নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুমকেতু কিংবা উল্কা হয়ে যাবো কোনো একদিন।বৃক্ষও হয়ে যেতে পারি!

দ্য নিশাচর

দো পেয়ে দৈত্য!

দ্য নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোনালী ডানার চিল

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৩০

রুমের সব লাইট নেভানো।
হালকাভাবে সিলিং ফ্যান ঘুরছে ঘরটির মাঝখানে।
কতকগুলি বই রাখার সেলফ দেয়ালের সাথে আটকানো।
প্রত্যেকটি সেলফে সারিসারি বই সাজানো।
বেশ কয়েকটা সুন্দর কারুকাজের ফুলদানিও আছে ঘরটিতে।সতেজ ফুলে সবচেয়ে বেশি মানাতো এগুলোকে।
দ্বীপের ফুল অনেক পছন্দ।
সতেজ ফুল রাখার কথা বললে দ্বীপ বলে,"আমি বাচ্চাদের ভালোবাসি।তাই বলে কি তাদের মাথা কেটে এনে ঘরে বসিয়ে রাখবো?"

এক কোণে একটি টেবিল।
টেবিলে একটি মোমবাতি জ্বলছে।জানালা দিয়ে বাইরে কোথাও থেকে আলো এসে এ ঘরটির অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে।
মেঝেতে ডায়েরির ছেঁড়া পাতার ছড়াছড়ি।
দ্বীপ টেবিলে বসে আছে।ডায়েরি আর কলম নিয়ে।
ডায়েরি নিয়ে বসলেই সে এমন লাইট নিভিয়ে মোমবাতি জ্বেলে দেয়।
লেখালেখির জন্য মোমবাতির আলোর চেয়ে যোগ্য আলো এ পৃথিবীতে নেই।
মাদকতাপূর্ণ আলো।
আরো একটা সময়ে মোমবাতির আলোর কোনো জুরি নেই।
মধুচন্দ্রিমায়!

বহুদিন হলো লিখালিখি প্রায় বন্ধ করে হয়ে গেছে দ্বীপের।আজকাল সব কিছুতেই বিরক্তি চলে এসেছে তার।অদ্ভুত এক অন্যমনস্কতায় ভোগে সারাক্ষণ।
ফুটফুটে মুখগুলোর সাথে কি অন্যমনস্ক ভাবটা যায়?
গেলেও দ্বীপের সাথে যায় না।তার এ অবস্থা যে অকারণে,তা নয়।বিশেষ একটি কারণ আছে।
কারণ সে চাইলেও তার মায়ের সাথে বছরে এক মাসের বেশি সময় থাকতে পারেনা!

না,আজবোধয় কিছুই আসবেনা আর ডায়েরির পাতায়।
ডায়েরি, কলম রেখে দিয়ে পেন্সিল আর আর্টের ডায়েরি নিয়ে বসে পড়লো।কি করবে মাথায় আসছেনা।আর্ট মাথায় আসার বিষয়ও নয়।মনের মধ্যে যা আসবে তা-ই এঁকে ফেলবে।কি মনে করে সে একটা মুখের অবয়ব আঁকার চেষ্টা করলো।
কিছুক্ষণ পর তার অজান্তেই সেটা যেনো কোনো এক মায়াবিনীর অবয়ব ধারণ করলো।
এর সাথে আনিসুল হক স্যারের 'অন্যমন'এর তুলনা করা চলে।
এটা সে আগেও বেশ কয়েকবারই এঁকেছে।কিন্তু কেনো জানি এ ছবিটা বরাবরের মতো অস্পষ্টভাবেই সে আঁকে।
ছবিটাকে মনে হয় অস্পষ্টভাবেই ভালো লাগছে।
ভালোলাগার জিনিসগুলো হাতের নাগালে চলে এলেই সমস্যা।
থাকুক এ অবয়ব অস্পষ্টই।
কে জানে?
রাতে বারান্দায় দাঁড়ালে পাশের বিল্ডিং এর চারতলার দক্ষিণ পাশের জানালার গ্লাসের সার্সিতে যে মানবী ছায়াটি দেখা যায়-এ হয়তোবা তারই মুখ।

দরজা ঠেলে যে মহিলাটি দ্বীপের অন্যমনস্কতার ভেতরে তার ঘরে চলে এলেন,তিনি তার মা।
মিসেস শায়লা জামান।
ছেলের অন্যমনস্কতার কারণ তিনি নিজেও জানেন।কিন্তু ছেলের জন্য শুধু দুঃখ করা ছাড়া হয়তোবা কিছুই করার নেই আর।
ঘরে ঢুকে তিনি লাইটটা জ্বালিয়ে দিলেন।
চারপাশে শুধু কাগজের দলা ছড়ানো।
বিছানায়ও কতকগুলি বই পড়ে আছে খোলা।
দ্বীপ টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ ছেলের ঘরে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে থেকে তিনি যেনো বুকে চিন্ চিন্ ব্যথা অনুভব করতে লাগলেন।
নিজেকে সামলে নিয়ে দ্বীপের মাথায় হাত রেখে তিনি অস্ফুটভাবে দ্বীপকে ডাকলেন।
মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসিহাসি মুখে দ্বীপ বললো,"কখন এলে মা?"

"এইতো, কিছুক্ষণ আগেই।আজকে একটু দেরি করে ফেললাম বাবা।
আয়,টেবিলে খাবার দিচ্ছি।খেতে আয়।"

"ক্ষিধে নেই মা।তোমরা খেয়েছো?"

"হুঁ।খেতে এসো,টেবিলে বসছি আমি।

"আচ্ছা।"

*******

"আজ কোথায় বের হবি?গাড়ি নিয়ে যাসনা কেনো?সারাদিন রোদে রোদে ঘুরিস।কি অবস্থা বানিয়েছিস দেখেছিস?"ছেলের সাথে সকালে নাস্তা করতে করতে শায়লা জামান বললেন।
"কদিন পর থেকেই তো আগামী এক বছর আর রিক্সা দেখবো না মা।
রিক্সায় করে বাতাস খেতে খেতে,আকাশ দেখতে ঘুরতে ভালো লাগে।"
অপরাধির সুরে তিনি বললেন,"কিছু লাগলে কল দিস।আর ফেরার সময় গাড়ি লাগলে ফোন দিস।কেমন?
"আচ্ছা,তুমি চিন্তা করোনা মা।"
"চিন্তা করবোনা আমি?চিন্তা করবোনা?
তোকে কদিন কাছে পাই আমি বছরে?"
দ্বীপের কাছে কিছু বলার নেই।
তার বাবা মারা যাবার পর তিনি আবার বিয়ে করেছিলেন।
আগে কষ্ট লাগতো তার,এখন আর লাগেনা।
একটা মানুষ তো আর একা সারাজীবন কাটিয়ে দিবেনা।
ভালোই করেছেন তিনি।
বিয়ের সময় শর্ত ছিলো,দ্বীপ তাদের সাথে থাকবেনা।তাকে পড়াশুনার জন্য লন্ডনে তার মামার কাছে পাঠিয়ে দিবে।বছরে এক দুবার সে তাদের সাথে এসে থাকবে।
শর্ত মতোই সব চলছে।
তখন দ্বীপ সবে সেভেনে পড়তো।
শর্ত এখন যেনো আইন হয়ে গেছে।
তার পড়াশুনাও আইন নিয়ে।
সারাটাজীবন আইনের মধ্যে পার করবে সে।
মন্দ নয়।

লাস্ট ম্যাসেজটা আজকেও সীন হয়নি।
"আমি ২৮ তারিখে চলে যাবো মাহিদা।দেখা করার কথা ছিলো।
মনে হচ্ছে আর দেখা হচ্ছেনা।
ইচ্ছে হলে রিপ্লাই দিও।"কথা কতক লিখে সে আবার মাহিদা মৌ নামের অদেখা এই মেয়েটির ম্যাসেজ বক্সে পাঠিয়ে দিলো।
তার আইডি নামটা চমৎকার,"প্রবাল দ্বীপ।"
নামের সাথে বেশ মিল যেনো তার।
সাগরের বুকে প্রবাল দ্বীপগুলো যেমন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে,দ্বীপ ভাবে তার মায়ের জীবনে সে-ও এরকম করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ঝামেলা বাঁধাচ্ছে।
মাহিদা মেয়েটি একবার তাকে বলেছিলো,"একটা কথা জানো কি দ্বীপ?
সাগরের বুকে একমাত্র আশ্রয় প্রবাল জমে গড়ে উঠা সৌন্দর্যের আকড় প্রবাল দ্বীপই দিতে পারে।অন্য কিছু নয়।"

বাসায় এখন কেও নেই।
মা অফিসে।
মায়ের হাজবেন্ড অফিসে।
কি আশ্চর্য!
মায়ের হাজবেন্ড তো তার বাবা হতেই পারতেন।
বাসার নিচের দিকে হাঁটাহাঁটি করতে করতে এসব ভাবছিলো দ্বীপ।
পেছন থেকে এক নারীকণ্ঠ ভেসে এলো তার দিকে,"তুমি কি শায়লা আন্টির ছেলে দ্বীপ?"
নরম কণ্ঠের ২৫-২৬ বছরের শাড়ি পড়া এক যুবতী দাঁড়িয়ে।
"জ্বি।"
"আমি অবনী।
তোমাদের সামনের বাসায় থাকি।আর স্বামীর সংসার দেখি।"কথাটা বলে সে হাসতে লাগলো।
হাসিতে বেশ মানিয়েছে তাকে,অনেককেই মানায়না।
দ্বীপের ধারণা,হাসিতে দ্বীপকে মানায় না।
প্রবালেরা হাসেনা।
দ্বীপের হঠাৎ মনে হলো রাতে দেখতে পাওয়া ছায়া মানবী 'অন্যমনা'র অবয়বের সাথে এ'র মিল আছে।
অন্যমনারা বুঝি এমন সুন্দর করে হাসতে পারে?
চেহারায় মাধুর্য্য আছে এর।
একদম সতেজ।
হাসিটা চোখ থেকে সারামুখে আভা ছড়িয়ে দিয়েছে।

"কি করছিলে এখানে?"

"কিছুনা,বাসায় ভালো লাগছিলোনা তো।
তাই এদিকটায় বেরিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলাম।"

"ও..
কিসে পড়ছো তুমি?"

"ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে এবছর এল.এল.বি শেষ করলাম।"

"বাহ,চমৎকার!

তোমার কি মন খারাপ নাকি দ্বীপ?"

"কই?
নাতো।"

"আমার বাসা ওটা।যাবে?
শুনেছি তুমি অনেক বই পড়ো।আমার বাসায়ও অনেক বই।"

"আচ্ছা।"

বাসায় যেতে যেতে অবনী বললো,"বলতো বইয়ের একটা বিশেষ দিক কি?"

"এই যেমন,আমি দেশের বাইরে থাকি।ইচ্ছা থাকলেও আসার সুযোগ হয়না।এতে দেশের অনেককিছুই তো মিস করি।
বই পড়ে সেগুলা পুষিয়ে নেয়া যায়।"

"চমৎকার বলেছো।
আচ্ছা,বাসায় কি কি করো একা একা?"

"দিনের বেলায় বের হতাম বন্ধুদের সাথে।আজ খুব একটা ভালো লাগছে না,তাই যাইনি।
এমনিতে বই পড়ি,গিটার বাজাই,টুকটাক লিখালিখি করি।
এইতো।"

"বাহ!
আমিও বই পড়েই সময় কাটাই।ও সারাদিন অফিসে থাকে।বাসায় তেমন কাজও নেই।

"ও,আচ্ছা।"

"কিছু খাবে?
মুড়ি ভর্তা দিই? খেয়ে দেখো ভালো লাগবে।তুমি ততক্ষণে বইগুলো দেখো।"

"আচ্ছা।"

অনেক ধরনের বই-ই সুন্দর করে সাজানো তাকগুলোতে।
বেশিরভাগই বাংলা।
দ্বীপের কঠিন বাংলাতে একটু সমস্যা হয়।
অবনী মুড়ি ভর্তা নিয়ে চলে এসছে।
সাথে কোক,ঠাণ্ডা পানি।
মুড়ি ভর্তা জিনিসটা আগে কখনো খায়নি সে।
খেতে আসলেই চমৎকার।
তবে ঝাল বেশ।
"আপনার মুড়ি ভর্তা খেতে চমৎকার।"

"থ্যাংক ইয়্যু।বলেছিলাম না ভালো লাগবে।
আচ্ছা,তোমার বাংলায় কার বই সবচেয়ে ভালো লাগে?"

"শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।"

"হু..ম।
তাঁর লেখা আসলেই অনেক ভালো।
তোমার জন্য তিনটা বই নিয়ে এসেছি।
একটা জীবনানন্দের।একটা নরসিংহপ্রসাদ ভাদুরির।আরেকটা বিভূতিভূষণের।এঁদের বই পড়েছো?"

"জীবনান্দের দুটা বই পড়েছি।তবে কঠিন শব্দ বুঝতে সমস্যা হয়।"

"তাহলে এই বাংলা অভিধানটাও নিয়ে যাও।সুবিধে হবে।"

"থ্যাংক য়্যু।"

"এগুলা কিন্তু তোমার জন্য উপহার।তুমি সাথে করে নিয়ে যাবে।কেমন?"

"আচ্ছা।"

মেয়েটা চমৎকার কথা বলে।খুব সহজে মিশতেও পারে।
দ্বীপ ঠিক করেছে তার আঁকা অন্যমনা অবনীকে দিয়ে যাবে যাবার সময়ে।
অবনীর সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে এই কদিনে।
দেখতে দেখতে যাবার দিন চলে আসছে।
আর মাত্র দুদিন।
মাহিদা কোনো এক অজানা কারণে তাকে রিপ্লাই দেয়নি।
তার সাথে বোধয় আর দেখা হবেনা।
আবার কবে আসবে,কিংবা আসবে কিনা?
যাবার সময় জামান সাহেবকে এবার চমকে দিয়ে যাবে সে ঠিক করেছে।
বাবা ডাকলে তিনি চমকাবেন নাকি বিরক্ত হবেন,কে জানে?
এই ফাঁকে সে একটা লেখা কমপ্লিট করে ফেলেছে।
এটা সে কাকে দিবে এখনো ঠিক করেনি।
নামটা চমৎকার হয়েছে বলে তার মনে হয়,"সোনালী ডানার চিল"।

রিক্সায় ঘুরা হয়নি এ কদিনে।
আজ সে রিক্সায় ঘুরবে ঠিক করেছে।
আবার কবে এই রিক্সার ক্রিং ক্রিং কবে কানের পর্দায় আঘাত করবে,কে জানে..!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫১

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: হঠাৎ করেই শেষ, আক্ষেপ রয়ে গেলো।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৯

দ্য নিশাচর বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.