নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি যা তা আমি নিজেই। অন্যকিছু তুলনার বাহিরে। আমার মতো পৃথিবীতে দ্বিতীয় নেই!

তাজুল ইসলাম নাজিম

তাজুল ইসলাম নাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বারবার বস্তি উচ্ছেদ নয়,স্থায়ী সমাধানে কাজে লাগানো যেতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০২



সমাজ ও রাষ্ট্রের কিছু সমস্যা আছে যা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। শূন্য থেকে শুরু হয়ে তা বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। সময়ের পরিবর্তনে এই সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আবার কিছু সমস্যা ব্যাক্তি ও দলীয় স্বার্থে ইচ্ছাকৃত ভাবে জিয়িয়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে যা আজ ডালপালা গজিয়ে সমাজকে চিবিয়ে খাচ্ছে।

জনবহুল আমাদের এই বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। নানা সমস্যার মধ্যে বস্তি সমস্যা আমাদের দেশে একটি বড় সমস্যা। জাতিসংঘের তথ্য মতে বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ লোক গৃহহীন(সূত্রঃ বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, পঞ্চম শ্রেণী ২০১৫)। এদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে দেশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বস্তিগুলোতে।

কারো কারো বস্তিতেও যায়গা হয়নি। আজ এখানে তো কাল সেখানে। নদীর উপর ভাসমান আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লোকের বাস। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ভূমিদস্যু, অথবা অবৈধভভাবে শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে এসব লোক আজ গৃহহীন।

শিক্ষার অভাব, খাদ্য ও পুষ্টিহানতা, পর্যাপ্ত নাগরিকসেবা বঞ্চিত এসব বস্তিবাসী সমাজ থাকে একপ্রকার বিচ্ছিন্নভাবে দিনের পর দিন চলে আসছে। অশিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে নানান সামাজিক অপরাধ ছড়িয়ে পরছে সমাজের পরতে পরতে। গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানির মতো অপরাধে জড়িয়ে পরছে বস্তিতে বেড়ে উঠা আগামী প্রজন্ম।

শহরের বেশিরভাগ বস্তি গড়ে উঠেছে সরকারি জায়গায়। বিশেষ করে রেলস্টেশনের খালি যায়গায়। এসব বস্তিবাসী নিয়ে প্রায় নানা সমস্যার কথা শুনা যায়। সরকারি যায়গা উদ্ধারে আদালতের রায় নিয়ে বস্তী উচ্ছেদ করতে কয়েকদিন পরপর ম্যজিস্ট্রেট নিয়ে হাজির হয় কর্তৃপক্ষ। সাথে থাকে সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। শুরু হয় বস্তিবাসী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ। এভাবে একবার উচ্ছেদের পর কয়েকদিন পর দেখাযায় আবারও বস্তি গড়ে উঠেছে। আবার কখনো কখনো বস্তিবাসীর প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ না করেই চলে যায়।

গত ২১ জানুয়ারী ২০১৬ রাজধানীর কল্যানপুরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের অধীন হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের জমিতে পোড়াবাড়ি নামে ছোট বড় প্রায় ৯টি বস্তি উচ্ছেদে নামে কর্তৃপক্ষ। এতে বস্তিবাসী ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষে পুলিশসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়(সূত্রঃ দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২২/১/২০১৬)। বস্তিবাসীর অভিযোগ মাত্র দুই ঘন্টার নোটিশে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। অন্যদিকে উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্বাধীন ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, উচ্ছেদের ব্যাপারে কয়েকদিন আগেই বস্তিবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উপরে উল্লেখ করেছি এসব বস্তিবাসী সবাই ভূমিহীন। জনবহুল এই দেশে বাধ্য হয়েই আজকের আধুনিক সভ্যতায় বসবাসের একেবারে অনুপযোগী বস্তিতে মানুষ বসবাস করছে। নিজেদের থাকার সামান্যতম সম্বল থাকলে কেউ এসব বস্তিতে বাস করতো না। মাথা গোজার আর যখন কোন উপায় থাকেনা তখনই কেবল মানুষগুলো কোনমতে বেঁচে থাকার জন্য বস্তিতে উঠে। এসব বস্তিতে শান্তির লেসমাত্র নেই। বস্তিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা সিন্ডিকেট।

প্রশাসনের ভাষ্যমতে, কয়েকদিন আগেই বস্তিবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। কয়েকদিন কেন দুই মাস বা দুই বছর সময় দিলেও কি বস্তিবাসী বস্তি ছেড়ে চলে যাবে? কোথায় যাবে তারা? ১৭ কোটি লোকের এই দেশে কোন যায়গা কিনে নির্দিষ্ট সময়ে গৃহ তোলে বসবাস করার নূন্যতম সক্ষমতা কি এসব বস্তিবাসীর আছে? আমাদের সবারই জানা সেই সক্ষমতা নেই হতদরিদ্র এসব বস্তিবাসীর।

তাহলে এসব নোটিশ দিয়ে লাভ কি? এরাতো এদেশেই নাগরিক। বেঁচে থাকার জন্য বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না করে কিছু সময়ের নোটিশ দিয়ে কেন তাদের উচ্ছেদ করা হয় বা উচ্ছেদের নাম করে বুলডোজার দিয়ে তাদের প্লাস্টিক, খড়কুটো ও পাতলা টিনশেড দিয়ে তৈরি শেষ সম্বলটুকু কেন কেড়ে নেওয়া হয়?

সরকারি জায়গা যেমন দখলমুক্ত থাকা দরকার তেমনি সারাজীবন বস্তিতে যাতে থাকতে না হয় সেজন্য বস্তিবাসীর সমস্যা সমাধানে একটি সমধান খুজে বের করা অবশ্যই দরকার। এজন্য প্রয়োজন স্ট্যাটেস্টিক পরিকল্পনা। এসব পরিকল্পনায় ঢাকা চট্টগ্রাম সিটির জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে।

সম্প্রতি সময়ে সরকার পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচরে জেগে উঠা চরে সরিয়ে নেওয়ার একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বলে বেশ কয়েকমাস আগে খবরে প্রকাশ পায়। সরকার এই পরিকল্পনা বাধ দিয়ে যদি মায়ানমারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সেই দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাবস্থা করে সেটাই হবে উত্তম।

এজন্য সরকারের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক লবিং ও মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করা। অন্যদিকে জেগে উঠা নতুন চরে বস্তিবাসীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একই ভাবে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের বিশাল পতিত জায়গায় তাদের বাসস্থানের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। একই সাথে এসব জেলাগুলোতে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে রাজধানী ঢাকা ও বানিজ্য নগরী চট্টগ্রামের উপড় জনসংখ্যার চাপ কিছুটা হ্রাস পাবে।

আয়তনের দিক দিয়ে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান দেশের এক – দশমাংশ। জনসংখ্যা বিবেচনায় যেখানে প্রায় এক থেকে দেড় কোটি লোকের বসবাস হওয়ার কথা সেখানে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ লোকের বাস এখানে। জনসংখ্যা বিবেচনায় রাজধানীর উপর জনসংখ্যার চাপ কমানো ও মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের কথা চিন্তা করে বস্তিবাসীদের ভূমি তথা বাসস্থান প্রাপ্তির মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার চাইলে তা করতে পারে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এই তিন জেলায় যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় তাহলে একদিকে যেমন ঢাকা, চট্টগ্রামের বস্তি সমস্যার সমাধান হবে অন্যদিকে বিশাল পতিত ভূমি চাষাদের আওতায় আসবে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এতে দেশের প্রবৃদ্ধি ও জিডিপি বৃদ্ধি পাবে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.