নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি যা তা আমি নিজেই। অন্যকিছু তুলনার বাহিরে। আমার মতো পৃথিবীতে দ্বিতীয় নেই!

তাজুল ইসলাম নাজিম

তাজুল ইসলাম নাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমিও পরিচয় দিতে পারতাম ; আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯

"তুই কিসের জন্য বিজয় দিবস উদযাপন করবি"?
আজ জাতি ৪৪তম বিজয় দিবস উদযাপন করছে। আমিও চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব আনন্দ করতে। মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। বই পত্র আর লোকমুখে যুদ্ধের ইতিহাস শুনে বুকটা আনন্দে ভরে উঠলেও কোথায় যেন একটা কষ্ট লুকিয়ে থাকে। কে যেন পিছন থেকে ডেকে বলে না তোর জন্য বিজয় দিবস নয়। তুই কিসের জন্য বিজয় দিবস উদযাপন করবি?
তাহলে শোন, এক টগবগে যুবক। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২০ বছর। দেশে তখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। মার্চ পেরিয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়। চারদিকে যুদ্ধের ধামামা। ছেলেটির ঘরে মন বসেনা। নানান চিন্তা মাথায় বাসাবাধতে থাকে। মনে মনে চিন্তা করলো যুদ্ধে যাবে। কিন্তু কিভাবে?
বাড়ির ছোট ছেলে বলে সবার আদর আর বৃদ্ধ মায়ের কথা মনে করে এক পা বাড়ালে দু পা পিছিয়ে আসে। কিন্তু ২০ বছরের তরুণ বলে কথা! কোন মোহ তাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। অবশেষে সমবয়সী কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বাড়ির সবার অগোচরে একদিন পরিবারের মায়া ছেড়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
সেই যে গেল। ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর ৩নং সেক্টরে যুক্ত হয়ে যুদ্ধের বাকিটা সময় কাটিয়েছেন রনাঙ্গণে। কি সে কষ্ট, একদিন খেলে তো দুইদিন খানা নেই। কখনো পঁচা লাশের পাশে কখনো মানুষের মলমূত্র কখনো বা ঝোপঝাড়ে রাত কাঁটাতে হয়েছে। এর মাঝে এক সাথী গ্রাম থেকে ঘুরে এসে খবর দেয় যুবকটিকে তাঁর মা তাঁর জন্য প্রাগল প্রায়।তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছে। তখন পৃথিবীটা যেন ভেঙে পরে তাঁর মাথায়। কি করবে কিছুই ভেবে পায় না। হ্যাঁ, সব দোষ তারুন্যের। বিজয় ছাড়া সামনে সে কিছুই দেখে না। তাই বিজয়ের অপেক্ষায় রইলো। দেখতে যাওয়া হলোনা মাকে এই ভেবে যদি আর আসতে না দেয়?
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর থেকেই খবর এলো মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা মুখী যাত্রা শুরু করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তারা যাত্রা শুরু করলো। ডিসেম্বর ১৫ তারিখ ১৯৭১ বিকেল বেলা ঢাকায় পৌছালো তাদের দল। ঢাকা ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজে তাদের থাকার ব্যাবস্থা হলো। ইতিমধ্যে, চারদিক থেকে বিজয়ের বার্তা আসতে শুরু করেছে। সেকি আনন্দ তাঁর চোখে মুখে।
বিজয়ের সংবাদ হয়তো আর চাপা দিয়ে রাখতে পারছিলেন না। তাই তো সেদিন রাতেই ছুটি নিয়ে মাকে দেখতে ছুটে এলেন ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার টেংগারচর নামের প্রত্যন্ত এক গ্রামে। দীর্ঘ ৯মাস পর সন্তানের দেখা পেয়ে মা যেন নতুন জীবন ফিরে পেলো। কিন্তু অভাগী মায়ের সে আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রাতেই ফিরে যেতে হলো তাকে। বাড়ির সবাই আবার ফিরে যেতে নিষেধ করলেও তাকে যে যেতেই হবে। এখনো যে বিজয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। তাই সে রাতেই ফিরে গেলে তাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজে। অবশ্য, এই ৯ মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণকালীন সময় ছাড়া আর কোথাও স্থায়ী ঠিকানা হয়নি।
অবশেষে ১৬ তারিখ বিকালে এলো চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা। বিজয়ের আনন্দে ভাসলো বাঙ্গালী জাতি। বিশ্বের বুকে সৃষ্টি হলো নতুন বিজয়ের ইতিহাস।
১৬তারিখ রাতেই আবার যাত্রা শুরু। সেখানে থেকে সোজা যশোর ক্যান্টনমেন্ট। বাকি যে কয়েকদিন চাকুরী করেছিল সেখানেই ছিলো।
পরের ইতিহাস সবারই জানা। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা উন্নত জীবনের জন্য সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে চলে যেতে চায় বা পূর্বের পেশায় যেতে চায় তারা যেতে পারেন। দূরন্তপনা সেই যুবকটি তখন চাকুরী ছেড়ে দিয়ে চলে আসে বাড়িতে।
এতোক্ষণ তোকে যে যুবকের গল্প শুনাইলাম সে আর কেউ নয় রনাঙ্গণে যুদ্ধ করা তোর বাবা। তুই সেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহার সেই তুই কিনা আজ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে পরিচয় দিতে পারসনা। কারণ সার্টিফিকেট নামের যে সোনার হরিণ সেটি নাই তোর বাবার!!
হ্যাঁ, বন্ধুরা রনাঙ্গণে যুদ্ধ করা এক অভাগা মুক্তিযুদ্ধার সন্তান আমি আমরা দশ ভাইবোন। বিধিবাম আমরা সেই পরিচয় কারো সামনে দিতে পারি না। কারণ আমার বাবার যে সার্টিফিকেটটি ছিলো তা হারিয়ে ফেলার পর অনেক চেষ্টা করেও তা আজও তুলতে পারেনি। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কত যায়গায় না ঘোরাঘুরি করলো আমার বাবা! কত আবেদন করলো এ পর্যন্ত তার কোন হদিস নেই! না পায়নি আজও বাংলাদেশ সরকার আমার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিতে পারেনি। অথচ সরকারের দায়িত্ব ছিলো জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের খুজে বের করার।
আপনারাই বলুন প্রতি বছর যে বিজয় দিবস আসে সেটা কি আমাদের জন্য? সেই সকল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্যে যারা রনাঙ্গণে যুদ্ধ করেও আজও পর্যন্ত রাষ্ট্রের সীকৃতি পায়নি?

বিঃদ্রঃ গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে একজন অস্বীকৃতি প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার ফেসবুকে লেখাটি পোস্ট করেছিলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.