নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবেগ ও অনুভূতি খুব ঠুনকো ! ক্ষনে ক্ষণে রুপ বদলায়। ক্ষণে ক্ষণে উৎস বদলায়।

তওসীফ সাদাত

কল্পনায় যদি বাস্তবতার স্বাদ পাওয়া যেত। তবে বাস্তবতায় কেউ টেনে হিচড়েও কাওকে রাখতে পারতো না।

তওসীফ সাদাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুভি রিভিউঃ Manto (2018)

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১০:৪৯



হয়তো বা কাঁটাতারে জড়িয়ে যায় শত সহস্র স্বপ্ন। যার আঘাতে নতজানু হয় কত কবির কাব্য, গদ্য-কারের গদ্য। যার অস্তিত্ব দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জুড়ে জেগে রয় সাক্ষী হয়ে কত করুন আর্তনাদের। আপনি, আমি বা আমরা ইদানীং বড্ড আমি কেন্দ্রিক। আমাদের চিন্তাধারা, চেতনা, বিবেক সবকিছুই কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে আজকাল। আজকাল, সেই সাহিত্যের ধারটাও নেই বৈকি। নেই সেই শরীরের লোম দাঁড়ানো উল্লাসিত সৃষ্টির মাধুর্য। আর এই ভোঁতা মিইয়ে পরা মানুষগুলো, প্রচুর একঘেয়ে যান্ত্রিকতায় খুঁজে নেয় নিজ নিজ ওম। আজ আমরা এক পা বাড়িয়ে দু পা'য়ে গিয়েই চিন্তিত হই, স্বার্থ কই! স্বার্থ কই ! স্বার্থ কই !

একটা সময় এই পৃথিবীটা কতই না বড় ছিল। ধীরে ধীরে মানুষ সে বড় পৃথিবী কে কেটে ছিঁড়ে ছোট ছোট টুকরোয় পরিণত করেছে। জগত টা এখন বেশ ছোট। আচ্ছা এই ছোট্ট জগতেই, পাশের ঘরের মানুষটি কেমন আছে ? সেটা জানেন তো ? এই ছোট্ট জগতেই, পাশের বাড়ীর মানুষটি আজ ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া লাশটার নামটা যেন কি ? অদ্ভুত সব আলোচনা, অদ্ভুত অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নের ভাণ্ডার নিয়ে বসেছি। বিরক্ত করছি আপনাদের খানিক। আজকাল মানুষ আবার খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে ওঠে জেনেছি। সবার বিবেক সদা জাগ্রত, সিদ্ধান্ত নিতে তিনবার কি ভাবে ? খুব সহজেই আজকাল মানুষ চিনে নেওয়া হয়। শুধু সেই মানুষগুলোকে বুঝে ওঠা হয় না। আর এসব কথাও আজকাল বড্ড সেকেলে আর আবেগি। কি লাভ এসব বকে ? আসুন প্রসঙ্গে আসি তবে, যে চলচ্চিত্র নিয়ে লিখতে বসেছি আজকে !

মনে আছে তো ? দেশ বিভাগ ? এই "দেশ বিভাগ" বলতে কোনটা বোঝা উচিত ? দেশ তো কতবার বিভক্ত হল ! ইতিহাসের শুরু থেকে, সৃষ্টির শুরু থেকে, কাঁটাতারের সীমানা ছোট হতে হতে কত সহস্র ভাগে বিভক্ত। আজকাল আবার সেই কাঁটাতার মানুষের মনেই রয়। এ'ঘর কিংবা ও'ঘর বিভক্ত করা না যেতে পারে, ভিন্ন ভিন্ন পাসপোর্ট না হতে পারে। কিন্তু মনের কাঁটাতারের কিন্তু শক্ত অবস্থান দু ঘরের মাঝে। দুটো পরিবারের মাঝে। জাত,সমাজ, বংশ এসব নাহয় থাক আজ। অন্যদিন হবে। তো, যা বলছিলাম আর কি ! দেশ বিভাগের সময় নেহেরু আর সোহরাওয়ার্দির ধর্ম-কেন্দ্রিক বিভক্তিকরণের নীতি তারা দুজন নিজস্ব বুদ্ধিতেই সফলতার মুখ দেখিয়েছিলেন বৈকি। ব্রিটিশ-মুক্তির এই ক্ষণেও সূক্ষ্মভাবে মাথাটা যে কাটা পরে গেলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রচুর বিচক্ষণতার সহিত নিজেরাই নিজেদের মাথা কাটার ফল আজ অব্দি চলছে, চলবে। যাহোক, এই ধর্ম-কেন্দ্রিক বিভক্তিকরণের ফলে অনেকেই তার জন্মস্থান চিনেছে নতুন করে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিন্ন ধর্মের মানুষগুলো! হিন্দুরা চিনেছে হিন্দুস্তান, আর মুসলমান চিনেছে পাকিস্তান। চিনিয়েছে কারা ? এইতো, একে অপরকেই। নিজ ঘর ছেড়ে, নিজ গণ্ডি ছেড়ে ক্রোশ ক্রোশ দূরে কোন ভাড়াটে মাটির কোলে ঠাই নিয়েছে কত মানুষ। আর নিজ গণ্ডির মৃত্যু দেখেছে নীরবে। আবার, আপন জগতের মৃত্যু সয়ে, নতুন জগত মানিয়ে নিতে না পেরে ঝরে গেছে কেউ কেউ। আর তেমন ঝরে যাওয়ার গল্পটাই এই চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মীয় বিভাজন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো কারো কারো জন্যে, আর সেই কালসাপ কতজনের প্রাণ নিয়েছে সেটা অন্য এক অধ্যায়। এই অধ্যায়ে শুধু একজন ব্যক্তিকে নিয়ে।

বোম্বের আপন গণ্ডী, নিজস্ব জীবনধারা আর নিজস্ব পরিবেশই ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় এক লেখক, মুসলিম হবার কারণে। যা কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। সেই গল্প নিয়েই এই চলচ্চিত্র।

অভিনয় কিংবা চলচ্চিত্রের অন্যান্য টেকনিক্যাল নিয়ে আসলে কখনো আমি খুব একটা কিছু বলি না, কারণ এমন রিভিউ সবাইই কম বেশি লিখে থাকেন। আমার মূল কথা থাকে চলচ্চিত্রের মূল ভাব কিংবা মূল গল্প নিয়ে। তবে অভিনয় নিয়ে যদি ছোট করে কিছু বলতে হয়। সেক্ষেত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির নাম নেওয়ার সাথে সাথেই হয়তো আপনারা যারা নিয়মিত কম বেশি চলচ্চিত্র দেখায় অভ্যস্ত তারা বুঝে নিয়েছেন। নিরাশ হবেন না আশা করি। আর রিভিউ নিয়ে কিছু বলার থাকলে মন্তব্যে জানালে খুশি হবো। আর চলচ্চিত্রটি কেমন লাগলো, সেটাও জানাতে ভুলবেন না যেন।


আই এম ডি বি লিংক

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ সকাল ১১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা দেখবো দেখবো করে দেখা হয়নি।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৩৮

তওসীফ সাদাত বলেছেন: আমারো ! দেখতে পারেন, বেশ ভালো।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:০৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শিল্পী - সাহিত্যিকদের সঙ্গে সমাজের বোঝাপড়াটা আদতে কি রকম, সেটা বুঝবার জন্যে এই মুভিটা ভালো। মান্টো তাঁর ঠাণ্ডা গোশত গল্পটির জন্যে পাকিস্তানের কোর্টে অশ্লীলতার মামলা খেয়েছিলেন, সেই মামলার ঘটন - অঘটন মুভির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। পুরো সিনেমার যে দৃশ্যের সঙ্গে সবচে বেশী রিলেট করতে পেরেছিলাম, তা হচ্ছে - কোর্টে দাঁড়িয়ে মাওলানা মৌলভি উকিল ব্যারিস্টাররা মান্টো'র ব্যাপারে নানা তীর্যক বাক্যবান নিক্ষেপ করছে, মান্টো'র কোন বিকার নেই, কিন্তু যেই উর্দু কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ কাঠগড়ায় এসে বললেন - মান্টো'র গল্পটাকে তিনি অশ্লীল ও সমাজের জন্যে ক্ষতিকর মনে করেন না, তবে সাহিত্যকর্মের মাপকাঠীতে ওটা তেমন উঁচুদরের সাহিত্য নয়, এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মান্টো, নিজের সাহিত্যিক চেতনার চাপা গর্বে আঘাত লাগায় যে ফয়েজ আহমদ ফয়েজের দিকে যে আগুনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, এই দৃশ্যটি। নির্মাতা নন্দিতা সেন নিজে একজন শিল্পী বলেই শিল্পীমানসের এই গুঢ় উন্মোচন, এতটা শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। ক্যামিও রোলে ঋষি কাপুর, জাভেদ আখতারের উপস্থিতি ভালো লেগেছে। বাঙ্গালী দর্শকের জন্যে ছবিতে হোঁচট খাওয়ার মত এক মাত্র বস্তু ছিল ছবি জুড়ে কাব্যিক উর্দুতে চরিত্রাবলির সংলাপের ব্যবহার, যে উর্দু কলোকুইয়াল উর্দুর মতো নয়।

পাকিস্তানেও কয়েকবছর আগে মান্টো'র ওপর একটা মুভি বানিয়েছে, সেটার রিভিউ বলিউডের মান্টোর থেকে ভালো। দেখা হয়ে ওঠে নি যদিও।

সুন্দর পোস্টটির জন্যে ধন্যবাদ।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৪

তওসীফ সাদাত বলেছেন: একদম। আসলে আমি নর্মালি মুভির গল্পের কনসেপ্ট নিয়ে লিখি, তাই যতটুকু সম্ভব মূল গল্প নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাই। আপনি যেই কথাগুলো বললেন, আমার মাথায় ও ঠিক এভাবেই কাজ করেছিলো অনেকটা।

আমার কাছেও সবথেকে বেশি যে ব্যাপারটা আলোচ্য মনে হয়েছিল, সেটা মান্টোর সাহিত্য সত্তায় ফয়েজের আঘাত করার ব্যাপার টা। এরকম কত হার না মানা সম্ভাবনাময় চরিত্র সমাজ ও সমাজের মানুষের কাছে বন্দি হয়েছিলো, আছে, থাকবে। তাদের নিয়ে জীবদ্দশায় আলোচনা খুব একটা হয় না। কারণ, হারাইলে মর্ম বুঝার যে চিরাচরায়িত স্বভাব আমাদের মাঝে বিদ্যমান তা কখনোই যাবার নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.