নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কমবুঝি কিন্ত কিছু একটা নিয়ে বোঝার চেস্টা করি তাই যত পারি বই পড়ি ।

ঠ্যঠা মফিজ

ঠ্যঠা মফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরান আর ইরাকের যুদ্ধের সে ইতিহাস (২য় পর্ব )

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৪



ইরান আর ইরাকের যুদ্ধের সে ইতিহাস (১ম পর্ব )
ইরাকের স্থলবাহিনীর ৬ টি ডিভিশন প্রাথমিক আক্রমণে অংশ নেন । এর মাঝেই চারটি ডিভিশন ইরানের দক্ষিণ পশ্চিমের প্রদেশ খুজেস্তান আক্রমণ করেন । পরিকল্পনা মতে আরভান্দ নদীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার কথা ভাবা হয় । এটি করতে পারলে খুজেস্তানের অনেকাংশ ইরান থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে করে ইরাকীদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব । ইরানের পাল্টা হামলা প্রতিহত করতে অপর দুইটি ইরাকি ডিভিশন যথাক্রমে উত্তরাঞ্চলীয় এবং মধ্যাঞ্চলীয় ফ্রন্টে ইরানের অভ্যন্তরে সাঁড়াশি আক্রমণের সূচনা করেন । খুজেস্তান আক্রমণকারী চারটি ডিভিশনের মাঝে একটি আর্মার্ড এবং একটি মেকানাইজড ডিভিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সর্বদক্ষিণ প্রান্তে কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ ইরানী বন্দর আবাদান এবং খোররামশাহর দখল করে নেওয়ার ।

ইরাকের অন্য দুইটি ডিভিশন মধ্যবর্তী ফ্রন্টে আক্রমণ পরিচালনা করেন । এই ফ্রন্টে ইরাকী বাহিনী ইরানের ইলাম প্রদেশের মেহরান শহরের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহন করেন ও জাগ্রোস পর্বতমালার পাদদেশ বরাবর অগ্রসর হলেন । তেহরান থেকে বাগদাদ অভিমুখী অভিযান বন্ধকল্পে এই দুই শহরের সংযোগকারী সর্বপ্রধান রুট বরাবর কাসর এ শিরিন এবং এর অগ্রভাগের ইরানী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন ইরাকী সেনারা । উত্তরাঞ্চলীয় ফ্রন্টে ইরাকী বাহিনীর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ইরাকের অভ্যন্তরে কিরকুক তৈলক্ষেত্রকে ইরানী লক্ষ্যবস্তু থেকে রক্ষা করতে সুলেমানিয়ে বরাবর শক্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা । ইরাক আশা করছিল খুজেস্তান প্রদেশের ইরানের সংখ্যালঘু আরবরা তেহরানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন ও ইরাকী দখলদারিত্বকে স্বাগত জানান । কিন্তু শিয়া মতাবলম্বী ইরানী আরবরা পুরোপুরিভাবে ইরানের প্রতি তাদের আনুগত্য ঘোষণা করলে ইরাক সর্বপ্রথম কৌশলগত ভাবে তাদের পরাজয় হয় । ব্রিটিশ সাংবাদিক প্যাট্রিক বোগানের মতে ইরাকের অতর্কিত এই আক্রমণে সুস্পষ্টভাবেই দূরদৃষ্টিপূর্ণ মনোভাবের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল ।

ইরাকের অতর্কিত আক্রমণ ইরানের জন্য ছিল বিস্ময়কর । ফলে বিভিন্ন স্থানে ইরানের নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী পাসদারান প্রতিরোধযুদ্ধের সূচনা করে । তবে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া এই প্রতিরোধের মাঝে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় না থাকায় ইরাকী বাহিনীকে শুরুতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি । আধা সামরিক বাহিনী পাসদারান সদস্যরা খুব একটা প্রশিক্ষিত না হলেও নিবেদিত এবং উদ্দীপ্ত হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন । আক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে ইরান বিমানবাহিনীর এফ ৪ ফ্যান্টম বিমান ইরাকী লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা আঘাত হানে । অল্প কয়েকদিনের মাঝেই আকাশ যুদ্ধে ইরানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে । সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে ইরান নৌবাহিনী বসরা অভিমুখে অভিযান পরিচালনার পথে ইরাকের পারস্য উপসাগরীয় বন্দর ফাও এর নিকটে দুইটি তেল টার্মিনাল ধ্বংস করলে ইরাকের তেল রপ্তানী ক্ষমতা বিপুলভাবে হ্রাস পেতে থাকে ।

ইরান বিমানবাহিনী তাছাড়াও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইরাকের তেল স্থাপনা ও বাঁধ পেট্রোকেমিকেল প্ল্যান্ট এবং বাগদাদের কাছে একটি পারমাণবিক চুল্লীতে আক্রমণ পরিচালনা শুরু করেন । ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে দুই দেশকে নিরস্ত হওয়ার আহবান জানান । অনেক বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছিলেন ইরাকি আগ্রাসনে ইরানের অভ্যন্তর থেকে সমর্থন নাজুক তেহরান সরকারের পতন ত্বরান্বিত করবে । কিন্তু বাস্তবে সেসব আশংকা অমূলক প্রমাণিত হয় । নভেম্বরের মাঝে ইরান ২ লক্ষ্য নতুন যোদ্ধার সমাবেশ ঘটাতে সক্ষম হয় ।তাদের মাঝে বেশিরভাগই ছিলেন আদর্শগতভাবে নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবক। অক্টোবর মাসে খোররামশাহর শহরের রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় রক্তক্ষয়ী নগর যুদ্ধের ।আর তাতে উভয় পক্ষের প্রায় ৭ হাজার করে যোদ্ধা নিহত হলেন । বিপুল রক্তক্ষয়ের কারণে সেসময় খোররামশাহর উভয়পক্ষের কাছেই খুনিস্তান রক্তের শহর নামে পরিচিত ছিল । অক্টোবরের ২৪ তারিখে অবশেষে শহরটি ইরাকের পদানত হয় । নভেম্বর মাসে সাদ্দামের নির্দেশে পরিচালিত দেজফুল এবং আহভাজ অভিমুখে ইরাকী অভিযান শক্ত ইরানি বাধার মুখে পড়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিসেম্বরের ৭ তারিখ সাদ্দাম কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন ।

পরবর্তী ৮ মাসের মাঝে উল্লেখ করার মত সবচেয়ে তীব্র যুদ্ধটি ছিল দেজফুলের যুদ্ধ ।এর বাইরে ১৯৭৯ সাল থেক ৮০ সালের বিপ্লবের সময় অবিন্যস্ত হয়ে পড়া ইরান সামরিক বাহিনী পুনঃসংঘটিত করতে ইরানও এই দীর্ঘ আট মাস রক্ষণাত্মক নীতি গ্রহন করেন । ইরাক সেই সময়ের মাঝে ২১ টি যুদ্ধ ডিভিশনের সমাবেশ ঘটান । অন্যদিকে ইরান সব মিলিয়ে ১৩ টি ডিভিশন এবং ১ টি ব্রিগেড প্রস্তুত করতে সক্ষম হন । যদিও তারমাঝে কেবল ৭ টি ডিভিশনকে সীমান্ত ফ্রন্টে যুদ্ধের জন্য পাঠানো সম্ভবপর হয় ।

১৯৮১ সাম্যাবস্থার ঘটনা
১৯৮১ সালের ৫ই জানুয়ারি ইরান ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে সুসানজার্দ এর আক্রমণ চালিয়ে ইরাকি নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ফেলতে সমর্থ হয় । অগ্রগামী ইরানি ট্যাংক বহর ইরাকি প্রতিরোধ বেষ্টনী ভেঙে অনেক ভেতরে অগ্রসর হয়ে পড়লে পেছনের অন্যান্য ইরানি ডিভিশন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । ইরাকি ট্যাংকের বহর এমতাবস্থায় চারপাশ থেকে অগ্রগামী বিচ্ছিন্ন ইরানি ট্যাংক বহরকে ঘেরাও করে ফেলে । ইতিহাসের অন্যতম বড় এই ট্যাংক যুদ্ধে প্রথমে একক প্রাধান্য বিস্তার করেও কৌশলগতভাবে ভুল করায় ইরানি ট্যাংক ডিভিশনটি প্রায় পুরোপুরিভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় । এই যুদ্ধে ইরাক প্রায় ৫০ টি থেকে টি ৬২ ট্যাংক হারায় । আর ইরান হারায় ১০০ টি চিফটেইন এবং এম ৬০ ট্যাংক । এই একই বছর ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবোলহাসান বানি সাদর রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েন । যুদ্ধে বড় কোন বিজয়ের বিনিময়ে নিজের অবস্থানকে সমুন্নত করার প্রয়াসে তিনি ব্যাটল অফ দেজফুল এর নির্দেশ দেন । কিন্তু এই যুদ্ধে ইরানের বিপর্যয় বানি সাদর এর পতনকে ত্বরান্বিত করে । দেশের অভ্যন্তরেও ইরানকে এই বছর বেশ কিছু সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। জুন এবং সেপ্টেম্বর মাসে সরকার এবং বিরোধী বামপন্থী মুজাহিদিন খালক্ব গেরিলাদের কয়েকটি বড় শহরের রাস্তায় সংঘাত হয় ।

বছরের শুরুতে বেশ কিছু বিপর্যয় কাটিয়ে ইরানি বাহিনী সে বছর বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করে । মে মাসে সুসানজার্দ এর নিকটবর্তী উচ্চভূমি ইরান পুনর্দখল করতে সমর্থ হয় । ইরানি আক্রমণে সেপ্টেম্বর মাসে ইরাকের আবাদান অবরোধ এর সমাপ্তি ঘটে । উল্লেখ্য আছে যে ১৯৮০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ইরাক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তেল সমৃদ্ধ এ বন্দরটি অবরোধ করে রেখেছিল । ১৯৮১ সালের শরৎে ইরান অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়ে ইরাক সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাঝেই বেশ জোরেশোরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে । ২৯ নভেম্বর ৩ টি সেনা ব্রিগেড এবং ৭ টি আধা সামরিক রেভুলুশনারি গার্ড ব্রিগেড নিয়ে শুরু হয়ে ইরানের অপারেশন তারিক আল কুদস। সে অভিযানের ফলে ৭ ডিসেম্বর ইরান বোস্তান শহরটি পুনরুদ্ধার করেন । যুদ্ধ প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রে ইরাক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকায় সেই অপারেশনে ইরান প্রথমবারের মত তাদের মানব ঢেউ কৌশলের প্রয়োগ ঘটায় । সে কৌশলে আকাশপথে বা ভূমিতে কোন ভারী আর্টিলারীর সাহায্য ছাড়াই রেভুলশনারী গার্ডের বিপুল সংখ্যক সদস্য বারবার ইরাকি অবস্থানে আক্রমণ চালান । বোস্তানের পতনের ফলে ইরাক খুজেস্তান প্রদেশে তাদের সেনাদের রসদ সরবরাহে বড় ধরণের বাধার সম্মুখীন হন ।

বিঃ আবডেট দিতে গিয়ে পোস্টটি সমস্যা হওয়ায় পূর্ণরায় আবার দিতে হলো ।
ছবি এবং তথ্য বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং ইন্টারনেট থেকে তুলে ধরা ।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: অসাধারণ ভালো লাগছে আপনার ইতিহাস পর্বগুলো ।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৪

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ব্লগ সার্চম্যান ভাই আপনিও কিন্ত কম লেখেন না ।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪

মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম। ধন্যবাদ লেখককে।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৫

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই শুভেচ্ছা নিবেন ।

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৫

আমি মিন্টু বলেছেন: ভালো লাগলো যুদ্ধের বিষয়গুলো জেনে ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৩

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ মিন্টু ভাইজান ।

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:


ইরান ও ইরাকের যুদ্ধ ছিল ভয়ংকর মানবতা বিরোধী; ইরাকীরা সেটার মুল্য দিচ্ছে; ইরানও অনেক পেছনে চলে গেছে

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: তাতো বটেই পৃথিবীর সব রাষ্ট্রে এখন শুধু ধর্ম যুদ্ধ চলছে । কেউ এখন আর দেশের মানুষের কথা ভাবে না । যেমনটি ভেবেছিলেন
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব ও সাদ্দাম হোসেন ।

৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

প্রামানিক বলেছেন: খুব ভাল লাগল। অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান সব সময় কাছে থাকার জন্য ।

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

***মহারাজ*** বলেছেন: ভালো এতো দেখছি সবাই ইতিহাসের ভান্ডার খুলে নিয়েছেন ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৫

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ মহারাজ ভাইজান । পৃথিবীতে চলতে গেলে পুরানকে মনে রাখতে হবে ।

৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:১৭

আমি বন্দি বলেছেন: অসাধারণ অনেক তথ্য জানতে পারলাম আপনার জন্য । ধন্যবাদ ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান ।আমি চেষ্টা করেছি কেবল জানানোর জন্য জানিনা কতটুক জানাতে পেরেছি ।

৮| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: জানতে পারলাম অনেককিছুই ।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজানা এই অধমের পুরানা ইতিহাস নিয়ে লেখা ব্লগ পড়ার জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.