নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শীতের আমেজ থাকলেও শরীরে ও মুখের চারপাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে!
ঢাকার বাসগুলোই এমন।
প্রচণ্ডরকম ভিড় হয়।সিট না পেলে কোনোরকমে দু পা সেটে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
তারপরেও প্রতিটা বাস স্টপে লম্বা লাইনে অপেক্ষমান যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
এটা ঢাকার এক অনন্য চিত্র,বিশেষত্ব।
আসাদগেট থামলো বাস।
কিছু লোক নেমে গেলেও আবার পূর্ণ হয়ে গেলো।
একটা সিট ফাঁকা হওয়ায় বসে পড়লাম।
বাইরে তাকিয়ে মানুষের ব্যস্ততা দেখে যাচ্ছি।
হঠাৎ একটা মেয়ের গলায় ঘোর কাটলো।
মেয়েটাকে বলতে শুনলাম, 'দেখতে পাচ্ছেন না একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে?এরকম গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন কেনো বারবার?'
পাশের লোকটিকে দেখে ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো।
মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললাম,'এখানটায় বসুন আপনি।'
বলে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।
মেয়েটা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
চোখে কৃতজ্ঞতার ছাপ একে ধন্যবাদ জানালো।
আমি ঘাড় নোয়ালাম।
কিছুদূর গিয়ে দুটা স্টপ পেরুবার পর মেয়েটার পাশের সিটের লোকটা নেমে গেলো।
আমি জানালা দিয়ে বাইরেই তাকিয়ে।
মেয়েটা আমাকে লক্ষ করে বললো,'এই যে..আপনি কিন্তু এখানে বসতে পারেন।'
খেয়াল করে দেখি ওই সময়ের দাঁড়ানো লোকটা বসার জন্য উদ্ধত হতে লেগেছেন।
তখনি প্রথমবারের মতো মেয়েটাকে খেয়াল করলাম!
বসতে বসতে থ্যাংকস জানালাম।
মেয়েটা বলতে লাগলো,'থ্যাংকস আপনাকেই জানানো উচিৎ।'
ইশারা দিয়ে লোকটার দিকে ইঙ্গিত করলো।
বুঝলাম কি বুঝাতে চাইলো।
একটু হাসলাম।
লোকটার চোখের লুলুপ চাহনীতে তাকে মানুষের মতো বলে মনে হলো না।অবয়বের কারণেই শুধু মানুষ বলে ধরে নেয়া যায়।
তাতেই বা!
আফ্রিকার হিংস্র নরখাদক কাফ্রিরাও তো এদিক থেকে মানুষ!
নিরবতা ভেঙে মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো,'যাবেন কোথায় আপনি?'
ছোট্ট করে উত্তর দিলাম,'শাহবাগ।'
জানতে চাইলাম,আপনি কোথায় যাবেন?
মেয়েটা বললো,'ওদিকেই..ইডেনে যাবো।'
এভাবে টুকটাক কথায় কখন যেনো পৌঁছে গেলাম।
ওদিনকার মতো ওখানেই শেষ।
কিন্তু ঘটনা ওখানেই শেষ হলে পারতো,কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বহুদূর এগিয়ে যায়!
মেয়েটার দিকে তাকালেই অদ্ভুত এক মায়ার সৃষ্টি হয়।
কে যেনো আছে ওর চোখের তারায়।
রাতে হঠাৎ মনে হলো এতো কথা বলা হলো,সেল নাম্বারটা নিলেই পারা যেতো।
নিজের মনেই আবার ভাবছি,
ধ্যুর!
কি সব ভেবে যাচ্ছি।
এতোগুলি বছর তো ভালোই কাটিয়ে দিলাম।
কতোজনের সাথেই তো দেখা হলো কথা হলো।
কই এমন করে মাথায় ইঁদুর যন্ত্রণা তো আর হয় নি!
লাইটটা বন্ধ করে দিলেও ভাবনার জগতে আলো জ্বলতেই থাকে।
সুইচ অফ করার বৃথা চেষ্টা।
একটু পর লাইটারের আগুন ধপ্ করে জ্বলে উঠলো সাথে একরাশ ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে মিশে গেলো।
কিছুদিন পর..
ফুলার রোড হয়ে পলাশীর দিকে যাচ্ছি রিক্সায় করে।
সেদিনের সেই মেয়েটাকে হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।মনে মনে ভাবছি আজকাল তো চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করেছি।
হয়তো বা মনের ভুল।
কিন্তু কাছে যেতেই বুঝলাম,নাহ।
এটা মনের ভুল কিংবা চোখের ভ্রান্তি নয়।
এযে বাস্তব!
ডাক দিবো কি দিবো না এসব ভেবে ভেবে রিকসাওয়ালাকে একটু ধীরে চালাতে বললাম।
মেয়েটার কাছাকাছি আসতেই একরকম ধড়ফড়ানি শুরু অনুভব করলাম অভ্যন্তরস্থ সুন্দরবনের গহীনে!
পাশে যেতেই মেয়েটার চোখে চোখ পড়ে গেলো এতো কিছুর মাঝেও।
আমি যখন কি বলবো না বলবো গোছাতে ব্যস্ত,তখনি যেনো একরকম মিরাকলের সৃষ্টি হলো।
মেয়েটাই হাত নেড়ে বলে উঠলো,'আরে আপনি!'
ধড়ফড়ানি বাড়তে বাড়তে ভেতরের গলনাঙ্ক বেড়ে মুখের চারপাশে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো।
রিকসাওয়ালাকে বললাম থামান একটু।
মেয়েটা আবার বললো,'চিনতে পেরেছেন?'
এবার আমি,'হ্যাঁ,ইডেন তো?'
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে মেয়েটা বললো,
'জ্বি।
ইডেন!'
আমি বললাম,'আপনি এখানে?যাবেন কোথাও?'
'হ্যাঁ,বাসায় যাবো।ওদিকে একটু গিয়েছিলাম ফ্রেন্ডের ওখানে',বললো মেয়েটা।
'চলুন, আমি নামিয়ে দিই নাহয়',আমি বললাম।
সম্মতি জানালো মেয়েটা।
কিছুদূর যাওয়ার পর আমি জিজ্ঞেস করলাম,'আচ্ছা আপনার নামটা কিন্তু জানা হয় নি।জানতে পারি?'
'জ্বি, কেনো নয়?
আমাকে সবাই ঊর্মি বলেই ডাকে',উত্তর দিলো মেয়েটা।
'ঊর্মি!
ভালো নাম।
ঊর্মি,ঢেউ, তরঙ্গ!'-একটু হেসে আমি বললাম।
'আমিও কিন্তু আপনার নাম জানিনা',বললো ঊর্মি।
'না জানারই কথা।
এই অধমকে কেও শায়ান ডাকে আবার কেও ডাকে আরিয়ান!'-আমি বললাম।
রিকসাওয়ালা বলতে লাগলো,'মামা পলাশী কি নামবেন?'
ঊর্মি জানতে চাইলো কাজ আছে কিনা এখানে।
একটু কাজ ছিলো টুকটাক কিছু নিতাম জানিয়ে জানতে চাইলাম ঊর্মি সাথে যাবে না বসবে রিক্সায়,
যদিও আমি চাইছিলাম ও আসুক।
ঊর্মি আসতে চাইলো।
তাই রিকসাওয়ালাকে ভাড়া চুকিয়ে নামলাম আমরা।
এটা ওটা কিনতে কিনতে আরো অনেক কথা হলো।
শেষে দুজনে ঝালমুড়ি নিলাম বুয়েট ক্যাম্পাসের কোণে ঝালমুড়িওয়ালা মামাটার থেকে।
ভালো ঝালমুড়ি বানায়।
ঊর্মি বললো,'আমরা কিন্তু এই মামার ফ্যান রীতিমত।
সব্বাই মিলে প্রায়ই এখানে আসি।'
মনে মনে ভাবলাম,
হায়রে!
কতো কাছেরই আমরা!
বললাম,'তাহলে তো ভালোই হলো।প্রথম দিনেই আপনার পছন্দের জায়গার ঝালমুড়ি খাওয়ার সৌভাগ্য হলো।'
ঊর্মি কিছু না বলে হাসলো মাথা নিচু করে।
ঊর্মি এলিফেন্ট রোডে নেমে যাবে।
ওখান থেকে রিক্সা নিয়ে চলে যাবে।
যাওয়ার সময় বললাম,'আমাদের কি আর দেখা কিংবা কথা হচ্ছে?'
ও কিছু না বলে ঠোঁটের কোণে খানিকটা হাসির রেখা এঁকে উচ্চারণ করলো,'লিখো..০১.........!'
'থ্যাংক ইয়্যু!'-বললাম আমি।
'যাই',বলে সে আর কোনো কিছু শোনার অপেক্ষা করেনা।
সব কিছু যেনো স্বপ্নের মতোই হয়ে যাচ্ছে।
ঝামেলামুক্ত,বাঁধাহীন!
কেমন জানি ভয়ও হচ্ছিলো।
কে-ই বা জানতো যে সামনে এক বিশাল ট্র্যাজেডি অপেক্ষা করছে আমার জন্য!
সেদিন আর কল দিলাম না ওর নাম্বারে।
তারপর দিনও না,এভাবে দিন পনের কেটে গেলো।
ওর নাম্বারটা শুধু দেখেই গেলাম।
কিছুটা সময় নিতে চাচ্ছিলাম,ওকেও উপলব্ধি করার সময় দিচ্ছিলাম।
হঠাৎ করেই কিছু চাই না আমি।হঠাৎ করে যা পাওয়া হয়,তা হঠাৎ করেই হারিয়ে যায় বিনা নোটিশে।
কাউকে আমার ভালোবাসতেই হবে কিংবা কাউকে আমার এখনি প্রয়োজন
বা সবার আছে আমার নাই কেনো- এসব
ভেবে কাউকে ভালোবাসতে গেলে মানুষ
তাড়াহুড়ো করে।
প্রথমে কয়েকদিন খুব ঘন্টার পর ঘন্টা অতিবাহিত হয়, তারপরই বিচ্ছেদ কোনো কারণে ছেলে কিংবা মেয়ের পক্ষ হতে-এমন কিছু হোক চাই না আমি।
তাই আরো কিছুদিন সময় নিলাম।
নতুন বছরের প্রথম দিনের প্রথম প্রহরটায় ওর নাম্বারটা বের করে ছোট্ট একটা টেক্সট করলাম,'কেমন হয় তরঙ্গ,যদি নতুন বছরের নতুন দিনটায় আরেকবার রিক্সায় করে পুরোটা শহর ঘুরি!?'
ম্যাসেজটা ডেলিভারড হলে সাথে সাথে ফোনটা অফ করে দিলাম।
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই ফোনটা চালু করলাম।
কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পেয়ে গেলাম!
ওপাশ থেকে রিপ্লাই এলো,'তাহলে চলুন না।আর অপেক্ষা কেনো?
নতুন বছরের নতুন দিনেই নাহয় হোক শুরু!'
খুশির পরিমাণ কেমন হবে তা হয়তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৬
দ্য নিশাচর বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ,ভাইয়া। ^_^
এডিট করে দেবার পরেও স্পেস প্রোবলেমটা যাচ্ছে কেনো,বুঝতেছিনা।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: সুন্দর লাগল।
শেষটায় ভালো লাগল বেশি।
স্পেস প্রব্লেম এর জন্য পড়তে একটু সমস্যা হচ্ছিল।