নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কমবুঝি কিন্ত কিছু একটা নিয়ে বোঝার চেস্টা করি তাই যত পারি বই পড়ি ।

ঠ্যঠা মফিজ

ঠ্যঠা মফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কনস্টান্টিনোপল বিজয় এর ইতিহাস (২য় পর্ব)

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:২০


কনস্টান্টিনোপল বিজয় এর ইতিহাস (প্রথম পর্ব)
সুলতান মুহাম্মদ সমুদ্রের দিক থেকে শহর অবরোধের জন্য একটি নৌবহর গড়ে তোলেন। সেটি অংশত গেলিপোলির গ্রিক নাবিকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। সমকালীন হিসাবমতে উসমানীয় নৌবহরে জাহাজ সংখ্যা ছিল ১০০(টেডালডি), ১৪৫(বারবারো), ১৬০(ইউবেরটিনো পুসকুলো), ২০০-২৫০ (ইসিডোর অব কিয়েভ, লিওনার্দো দি চিও)থেকে ৪৩০(স্ফ্রানটজ)। আধুনিককালের আরো বাস্তবিক হিসাব মতে নৌবহরে ১২৬টি জাহাজ ছিল। এটি বিশেষত ৬টি বৃহৎ জাহাজ, ১০টি সাধারণ জাহাজ, ১৫টি ছোট জাহাজ, ৭৫টি বড় নৌকা এবং ২০টি ঘোড়া পরিবহনের নৌকা গঠিত হয়।

উসমানীয়রা মাঝারি আকারের কামান তৈরীতে দক্ষ সেকথা অবরোধের আগে সবার জানা ছিল। কিন্তু গোলা ছোড়ার পাল্লা প্রতিপক্ষের ধারণার বাইরে চলে যায়। অস্ত্রের ক্ষেত্রে উসমানীয়দের এই সক্ষমতা উরবান নামক এক হাঙ্গেরিয়ান বা কারো মতে জার্মান ব্যক্তির কারণে সম্ভব হয়। তার নকশা করা একটি কামানের নাম ছিল শাহি। সেটির দৈর্ঘ্য ছিল ২৭ ফুট ৮.২ মি, এবং সেটি ৬০০ পাউন্ডের বা ২৭২ কেজি,একটি গোলা প্রায় এক মাইল বা ১.৬ কিমি, দূরে ছুড়ে মারতে পারত।
উরবান প্রাথমিকভাবে বাইজেন্টাইনদের অধীনে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা তার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে অক্ষম ছিল। তারপর উরবান কনস্টান্টিনোপল ত্যাগ করেন এবং সুলতান মুহাম্মদের কাছে যান। তিনি দাবি করেন যে তার অস্ত্র ব্যবিলনের দেয়ালকে উড়িয়ে দিতে পারে। পর্যাপ্ত অর্থ এবং উপাদান লাভের পর এড্রিনোপলে তিনি তিন মাসের মধ্যে কামান নির্মাণ করেন। সেখান থেকে ৬০টি ষাড়ের সাহায্যে এটি কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে যাওয়া হয়। উরবান তুর্কি বাহিনীর জন্য অন্যান্য কামানও নির্মাণ করেন।উরবানের কামানে কিছু ত্রুটিও ছিল। সেটিকে পুনরায় ব্যবহার করতে তিন ঘন্টা লাগত। কামানের গোলার সরবরাহ খুবই কম ছিল। বলা হয় যে কামানটি ছয় সপ্তাহ পর আপনা থেকেই অকেজো হয়ে যায়। তবে এই বিষয়টি বিতর্কিত।১৫০ মাইল বা ২৪০ কিমি, দূরে অস্ত্র কারখানা হওয়ায় সুলতানকে বিশাল কামানকে বহনের জন্য বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়। বলা হয় যে উরবানের এই কামানকে বহন করতে ৬০ টি ষাড় ও ৪০০ মানুষ প্রয়োজন হয়েছিল সুলতান মুহাম্মদ থিওডোসিয়ান দেওয়াল আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। সেই দেয়ালগুলো কনস্টান্টিনোপলকে পশ্চিম দিকের আক্রমণ থেকে বাচিয়ে রেখেছিল। শুধু পানিবেষ্টিত অংশই দেওয়াল ঘেরা ছিল না। ১৪৫৩ এর ২ এপ্রিল সোমবার ইস্টারের পরের দিন তার সেনারা শহরের বাইরে অবস্থা নেয়।

উসমানীয় সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ গোল্ডেন হর্নের দক্ষিণে অবস্থান নেয়। কারাদজা পাশার অধীনস্থ নিয়মিত ইউরোপীয় সেনারা দেওয়ালের পুরো দৈর্ঘ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আনাতোলিয়ার নিয়মিত বাহিনী ইশাক পাশার নেতৃত্বে দক্ষিণে লুকাস থেকে মারমারা সাগর পর্যন্ত অবস্থান নেয়। সুলতান মুহাম্মদ নিজে তার লাল এবং সোনালি তাবু মেসোটেচিওনের কাছে অবস্থান নেন। সেখানে কামান এবং জেনিসারিরা অবস্থান নিয়েছিল। বাশি বেজোক নামের সেনারা প্রথম সারির পেছনে অবস্থান নেয়। জাগান পাশার অধীনস্থ অন্যান্য সেনারা হোল্ডেন হর্নের উত্তরে অবস্থান নেয়। গোল্ডেন হর্নের জলার উপর নির্মিত একটি রাস্তার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা হত।শহরে প্রায় ২০ কিমি দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল। সেটি ছিল সেসময়ের অন্যতম মজবুত দেওয়াল। কিছুকাল পূর্বে অষ্টম জন পেলেইওলোগস সেটির সংস্কার করেন। দেওয়ালের অবস্থা যথেষ্ট ভাল ছিল। ফলে বাইজেন্টাইনদের ধারণা ছিল পশ্চিমা সাহায্য আসার আগ পর্যন্ত তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে।তার উপর প্রতিরক্ষাকারীরা ২৬ টি জাহাজের একটি নৌবহর দ্বারা শক্তি প্রাপ্ত ছিল। তার মধ্যে ৫টি জেনোয়া, ৫টি ভেনিস, ৩টি ভেনিসিয়ান ক্রিট, ১টি আনকোনা, ১টি আরাগন, ১টি ফ্রান্স থেকে এবং প্রায় ১০টি বাইজেন্টাইনদের জাহাজ ছিল।
৫ই এপ্রিল সুলতান তার শেষ সেনাদল নিয়ে পৌছলে বাইজেন্টাইনরা তাদের অবস্থান গ্রহণ করে। সংখ্যার অপ্রতুলতার কারণে দেওয়ালের সব অংশে অবস্থান নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না বিধায় সিদ্ধান্ত হয় যে শুধু বাইরের দেয়ালে সেনা মোতায়েন করা হবে। কনস্টান্টাইন এবং তার গ্রিক সেনারা দেওয়ালের মাঝের অংশ রক্ষায় অবস্থান নেয়। দেওয়ালের সেই অংশটিকে সবচেয়ে দুর্বল অংশ হিসেবে দেখা হত এবং সেই দিক থেকে আক্রমণের আশঙ্কা বেশি ছিল। জিসটিনিয়ানি সম্রাটের উত্তর দিকে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে অবরোধ চলার সময় তিনি সম্রাটের অবস্থানের জায়গায় চলে আসেন। তার পূর্বের অবস্থানে বোকিয়ারডি ভাইদের দায়িত্ব দেয়া হয়। মিনট্টো এবং তার ভেনিসিয়ানরা ব্লেচারনে প্রাসাদে টিউডোরো কেরিসটো, লেনগেসকো ভ্রাতৃবৃন্দ এবং আর্চবিশপ লিউনার্দো অব চিওস এর সাথে অবস্থান নেন। সম্রাটের বাম পাশে কিছুটা দক্ষিণে সেনানায়ক কাটানিও ও জেনোয়ার সৈনিকেরা এবং গ্রীক সৈনিকদের সাথে অবস্থানরত থিওফিলিস পেলেইওলোগস অবস্থান করছিলেন। দেওয়ালের একটি অংশে ভেনিসিয়ান ব্যক্তি ফিলিপ্পো কনটারিনি এবং সর্বদক্ষিণে ডিমিটরিয়াস কেন্টাকুজেনাস অবস্থান নেন। সমুদ্রের দেওয়ালে অপেক্ষাকৃত কম সৈনিক মোতায়েন করা হয়। স্টেডিয়ানে জেকোবো কনটারিনি তার বাম পাশে গ্রীক পুরোহিতদের একটি দল এবং এলিউথেরিয়াস পোতাশ্রয়ে যুবরাজ ওরহানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেনোয়াস এবং কাটালান সৈনিকদের সাথে পিরে জুলিয়া প্রাসাদে অবস্থান নেন। কিয়েভের কার্ডিনাল ইসিডর উপদ্বীপের প্রান্তে অবস্থান নেন। দক্ষিণ উপকূলের সমুদ্র দেওয়ালগুলোতে গেব্রিয়েল ট্রেভিসানোর অধীন ভেনিসিয়ান এবং জেনোয়ার নাবিকরা পাহারার দায়িত্ব পালন করে। কৌশলগত কারণে শহরের ভেতর দুইটি রিজার্ভ বাহিনী রাখা হয়। তার একটি হল লুকাস নটরাসের অধীনে পেট্রায় ও অন্যটি নিসেফোরোস পেলেইওলোগসের অধীনে চার্চ অব দ্য হলি এপস্টলসের কাছে। ভেনিসিয়ান কমান্ডার আল্ভিসো ডিয়েডো পোতাশ্রয়ের জাহাজগুলোকে নেতৃত্ব দেন। বাইজেন্টাইনদের কামান থাকলেও সেগুলো উসমানীয়দের তুলনায় ছোট ছিল এবং গোলা ছোড়ার পর কামানের পেছনদিকের ধাক্কার ফলে তাদের নিজেদের দেওয়ালেরই ক্ষতি হচ্ছিল।ডেভিড নিকোলের মতে কনস্টান্টিনোপল খুব সহজেই বিজয় হয় একথাটা সঠিক নয়। মানচিত্রে দেখানোর মত পুরো ব্যাপারটি একপক্ষীয় ছিল না।

এমনও দাবি করা হয় যে কনস্টান্টিনোপল ওই সময় ইউরোপের সবচেয়ে মজবুত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শহর ছিল।
অবরোধের শুরুতে সুলতান মুহাম্মদ শহরের বাইরে বাইজেন্টাইনদের শক্তিকেন্দ্রগুলো ধ্বংস করার জন্য তার সেরা সৈনিকদের পাঠান। কয়েকদিনের মধ্যে বসফরাসের কাছে থেরাপিয়া দুর্গ এবং স্টুডিয়াস গ্রামে মারমারা সাগরের নিকটে অনুরূপ আরেকটি দুর্গ দখল করা হয়। মারমারা সাগরে প্রিন্সেস দ্বীপপুঞ্জ এডমিরাল বালতুঘলুর নৌবহর দখল করে নেয়।কয়েক সপ্তাহ ধরে কামানগুলো শহরের দেওয়ালের উপর গোলাবর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে হামলা করতে না পারা এবং হামলার গতি তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় বাইজেন্টাইনরা ক্ষতিগ্রস্থ অংশ দ্রুত মেরামত করতে সক্ষম হয়। তারমধ্যে বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরও বালতুঘলুর অধীন উসমানীয় নৌবহরগুলো গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করতে পারেনি। বাইজেন্টাইনরা এর প্রবেশমুখে প্রতিরক্ষামূলক ধাতব শিকল বসিয়ে দেয়ায় সেই অবস্থার সৃষ্টি হয়। বাইরের কোনো জাহাজকে গোল্ডেন হর্নে প্রবেশে বাধা দেওয়া তুর্কি নৌবহরের প্রধান কাজ হলেও ২০শে এপ্রিল চারটি খ্রিষ্টান জাহাজের একটি ক্ষুদ্র দল বেশ বড় লড়াইয়ের পর এতে ঢুকে পড়ে।তাতে বাইজেন্টাইনদের মনোবল বেড়ে যায় এবং সুলতানের জন্য অবস্থা অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে। বালতুঘলুর অধীনস্থ সৈনিকেরা লড়াইয়ের সময় তার সাহসিকতার ব্যাপারে নিশ্চিত করায় ব্যর্থতা সত্ত্বেও তাকে ক্ষমা করা হয়। তারপর সুলতান মুহাম্মদ অন্য পথ অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গোল্ডেন হর্নের উত্তরে গালাটার উপর দিয়ে চর্বি মাখানো কাঠের একটি রাস্তা তৈরীর আদেশ দেন। ২২শে এপ্রিল জাহাজগুলোকে টেনে গোল্ডেন হর্নে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে রসদ সরবরাহ করা জেনোয়ার জাহাজগুলো বাধার মুখে পড়ে এবং বাইজেনটাইনদের মনোবল ভেঙ্গে যায়।

২৮শে এপ্রিল রাতে উসমানীয় জাহাজগুলো ধ্বংস করার একটা চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু উসমানীয়রা পূর্বে সংকেত পাওয়ায় খ্রিষ্টান বাহিনী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং পিছু হটে। তারপর বাইজেন্টাইনরা গোল্ডেন হর্নের অংশে অধিক মাত্রায় সেনা সমাবেশ করে। ফলশ্রুতিতে অন্য অংশের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। ২৯শে এপ্রিল ২৬০ জন উসমানীয় বন্দীকে উসমানীয়দের চোখের সামনে দেওয়ালের উপর শিরশ্ছেদ করা হয়। ভূমির দেওয়ালে বেশ কয়েকবার আক্রমণের পরও তুর্কিরা সফলতা লাভ করেনি। ভেনিসিয়ান সার্জন নিকোলো বারবারো তার ডায়েরিতে জেনিসারিদের আক্রমণের বিষয়ে লেখেন,
তারা তুর্কিদের দেয়ালের নিচ দিয়ে যুদ্ধের জন্য আসতে দেখল, বিশেষত জেনিসারিদের এবং যখন তাদের এক বা দুইজন মারা যায়, আরো তুর্কি চলে আসে এবং মৃতদেরকে নিয়ে যায়,তারা দেওয়ালের কত নিকটে এসে গিয়েছে সে বিষয়ে ভাবছিল না। আমাদের লোকেরা মৃতদেহ বহনকারী তুর্কিদের দিকে কামান ও ক্রসবোর সাহায্যে আক্রমণ করে এবং তাদের দুজনেই মৃত পরিণত হয়, তারপর আরো একজন তুর্কি তাদেরকে নিতে এগিয়ে আসে, কেউই মৃত্যুকে ভয় পাচ্ছিল না, তারা স্বেচ্ছায় দশজন মরতে প্রস্তুত ছিল কিন্তু একজন তুর্কির লাশও দেওয়ালের কাছে ফেলে রাখতে রাজি ছিল না।



তথসূত্র ইন্টারনেট।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুমম

ইতিহাস জানা খুবই দরকার! অথচ সবচে অপাংক্তেয় কের রাখা যেন এই বিষয়!!!!!!!!!!!

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২

নেবুলাস বলেছেন: খুবই জ্ঞানভিত্তিক পোষ্ট। ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪২

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
পুরোটা একবারে দিয়ে দেন। বিরতিহীন ভাবে ইতিহাস ভ্রমণ করায় তৃপ্তি বেশি।

৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:০৬

আততায়ী আলতাইয়ার বলেছেন: Fetih 1453 নামের এই মুভিটা অটোমানদের হাতে বাইজানটাইনের পতন নিয়ে নির্মিত

৫| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ভালো লাগল ।

৬| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫

আনু মোল্লাহ বলেছেন: ভাল লাগে আপনার ইতিহাস ভিত্তিক সবগুলো পোস্ট। শুভ কামনা রইল :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.