ্ধির প্রতীক এই ফুল। ধারণা করা হয়, Paeon(পিয়ান) নামের একজন আরোগ্য দেবতার নামানুসারে এই ফুলের নামকরণ করা হয়েছে। গ্রীক মিথোলোজির পুষ্প কিংবদন্তি অনুসারে, পিয়ান ছিলেন অপর আরোগ্য দেবতা এসক্লেপিয়সের শিষ্য। তিনি মৃত্যু এবং মৃত্যুপুরীর রাজা হেইডিস এবং যুদ্ধ দেবতা এরেস এর আঘাত সারিয়ে তুলেছিলেন। এপোলোর মাতা, জন্মদেবী লেটো একবার তাকে একটি জাদুকরী শেকড়ের সন্ধান দিলেন, যা মাউন্ট অলিম্পাসে জন্মায়। ঐ জাদুকরী শেকড় মেয়েদের প্রসবকালীন ব্যথা উপশমে কার্যকরী। বিষয়টি জানতে পেরে গুরু এসক্লেপিয়স ক্রুদ্ধ হলেন এবং নিজ শিষ্যকে হত্যার হুমকি দিলেন। নিরীহ পিয়ানকে দেবরাজ জিউস একটি ফুলে রূপান্তরিত করে এসক্লেপিয়সের ক্রোধের আগুন থেকে রক্ষা করলেন। যাই হোক, প্রাচীনকালে গ্রীক নারীরা সত্যিই এই ফুল প্রসব বেদনা উপশমে ব্যবহার করতেন। পৃথিবীতে পিওনি আছে অনেক জাতের। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০-৪১ প্রকার পিওনির নাম উদ্ভিদবিজ্ঞানে লিপিবদ্ধ করেছেন।





প্রথম কিস্তি এখানেই শেষ করা হইল।

( তথ্য এবং ছবি সংগ্রহঃ গুগল ভাইয়া )

সারা পৃথিবী জুড়ে কত বর্ণের, কত গন্ধের, কত মনোলোভা ফুল যে ফোটে তার হিসেব করা কঠিন। অনেক ধর্মেই দেবতার অর্ঘ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফুল। গ্রীক এবং হিন্দু পুরাণে রয়েছে ফুল নিয়ে নানান চমকপ্রদ কাহিনী এবং বিশ্বাস। আজ সেরকম চারটি ফুলের কথাই বলি।



Adonis:

এডোনিস নামের এক শিকারপ্রেমী সুদর্শন যুবার প্রেমে পড়ে যান একবার স্বয়ং প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি। দেবী এডোনিসকে তার জন্মের সময়েই দেখেছিলেন, তবু নিজের প্রেমের বানে তিনি নিজেই বিদ্ধ হন। তিনি সর্বদাই এডোনিসের খেয়াল রাখতেন। আবার পাতালপুরীর দেবী পারসিফোনিও ভালোবাসতেন এই এডোনিসকে। দুই দেবীর কেউ আর দাবী ছাড়েন না প্রেমিকের। শেষে দেবরাজ জিউসের শরনাপন্ন হলেন দুজনেই। জিউস সমাধান দিলেন- বছরের অর্ধেক সময় এডোনিস প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির সাথে কাটাবে এবং বাকী অর্ধেক সময় কাটাবে মৃত্যুপুরীর রানী পার্সিফোনির সাথে। আফ্রোদিতির সাথে যতক্ষণ থাকে আনন্দেই থাকে এডোনিস। সে শিকার ভালোবাসে। দেবী তাকে আনন্দ দিতে নিজেও শিকারে নেমে যান মাঝে মধ্যে। দেবী বেশিরভাগ সময় তার সাথে সাথেই থাকতেন। কিন্তু একদিন দেবীর অনুপস্থিতিতে একটি বন্য শুকরকে তাড়া করছিল এডোনিস। বর্শা ছুঁড়ে মারতেই আহত হল শুকরটি, কিন্তু সেটা প্রান হারাল না। আহত এবং যন্ত্রণাক্লিষ্ট শুকরটি এডোনিস সরে যাবার আগেই তাকে আক্রমন করে বসে। হিংস্র শুকর দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলল তাকে। আফ্রোদিতি তখন আকাশপথে উড়ে যাচ্ছিলেন তাঁর রথে চড়ে। এডোনিসের করুন আর্তনাদ কানে পৌঁছাল তাঁর। দেবী উড়ে এসে নামলেন সেই স্থানে। ততক্ষণে এডোনিস মৃত্যু পথের যাত্রী হল। প্রেমিকের মৃত্যুশোকে হাহাকার করে উঠলেন দেবী। কিন্তু পার্সিফোনির রাজ্য থেকে সেই কান্না শুনতে পেল না এডোনিস। আর জানতেও পারল না, সেখানে সেই রক্তভেজা মাটিতে গজিয়ে উঠেছে একটি অনিন্দ্য সুন্দর ফুল। সিঁদুর রঙা সেই ফুল নাম পেল- এডোনিস। প্রতি বছর প্রাচীন গ্রিসের মেয়েরা এডোনিসের জন্য তিন দিনের শোক উৎসবে মেতে উঠত, আবার গ্রীষ্মে যখন রঙ-বেরঙের এডোনিস ফুটত, তখন তারা আনন্দময় উৎসব করত। এই ফুল এনিমোনি নামেও পরিচিত। অনেক রকমের এনিমোনি আছে পৃথিবীতে, প্রায় ২১-২২ জাতের। কিন্তু মূলতঃ রক্ত রঙা এডোনিসের সাথেই জড়িয়ে আছে সেই করুন কাহিনী। অনেক স্থানে এই ফুল ভাঙন এবং দুর্বলতার প্রতীক।



Hyacinthus:

হায়াসিন্থ ফুলের কাহিনীও একই রকম হৃদয় বিদারক। হায়াসিন্থাস নামে এক যুবকের করুন মৃত্যু কাহিনী জড়িয়ে আছে এই ফুলের সাথে। কথিত আছে যে, হায়াসিন্থাস নামের এক সুদর্শন যুবকের প্রতি আকর্ষণ ছিল সূর্যদেব এপোলো এবং উত্তরীয় বায়ুর দেবতা জেফিরস এর। উভয় দেবতাই সব সময় হায়াসিন্থাসের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করতেন। এপোলোর সাথে হায়াসিন্থাস ডিসকাস(এক ধরনের চাকতি) ছোঁড়াছুঁড়ির খেলা খেলত। একদিন এপোলো তাকে ডিসকাস ছোঁড়ার নিয়ম শেখাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাক্রমে ডিসকাস হায়াসিন্থাসের কপালে গিয়ে লাগে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করে। এক সময় মাটিতে গড়িয়ে পড়ে হায়াসিন্থ। এপোলোর কোলে নেতিয়ে পড়ে যুবক। দেবতা অনেক চেষ্টা করলেন, রক্ত পড়া বন্ধ করতে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। তিনি নিজেই হায়াসিন্থের হত্যাকারী এই ভেবে এপোলো কাঁদতে লাগলেন এই অকালমৃত সুন্দর তরুনের জন্য।

আর সেই রক্ত মাখা স্থানের ঘাস হঠাত সবুজ হয়ে উঠল। দেবতা দেখলেন, সেখানে জন্ম নিয়েছে গভীর বেগুনি-লাল বর্ণের এক অপরূপ ফুল। তিনি সেই ফুলের নাম দিলেন হায়াসিন্থাস। অন্য আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, বায়ুদেব জেফিরস, এপোলো এবং হায়াসিন্থাসের বন্ধুত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে এপোলোর চাকতিকে ভুল দিকে পরিচালিত করেন, যেটা হায়াসিন্থাসকে আঘাত করে। যাই হোক, আজকের দিনে আমরা যে হায়াসিন্থ দেখি এগুলোর সাথে সেই হায়াসিন্থকে মেলানো যাবে না। সেটা ছিল বেগুনি-লাল বর্ণের লিলি ফুলের আকৃতির ফুল। অনেকে এই ফুলকে সরলতা এবং অকৃত্রিমতার প্রতীক হিসেবে দেখেন।



Nurcissus:

নার্সিসাস নামের এক যুবক ছিল অতুলনীয় রূপের অধিকারী। যে কোন মেয়ে তাকে দেখা মাত্রই তার প্রেমে পড়ে যেত। কিন্তু নার্সিসাসের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ ছিল না। নারীর প্রেম পায়ের নিচে মাড়িয়ে চলে যেত সে। শেষে এক অপমানিতা নারী দেবতাদের কাছে এর বিচার চাইলেন। দেবতারা বললেন, “যে অন্যের প্রেমে পড়ে না, সে যেন শুধু নিজের প্রেমে পড়ে।” ন্যায়পরায়ন প্রতিহিংসার অধিষ্ঠাত্রী দেবী নেমেসিস। তিনি ঐ দেবাজ্ঞা পালনের ভার নিলেন। একদিন এক বনের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিল নার্সিসাস। প্রচণ্ড জল তেষ্টায় সে থামল এক ঝিলের কাছাকাছি। পানি পান করতে উপুড় হতেই পানিতে নিজের ছায়া দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল নার্সিসাস। এর আগে নিজেকে কখনোই দেখে নি সে। কারন- নার্সিসাসের মা তাকে বলেছিলেন, সে দীর্ঘজীবী হবে, যদি সে কখনোই নিজের অপরূপ কায়া না দেখে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নিজের প্রেমেই পড়ল নার্সিসাস। কিন্তু জল-দর্পনে বিম্বিত সেই অসহ্য সুন্দরকে আলিঙ্গনের ক্ষমতা ছিল না তার। সেভাবে সেই ছবির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ক্ষয়ে গেল নার্সিসাসের প্রাণ।

আরেকটি কাহিনী মতে, যেহেতু নার্সিসাস কখনোই নিজেকে দেখে নি, তাই জলে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেকে সে চিনতে পারেনি। সে ঐ প্রতিবিম্বকে জলপরী ভেবে নিল, এবং তার রূপের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তাকে আলিঙ্গন করতে চাইল। আর তখন ঝিলের জলে ডুবে প্রাণ হারাল নার্সিসাস। সেই স্থানে একটি সুন্দর স্নিগ্ধ কুসুম জন্ম নিল, যেটি পরিচিতি পেল নার্সিসাস নামে। বাংলায় এই ফুলের নামই নার্গিস। আর এটি সবচে বেশি পরিচিত ড্যাফোডিল নামে। ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘I Wandered Lonely as a Cloud’ এর আরেকটি শিরোনাম কিন্তু ‘Daffodils’, যেটা ঐ ফুলের কথা স্মরণ করেই লিখেছিলেন তিনি। সারা বিশ্বে অনেক স্থানেই নার্সিসাস ফুল পুনর্জন্ম এবং শুভারম্ভের প্রতীক। আবার অনেক স্থানে এটিকে অহঙ্কার এবং প্রতিহিংসার প্রতীক মনে করা হয়।



Peony:

পিওনিকে বলা হয় ‘আরোগ্যের ফুল’। এই উদ্ভিদ ভেষজ গুণসম্পন্ন। অনেক দেশেই সুখী জীবন এবং সমৃদ্ধির প্রতীক এই ফুল। ধারণা করা হয়, Paeon(পিয়ান) নামের একজন আরোগ্য দেবতার নামানুসারে এই ফুলের নামকরণ করা হয়েছে। গ্রীক মিথোলোজির পুষ্প কিংবদন্তি অনুসারে, পিয়ান ছিলেন অপর আরোগ্য দেবতা এসক্লেপিয়সের শিষ্য। তিনি মৃত্যু এবং মৃত্যুপুরীর রাজা হেইডিস এবং যুদ্ধ দেবতা এরেস এর আঘাত সারিয়ে তুলেছিলেন। এপোলোর মাতা, জন্মদেবী লেটো একবার তাকে একটি জাদুকরী শেকড়ের সন্ধান দিলেন, যা মাউন্ট অলিম্পাসে জন্মায়। ঐ জাদুকরী শেকড় মেয়েদের প্রসবকালীন ব্যথা উপশমে কার্যকরী। বিষয়টি জানতে পেরে গুরু এসক্লেপিয়স ক্রুদ্ধ হলেন এবং নিজ শিষ্যকে হত্যার হুমকি দিলেন। নিরীহ পিয়ানকে দেবরাজ জিউস একটি ফুলে রূপান্তরিত করে এসক্লেপিয়সের ক্রোধের আগুন থেকে রক্ষা করলেন। যাই হোক, প্রাচীনকালে গ্রীক নারীরা সত্যিই এই ফুল প্রসব বেদনা উপশমে ব্যবহার করতেন। পৃথিবীতে পিওনি আছে অনেক জাতের। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০-৪১ প্রকার পিওনির নাম উদ্ভিদবিজ্ঞানে লিপিবদ্ধ করেছেন।





প্রথম কিস্তি এখানেই শেষ করা হইল।

( তথ্য এবং ছবি সংগ্রহঃ গুগল ভাইয়া )



২য় পর্ব- Click This Link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০৫

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: +++++++

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১১

তাশমিন নূর বলেছেন: :) মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আরেক কিস্তি লেখার প্ল্যান আছে।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৫

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: চমৎকার একটি পোস্ট +++++++

পরের পর্বের অপেক্ষায় ।

শুভকামনা :)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৭

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, অপূর্ণ রায়হান ভাই। পরের পর্ব লেখা হবে। সাথেই থাকুন।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭

অপু তানভীর বলেছেন: চমৎকার!!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১০

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, অপু তানভীর ভাই।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ঘটনাগুলো বড়ই অদ্ভুদ । সুন্দর পোষ্ট ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৪৫

তাশমিন নূর বলেছেন: এপ্রিশিয়েট করার জন্য ধন্যবাদ। অদ্ভুতই বটে।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: চমৎকার। দারুণ সাবলীল বর্ণনা।

পিওনি ফুলের ব্যাপারটা একদমই জানা ছিলো না :(

হায়াসিন্থ ফুল বলতে তো কচুরীপানা ফুল ভাবতাম এতদিন :)

লিখতে থাকুন :)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৪

তাশমিন নূর বলেছেন: কচুরিপানাও হায়াসিন্থাস প্রজাতির একটি। তবে গ্রীক মিথে যে হায়াসিন্থ এর বর্ণনা আছে সেটার সাথে এটার সম্পর্ক নেই।

অবশ্যই লিখব। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.