নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কমবুঝি কিন্ত কিছু একটা নিয়ে বোঝার চেস্টা করি তাই যত পারি বই পড়ি ।

ঠ্যঠা মফিজ

ঠ্যঠা মফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক অস্ত্রাগার লুন্ঠনের ফলাফল

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৩৯


চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন ছিল ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল সংঘটিত মাষ্টার সূর্য সেন এর নেতৃত্বে কয়েকজন স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীর ব্রিটিশ পুলিশ এবং সহায়ক বাহিনীর চট্টগ্রামে অবস্থিত অস্ত্রাগার লুন্ঠনের প্রয়াস। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সাথে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী অসীমসাহসী বিপ্লবীরা। আর সেই বিপ্লবীদের নেতৃত্বে ছিলেন মাষ্টারদা সূর্য্যসেন। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে আরো ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্কশেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। এদের সাথে সুবোধ রায় নামক ১৪ বছরের এক বালকও ছিলেন।

সূর্য সেনের পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রাম শহরের অস্ত্রাগার দুটো লুট করা তারপর টেলিফোন এবং টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস করা আর তারপর সরকারি ও সামরিক বাহিনীর অফিসারদের ক্লাব ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা চালানো। সেই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিলো ব্রিটিশদের অস্ত্রশস্ত্র লুট করা এবং রেল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। অভিযান শুরু হয় ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল রাত আনুমানিক দশটায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী গণেশ ঘোষের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী পুলিশ অস্ত্রাগারের এবং লোকনাথ বাউলের নেতৃত্বে দশজনের একটি দল সাহায্যকারী বাহিনীর অস্ত্রাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা গোলাবারুদের অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। বিপ্লবীরা সফলভাবে টেলিফোন এবং টেলিগ্রাফ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন এবং রেল চলাচল বন্ধ করে দেন। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি চট্টগ্রাম শাখা এই নামের অধীনে সর্বমোট ৬৫ জন বিপ্লবী সেই বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন। সফল বিপ্লবের পর বিপ্লবী দলটি পুলিশ অস্ত্রাগারে সমবেত হন এবং সেখানে মাস্টারদা সূর্য সেনকে মিলিটারী স্যালুট প্রদান করা হয়। সূর্য সেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করেন। রাত ভোর হবার পূর্বেই বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম শহর ত্যাগ করেন এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে যাত্রা করেন।অল্প কিছুদিন পরে পুলিশ বিপ্লবীদের অবস্থান চিহ্নিত করেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাস সংলগ্ন জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া বিপ্লবীদের কয়েক হাজার সৈন্য ঘিরে ফেলে ১৯৩০সালের ২২শে এপ্রিল ।দুই ঘন্টার প্রচন্ড যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০ থেকে ১০০ জন এবং বিপ্লবী বাহিনীর ১২ জন শহীদ হন।তারা হলেন, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, হরিগোপাল বল, মতিলাল কানুনগো, প্রভাসচন্দ্র বল, শশাঙ্কশেখর দত্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, এবং অর্ধেন্দু দস্তিদার। জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে অংশ নিয়ে পলায়ন করতে সক্ষম হলেও পরবর্তীকালে পুলিসের আক্রমণে দুজন শহীদ হয়েছিলেন আর তারা হলেন অপূর্ব সেন এবং জীবন ঘোষাল।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সূর্য সেনের ফাসির মঞ্চ। বাংলাদেশ সরকার এটি একটি স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে সংরক্ষন করে রেখেছেন।
সূর্য সেন ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে তার লোকজনকে পার্শ্ববর্তী গ্রামে লুকিয়ে রাখে এবং বিপ্লবীরা পালাতে সক্ষম হয়। কলকাতা পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন গ্রেফতার হয়। কয়েকজন বিপ্লবী পুনরায় সংগঠিত হয়।১৯৩২ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে দেবপ্রসাদ গুপ্ত, মনোরঞ্জন সেন, রজতকুমার সেন, স্বদেশরঞ্জন রায়, ফণিভূষণ নন্দী এবং সুবোধ চৌধুরী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে এবং এক মহিলা মারা যায়। কিন্তু তাদের পরিকল্পনায় বিপর্যয় ঘটে এবং দেবপ্রসাদ গুপ্ত, মনোরঞ্জন সেন, রজতকুমার সেন, স্বদেশরঞ্জন রায় নিহত হয় এবং ফণিভূষণ নন্দী এবং সুবোধ চৌধুরী আহত হন এবং ধরা পড়েন। ১৯৩০ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ২২ কর্মকর্তা ২২০ জন বিপ্লবী দ্বারা নিহত হয়। দেবী প্রসাদ গুপ্তের ভাই আনন্দ প্রসাদ গুপ্তকে বিচারের মাধ্যমে নির্বাসন দেওয়া হয়।১৯৩৩ সালে মাস্টারদা সূর্যসেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারের মৃত্যুদণ্ডের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম যুব বিপ্লবী দলের চার জন সদস্য ইউরোপীয় ক্লাব পল্টন মাঠে ইংরেজদের ক্রিকেট খেলার সময় ১৯৩৪সালের ৭ই জানুয়ারি তারিখে বোমা এবং রিভলভারের সাহায্যে কয়েকজন অফিসারকে আক্রমণ করেন। আর তাতে পুলিস সুপার পিটার ক্লিয়ারি নিহত হন এবং কয়েকজন শ্বেতাঙ্গ আহত হন। মিলিটারির পাল্টা আক্রমণে ঘটনাস্থলে নিত্যরঞ্জন সেন এবং হিমাংশুবিমল চক্রবর্তী নিহত হন। কৃষ্ণকুমার চৌধুরী এবং হরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী গ্রেপ্তার হন।বিচারে দুজনেরই ফাঁসি হয় এবং ১৯৩৪ সালের ৭ই জানুয়ারি কৃষ্ণকুমার চৌধুরীর ফাঁসি বহরমপুর জেলে কার্যকর করা হয়। একই দিন হরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সূর্য সেনের ফাসির মঞ্চ। বাংলাদেশ সরকার এটি একটি স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে সংরক্ষন করে রেখেছেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় অনন্ত সিং, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, লালমোহন সেন, সুবোধ চৌধুরী, ফণিভূষণ নন্দী, আনন্দ গুপ্ত, ফকির সেন, সহায়রাম দাস, বনবীর দাসগুপ্ত, সুবোধ রায় এবং সুখেন্দু দস্তিদার এদের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড দেওয়া হয়।হামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিচার সমাপ্ত হয় ১৯৩২ সালের ১ই জানুয়ারি এবং রায় ঘোষণা করা হয় ১৯৩২ সালের ১ মার্চ । আসামীদের মধ্যে ১২ জনকে নির্বাসন, ২ জনকে তিন বছরের জেল এবং বাকি ৩২ জনকে খালাস দেওয়া হয়। সূর্য সেন গৈরলা গ্রামে ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে বৈঠক করছিলেন কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত, ব্রজেন সেন আর সুশীল দাসগুপ্ত। পুরস্কার টাকা বা ঈর্ষা, বা উভয়ের জন্য, ব্রজেন সেনের সহোদর নেত্র সেন সূর্য সেনের উপস্থিতির খবর পুলিশকে জানিয়ে দেয়। সেখানে অস্ত্রসহ সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়েন।কিন্তু নেত্র সেন টাকা পাওয়ার আগেই বিপ্লবীরা তাকে মেরে ফেলে।১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি তারকেশ্বর দস্তিদারসহ সূর্য সেনকে ব্রিটিশ সরকার ফাঁসি কার্যকর করে।

তথ্যসূত্রঃ পূর্ণেন্দু দস্তিদার (২০০৯)। স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম। ঢাকা: অনুপম প্রকাশনী। পৃ: ১২২।
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৭৮, ১৯৩।
সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৫৭, ৮৬৪,।
পাল, রুপময় (১৯৮৬)। সূর্য সেনের সোনালি স্বপ্ন। কলকাতা: দীপায়ন। পৃ: ২২৮।





মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৪৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সূর্য সেনকে নিয়ে লেখা আগেও পড়েছি, এখনও পড়লাম ভাল লাগলো।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা মোঃ মাইদুল সরকার ভাই ।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:২১

গেম চেঞ্জার বলেছেন: তাঁদের জন্য আজীবন শ্রদ্ধা!!

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ গেমু ভাই । বহুদিন পর ব্লগে আপনার দেখা পেলাম ভাই ।

৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:৪৯

চুলবুল পান্ডে বলেছেন: ওরা ছিল হিন্দু মহাসভার অনুসারী, এদের চ্যালারাই আজ ভারতে ক্ষমতায়।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৫

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ চুলবুল পান্ডে ভাই ।

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

আল ইফরান বলেছেন: ইতিহাসের গতিপথ কিন্তু ভিন্ন কথা বলে।
চট্রগ্রামের অস্ত্রাগার লুন্ঠনের নায়করা কিন্তু স্বাধীন বাংলা চায় নাই, সো তাদের নিয়ে এত গর্বিত/ উচ্ছসিত হওয়ার কিছু আমি দেখি না।
যদি তারা সফল হতো তাহলে আজকে আপনার আর আমার সামুতে লেখা লাগতো না, বড়জোর ক্ষেত-খামারে কামলা দেয়া বা ওপার বাংলায় গিয়ে কেরানীর কাজ করা লাগতো।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৬

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভালো বুঝেন বলে ।

৫| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


ওঁদের প্রভাব ছিলো চট্টগ্রামে; ঘটনার ৪১ বছর পরে, ১৯৭১ সালর ২৫ শে মার্চ, পাকীরা চট্টগ্রাম দখল করতে পারেনি।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ভালো কথা বলেছেন ভাই ।

৬| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৩৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ভালো লাগল ।

৭| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৫৩

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: সন্ত্রাসবাদ ব্যতিরেকেই ভারত স্বাধীনতা পেত। ব্রিটিশ রাজ তখন কলোনীগুলো ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল।

৮| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬

ব্লগ মাস্টার বলেছেন: সুন্দর পোস্ট ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.