নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌফিক জোয়ার্দার

তৌফিক জোয়ার্দার

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট শেষ করে দেশে ফিরেছি ২০১৫ সালের শেষ দিকে। যারা ফলো করতো, তাদের কাছে বারবারই বলেছি দেশে ফিরবো। সামুতে লিখেওছিলাম এ নিয়ে। অনেকেই সাধুবাদ দিয়েছিলেন, আবার অনেকে প্রকাশ করেছিলেন সন্দেহ ও অনাস্থা। এ ক’টা বছর কেটে গেল ফিরে আসার ধাক্কাটা সামলাতে। অনেক দিন পর আবার এলাম সামুতে। আবারো লেখালেখির দুর্মর আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে। আবার ঘন ঘন দেখা হবে বন্ধুরা।

তৌফিক জোয়ার্দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতায় সময় এবং বাস্তবতার প্রয়োজনীয়তা

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:১৯

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সবটুকু খারাপ তা যেমন বলা যাবেনা, একে নির্ভেজাল আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করলেও সত্যের অপলাপ হবে। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজিনির্ভর শিক্ষাক্রমে প্রাচীন ভারতীয় ও বাংলার আদি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা, যা হাজার বছর ধরে এ ভূখন্ডে বিরাজমান ছিল, ক্রমান্বয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বাধীনতার পরও আমাদের ইতোমধ্যে ভোঁতা হয়ে যাওয়া স্বজাত্যবোধের কারণে সেই প্রাচীন ঐতিহ্যসঞ্জাত শিক্ষার নির্যাস আমাদের শিক্ষাক্রমে বিশেষ স্থান করে নিতে পারেনি। উপরন্তু, ঔপনিবেশিক শিক্ষার সাথে যুক্ত হয়েছে নব্য পুঁজিবাদী ও বস্তুতান্ত্রিক উপসর্গ সমূহ। যে শিক্ষায় অর্থ সমাগমের সম্ভাবনা নেই, সে শিক্ষার প্রয়োজন কী- এমন একটি মনোভাব যেন শিক্ষাক্রমের পরতে পরতে প্রচ্ছন্ন অবস্থান ঘোষণা করে চলেছে। এ কারণেই, কবিতা এবং এর ছন্দ, অলঙ্কার ও রসতত্বের আলোচনা বহু আগেই আমাদের শিক্ষাক্রম থেকে নিরবে তিরোহিত হয়েছে।

আগে, কবিতা ও তার গঠন নৈপুণ্য জানতে বা বুঝতে বাংলা সাহিত্য বা ভাষাতত্বের পন্ডিত হবার প্রয়োজন পড়তোনা। মায়ের দুধে শিশুর যেমন সহজাত অধিকার, ভাষা ও সাহিত্যে- লিখতে পড়তে জানা মানুষ মাত্রেরই তেমন সহজাত অধিকার স্বীকৃত ছিল। তাই কাজী নজরুল ইসলাম সহ অনেক কবি সাহিত্যিককেই অত্যন্ত উন্নত ভাষাজ্ঞান ও ছন্দ-অলঙ্কার-রসতত্বে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষার দ্বারস্ত হতে হয়নি। প্রাথমিক বা বড়জোর মাধ্যমিক স্তরের গড়পড়তা শিক্ষাই কবিতার সহায়-সস্ত্র-হাতিয়ার যোগান দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল।

কিন্তু বর্তমান শিক্ষাক্রমের দিকে তাকালে- ওখানে কবি হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় রসদগুলো কি আদৌ চোখে পড়ে? পড়ার কথা নয়, কারণ কবিতা লিখে নগদ অর্থযোগের অপার সম্ভাবনা কোথায়? কাজেই কবিতা এবং কাব্য আমাদের ভোগবাদী, উগ্র পুঁজিবাদী ও বস্তুবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে স্বভাবতই নির্বাসিত। একারণে কবিতা সম্পর্কে মানুষের পার্সেপশন এখনো অন্তত শতাব্দীখানেক পিছিয়ে আছে। কবি বলতে এখনো মানুষ সেই অষ্টাদশ শতকে বাঙ্গালির পরিধেয় ঢোলা পোষাক, কাঁধে ঝোলানো চটের ব্যাগ, শ্মশ্রুমন্ডিত মুখমন্ডল- এমন ইমেজারি স্টেরিওটাইপের বাইরে যেতে পারনো।

দুঃখের বিষয়, কবি যশোপ্রার্থী অনেক যুবকও এই তথাকথিত ‘কবি কবি ভাব’ চর্চাকে বাস্তবিক কবিতার আঙ্গিকগত উৎকর্ষচর্চার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকে। কবিতায় তাই সময় এসে থমকে আছে সেই অষ্টাদশ কি বড়জোর ঊনবিংশ শতাব্দীতে। পাশ্চাত্য কবিতায় যেখানে স্থান করে নিচ্ছে ঋজু ভাষা, সমসাময়ীক রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি কূটনীতি, বাংলা কবিতা সে তুলনায় কোথায় আছে তা ভেবে এবং মেপে দেখার প্রয়োজন আছে। পাশ্চাত্য কবিতার বিষয়বস্তু যখন একটি পেট্রল পাম্প (Elizabeth Bishop এর The Filling Station), দড়িতে শুকাতে দেয়া কাপড় (Richard Wilbur এর Love Calls Us to the Things of the World), সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা কাঁচ (Amy Clampitt এর Beach Glass) ইত্যাদি, বাংলা কবিতায় এমন আধুনিক দিনানুদৈনিক অনুষঙ্গ কি স্থান করে নিতে পেরেছে?



লেখাটি শিল্প সাহিত্য ও সমাজ রাজনীতির পত্রিকা ‘সৃজন’-এর প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: ক্রেতা: ওই মাছের দাম কত?
বিক্রেতা: স্যার বাম পাশেরটা ৬০০ টাকা আর ডান পাশেরটা ১০০০ টাকা।
ক্রেতা: ওই বেটা, চোখে কি ঠাডা পড়ছে? দুইটা মাছই তো একই সাইজের। দামের এত হেরফের কেন?
বিক্রেতা: স্যার, ডান পাশেরটা মেধাবী মাছ। তাই দাম একটু বেশি।
ক্রেতা: কিছু খাইছিস নাকি উলটাপালটা? মাছ আবার মেধাবী কেমনে হয়?
বিক্রেতা: স্যার এইটা মেধাবী মাছ। দুইবার জাল থেকে ছুইটা গেছিল। তিন বারের চেষ্টায় ধরতে পারছি।
ক্রেতা: হুমম বুঝতে পারলাম তোর মেধাবী মাছের রহস্য। তা দাম বেশি নিবি কেন?
বিক্রেতা: স্যার, টিভিতে ওই বিজ্ঞাপন দেখেন নাই? ঢেউটিনের বিজ্ঞাপন। ওই বিজ্ঞাপনের ভাষায় আমিও বলতে চাই 'মাছ যেইটা মেধাবী; দাম তার একটু বেশি-ই'।

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: :D

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৫৯

ডি মুন বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।

বাংলা কবিতার বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে বৈ কি।
আমরা সমসাময়িকতা কবিতায় সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ।

তবে কথা হলো - টাকা-পয়সার চিন্তা করেই ডিজিটাল জনগন কুল পাইতেছে না, কবিতা নিয়ে ভাববে কখন? আর কবি-সাহিত্যিকেরা তো নানান সংঘ মিটিং, তোষামুদি এইগুলা নিয়ে বিজি থাকে। কি আর করা যাবে ! আমি আগামী ১০০ বছরে বাংলা কবিতার কোনো ভবিষ্যত দেখি না। অতীত নিয়া তৃপ্ত থাকা ছাড়া আর গতি কি এখন । :)

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:১৮

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: আপনার হতাশাকে আমি বুঝি। তারপরও বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথের যুগেও কিন্তু টাকা পয়সার চিন্তা মানুষের কম ছিলনা; তবুও সাহিত্য এগিয়েছে। লাতিন আমেরিকার সাহিত্যও তাদের দারদ্র্য সত্ত্বেও এগিয়েছে। তাই, টাকা পয়সার চিন্তার কারণে কবিতা বা সাহিত্য এগুবেনা, তা হয়তো ঠিক নয়।
আপনার দ্বিতীয় পয়েন্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে, রাজনীতিকিকরণ তো সব জায়গায় ঘটেছে; সাহিত্যের অঙ্গন আর বাদ থাকে কী করে? এর থেকে বেরিয়ে আসাটা আসলেই জরুরী। শুধু কবিতা বা সাহিত্যের ক্ষেত্রে নয়, সব ক্ষেত্রেই।
তাই বলে ভাববেননা আমি রাজনীতিবিমুখতার কথা বলছি। আমি বলছি, রাজনৈতিক তোষামুদি তথা অন্ধ দলবাজির কথা- যা থেকে এ জাতির বেরিয়ে আসাটা জরুরী।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৩৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

কবি,


বাস্তব কথা বলেছেন!

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪২

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: একখানা আধুনিক অনুকাব্য পড়িয়া জানিয়েন ইংলিশ কবিদের আশেপাশে ঠাই হইবে কিনা। সমসাময়িক বিশ্ব নিয়া লেখিয়াছিলুম।

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:২১

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: কার আশে পাশে ঠাঁই হবে কি হবেনা বলতে পারবোনা, তবে অনুকাব্যগুলো খুব সুন্দর হয়েছে। পুরনো গৎবাঁধা বিষয়বস্তু ও আঙ্গিক থেকে বের হয়ে আসা দরকার। আমি নিজেও তা পেরেছি তা-ও নয়। তবে দরকার যে আছে সে কথা বলতে পারি। আপনার কবিতাগুচ্ছ সেই ’বের হয়ে আসতে চাওয়া’র ইঙ্গিতবহ বৈকি। অনেক শুভেচ্ছা।

৫| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:১১

ঋতো আহমেদ বলেছেন: শিক্ষা ব্যবস্থায় কবিতার গুরুত্ব এদেশে কম এ কথা ঠিক কিন্তু পাশ্চাত্য কবিতার চেয়ে বাংলা কবিতা যে পিছিয়ে আছে আপনার এই ধারনা ভুল। বাংলা কবিতা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে,-- হচ্ছে। পড়তে হবে অনেক। পড়ে পড়ে জানতে হবে। গতকালের, আজকের ও আগামীকালের বাংলা কবিতাকে।

০৯ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৩২

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: বিশ্ব সাহিত্যে বাংলা সাহিত্যিকদের যে অবস্থান, তার দিকে তাকালে মনে হয়না আমাদের অবস্থা খুব একটা ভাল। বরং অনেক সীমাবদ্ধতা সত্বেও লাতিন সাহিত্য অনেক এগিয়েছে। এমনকি আফ্রিকার সাহিত্যও গত কয়েক বছরে নোবেল সহ নানা পুরস্কার জিতে আসছে। আপনার কথা ঠিক, বাংলা ক্লাসিক সাহিত্যের ক্ষেত্রে। সমসাময়ীকদের মধ্যে সেরকম কবি বা সাহিত্যিক কে আছে বলুনতো, যিনি বিশ্ব-আসরে স্থান করে নিতে পারেন? হয়ত আছে, কিন্তু আমর নজরে পড়েনি।

”পড়ে পড়ে জানতে হবে। গতকালের, আজকের ও আগামীকালের বাংলা কবিতাকে।” -- সহমত।

৬| ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮

ঋতো আহমেদ বলেছেন: কথা হচ্ছিল কবিতা নিয়ে। নোবেল ও অন্যান্য পুরষ্কার জেতাটাই যদি মাপকাঠি হয় তাহলে আর কথা বলার কোনো মানে হয় না।
হৃদয়, মন ও মননের চোখ খুলুন। পড়ুন। জানুন। অনেককেই পাবেন। শুভ কামনা।

৭| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৯

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: মাপকাঠি নাহয় আপনিই বলে দিন। এরপর তার আলোকেই কথা বলা যাবে। পড়ুন, জানুন এসব বারবার লিখে কী ইঙ্গিত করতে চাচ্ছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.