নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুমকেতু কিংবা উল্কা হয়ে যাবো কোনো একদিন।বৃক্ষও হয়ে যেতে পারি!

দ্য নিশাচর

দো পেয়ে দৈত্য!

দ্য নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোঁয়া যাবে না মতো পাশে

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫

বৃষ্টি হচ্ছে।
গ্যালন গ্যালন পানি টুপ টুপ করে মাটিতে পড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
সাথে মাটির ঘ্রাণটা যেনো উপরি।
গাছের পাতাগুলোও বৃষ্টির ছোঁয়ায় আনন্দে নেচে উঠছে।
ছাতা মাথায় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে এসব আপন মনে উপভোগ করে চলেছে সেঁজুতি!
হাত বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টির স্পর্শ নিতে নিতে কলা ভবনের ওদিককার রাস্তার দিকে চোখ পড়লো তার।
মাথায় ডায়েরিটা চাপিয়ে কোনো রকমে মাথার একাংশ বাঁচিয়ে দ্রুত পায়ে এদিকেই আসছিলো তৌফিক।
হঠাৎ সেঁজুতি গলা ছেড়ে ডাক দিলো,'এইই টফিইইই...এদিকে আয়।'
ওরা দুজনেই ইংরেজি বিভাগে পড়ে।
টুকটাক লিখালিখি করে বলে তৌফিক ক্যাম্পাসে কাব্য নামেই পরিচিত।
একমাত্র এই একটা মেয়েই তাকে টফি বলে ডাকে। ডাকে বলতে ক্ষ্যাপায়।

'বারান্দায় না দাঁড়িয়ে এখানে ছাতা নিয়ে কি করিস?',কাছাকাছি এসেই বলে তৌফিক।
সেঁজুতি বললো,
'শুভ্র ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তোমারই অপেক্ষায়!'
'হয়েছে,আর লাইন মারা লাগবেনা।আয় বারান্দায় দাঁড়াই।'
বলেই সেঁজুতির হাত ধরে টানতে টানতে ডায়েরি মাথায় চাপিয়ে আবার বারান্দার দিকে পা বাড়ালো তৌফিক।
তার এরকম কিছু কাজের জন্যই তাকে এতো ভালো লাগে সেঁজুতির।
মনে মনে সে এরকম কিছুই চাইছিলো।
'আচ্ছা,তোর উড়নার এই বাড়তি অংশটা তো কোনো কাজে লাগেনা।শুধু মাত্র সিনেমার নায়ক নায়িকাকে বাঁচাতে গিয়ে হাত কাটলে তখনি তো কাজে লাগে।তাই না?' বললো তৌফিক।
সেঁজুতি কিছু বলতে যাবে,তখন আবার সে তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে-'আচ্ছা,দাঁড়া কিছুক্ষণের জন্য তুই আমার নায়িকা হয়ে যা!'
কথাটা সেঁজুতির দিকে ছুড়ে দিয়ে তার উড়না দিয়ে তার কাকভেজা চুলগুলো মুছতে লাগলো।
সেঁজুতি তার কাণ্ডকারখানা দেখে মনে মনে বলতে লাগলো,'আমি তো তোর সারাজীবনের নায়িকা হতেই রাজি রে।কবে যে এটুক তোর মাথার ভেতরে ঢুকবে!'
মনের কথা মনে রেখে দিয়ে
সেঁজুতি বলতে লাগলো,
'আহা....!
তোর নায়িকা হতে তো বয়েই গেছে আমার!
টফি কোথাকার!'
উড়না ছেড়ে দিয়ে তৌফিক বুললো,'চুল মুছা শেষ।নায়িকা না হলেও চলবে।'
এবার সে বিপরীত দিক থেকে কিল-চাপড় খাওয়ার জন্য প্রস্তুত!

সেঁজুতির হাত ধরে সেদিনকার মতো টানতে টানতে নিয়ে চললো তোফিক।সেঁজুতিও মুগ্ধতায় তার সাড়া দিয়ে ছুটে চললো।
হঠাৎ সে বুঝতে পারে,সে বিছানাতেই কাথা মুড়ে শুয়ে আর তার মা তার হাত ধরে টানতে টানতে ঘুম ভাঙালো!
'এই উঠ..
ক্লাসে যাবি না?
তোদের সাথের তৌফিক ছেলেটা ফোন দিয়েছিলো।
আজ নাকি তোদের কিসের পরীক্ষা আছে।
তাড়াতাড়ি উঠ।'বলে তাকে জাগিয়ে দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে সে ভাবছে,
ধ্যুর!
এগুলো সব স্বপ্ন ছিলো!
বালিশের নিচে হাতড়ে ফোন খুঁজতে গিয়ে মনে হলো,কাল রাতে ফোন মার রুমেই রেখে এসছিলো।
অনেক বেলা হয়ে গেছে।
আজ বৃষ্টি নেই।
আকাশ পরিষ্কার।
ছাতাটা নিতে গিয়েও কি ভেবে রেখে ক্লাসের জন্য বের হয়ে গেলো সে দ্রুত পায়ে।

ক্লাসে সবার দেখা পেলেও তৌফিককে দেখা গেলো না।
ফোনও বন্ধ দেখাচ্ছে।
ফোন দিয়ে আসতে বলে,নিজে হয়তো কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে!
দেখা মিলুক তার।
আজকে তাকে টফি বানিয়ে প্যাকেটে মুড়েই ছাড়বে সেঁজুতি।
ক্লাস শেষে ফিরতে যাবে,হঠাৎ কোত্থেকে আকাশ কালো হয়ে মেঘ জমতে জমতে বৃষ্টিও নেমে গেলো।
ধ্যুর!
ছাতাটা নিয়ে আসলেই তো হতো।
কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে ব্যস্ত চোখে তৌফিককে খুঁজে চলেছে সে।
না।
আজকে তিনি গায়েবে আযম হয়ে গেছেন আবার।
এরকম প্রায়ই হয়।মাঝেমাঝে অনেকদিন কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় না তার।
কোত্থেকে হঠাৎ একদিন ভুস করে তিমি মাছের মতো ভেসে উঠে।
স্নিগ্ধাকে ডেকে দুজনে স্নিগ্ধার ছাতায় বের হয়ে গেলো।
স্নিগ্ধাকে যদিও তার পছন্দ না মোটেও।
মেয়েটা কাব্য কাব্য করে তৌফিকের পেছন ঘুর ঘুর করে শুধু!


'আচ্ছা তুই কদিন পর পর এমন উবে যাস কেনো!?
এমন কেনো তুই?
কোত্থেকে বেরিয়ে এলি আজকে?
তোর জন্য ওইদিন ওই স্নিগ্ধার ছাতায় করে যেতে হয়েছে!
কুত্তা ছেলে!
টফি কোথাকার!!',কথাগুলো একসাথে ছুড়ে দেয় তৌফিকের দিকে সেঁজুতি।
ফুচকার প্লেটটা সেঁজুতির দিকে এগিয়ে দিতে দিতে তৌফিক হাসির রেখা ফুটিয়ে মৃদু স্বরে জবাব দিলো,'আরে সেদিন ক্লাসে আসার সময় পরিচিত একজন নক করলো,আর্জেন্ট রক্ত লাগবে।
ভাবলাম কদিন থেকে তো ছাঁড়পোকাগুলো রক্ত খেয়ে ঢোল হচ্ছে।
রক্ত কিছু কমিয়ে আসি।
রক্ত দিয়ে বাড়িতে চলে যেতে হয়েছিলো।
তাই আর যোগাযোগ করতে পারিনি।
ম্যাম কিছু বলেছে আমাকে নিয়ে?'
ধমকের স্বরেই সেঁজুতি বললো,'অ্যাই তুই কিরে!?
সেদিনও রক্ত দিয়ে এলি।
তাহলে আবার কেনো!?
তুইই খালি দায়িত্ব নিয়ে বসে আছিস নাকি সারাদেশের।
আর বাড়িতে গেলে ফোন বন্ধ করতে হবে কেনো?
একটু জানাতে তো পারতি।
ম্যাম তোকে দেখা করতে বলেছিলো।
মানুষ হ..
বুঝলি?
পাগলামো আর কতো?'
'বাহ!
তুই তো দেখি বউদের মতো শাসন করা শিখে গেছিস।
ভালো ভালো।
প্রাকটিস চালিয়ে যা',হাসতে হাসতে তৌফিক বললো।
এটা শুনে হঠাৎ কেনো জানি সেঁজুতির মুখটা লালবর্ণ ধারণ করলো।
প্রতিবার এরকম নিখোঁজ হয়ে ফিরে এসে দুটা চকোলেট টফি আর একটা করে তার লিখে কবিতা তুলে দেয় সেঁজুতির হাতে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।
সেঁজুতি এবারও কিছুক্ষণ তার দিকে নীরবে তাকিয়ে থেকে মুখ টিপে টিপে হাসলো।

রাতে বইয়ের ভেতর থেকে তৌফিকের দেয়া কবিতার কাগজটা বের করলো।
বরাবরের মতো তার পছন্দের নীল রঙের কাগজ।
কাগজটা চোখের সামনে মেলে ধরতেই যা দেখলো,তা যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না!
অদ্ভুত এক শিহরণে সারা শরীর মূহুর্তের জন্য কেঁপে উঠলো।
এটা আদৌ কোনো কবিতা নয়।
কতগুলো কথায় লিখা ছোট্ট একটা চিঠি!

"আমি তোকে আর তুই করে বলতে চাই না,তোর থেকেও তুই করে শুনতে চাই না।
তুমি দিয়েই নাহয় শুরুটা হোক!
তুমিকে মধ্যে রেখে সামনে একটা কর্তা যোগ করে পেছনে চার অক্ষরের একটা শব্দ লিখে একটা পরিপূর্ণ বাক্য লিখে নিয়ে আসিস যেনো মনে করে!
ওহ,হ্যাঁ!
কাল শাড়ি পড়ে তোর শুভ্র ছাতাটা নিয়ে আগের জায়গাটায় আসিস। কাল বৃষ্টি হতে পারে।
পাছে না আবার স্নিগ্ধাকে ডাকতে হয়!
-তোর টফি"

সেঁজুতির ইচ্ছে হচ্ছিলো এখনি তাকে ফোন দিয়ে কতগুলি বকা দিয়ে তার না বলা কথাটি বলে দিতে।
কিন্তু বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সকালের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।
আজকের রাতটাকে বুঝি কেও টেনেটুনে দীর্ঘ বানিয়ে দিয়েছে।ইন্টারে পড়া কবিতার লাইনটা তার বারবার মনে পড়তে লাগলো,
'রাত পোহাবার আর কতো দেরি?
পাঞ্জেরি??'


নীল শাড়িতে,কপালে ছোট একটা টিপ বসিয়ে,হাত ভর্তি চুড়িতে আজ সে বের হয়।
নীল রঙের নতুন আরেকটা কাগজ আর ছাতাটা নিতে সে ভোলে নি।
আর মাত্র কিছু সময় বাকি,এর পরেই সেই অধীর অপেক্ষায় থাকা স্বপ্নময় প্রহর!
কাগজটা খুলে আরেকবার সে পড়তে লাগলো সব ঠিক আছে কিনা।
লেখাগুলা একটু পড়তে না পড়তেই চোখের কোণ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বৃষ্টি ঝরে পড়ে কাগজটার উপর।

"সেদিন এভাবে ধোঁকা দিয়ে সত্যি সত্যি ছেড়ে গিয়ে গায়েবে আযম না হলেও পারতে!
তোমার জন্য শাড়ি পড়ে এক চিলতে কাগজ হাতে, সেই কাগজে তুমিকে মধ্যে রেখে তোমার সেই বাক্যটাও সাজিয়ে এনেছিলাম।প্রতিবছর এই দিনটায় এই কথাটা বলতে তোমার কাছে আসি।
জানি তুমি আর শুনবে না!
হয়তো শুনে তুমি আগের মতো আমার অলক্ষ্যে মিটিমিটি হাসবে শুধু!
তবুও তোমার বাক্যটা তোমাকে শুনিয়ে যাই-
"আমি তোমাকে ভালোবাসি টফি!"
"ভালোবাসি!"
ভালো থাকো আল্লাহ্‌র কাছে!

-সেই সেঁজুতি "

সেঁজুতি থেকে কয়েক গজ দূরে হলেও তৌফিককে আর স্পর্শ করা যাবেনা।
সে এখন সেঁজুতির থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ হতেও বহু দূরে অবস্থান করছে!
তবুও সেঁজুতি যেনো তার টফিকে তার আশেপাশেই খুঁজে পায়।
কোনো এক বৃষ্টির দিনে কাকভেজা চুল নিয়ে তার তার স্বপ্নে হানা দেয়।
হাত ধরে টানতে টানতে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চায়!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯

এমএম মিন্টু বলেছেন: বাহ! কি দারুন গল্প লেখেছেন।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:০০

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: :(

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪৭

দ্য নিশাচর বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন জনাব ^_^ #এম এম মিন্টু

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:০১

খেলাঘর বলেছেন:


ভালো।

আমার লেখাও আমি পড়ি আজকাল; আমার পোস্ট সামনের পাতায় যেতে দেয় না।

৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

দ্য নিশাচর বলেছেন: দিবে,নতুনদের পর্যবেক্ষণ করা শেষ হলেই প্রথম পাতায় লিখতে দিবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.