নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি যা তা আমি নিজেই। অন্যকিছু তুলনার বাহিরে। আমার মতো পৃথিবীতে দ্বিতীয় নেই!

তাজুল ইসলাম নাজিম

তাজুল ইসলাম নাজিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মঙ্গল তহবিল ও অসহায় জুম্ম কান্না

১১ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪১

রাংগামাটি জেলার ছোট্ট এক গ্রামে জন্ম আমার। পাহাড়ের সজীবতা, সবুজের সমারোহ আর কাপ্তাই লেকের কলতানে মুখরিত হবার কথা ছিলো আমার শৈশব। কিন্তু শান্তিবাহিনী নামক উগ্র সন্ত্রাসীদের কারনে সৃষ্ট আশান্ত পাহাড়ে বেড়ে উঠতে হয়েছে আমাকে। ছোটবেলা থেকেই শান্তিবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের সরকার আর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সেনাবাহিনী সম্পর্কে নানান নেতিবাচক ধারনা প্রদান করা হত আমাদেরকে। কিন্তু যতই সময় গড়িয়েছে আর আমি বড় হয়ে উঠেছি ততই দেখেছি যে সরকার এবং সেনাবাহিনী আমাদের পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। আপনারা মনে করতে পারেন যে, একজন উপজাতি হয়ে আমি কেন শান্তিবাহিনীর বিপক্ষে কথা বলছি। আসলে আমার এ ক্ষোভ বা বিদ্বেষ একদিনে তৈরী হয়নি। নানান ঘটনার পঞ্জিভূত বহিঃপ্রকাশ আমার এই শান্তিবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ এবং বিদ্বেষ।
১৯৯২ সালের কথা। আমার বড় ভাই শান্তিবাহিনীর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলো। সেনাবাহিনীর সাথে গুলিবিনিময়কালে তিনি ডান হাতে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়ভাবে অনেক চিকিৎসা করা হয়েছিলো কিন্তু তাতে গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানের নিরাময় হয়েছিলো না। এভাবে প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। আস্তে আস্তে গুলিবিদ্ধ স্থানে পচন ধরলো আমার ভাইয়ের। আমরা তখন গুলিবিদ্ধের কথা গোপন রেখে রাংগামাটি হাসপাতালের এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম। ডাক্তার আমাদের যে চিকিৎসাপত্র আর পরামর্শ দিলো তাতে সার্বিক চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো। শান্তিবাহিনীর নেতাদের কাছে ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা চেয়েছিলাম আমরা কিন্তু তারা কোন আর্থিক সাহায্য করেনি আমাদের। নিরুপায় হয়ে আমরা গুলিবিদ্ধের কথা গোপন রেখে সেনা ক্যাম্পে গিয়ে সাহায্য চাইলাম। সেনা ক্যাম্পে আমরা বলেছিলাম যে, আমার ভাই পাহাড়ে বাঁশ কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছিলো সেখান থেকে পচন ধরেছে। সেনাক্যাম্প থেকে আমার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য মানবতার খাতিরে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলো। সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আমার ভাই সুস্থ হয়। কিন্তু শান্তিবাহিনীর নেতারা এটাকে মেনে নিতে পারেনি। সেনা ক্যাম্প থেকে টাকা নেয়ার অপরাধে আমাদের উপর নানান অত্যাচার চালাতে থাকে। আমরা উপায়ন্তর না দেখে প্রাণ ভয়ে সপরিবারে রাংগামাটি ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি।
শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ের পরিবেশ কিছুটা স্থিতিশীল হলে আমরা আবার রাংগামাটি ফিরে যাই। ভেবেছিলাম পাহাড়ের সকল নৈরাজ্য বন্ধ হয়েছে কিন্তু আসলে সেটা হয়নি। শান্তি চুক্তির আগে শুধুমাত্র শান্তিবাহিনীকে চাঁদা দিতে হত কিন্তু এখন দিতে হচ্ছে তিনটি দল- জেএসএস(মূল), জেএসএস(সংস্কার) আর ইউপিডিএফ’কে। বাড়িতে এসে চাঁদার টাকা নিয়ে যায় তারা। আমরা তাদেরকে বলি যে, আমরা তো তোমাদের মতই জুম্মজাতি তাহলে আমাদের কাছ থেকে কেন চাঁদা নিচ্ছ? জবাবে তারা বলে যে, “এটা চাঁদা না, এটা জুম্মজনগনের মংগলের জন্য তহবিল সংগ্রহ”। কিন্তু আমার বোধে আসে না যে মংগল তহবিলের এত কাড়ি কাড়ি টাকা কোথায় যায়? কারণ এই টাকা জুম্মজাতির মংগলের পিছনে ব্যয় হয়েছে এমন নজীর কখনও দেখিনি।
চলতি বছরের ভয়াবহ ভূমিধসের পর আমরা জুম্মরা যখন সহায়-সম্বলহীনভাবে অসহায় জীবন যাপন করছিলাম তখনও ঐ ‘মংগল তহবীল’এর টাকা আমাদের কাছে আসেনি। এমনকি আমাদের কোন নেতারাও আসেনি আমাদেরকে দেখতে। অথচ আমাদের জুম্মজাতির মুক্তি সংগ্রামের নেতা সন্তু লারমা, এমপি ঊষাতন তালুকদার, রাজা দেবাশীষ রায় সবার বাড়িই রাংগামাটিতে। কেউ এলোনা আমাদেরকে দেখতে। আমাদের দুর্দিনে আমাদের পাশে দাড়িয়েছিলো আমাদেরই ‘চিরশক্রু’ সরকার, বেসামরিক প্রশাসন আর নরপিশাচ সেনাশাসক’রা। ক্ষুধার জ্বালায় যখন আমরা এবং আমাদের বাচ্চারা ছটফট করছিলাম তখন এই সরকার, জেলা প্রশাসক আর সেনাবাহিনী আমাদেরকে বিনামূল্যে খাবার দিয়েছে, পানি দিয়েছে, চিকিৎসা দিয়েছে। এমনকি যেই বাংগালী ভাইদেরকে নিয়ে আমরা সবসময় কূ-কথা বলি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সেই বাংগালী ভাইয়েরাও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এসে আমাদের পাশে দাড়িয়েছিলো। কিন্তু আমাদের কান্না জুম্ম নেতাদের কানে পৌঁছায়নি, আমাদের অসহায়ত্ব আর লাশের মিছিল তাদের দৃষ্টি গোচরীভূত হয়নি। পৌঁছাবে কি করে? আমাদের নেতারা তো বিলাসবহুল এয়ারকন্ডিশন রুমে ‘মংগল তহবীল’এর টাকার গন্ধ শুঁকা নিয়ে ব্যস্ত। জুম্মদের লাশের গন্ধে তো উনাদের বমি আসে।
বিলাইছড়ি আর লংগদুর পানিবন্দী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার, প্রশাসন, সেনাবাহিনী আর বাংগালী ভাইয়েরা। ঐ সমস্ত এলাকায় বন্যার পানিতে যখন পাহাড়িরা হাবুডুবু খাচ্ছে তখন আমাদের নেতারা ঠান্ডা বরফ দিয়ে রংগীন পানি গলাধকরণ করছে আর ‘মংগল তহবীল’ কিভাবে বাড়ানো যায় সেই ধান্দা করছে। ধিক্কার জানাই ঐ সব স্বার্থপর জুম্ম নেতাদের।
একজন সাধারণ জুম্ম নাগরিক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, পাহাড়ে আসলে কোন সমস্যা নেই। আমাদের কতিপয় স্বার্থপর জুম্ম নেতারা নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য আর ‘মংগল তহবীল’এর লোভে ইচ্ছা করে পাহাড়ে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে পাহাড়ে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। আমরা সাধারণ পাহাড়ীরা শান্তি চাই আর জুম্মনেতাদের এই স্বার্থপরতা থেকে মুক্তি চাই।
(নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাধারণ পাহাড়ী জুম্ম)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.