নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কমবুঝি কিন্ত কিছু একটা নিয়ে বোঝার চেস্টা করি তাই যত পারি বই পড়ি ।

ঠ্যঠা মফিজ

ঠ্যঠা মফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বার্লিন এর প্রাচীরের ইতিহাস

১৯ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৪৬


১৯৮৬ সালে পশ্চিম বার্লিনের পাশ থেকে দেয়ালের শিল্পকর্মের দৃশ্য। পূর্ব দিক থেকে দেখা প্রাচীরের "মৃত্যুর স্ট্রিপ", যা "লুইসেনস্টাড খালের" বক্ররেখা (১৯৩২ সালে ভরে ফেলা হয়েছে) অনুসরণ করেছে।
বার্লিন প্রাচীর
বার্লিন মূলত ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছে পশ্চিম বার্লিন ও পূর্ব বার্লিন এর সীমানা প্রাচীর হিসেবে । যেটি পশ্চিম জার্মানি ও পূর্ব জার্মানি একটি সীমানা ছিল। আর টা ১৯৬১সাল ১৩ই আগস্ট থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৮টি বছর এটি পশ্চিম বার্লিন থেকে পূর্ব বার্লিন এবং পূর্ব জার্মানির অন্যান্য অংশকে পৃথক করে রেখেছিল। সরকারী হিসাব মতাবেক সে সময়ে প্রাচীর টপকে পশ্চিম বার্লিন যাবার চেষ্টাকালে ১২৫ জন প্রাণ হারিয়েছিল। আর বেসরকারী হিসাবে সে সংখ্যাটি প্রায় ২০০ জন হবে। সদ্য প্রকাশিত দলিলে দেখা যায় কমিউনিস্ট সরকার পক্ষত্যাগকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন। যদিও পূর্ব জার্মান সরকার সবসময় এবিষয়টা অস্বীকার করে আসছিল।

কিন্তু ১৯৮৯সালের ৯ই নভেম্বরের পর পূর্ব জার্মান সরকার পশ্চিম বার্লিনে যাবার অনুমতি দেবার সিদ্ধান্ত নেন। হাজার হাজার উৎসুক জনতা প্রাচীর টপকে পশ্চিম পাশে যেতে থাকে। পশ্চিম প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের স্বাগত জানানো হয়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্যুভেনির সংগ্রাহকরা প্রাচীরটির কিছু অংশ ভেঙ্গে ফেলেছিলেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো প্রাচীর সরিয়ে নেয়া হলো। বার্লিন প্রাচীর খুলে দেয়ার ঘটনা দুই জার্মানির পুনঃএকত্রিকরণের পথ প্রশস্থ করে দেয় যার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর।
বার্লিন দেয়াল পরিদর্শনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ২৬ জুন ১৯৬৩
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর জার্মানি কার্যত চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আর চারটি অংশের শাসনভার ন্যস্ত ছিল মিত্রশক্তির চার পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স , ব্রিটেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের এর উপরে। বার্লিন শহরটি সোভিয়েত অংশের অন্তর্গত হলেও এটিও চার অংশে বিভক্ত করা হয়েছিল। দখলদার রাষ্ট্রগুলো উদ্দেশ্য জার্মানি শাসন হলেও শীতল যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র অধিকৃত অংশ নিয়ে গঠন করা হয় ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি। এর বিপরীতে সোভিয়েত অধিকৃত অংশে গঠিত হয় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব জার্মানি।
মানচিত্রে বার্লিন প্রাচীরের চেকপয়েন্টের অবস্থান দেখাচ্ছে।
২০ নভেম্বর,১৯৬১: পূর্ব জার্মান নির্মাণ শ্রমিকরা বার্লিন প্রাচীর গড়ে তুলছে
দুই জার্মানির ভিন্নতা কি ছিল
সামাজিক বাজার ব্যবস্থায় পশ্চিম জার্মানি পরিণত হয় একটি পুজিবাদী রাষ্ট্রে। ৫০ এর দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী ৩০ বছর দেশটি বিপুল প্রবৃদ্ধি অর্জন করেন। অন্যদিকে পূর্ব জার্মানির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল সোভিয়েত অনুকরণে সাজানো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। তার ফলে দেশটি সোভিয়েত ব্লকের অন্যান্য দেশের তুলনায় সম্পদশালী হয়ে উঠলেও পশ্চিম জার্মানির চাইতে অনেক পিছিয়ে ছিল। পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক পূর্ব জার্মান নাগরিক পশ্চিমাংশে চলে যেতে শুরু করেন । বিপুল পরিমাণ অভিবাসন ঠেকাতে পূর্ব জার্মান সরকার সিদ্ধান্ত নেন বার্লিনের পশ্চিমাংশ এবং পূর্বাংশের মাঝে একটি দেয়াল তুলে দেয়ার জন্য।
ফ্রিএড্রিকশাইনের কাছে ওসফানহোফের দেয়ালের সংরক্ষিত অংশ, আগস্ট ২০০৬
প্রস্তাবিত প্রাচীর কেমন ছিল
১৯৫২সালের ১লা এপ্রিল পূর্ব জার্মান নেতৃবৃন্দ স্ট্যালিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভয়েসলাভ মতোলোভ এর সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আর তার ফলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পশ্চিমাংশের নাগরিকরা বিশেষ পাশ সংগ্রহ করে পূর্বাংশে আসতে পারবেন। স্ট্যালিন দুই জার্মানির সীমান্তকে বিপদজনক উল্লেখ করে এর দুই স্তরের পাহাড়ার প্রস্তাব করেন, যার প্রথম স্তরে থাকবে পূর্ব জার্মান সীমান্তপ্রহরী এবং দ্বিতীয়াংশে থাকবে সোভিয়েত সেনা। পূর্ব জার্মান প্রধানমন্ত্রী ওয়াল্টার উলবিকট এই ব্যাপারে ত্বরিত পদক্ষেপ নেন। প্রস্তাবটি সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী নিকিতা ক্রুশ্চেভ অনুমোদন করেন। প্রথমে প্রস্তাব করা হয় দুই অংশের মাঝে পৃথককারী তারকাটার বেড়া দেয়া হবে।

নির্মাণ কাজের সূচনা

প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার দুইমাস পূর্বে ১৯৬১ সালের ১৫ই জুন, ওয়াল্টার উলবিকট এক সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করেন Niemand hat die Absicht, eine Mauer zu errichten! কারও একটি প্রাচীর খাড়া করার উদ্দেশ্য নেই । প্রথমবারের মত প্রাচীর শব্দটির ব্যবহার প্রাচীর ধারণার জন্ম দেয়। ১৯৬১সালের ১২ই আগস্ট পূর্ব জার্মান নেতৃবৃন্দ ডলসি উদ্যান আলোচনায় মিলিত হন। আর১৩ই আগস্ট রবিবার প্রথম প্রহরে নির্মানকাজ শুরু হয়। পশ্চিম বার্লিনের চারপাশে ১৫৬ কিমি দীর্ঘ এই দেয়ালের ৪৩ কিমি সরাসরি দুইঅংশকে পৃথক করা হয় । নির্মানকাজের সময় কেউ যদি পশ্চিমাংশে চলে যান সেই আশঙ্কায় পূর্ব জার্মান এর সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী দেয়ালের সামনে সশস্ত্র অবস্থান নেন। নির্মাণকাজে সোভিয়েত এর কোন সৈন্যের অংশগ্রহণ ছিল না। পশ্চিম বার্লিনের কোন অংশ যেন পূর্বাংশের মধ্যে চলে না আসে, সেজন্য পূর্ব বার্লিনের খানিকটা ভেতরে প্রাচীর নির্মিত করা হয়।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল
পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানির মাঝে প্রকৃত সীমারেখাও কাটাতারের বেড়া, দেয়াল , মাইনক্ষেত্র এবং অন্যান্য স্থাপনা দিয়ে পৃথক করে দেয়া হলো আর সেই প্রাচীরের কারণেই বহু পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান । পশ্চিম বার্লিন পরিণত হয় পূর্ব জার্মানীর একটি ছিটমহলে। মেয়র উইলি ব্রান্টের নেতৃত্বে পশ্চিম বার্লিনবাসী যুক্তরাষ্ট্রের নীরব ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানান।

বার্লিন দেয়াল পরিদর্শনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ২৬ জুন ১৯৬৩
১৯৬১সালে ২৫শে জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি জানান যুক্তরাষ্ট্র কেবল পশ্চিম জার্মানি এবং পশ্চিম বার্লিনের নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারে। পূর্ব বার্লিনের ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল কূটনৈতিক পর্যায়ে মৃদু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এর কয়েকমাস পর যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে প্রাচীর নির্মাণের অধিকারকে আন্তর্জাতিক অধিকারের আওতাভুক্ত বলে স্বীকার করে নেন।
পূর্ব জার্মান সরকার একে পশ্চিমা আক্রমণ এবং অ্যান্টি ফ্যাসিবাদী প্রতিরক্ষামূলক প্রাচীর antifaschistischer Schutzwall হিসেবে উল্লেখ করেন। কিন্তু এই ধারণার সত্যতা নিয়ে পূর্ব জার্মানিতেও বিপুল সন্দেহ ছিল। প্রাচীর নির্মাণের ফলে পূর্ব বার্লিনবাসীদের অবর্ননীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
সে প্রাচীরের মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব জার্মানি থেকে শরণার্থীদের স্রোতে বাধা প্রদান পাশাপাশি আরও কয়েকটা ব্যাপার গুরুত্বপূর্ন ছিল। সোভিয়েত দাবী অনুযায়ী সেই প্রাচীরের মাধ্যমে পূর্ব জার্মানি এবং ওয়ারশ ব্লক ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে পশ্চিমা গুপ্তচরদের অনুপ্রবেশ রোধ করা হয়েছিল। শীতল যুদ্ধের পটভূমিতে সেই প্রাচীর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পূর্ব জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে একটি পুতুল রাষ্ট্র হিসেবেই গণ্য করতো। পুঁজিবাদী বিশ্ব ইউরো ডলার এবং পশ্চিম জার্মানিতে মেধাপাচার রোধের বিরুদ্ধে সেই প্রাচীরের ছিল শক্তিশালী ভূমিকা।


প্রাচীরের কাঠামো এবং পরিবর্তনসমূহ
১৫৫ কিমি প্রাচীরটি গড়ে তোলা হয় পূর্ব জার্মানীর ১০০ গজ ভেতরে। সেই ১০০ গজের মধ্যে থাকা বাড়িঘর এবং স্থাপনা ধ্বংস করে একটি নোম্যান্সল্যান্ড তৈরি করা হয়। সেখানকার অধিবাসীদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। ১০০ গজের সেই নিরপেক্ষ এলাকাটি পরিচিত ছিল মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে। পায়ের চিহ্ন সহজে চিহ্নিত করার জন্য সে অংশটি নুড়ি এবং বালু দিয়ে ভরে দেয়া হয়। স্থাপন করা হয় স্বয়ংক্রিয় ফাঁদ যেগুলো কারও পায়ের স্পর্শে সচল হয়ে উঠবে। স্পষ্ট দৃষ্টি সীমার মধ্যে থাকায় প্রহরীদের গুলি চালানোর জন্য সুবিধাজনক এলাকা হিসেবে সে অংশটি আরও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠে।
প্রাচীরটিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয় সেগুলোকে মোটামুটি ৪ টি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১।কাঁটাতারের প্রাথমিক বেড়া (১৯৬১ সাল থেকে ৬২সাল)
২।কাঁটাতারের উন্নত বেড়া (১৯৬২সাল থেকে৬৫সাল)
৩।কনক্রিটের দেয়াল (১৯৬৫সাল থেকে৭৫সাল)
৪।গ্রেন্সমাওয়া ৭৫ (১৯৭৫সাল থেকে ৮৯সাল)
১৯৪৫ সালে অধিকৃত জার্মানি
চতুর্থ পর্যায়ের দেয়ালটি ছিল সবচেয়ে আধুনিক। তার নামকরণ করা হয় ইস্টুটসোয়ান্ডঅ্যালিমেন্ট উল ১২.১১ সাপোর্ট প্যানেল ইউএল ১২:১১। ১৯৭৫ সালে সেটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮০ সালে শেষ হয়। তাতে ৪৫০০০ পৃথক কনক্রিট স্ল্যাব ছিল। প্রতিটি স্ল্যাবের দৈর্ঘ্য ১২ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। তাতে খরচ হয় ১৬১৫৫০০০ পূর্ব জার্মান মার্ক। সেটির পাশে স্থাপন করা হয় ১১৬টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং ২০টি বাংকার।[বর্তমানে অবশিষ্ট থাকা দেয়ালের অংশবিশেষ চতুর্থ পর্যায়ের দেয়ালের স্মারক।


প্রাচীর দু'প্রান্তের মধ্যে পাড়াপাড়ের অফিসিয়াল চেকপয়েন্টসমূহ
পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনের মাঝে যাতায়াতের জন্য আটটি আনুষ্ঠানিক পথ রাখা হল।আর পশ্চিম বার্লিনবাসী পশ্চিম জার্মান নাগরিক ও পশ্চিমা বিশ্বের নাগরিক এবং অন্যান্য দেশের নাগরিক অনুমতিপ্রাপ্ত পূর্ব বার্লিনবাসীরা সে পথগুলো ব্যবহার করতেন পশ্চিম বার্লিন এবং তাকে ঘিরে থাকা পূর্ব জার্মানির অন্য অংশগুলোর মাঝেও কয়েকটি যাতায়াতের পথ ছিল। পশ্চিম বার্লিনবাসীরা পূর্ব জার্মানি পশ্চিম জার্মানি এবং অন্যান্য দেশসমূহে ডেনমার্ক ও চেকোস্লোভাকিয়া যাওয়ার জন্য এবং পূর্ব জার্মানদের পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশের জন্য সেগুলো ব্যবহৃত হতো। ১৯৭২ সালের চুক্তি অনুযায়ী সে পথগুলো দিয়ে পশ্চিম বার্লিনের বর্জ্ পূর্ব জার্মানির ভাগাড়গুলোতে ফেলার অনুমতি দেয়া হয়।পূর্ব জার্মানির অভ্যন্তরে স্টানস্টোইন ছিটমহলের সাথে পশ্চিম বার্লিনের যোগাযোগের জন্যও সে পথগুলো ব্যবহার করা হত। ৪টি প্রধান শক্তির চুক্তির অংশ হিসেবে প্রাচীরের ইতিহাসে অধিকাংশ সময় জুড়ে মিত্রপক্ষের এবং সেনা ও কর্মকর্তা এবং কূটনীতিবিদগণ বার্লিনের উভয় অংশের মধ্যে বেশ সহজে চলাচল করতে পারতেন। পশ্চিম বার্লিনবাসীদের ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করা হয়। ১৯৬১সালের ২৬শে আগস্ট থেকে ১৯৬৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম বার্লিনবাসীদের জন্য সবগুলো পথ বন্ধ ছিল। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তির মাধ্যমে এটি শিথিল করা হয়। পশ্চিম জার্মানির সাথে পশ্চিম জার্মানির সড়ক যোগাযোগের চারটি পথ ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বার্লিনের দক্ষিণ পশ্চিমের বার্লিন হেমস্টেড আটোবান। এটি বার্লিনের চেকপয়েন্ট ব্রাভোর মধ্য দিয়ে পূর্ব জার্মানির হেমস্টেড শহরের সাথে সংযুক্ত ছিল। পশ্চিম বার্লিন প্রবেশের জন্য ৪টি রেলপথ ছিল। নৌকায় করে খাল অতিক্রম করেও প্রবেশ করা যেত।বিদেশী নাগরিকগণ বেশ সহজে দুই বার্লিনের মধ্যে যাতায়াত করতে পারতেন। পূর্ব বার্লিনবাসীদের জন্য প্রক্রিয়াটা ছিল অনেক কঠিন। অবশ্য পেনশনভোগীরা তেমন কোন বাধার সম্মুখীন হতেন না। মোটরযানের নিচের অংশ আঁকড়ে ধরে কেউ পালিয়ে যাচ্ছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য পূর্ব বার্লিন ত্যাগকারী মোটরযানগুলো নিচে আয়না দিয়ে পরীক্ষা করা হত। প্রাচীরের পোস্টডাম অংশে মার্কিন পাইলট গ্যারি পাওয়ারসের সাথে সোভিয়েত গুপ্তচর রুডলফ আবেলের বিনিময় হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছিল। পশ্চিম বার্লিনবাসি ফ্রেডরিখস্ট্রস স্টেশন এবং চেকপয়েন্ট চার্লি দিয়ে পূর্বাংশে যাতায়াত করতে পারতো। প্রাচীর নির্মাণের ফলে বার্লিনের পরিবহন ব্যবস্থা এস বান এবং ইউ বান দু'টি অংশে ভাগ হয়ে পড়ে। অনেকগুলো স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। পশ্চিমাংশের তিনটি রেলপথ পূর্বাংশের স্টেশনের মধ্য দিয়া না থেমে অতিক্রম করতো। সেগুলোকে ভূতুড়ে স্টেশন গেস্টারবানহোফ বলা হতো।

এ প্রাচীর ছিন্ন করে ফেলুন! বার্লিন প্রাচীরের সামনে দাঁড়িয়ে মিখাইল গর্বাচেভকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের সেই বিখ্যাত ভাষণ
পলায়ন প্রচেষ্টা
বার্লিন প্রাচীরের ২৮ বছর ইতিহাসে প্রাচীর অতিক্রম করে পশ্চিম বার্লিনে যাবার প্রায় ৫০০০টি ঘটনা ঘটে। প্রাচীর অতিক্রমের ঘটনায় ঠিক কতজন মৃত্যুবরণ করেছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। চেকপয়েন্ট চার্লি মিউজিয়ামের ডিরেক্টর আলেকজান্ড্রা হিলডেব্রান্ডের মতে মৃতের সংখ্যা ২০০টি। তবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কনটেম্পরারি হিস্টরিকাল রিসার্চ জেটজেটএফ তার মতে মৃতের সংখ্যা ১৩৩টি। পূর্ব জার্মান কর্তৃপক্ষ প্রাচীর অতিক্রমের চেষ্টাকারী যে কাউকে দেখামাত্র গুলি করার জন্য সীমান্ত প্রহরীদের নির্দেশ প্রদান করে। নারী এবং শিশুদের ক্ষেত্রেও সে আদেশ পালনে কোন ধরণের শৈথিল্যের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ হুশিয়ার করে দেয়।প্রথম দিকে কাটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে লাফিয়ে পড়ে বা দেয়ালের পাশের কোন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লাফিয়ে পড়ে সীমান্ত পাড়ি দেবার ঘটনা ঘটে। তবে সময়ের সাথে সাথে উন্নততর প্রাচীর নির্মিত হলে এভাবে পক্ষত্যাগ করা সম্ভবপর হয়নি।

১৯৬১সালের ১৫ই আগস্ট কোনার্ড শুম্যান নামে এক পূর্ব জার্মান সীমান্ত প্রহরী সর্বপ্রথম কাঁটাতারের বেড়ার উপর দিয়ে লাফিয়ে পশ্চিমাংশে চলে আসেন। পরবর্তীতে মাটির নিচে টানেল খুঁড়ে ঝোড়ো বাতাসের সাহায্য নিয়ে লাফিয়ে পড়ে তার বেয়ে বেলুনে চেপে স্পোর্টসকার চালিয়ে চেকপোস্টের দরজা ভেঙ্গে প্রাচীর অতিক্রমের ঘটনা ঘটে। সেসব ঘটনা এড়াতে চেকপোস্ট ধাতব বার স্থাপন করা হয়, যাতে মোটরগাড়ি এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এরপরও চেষ্টা থেমে থাকেনি। ৪ জন আরোহী বিশেষভাবে তৈরি স্পোর্টকার চালিয়ে বারের নিচ দিয়ে প্রাচীরের দ্বার ভেঙ্গে পশ্চিম পাশে যাবার ঘটনা ঘটে। এটি প্রতিরোধের জন্য পরবর্তীকালে সীমান্তচৌকিগুলোর কাছাকাছি রাস্তা আঁকাবাকা করে দেয়া হয়।অন্য এক ঘটনায় থমাস ক্রুগার নামে একজন পক্ষত্যাগকারী হালকা প্রশিক্ষণ বিমান চালিয়ে পশ্চিম পাশে অবতরণ করেন। খালি বিমানটির গায়ে নানা বিদ্রুপাত্মক কথা লিখে সড়কপথে পূর্বাংশে ফেরত পাঠানো হয়।প্রাচীর অতিক্রমের চেষ্টায় গুলিতে আহত হয়ে কেউ দুই বার্লিনের মাঝে নিরপেক্ষ অংশে পড়ে থাকলেও পশ্চিম জার্মানদের পক্ষে তাকে উদ্ধার করা সম্ভবপর হতো না। নিরপেক্ষ অংশের সাথে পশ্চিম বার্লিনের কেবল কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও নিরপেক্ষ অংশটি পূর্ব জার্মানির অংশ ছিল। ফলে উদ্ধার প্রচেষ্টা চললে পূর্ব জার্মান সীমানা প্রহরীদের কাছ থেকে গুলিবর্ষণের আশঙ্কা থাকতো। সেরকম ঘটনাগুলোর প্রথমটি ঘটে ১৯৬২ সালের ১৭ই আগস্ট। পিটার ফ্লেচার নামে ১৮ বছরের এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘ সময় পশ্চিমাংশে পড়ে থাকেন। পশ্চিমা মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই রক্তক্ষরণের কারণে ধীরে ধীরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি।
১৯৮৯ সালের ২৩শে আগস্ট হাঙ্গেরি সরকার অস্ট্রিয়ার সাথে সীমান্তে কড়াকড়ি প্রত্যাহার করেন। সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১৩০০০ জন পূর্ব জার্মান পর্যটক পশ্চিম জার্মানি যাবার জন্য হাঙ্গেরি হয়ে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ করে। অক্টোবর মাসে পূর্ব জার্মানিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৮ই অক্টোবর দীর্ঘদিন পূর্ব জার্মানি শাসনকারী এরিক হোনেকার পদত্যাগ করেন। তার স্থলাভিষিক্ত হন এগোন ক্রেনজ। এর আগে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি মাসে হোনেকার আরও এক শতাব্দী প্রাচীর টিকে থাকার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া বিক্ষোভের প্রথমদিকে স্লোগান ছিল আমরা বাইরে পশ্চিম জার্মানি যেতে চাই Wir wollen raus। সেটির বদলে নতুন স্লোগান শুরু হয় আমরা এখানেই থাকবো Wir bleiben hier যেটি জার্মান ঐক্যের পক্ষে আন্দোলনের ইংঙ্গিত দেয। ৪ঠা নভেম্বরের পূর্ব বার্লিনের অ্যালেক্সসান্ড্রাপ্লাটসে ১০ লাখ বিক্ষোভকারী সমবেত হন।ক্রেনজ সরকারের সহনশীল নীতি এবং কমিউনিস্ট চেকোস্লাভ সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী পূর্ব জার্মান শরনার্থীরা চেকোস্লাভাকিয়া হয়ে পশ্চিম জার্মানি যাওয়ার সুযোগ পায়। ক্রমবর্ধমান শরনার্থীর চাপ থেকাতে ১৯৮৯সালের ৯ই নভেম্বর ক্রেনজের নেতৃত্বে পার্টি পলিটব্যুরো সিদ্ধান্ত নেয় পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানীর মধ্যে সীমান্ত চৌকি দিয়ে সরাসরি শরনার্থীদের যাবার অনুমতি প্রদান করা হবে। পূর্ব জার্মান সীমান্ত রক্ষীদেরকে সিদ্ধান্তটি জানানোর জন্য এক দিন সময় নিয়ে ১০ই নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূর্ব জার্মান প্রচারমন্ত্রী গুন্টার সাবোয়স্কিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। ৯ই নভেম্বরের পূর্বে সাবোয়স্কি ছুটিতে থাকায়, এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। একই দিনে একটি সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে তাকে ঘোষণাপত্রটি ধরিয়ে দেয়া হয় । কিন্তু কবে থেকে তা কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা ছিল না। সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণাটি দেয়ার পর তা কবে কার্যকর হবে সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যতদূর জানি এই মুহূর্ত থেকেই কার্যকর হবে।

পূর্ব জার্মান টেলিভিশনে সে ঘোষণা শোনার সাথে সাথে হাজার হাজার পূর্ব বার্লিন বাসী প্রাচীরের কাছে সমবেত হয়ে পশ্চিম বার্লিনে যেতে দেবার দাবী জানাতে থাকে। আগে থেকে কোন নির্দেশ না থাকায় সীমান্ত রক্ষীরা জনস্রোত দেখে হতোদ্যম হয়ে পড়ে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে টেলিফোনে যোগাযোগ করে করণীয় জানতে চাইলে, শক্তি প্রয়োগের মত সিদ্ধান্ত দিতে সবাই অপারগতা প্রকাশ করে। এ অবস্থায় গণদাবীর মুখে সীমান্তরক্ষীরা দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। অপর পাশে হাজার হাজার পশ্চিম বার্লিনবাসী উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের স্বাগত জানান। এভাবে ১৯৮৯সালের ৯ই নভেম্বর অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রাচীরের পতন হয়।
পূর্ব জার্মান সরকার ঘোষণা করে প্রাচীরে আরও নতুন দশটি চলাচলের পথ খুলে দেয়া হবে। ১৯৯০ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত পুরনো বার্লিনের সেসব পথ খুলে দেয়া হতে থাকে। বুলডোজার দিয়ে দেয়াল ধ্বংস করে নতুন প্রবেশদ্বার তৈরির সেসব ভিডিও চিত্রকে অনেক দেশের মিডিয়ায় এখনও প্রাচীর ধ্বংস করা হিসেবে ভুলভাবে অভিহিত করা হয়। ১৯৮৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর খুলে দেয়া হয় বিখ্যাত ব্রান্ডেনবুর্গ গেইট।সে বছর ২৩শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় দুই বার্লিনের মধ্যে ভিসামুক্ত চলাচল। ৯ই নভেম্বরের পর পূর্ব জার্মান কর্তৃপক্ষ দেয়ালের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ মেরামতের উদ্যোগ নেন। কিন্তু স্যুভেনির সংগ্রাহকদের উপর্যুপরি ক্ষতিসাধনে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে নেন।১৯৯০ সালের ১৩ই জুন থেকে পূর্ব জার্মান সামরিক ইউনিটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়াল ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে এবং ১৯৯১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সেটা চলতে থাকে। ১৯৯০ সালের ১লা জুলাই পূর্ব জার্মানিতে পশ্চিম জার্মানির মুদ্রা চালু হয়।
বর্তমানে কয়েকটি জায়গায় প্রাচীরটির কিছু অংশটি স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত আছে। বার্লিন প্রাচীরের পতন ১৯৯০ সালের ৩রা নভেম্বর জার্মান পুনঃএকত্রীকরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৪

নতুন গেম বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম ।

২১ শে মে, ২০১৬ রাত ২:২৮

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নতুন গেম ।

২| ১৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৯

মুসাফির নামা বলেছেন: ঠ্যঠা ভাই,অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানলাম।+

২১ শে মে, ২০১৬ রাত ২:৩১

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাই মুসাফির নামা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.