নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুমকেতু কিংবা উল্কা হয়ে যাবো কোনো একদিন।বৃক্ষও হয়ে যেতে পারি!

দ্য নিশাচর

দো পেয়ে দৈত্য!

দ্য নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

শৈশবের সেদিনগুলি এখন \'শব\' বলে পরিচিত!

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮

আমার দুটা খালাতো ভাই আছে,ছোট।একটা এবার পিএসসিতে এ+ পেলো আরেকটা থ্রি-তে উঠবে এবার।কোনোদিক থেকেই কমতি নেই এদের উপরওয়ালার অশেষ কৃপায়।যেমন পড়াশুনায় ভালো,তেমনি আবার আর্ট,গেমিং,ইন্টারনেট ইত্যাদিতেও।
গর্বই হয় এদের নিয়ে যে আমার ছোট ভাই দুটা এই সামান্য বয়সেই কম্পিউটারে উইন্ডোজ দিতে পারে!
প্লে স্টোর ছাড়াও গুগলে সার্চ করে গেম ডাউনলোড করতে পারে ট্যাবলেট পিসিতে।
আবার দুই ডিস্কের যেসব গেম আমার মাথাতেও আসেনা যে কিভাবে এটা ইন্সটল করবো-এরা সেসব গেম দিব্যি খেলে লেভেল কমপ্লিট করে দিচ্ছে!
আশ্চর্য লাগে যখন দেখি যে এরা আমাকে হোয়াটসএপ, আইএমও তে নক করে।
সেদিন তো আমার আপাকে বললো যে,"আপু..হাইক ইন্সটল করেন।এটা ভালো আছে!"
আর থ্রি-তে পড়ুয়া সাহেব তো আর্ট করে জেলার সেরাদের সেরা হয়েছে,১০ পুরস্কার জড়ো করেছে নিজের এই ছোট্ট ক্যারিয়ারে!

তবে এদের জন্য আমার যতোনা গর্ব হয়,তার চেয়েও বেশি কষ্ট হয়!
কই এরা ছুটোছুটি করবে, হই-হল্লোর করে লুকোচুরি খেলবে-কিন্তু তার পরিবর্তে দেখি সকাল হলেই ব্যাগে বইয়ের ঝোলা নিয়ে কাঁধ নিচু করে স্কুলে যায়।সেখান থেকে কামাই শেষে বাসায় এসেই আবার পরদিনের পড়া রেডি করা,একের পর এক প্রাইভেট টিচারের টর্চার নিতে নিতেই বিকেল হয়ে যায়।
তখন এদের কাঙ্ক্ষিত বিকেল আসে। কিন্তু তাদেরকে খেলতে নেয়ার জন্য ঘরের পাশে লুকিয়ে থাকেনা।বরং ঘরের একপাশে পড়ে থাকা কম্পিউটারের দিকে ছুটে যায়।
এমন সব খেলা শুরু হয় তখন যার জন্য আবার হরেক রকমরের চিট কোড থাকে-যা মুখস্থ করা লাগে।
আমাকে একবার পিচ্চিটা বসিয়ে রেখে একটা কোড মুখস্থ করিয়েছিলো।
"Nittle Tools"-GTA vice city-3 খেলতে নাকি এরকম ১২০ টা কোড লাগে এবং তার সবগুলাই তার মুখস্থ!
এরকম করেই একটা একটা দিন করে ৩৬৫ টা দিন কেটে যায়;কিন্তু এদের কপালে কোনো ছুটি জোটেনা।এ+ পেয়েছে তবুও শান্তি নেই।এখন ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য রেস লাগাতে হবে। আমিও দায়ী তাদের এই রেসে নামাতে।আমি আবার ক্যাডেটের ভুত ঢুকিয়ে দিয়েছি।
কোথায় এরা এখন খালার বাড়ি,নানুর বাড়িতে বেড়াতে যাবে;চারপাশ তোলপাড় করলবে।তার আর জো নেই।
ছুটিও শেষ তাদের। কিন্তু রেসের অন্ত নেই!
এরা নাকি এখন আর ভাইস সিটি খেলে না;আইজিএ ও খেলেনা।
এগুলা এখন ওয়ানের বাচ্চারা খেলবে।
এদের জন্য আরো কঠিন কিছু।
বাজারে আরো কঠিন কিছু আসছে কিনা,তার খোঁজ করে।এখন এদের চাওয়া হচ্ছে প্লে স্টেশন।পিসিও ভালো লাগেনা এদের।

এরা হয়তো জানেই না যে তারা তাদের এই বড় ভাইকে নিয়ে গর্ব করলেও,তার মাথায় তাদের এসবের মাথা-মুণ্ডু কিছুই ঢুকেনা।
জানেই না এরা যে কী শৈশবটা আমরা পার করছি!বন্ধ পেলেই নানু বাড়ি চলে যাওয়া।নানার হাত ধরে বাজারে চলে গিয়ে বাজার করা এবং উপরি হিসেবে নানার থেকে মজার মজার খাবার,পিঠা বা খেলনা পাওয়া।
আমাদের সব কিছুতেই কী যেনো একটা ছিলো!
গোসল করতে গেলেও আমরা সেটাকে উপভোগ করেছি।আমরা যারা গ্রামের তারা ভালো করে জানি যে পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার আসল উদ্দেশ্য ছিলো বল দিয়ে "বোম্বাই" খেলা,কাঠি দিয়েও একটা খেলা ছিলো;অনেকে আবার গাছ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতো।
সারাদিন খেলার জন্য আমাদের নানারকম খেলা ছিলো।
বিকেল হলো জমতো ভালো।
আমাদের যাদের আবার একটু পড়ার টেনশন ছিলো,যাদের ঘরের অভিভাবকগণ একটু শক্ত ছিলেন-তাদেরকে খেলায় নিতে আবার একদল পঙ্গপাল লুকিয়ে থাকতো ঘরের আশেপাশে।
কিছুক্ষণ পর পর এরা আবার নানারকম সংকেত দিতো তাড়াতাড়ি করার জন্য।
দল বেঁধে আমরা গোল্লাছুট খেলতাম আরো খেলতাম বৌ চি,হা-ডু-ডু,ধাইরা বন্দি, লুকোচুরি ইত্যাদি।
তবে আমাদের আরো কিছু মজার খেলা ছিলো।এদের নামগুলোও ছিলো মজার।
জোনাকি পোকা(গ্রামের ভাষায় "জিন্নি পোক"),কাঁঠাল চোর(কেও বলতো "গাছ গাছ খেলা),কানামাছি ইত্যাদি।

জোনাকি পোকা খেলাটায় অনেক মজা হতো।দুটা ঘর আঁকতাম বৃত্তাকার।একটা থেকে আরেকটা হতো ২০ হাত দূরে।একজন চোর হতো।চোর ছাড়া বাকিরা জোনাকি পোকা হয়ে যেতো!
সে ঘরটার চারপাশে ঘুরতো আর বলতো,"জিনি পোক.. জিনি পোক..ঘর তে বাইর অ"।তার ঘুরার ফাঁকে একজন একজন করে ২০ হাত দূরের অন্য ঘরটায় চলে যেতো দৌড়ে।ঘরের বাইরে কাওকে যদি চোরে ছুঁতে পারে তাহলে সে হয়ে যায় চোর।
এরকম সাতবার এ ঘর-ও ঘরে যাওয়ার পর কানামাছি দিয়ে খেলা শেষ হতো।
চোরকে আচ্ছা ধুলাই দিতাম সবাই মিলে।
তবে "কাঁঠাল চোর" খেলাটা আমার খুব প্রিয় ছিলো।
আমাদের মধ্যে লম্বা-চওড়া ছেলেটা গাছ হতো আর বাকিরা হতো কাঁঠাল।কাঁঠাল হয়ে তাকে ধরে ঝুলে থাকতো।একজন হতো মালিক।আরেকজন হতো চোর।
অনেক খেলেছি এটা আমি।

বছর ঘুরে যেতো যেনো কিভাবে।আমাদেরও খেলা পরিবর্তন হতো।আমরা তখন ডাংগুলি খেলতাম,লাটিম,মারবেল পার করে অতঃপর ফুটবল, ক্রিকেট,ব্যাডমিন্টন, ভলিবলের যুগে পদার্পণ করলাম।একেকটা নতুন খেলা বা নতুন ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর আগমন বেশ উপভোগ করেছি।
আমার খুব মনে পড়ে,আমাদের পাড়ায় যখন প্রথম টিভি এলো-বাড়ি থেকে বেশ দূরে। অনেকে মিলে চলে যেতাম।গিয়ে দেখতাম অনেক আগেই সবাই জড়ো হয়ে ভিড় বানিয়ে দিয়েছে।ছোট ছিলাম আমরা,তাই দেখতে পেতাম না কিছু।
মন খারাপ করে চলে আসতাম।আস্তে আস্তে এ ঘর ও ঘর করে আমাদের পাশের চাচার ঘরে টিভি এলো।
একদিন মন খারাপ করে আম্মাকে জানালাম,"আম্মা..বড় চাচা বলছে পারছোনি আনতে টিভি??পারলা নাতো!"
পরদিন আম্মা আমাকে নিয়ে নানুবাড়িতে গেলেন।আমাকে ঘুম পাড়িয়ে নানুকে নিয়ে চলে গেলেন কোথায় যেনো।
বিকেল বেলায় আমার ঘুম ভাঙলো।দেখি আমার সামনে ইয়া বড় একটা বক্স রাখা।
এটাতে লেখা ছিলো "National Black & White Television"!
আমার জীবনে এখন পর্যন্ত এতো খুশি হইনি যতোনা সেদিন হয়েছিলাম ১৭ ইঞ্চি সাইজের সেই বক্সটা দেখে!
আমাদের টিভি!আমার টিভি!

এরপর এলো মোবাইল।আমরা তখন আব্বুর সাথে চিঠিতে যোগাযোগ করতাম।আব্বু পাশের এক চাচার বাড়িতে মাঝেসাঝে কল করতেন।
আমরা গিয়ে বসে থাকতাম কখন আবার কল আসবে।৭ টাকা মিনিট হিসেবে কথা বলতে পারতাম।
নানুবাড়িতে যখন মোবাইল এলো আমার কাজিন আর আমি মিলে কাঁথার নিচে লুকিয়ে গেম খেলতাম।যদিও কিছু বুঝতাম না তেমন।সাপের গেমটা পারতাম।কাঠি সাইজের সাপ!
কিছুদিন পর আবার মামার হাতে এমন এক ফোন এলো যেটায় কিনা সাপটা কাঠি থেকে সাপের মতো হয়ে গিয়েছিলো।
সাপের মতোই চলতো সেটা!
আমরা তো অবাক একদম। এটা কি জিনিস রে ভাই!
তাজ্জব ব্যাপার!

আর এখনকার দিনের বাচ্চারা তো জন্ম হয়েই দামী দামী ফোন দিয়ে সেলফি তুলে!
ট্যাবে উন্নত গ্রাফিক্সের ত্রিমাতৃক গেম খেলে।
তাতেও এদের মন ভরেনা!
শৈশব স্মৃতি যে ওরকম হতে পারে এটা এখন তারা শুধু রচনাতেই পড়ে!
দেশ ডিজিটাল হোক,দেশের মানুষও হোক-এটাই কাম্য।
কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চাগুলো যে আসলেই ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় আর পড়াশুনার নামে রেসের কারণে তাদের শৈশব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে,এটা কি কাম্য?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫১

ডেল p4 বলেছেন: আমরা যারা গ্রামের তারা ভালো করে জানি যে পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার আসল উদ্দেশ্য ছিলো বল দিয়ে "বোম্বাই" খেলা,কাঠি দিয়েও একটা খেলা ছিলো;অনেকে আবার গাছ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতো। --অসাধারণ বলেছেন ।আমিও আমার বাচচাদের নিয়ে মনোকষ্টে আছি।আমাদের মত দুরন্ত শৈশব তাদের তাদের নেই।ইট কাঠের দেয়াল ওদের সব কেড়ে নিয়েছে।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৪০

দ্য নিশাচর বলেছেন: বেরিয়ে আসুন না একদিন ওদের নিয়ে।দেখুক শৈশবটা কেমন ওই দেয়ালের বাইরে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.