নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিহঙ্গ...

তাশমিন নূর

পথ ছাড়া নাই কিছু অনন্ত পথের অন্তর্ধানে।

তাশমিন নূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যক্তিগত কাসুন্দি: হাউ টু মেইক এ কল

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:০৯


আমাদের ঘরে প্রথম যখন মোবাইল ফোন আসে তখন মনে হয় মিনিট প্রতি ১০ টাকা কি ৮ টাকা করে কাটত। গ্রামে ঘরে ঘরে তখন মোবাইল ফোনের কথা চিন্তাও করা যায় না। মোবাইল ফোন শব্দটার অর্থ দাঁড়াতে পারত চলমান ফোন। কিন্তু কবি নির্মলেন্দু গুণ সেটার অর্থ করলেন মুঠোফোন। মুঠোর মধ্যে এঁটে যায় বলেই হয়তো মুঠোফোন। কিন্তু তখনকার মুঠোফোনগুলোকে কতটুকু মুঠোফোন বলা যাবে সেই ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ থাকে। যাদের সেগুলোর সাইজ মনে আছে তারা নিশ্চয়ই আমার সন্দেহের হেতু বুঝতে পেরে গেছেন। আর গ্রামে তখন মুঠোফোনকে মুঠোফোন বলা গেলেও মোবাইল ফোন কিছুতেই বলা যায় না এমন অবস্থা। কীভাবে বলব? ওগুলো নিয়ে তো হাঁটা-চলাও করা যায় না। একটা লম্বা বাঁশের আগায় একটা এন্টেনা থাকত। সেই এন্টেনার তারের সাথে ফোনটাকে জুড়ে দেওয়া হত, টেলিভিশনের মতো। তবেই পাওয়া যেত নেটওয়ার্ক। বলা বাহুল্য, ফোনটাকে নির্দিষ্ট এক জায়গায় সাজিয়ে রাখতাম আমরা। কারো কথা বলার প্রয়োজন তো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বল। ‘প্রাইভেসি’ নামক শব্দ তখন কারো মুখে তেমন মানায় না।

আমাদের প্রথম মোবাইল নাম্বার ছিল- ০১৭১-১৭৫০৪০। তখন ১০ ডিজিটের নাম্বারের যুগ। আমাদের ফোন নাম্বার সারা গ্রামের মানুষের মুখস্থ। অল্প কিছুদিনেই নাম্বার সম্ভবত সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ল। মানুষের যন্ত্রণায় আমাদের জীবন অতিষ্ঠ। কিছুক্ষণ পর একজন এসে দাঁড়িয়ে থাকে- ‘নূর নবী ভাই, একটা কল আসবে’। ‘নূর নবী চাচা, একটু কষ্ট দিমু, পাঁচটা মিস কল দিলেই কল করবে’, ‘নূর নবী মামা, দেন না...’। আমার আব্বুই হর্তাকর্তা। সবাই এসে অনুরোধ করে, আর আব্বু সোনামুখ করে অনুরোধ রক্ষা করেন। আমাদের কারো কাছে অনুরোধ করে লাভ নাই। আমরা ফোন ব্যবহার করতে জানি না। দুই বছর ধরে আমাদের বাসায় মোবাইল ফোন, কিন্তু আমি ব্যবহার জানি না। কল-মিসকল-এসএমএস কিছুই জানি না। ফোন আমি ধরতামও না। ফোন ধরাটাকে অতি গর্হিত কাজ মনে করতাম। এতো ছোট মেয়ের মোবাইল ফোন নিয়ে ছানাছানির কী দরকার! ওটা প্রয়োজনীয় বস্তু। আমাদের মতো বার-তের বছরের মেয়ের আবার এতো প্রয়োজন কী!

একদিন প্রয়োজন হয়ে পড়ল। মা-বাবা তখন চট্টগ্রামে। আব্বুর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে প্রথমবারের মতো। কার্ডিওলজিস্ট দেখাতে গেছেন তিনি। আম্মাকেও নিয়ে গেছেন সঙ্গে করে, ছোট ভাইকেও। ঘরে আছি আমি, দাদু, আমার ছোটবোন আর আমাদের পরিচারিকা। যাওয়ার সময় আব্বু ফোনে টাকা রিচার্জ করে গেছেন আর বলে গেছেন কোন দরকার হলে যেন চট্টগ্রামে সেই আত্মীয়ের বাসায় ফোন করি। কিন্তু কীভাবে ফোন করতে হবে বা কল-মিসকল চেক করতে হবে এগুলো শিখিয়ে দিয়ে যেতে ভুলে গেছেন। যেদিন দরকার হল, সেদিন আমার জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। পুরো থানায় পঞ্চম হয়েছি। খুশিতে গদগদ হয়ে নাচতে ইচ্ছে করছিল। এরকম একটা খুশির খবর প্রথমেই মা-বাবাকে জানাতে হয়। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই হাউকাউ শুরু করে দিলাম। আম্মু-আব্বুকে জানাতে হবে, জানাতে হবে। সবাই অবাক- কী জানাতে হবে! কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলি না। সবাই ভাবল খুব গুরুতর কোন ব্যাপার। আমি ফোন ধরে নাড়াচাড়া করি। ফোন তো করতে জানি না। উলটাপালটা টেপাটেপি করতে গিয়ে যদি ফোন নষ্ট করে ফেলি তখন তো আব্বু এসে উল্টো প্যাদানি দিবে। আমার হাসিমুখে তখন টেনশন আর টেনশন। আমার হাউকাউ শুনে পুরো বাড়ির মানুষ আমাদের ঘরে উপস্থিত। সবাই পেছন থেকে বলছে- কী হল, ফোন কর। ফোন কর তর বাপকে। আমার লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাবার মতন অবস্থা। কিছুক্ষণ হাউকাউ শুনে আমার মাথাটাই গরম হয়ে গেল। আমি চিৎকার করে বললাম- চুপ কর সবাই। আমি জানি না ফোন কেম্নে করে। সবাই চুপ হয়ে গেল। এতো আশ্চর্য যেন কেউ আর কখনও হয় নি। যে মেয়ের বাসায় এতদিন ধরে ফোন, সে নাকি ফোন করতে জানে না। কেউ কেউ মুখ টিপে হাসতে শুরু করে দিয়েছে। আমি লজ্জার মাথা খেয়ে বললাম- ‘কোন নাম্বারে করতে হবে সেটা আমি জানি। কেউ পারলে কল কর’। কিন্তু হাস্যকর হলেও সত্য কথা, আমার পেছনে এক ঘর মানুষ কেউই কল করতে জানে না। কেউ ফোন হাতে নিতেও রাজী না। যদি নষ্ট করে ফেলে!

পরে জানা গেল সুমন ভাইয়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে জানেন। সুমন ভাইয়াকে খোঁজাখুঁজি শুরু হল। সুমন ভাইয়াকে খুঁজে পাওয়া গেল আধা ঘন্টা পর। ভাইয়া ঘরে ঢুকেই আমাকে নিয়ে কিছুক্ষণ হাসলেন। আমি মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভাইয়া বললেন-
-আমি ফোন করব না। তুই-ই কর।
-কিন্তু আমি তো জানি না।
-আমি বলতেছি, তুই কর। প্রথমে এই সংখ্যাগুলো স্ক্রীনে তুলতে হবে।
আমি ভীত হয়ে বললাম,
-কীভাবে তুলব?
ভাইয়া আরও এক চোট হাসলেন। বললেন,
-আরে বোকা মেয়ে, আই যে বাটনগুলো আছে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত এগুলো টিপে নাম্বার তুলতে হবে।
আমি স্ক্রীনে নাম্বার তুললাম। ভাইয়ার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে বললাম,
-এবার কী করব?
-এহ! নাম্বার তুলেই এত খুশি। দে, এবার সবুজ বাটনে চাপ দে। টুঁ টুঁ করে শব্দ হলে বুঝবি ওখানে রিং হচ্ছে।
আমি ফোন কানে চেপে ধরে রাখি, এই তো টুঁ টুঁ শব্দ হচ্ছে...
ফোন রিসিভ করলেন আমার মামা। বললাম-
-মামা, আব্বুকে একটু দেন তো।
-তোর আব্বু একটু দূরে আছে। আমাকে বল।
-না, আব্বুকেই বলব।
-কী, কোন সমস্যা?
-হুম।
মামা তাড়াতাড়ি করে আব্বুকে ডেকে দিলেন। আব্বুর গলায় ভয়।
-কীরে, মা?
-একটা খবর আছে।
আমার উত্তেজনায় গলা কাঁপছিল। প্রচণ্ড আনন্দের সংবাদ আব্বুকে জানাতে যাচ্ছি। আমি বললাম-
-আমি ট্যা ট্যা...
-কী ট্যা ট্যা করতেছিস?
-আমি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাইছি, আব্বু। সবার মধ্যে পঞ্চম হইছি।
এত সুন্দর আনন্দের খবর, কিন্তু আমার পিঠে তখন সমানে কিল-ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে সমবয়সীরা। :P :)

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:২৭

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: হা হা হা, দারুণ লিখেছেন... ++++

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৪

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৪১

হাসান মাহবুব বলেছেন: মজা পাইলাম পৈড়া। B-))

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৫

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই।

৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯

আমি সৈকত বলছি বলেছেন: আমিও আগে এক চোট হাইসা লই :) :)

খুব সুন্দর করে সাজিয়ে লিখেছেন দারুন লাগলো।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৬

তাশমিন নূর বলেছেন: :) ধন্যবাদ।

৪| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৩২

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: অভিনন্দন অসাধারণ রিজাল্টের জন্য। ;)
সময়ে গরমিল হয়ে গেছে যদিও তারপরও কৃতিত্ব বাহবার দাবি রাখে সবসময়। :)



বেশ মজা লাগল।
ইয়ে মানে নূর নবী চাচা'র মেয়ে, তিনটা মিসড কল দিতাম। সাথে সাথেই কল ব্যাক করবে। সত্য।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৬

তাশমিন নূর বলেছেন: হিহিহি।

৫| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভাল্লাগছে। ++

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:১৭

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, শতদ্রু।

৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:২৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহাহা খুব মজা পেলাম নূর :)

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৭

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:২৫

প্রেতরাজ বলেছেন: হা হা হা হা।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৭

তাশমিন নূর বলেছেন: :) :) :)

৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:২২

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: হা হা হা! লেখার স্টাইলটা কিন্তু দারুন!!!

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৮

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, বীথি। ভালো থাকবেন।

৯| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:১০

দীপংকর চন্দ বলেছেন: হা হা হা হা

অনেক ভালো লাগা।

অনিঃশেষ শুভকামনা।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:১৭

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, দীপ দাদা। ভালো থাকবেন সবসময়।

১০| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: তখন মোবাইলে হাত না চালাতে না পারলেও এখন কি-বোর্ডে হাত চালাতে পারেন চমৎকার।

১১| ২৫ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, রিফাত। এখন আগের সেই ছোট্টটি নেই আর। তাই হয়তো মোবাইল- কী বোর্ড সবকিছুতেই হাত চলে এখন। :-)

১২| ২৭ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

রোহান খান বলেছেন: অনেক মজা লাগলো, সাথে মনে পরে গেলো আমার জীবনের প্রথম মোবাইল সেবা টেলিকমের ফিলিপস ডিগা, যদিও আব্বুর ছিলো কিন্তু বাসায় থাকার কারনে সারাদিন আমার সাথেই থাকতো। তারপর ২০০১ এর দিকে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড সিমেন্স সি-৩৫ কিনেছিলাম ৩০০০ টাকা দিয়ে, পরে সিম কিনার টাকা না পেয়ে রিং টোন বাজিয়ে কথা বলার ভাব দেখাতাম গালস স্কুলের সামনে গিয়ে। হাহাহহাহা। মনে পরলে এখনো হাসি পায়। আর আজ, থাক সেসব কথা। ভালো লাগলো ... আপনার লেখা পরে আমি চলে গেছিলাম আমার পরিবারের মধ্যে, মা-বাবা, ভাই বোন, আমার ছোট বেলা, সব।

২৭ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৭

তাশমিন নূর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, রোহান। আসলেই তখন ব্যাপারগুলো এরকম ছিল। একটা মোবাইল থাকা মানে তখন অনেক কিছু।

১৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:০৩

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: অনেক সুন্দর প্রকাশ। চালিয়ে যান।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪

তাশমিন নূর বলেছেন: ধন্যবাদ, সুমন। চেষ্টা থাকবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.