নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুমকেতু কিংবা উল্কা হয়ে যাবো কোনো একদিন।বৃক্ষও হয়ে যেতে পারি!

দ্য নিশাচর

দো পেয়ে দৈত্য!

দ্য নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাহাড়ের রাজ্যে তিনদিন

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:০৩

কেওক্রাডং-এ চড়ার রাস্তা খুব সরু,যে কোনো মুহূর্তে পা ফসকে কিংবা পিছলে যেতে পারে।পা ফসকে বা পিছলে গেলে আর দেখতে হবে না।ঝোপের মধ্য দিয়ে রাস্তা,আবার ঝোপের মধ্যে কিসের যেনো নড়াচড়া।
শুকনো পাতার মর্ মর্ শব্দ।
কখনো দূরে কোথাও গভীরে বানরের চেঁচামেচি।
পাখিদের কিচিরমিচির।
পথে মৃত ঝর্ণা,বর্ষায় বৃষ্টির পানি নামার পথের চিহ্ন।
হঠাৎ জীবন্ত ঝর্ণা।ওরা একে ঝিড়ি বলে;চিংড়ি ঝিড়ি ও কাঁকড়া ঝিড়ি।দূর থেকে পানি নামার শব্দ কানে আসে,তৃষ্ণার্তদের মনে আশার সঞ্চার করে দেয়।পাহাড়ে পানীয় জলের উৎসও এই ঝিড়িগুলো।কেও ওখানে গিয়ে পানি সংগ্রহ করে,তবে আর্মিরা পাইপের মাধ্যমে পাড়াগুলোতে এবং বহু উঁচুতে তাদের ক্যাম্প পর্যন্ত পানি তোলার ব্যবস্থা করেছে সেখান থেকে।
সাপের মতো আঁকাবাঁকা সাংগু নদী যে দেখেনি,তার জীবনে সেটা না পাওয়ার তালিকায় হাহাকার হয়ে থাকবে মতন।
পানি এতো স্বচ্ছ যে নীচ পর্যন্ত সব পরিষ্কার দেখা যায়,ঝিড়িগুলো থেকে পানি সাংগু পর্যন্ত গিয়ে সাংগুকে জীবিত রাখে।
রাস্তার দু ধারে অনেক প্রজাতির গাছ।বড়-ছোট,কোনোটা আবার মোটা এবং অনেক উঁচু।
ফলের গাছ;কলা,পেঁপে,আনারস ইত্যাদি।পাকা কলা,পাকা পেঁপে কারও স্পর্শ না পেয়ে সেখানেই মাটিতে পড়ে গিয়ে বংশ রক্ষা করে।
পথের ধারে পাহাড়ি ফুল।
রঙিন প্রজাপতি।
দূরে অনেক উঁচু-নিচু পাহাড়।
পাহাড়ের ঢালে বম,মারমাদের ঝুপড়ি।
উপজাতিরা পেছনে ঝুড়ি বেঁধে পাহাড়ি জিনিসপাতি সংগ্রহ করে দ্রুত পায়ে হেঁটে যায়।
বুকের সাথে ছোট বাচ্চা ঝুলিয়ে রাখে।
রাস্তাগুলো দেখলে মনে হয় এইতো,শেষ;আরেকটু বাকি মাত্র।
কিন্তু ওই পর্যন্ত উঠে দেখা যায় এক-তৃতীয়াংশ-ও উঠিনি।
তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে আসে।
ক্ষুধায় পেটে যুদ্ধ শুরু হয়।
ক্লান্ত পা জোড়া দেহ ও মস্তিষ্কের সাথে যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়।হৃদপিণ্ড প্রবল বেগে কাজ করতে থাকে।
রোদের অবস্থা এমন যে ঝলসে দিবে বলে মনে হয়।
মশা কামড়ে দিলেই ম্যালেরিয়া,এই ভয় কাজ করে।সেই সাথে জোঁক,সাপের ভয় তো আছেই;গা ছমছম করে সারাক্ষণ।
হঠাৎ কোথা থেকে ঠাণ্ডা বাতাস এসে শরীর মন জুড়িয়ে দেয়।
পাহাড়ের সাথে মেঘগুলো লেগে থাকে যেনো মেঘের সমুদ্র আর চূড়াগুলো সেই সমুদ্রে দ্বীপের মতো মাথা উঁচু করে থাকে।
ঝিড়িগুলোর শীতল পানি ছুঁলে মনে হয় এই পৃথিবীর কিছু ছুঁই নি।
স্বর্গের সঙ্গে সংযুক্ত কিছুতে স্পর্শ করেছি।
এই হলো পাহাড়ের রাজ্য।

কোথাও কোথাও মাটিতে তীর চিহ্ন কাটা যে রাস্তা এই দিকে।
চিৎকার করে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করে।
আর পাহাড়ের উপরের পাড়াগুলি অনন্য।সেখানে ছোট খাটো টং দোকান রয়েছে এতো উঁচুতে।
তবে সেখানে তাদের জীবন কষ্টের।
মানুষগুলি খুব সাধারণ।হাসতে জানে এরা সুন্দর করে।গোছানো হাসি।
আর পাহাড়ের ঢালের ঝুম ক্ষেতে কাকতাড়ুয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে!
পাহাড়ের ওদিকে নেটওয়ার্ক নেই।তবে পাওয়া যায় অল্প-স্বল্প।পাহাড় উঠার সময় ম্যাসেঞ্জারের টিং শব্দ সভ্যতায় ফিরিয়ে দেয়।মাঝেমাঝে 3G এসে চমকে দেয়।



আর বগালেক?
এতো উঁচু পাহাড় বেয়ে উঠে ক্লান্ত হয়ে দেহ যখন এলিয়ে পড়তে চাইবে তখন শরীরকে চাঙা করে দিতে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে লেক-এর অপরূপ দৃশ্য।সৃষ্টিকর্তা কতো নিপুণ ভাবেই না সব তৈরি করেছেন।
লেক-এর পাড়ে বমদের পাড়া,পর্যটকদের থাকার কটেজ।পাশেই নামার সময় আর্মি ক্যাম্প।লেক-এর পানিতে কিছু বুনো হাঁস,পাখি দেখা যায়।
গোসল করতে নামলে মনে হয় আইস বাথ নিচ্ছি।এক মুহূর্তে সব ক্লান্তি দূর।
আর যেটা না বললেই নয়,তা হচ্ছে তাদের রান্না।
আহা!
এ যেনো অমৃত।শুটকি ভর্তাটা দিয়েই গোটা তিন চার প্লেট ভাত খেয়ে নেয়া যায়।অন্যান্য জিনিস তো আছেই।আমি গোগ্রাসে প্রাণ ভরে খেয়েছি।
তাদের শুধু রান্নাই নয়,হাতের তৈরি শাল,মাফলার ইত্যাদিও দেখার মতো।
বিকেল হলেই সবাই প্রার্থনায় বসে চার্চে।ঘণ্টার শব্দ অন্যরকম এক তরঙ্গ সৃষ্টি করে।সকাল বেলা খুব তাড়াতাড়ি ফর্সা হয় ওদিকে।

আর যাবার সময় বান্দরবন থেকে রুমা আর রুমা থেকে বগা লেক এ চান্দের গাড়ি/চাঁদের গাড়ি কিংবা বাসে করে যাওয়া যায়।বাস রুমা পর্যন্তই।
চান্দের গাড়িতে যে চড়েনি তার জীবন পানসে।ভাবাই যায়না এমন খাড়া রাস্তা এই জীপগাড়িগুলো কীভাবে দানবের মতো উঠে যায় তরতর করে।একবার উঁচুতে তো ক্ষণিকের মধ্যেই নিচুতে।
চিম্বুকের পাহাড়গুলো পথে পড়বে।
বাসের ছাদে আরেক অভিজ্ঞতা।ওদের সাথে কথা বলা যায়।
একটা ছেলের সাথে বাসের ছাদে কথা হয়।ওর নাম মনে নেই।তবে ও বলেছিলো ওর নামের অর্থ 'বন্ধুত্ব'।পরীক্ষা দিতে চট্টগ্রাম যাচ্ছে।চোখ ভর্তি স্বপ্ন তার।গানের টেস্ট অস্বাভাবিক ভালো।
আর আমাদের গাইড রুবেল ভাইয়ের তুলনা হয় না।যেমন পাহাড় চড়ে,তেমনি বারবিকিউ করতে পারে।তার গানের টেস্টও অনেক ভালো।নভেম্বর রেইন শুনছিলো সে।
রিয়েল দাদা ওখানকার প্রধান।তিনি তার কার্ড দিয়ে বললেন কখনো আবার গেলে অবশ্যই যেনো যোগাযোগ করি।

আরও অনেক কথা লিখা হয় নি।লিখে শেষ করা সম্ভবও নয়।
এখনও চোখে ভাসে সেখানকার পাহাড়,মানুষগুলো।সেখানকার কুকুর ছানাগুলোর লাফালাফিও মনে পড়ে।
এ স্মৃতি ভুলবার নয়।
কেওক্রাডং থেকে জ্বর,ঠাণ্ডা,
কাশি হয়েছে।অন্যরা হয়তো পা নিয়ে নড়তে পারছে না।
কিন্তু পাহাড় যেনো ডাকছে আমায়,বাতাস যেনো ছোঁয়া দিয়ে যায় সেখানকার।
মানুষগুলির সহজ আচরণ মনে গেঁথে গেছে।
নেশা ধরিয়ে দিয়েছে,পাহাড় চড়ার নেশা।আবারও যাবো,যেতে হবেই।বারবার গেলেও সৌন্দর্য ফুরাবে না।


ছবিঃস্বর্ণ মন্দিরে প্রবেশের পথে।


ছবিঃবগালক যাবার পথে,সাংগু নদী।


ছবিঃবগালেক উঠে,সূর্য তখন ডুবন্ত।


ছবিঃচিংড়ি ঝিড়ি,কেওক্রাডং এর পথে।


ছবিঃকেওক্রাডং এর পথে।




ছবিঃকেওক্রাডং এর চূড়ায়।


কেওক্রাডং স্মৃতি
১৬ ফেব্রুয়ারি,২০১৭।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০০

টুশকি বলেছেন: খুবই সুন্দর বর্ণনা।
"পাহাড় উঠার সময় ম্যাসেঞ্জারের টিং শব্দ সভ্যতায় ফিরিয়ে দেয়" -হাহা

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫৬

দ্য নিশাচর বলেছেন: ধন্যবাদ। ☺
চমকে দেয় আসলেই।ওদিকে তেমন নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না তো।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: আমি একদিনের জন্য গিয়েছিলাম। বেসম্ভব ভাল লেগেছে প্রতিটি মুহুর্ত।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪

দ্য নিশাচর বলেছেন: ভালো না লেগে যায় কোথায়?

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর। ছোট ছোট বাক্যে তুলে ধরেছেন। আরও বড় হলে আরও আরাম পেতাম হয়তো।
ছবি আরও কয়েকটা অ্যাড করে দিন। বেশি না, দুই একটা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪৩

দ্য নিশাচর বলেছেন: আসলে এটা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে কোনো লেখা ছিলো না,কিছু ক্ষুদে বার্তার ঈষৎ মার্জিত সংকলন মাত্র;তাই এরকম ছোট ছোট লাইন।ইচ্ছে ছিলো বড় করে লিখার।
ছবি যোগ করা যায়।
ধন্যবাদ।

৫| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৫৪

কালীদাস বলেছেন: চাঁদের গাড়িতে চড়াই তো এক বিশাল ট্যুর, সেখানে আপনি কেওকারাডং পর্যন্ত চলে গেছেন ;) অসাম :)

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:০৫

দ্য নিশাচর বলেছেন: থাইক্কাং পাড়া যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো কেওক্রাডং পেরিয়ে,সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ায় এবং ফিরে যেতে হবে কটেজে তাই হলো না।
চাঁদের গাড়ি আসলেই ট্যুরের বিশেষ অংশ,দানব একদম;যন্ত্র দানব!

৬| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:২৯

তানজিম রহমান বলেছেন: ভাই আমিও পরের বার যাবো, একসাথে যাবেন? ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.