নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুমকেতু কিংবা উল্কা হয়ে যাবো কোনো একদিন।বৃক্ষও হয়ে যেতে পারি!

দ্য নিশাচর

দো পেয়ে দৈত্য!

দ্য নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইয়ের নাম চিন্তা মুক্তির ১০ উপায়

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৩৫

মিঃ আয়ুষ্মানের মাথায় এখন রাজ্যের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
মাথার উপর ফ্যানটা ঘট্ ঘট্ শব্দ করে মৃদু গতিতে ঘুরে চলেছে,তিনি ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে তাঁর মাথার ভেতরকার দিকে মনে হয় এরকম-ই একটা ফ্যান কিংবা চাকতি বসানো আছে,সেটা ঘুরে চলেছে দুর্বার গতিতে যার সুইচ তাঁর আয়ত্তের মধ্যে নেই।তিনি চেষ্টা করছেন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হয়ে যাওয়া চিন্তাগুলো থেকে অন্তত একটা হলেও যেনো বের করে আনা যায়।এর জন্য আছে দশটি উপায়,ট্রেনে কোথাও যাওয়ার সময় একজন হকার হাতে কিছু ছোট আকৃতির বই নিয়ে বিশেষ কিছু দেখানোর ভঙ্গিতে উচ্চস্বরে বলে বেড়াচ্ছিলেন,'চিন্তা মুক্তির ১০ উপায়!' মাত্র ২৫ টাকা!২৫ টাকা!দুইটা কিনলে ৫ টাকা মূল্য ছাড়া!
মিঃআয়ুষ্মান বেশ আগ্রহ বোধ করে তিনি দুটো কিনে নিয়েছিলেন,যদি কোনো কারণে একটিকে হাতের কাছে না পাওয়া যায়,তাই।

সেই ১০ টি উপায়ের একটি উপায় হচ্ছে এরকম,"দুই হাত জড়ো করে মুখের কাছে চিন্তিত ভঙ্গিতে নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দিতে হবে।বাহির থেকে আসা কোনো শব্দ যেনো কানের পর্দায় আছড়ে পড়তে না পারে সেজন্য প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম যেকোনো উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে,অর্থাৎ শব্দ আসা প্রতিরোধ করতে হবে।জায়গার কোনো নিয়ম নাই,যেকোনো জায়গাতেই এটা প্রয়োগ করা যাবে তবে নির্জন গাছতলা হলে সবচেয়ে ভালো হয়,অথবা পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবিয়েও প্রয়োগ করা যাবে এক্ষেত্রে হাতের নিয়মের কিছুটা পরিবর্তন আসবে।পদ্মাসন হলে ভালো না হলেও সমস্যা নাই।অতঃপর মনে করতে হবে আপনি শূন্যে অবস্থান করছেন,যেখান থেকে সবকিছুর শুরু,যেখানে সব গতির অবসান হয়,সময়ও যেখানে ধীর হয়ে যায় বলে মনে হয়।তারপর মাথার ভেতরের চিন্তার পাঁজা থেকে একটা একটা করে বের আনতে হবে।.."
যাইহোক,মিঃআয়ুষ্মান এখন শূন্যে চলে গেছেন এই প্রক্রিয়ায়।তিনি চাইলেই এখন তার চিন্তার চলার গতি মন্থর করে দিতে পারেন।মনস্থির করে রেখেছেন ওই হকারটিকে আবার পাওয়া গেলে বাসায় এনে একদিন ভোজন করাবেন।
চেষ্টাচরিত্র করে একটিকে তিনি বের করে আনতে পারলেন।তার এখন মনে হয় আসলে তাঁর মাথায় ফ্যান না শুধু পানি আছে,পানিতে ভাসছে অনেক অনেক বোতল,বোতলগুলোর মুখ ছিপি দিয়ে আটকানো,তার ভেতর চিরকুট পাকানো,সেই চিরকুটগুলোতে চিন্তাগুলো দলা পাকানো,এগুলোই পানিতে ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রবল বেগে ঘুরছে।
এবার তিনি চিরকুটের দলা খুলছেন,তাঁর চোখের পাতা জোড়া তিরতির করে কাঁপছে।দেখলেন ও-তে লিখা আছে,'আগামীকাল তুমি বেতন পেতে যাচ্ছো,তোমার খুশি হওয়া উচিৎ।তথ্যটা খুশি হবার কোষে পাঠাও দ্রুত।একগাদা বই কিনতে হবে,কিছু সাউন্ড সিস্টেম কিনতে হবে নতুন,স্ত্রী-বাচ্চা..!'
তাঁর আর পড়তে ইচ্ছা করছে না,খুশির বদলে তিনি একরকম বিরক্ত হয়েছেন।চোখ খুলে তিনি এবার সামনের দিকে তাকালেন,তাকিয়ে দেখলেন তার দিকে প্রায় একশো জোড়া চোখ তাকিয়ে আছে গভীর দৃষ্টিতে!তিনি একটা চেয়ারে বসা,সামনের টেবিলে কিছু মোটা মোটা বই,তারও সামনে সারি সারি বেঞ্চে সুন্দর জামা-কাপড় পরা এতগুলি যুবক-যুবতী,তারা মনযোগ দিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।তাঁর মনে হচ্ছে তিনি এখন ভাষণ দিবেন,অধীর প্রতিক্ষায় তাঁর অনুসারীরা।খেয়াল করলেন তিনি একটি শ্রেণিকক্ষে বসে আছেন!
তাঁর মনে পড়লো তিনি আইনের একজন শিক্ষক,জুরিস্প্রুডেন্স পড়ান তিনি;আজকে তাঁর 'Administration of Justice' পড়ানোর কথা!
নিজের উপর কিছুটা বিরক্ত হলেন তিনি,বয়স বাড়ার ক্ষতিকর দিকের অন্যতম দিক হচ্ছে খেয়াল কমে যাওয়া,ভুলে যেতে থাকা;বয়স্ক মানুষ ক্ষতিকর,তিনি এখন ক্ষতিকর শ্রেণিতে অবস্থান করছেন।পড়ানোর ইচ্ছাটাই মজে গেছে,লেকচার দেয়ার জন্য যা যা ঠিক করেছিলেন সেগুলো আবার ঘূর্ণিঝড়ে ঢুকে পড়ে বোতল-বন্দি হয়ে পড়েছে,তিনি খেয়াল করলেন তাঁর মাথা ব্যথা হচ্ছে।

তিনি আজকাল ক্লাসে তাঁর যা যা করতে হবে তাঁর একটা তালিকা করে নিয়ে আসেন,তা-না হলে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।আজকাল আবার তাতেও প্রতিকার তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।

আজ বিকেলে তাঁর 'আইন সমাচার'-এ যাবার কথা;'আইন সমাচার' একটি বইয়ের দোকান।সেখানে আইনের সব রকমের বই এবং গবেষণামূলক,
রাজনৈতিক,সংস্কৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের বই পাওয়া যায়।'আইন সমাচার'-এর একটি সংঘও আছে,সেখানে একবার যেতে হবে আবার,সভা আছে;এসব সভা সমিতি তাঁর অপছন্দের তালিকায়,তবুও বইয়ের দোকানের মালিক সুব্রত রায়ের বিশেষ অনুরোধে যেতে রাজি হয়েছেন।
সভ্য,
জ্ঞানী-গুণী মহলে তাঁর বেশ পরিচিতি শিক্ষক হিসেবে,বেশ কিছু গবেষণামূলক বই ও অন্যান্য বিষয়ের উপর বইও আছে তাঁর।পাণ্ডুলিপি লিখা শেষ হয়ে গেলে তিনি আর সেসবের খোঁজ রাখেন না,'আনন্দ পাবলিশার্স' এর প্রকাশক প্রদোষ বাবু এসবের দেখাশোনা করেন।বাইরে বের হলে অনেকেই তাকে নমস্কার জানান,তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন,বিরক্ত হন;তাঁকে এতো শ্রদ্ধা জানানোর কোনো কারণ তিনি বের করতে পারেন না,তাদেরও তিনি চিনতে পারেন না।তবে হঠাৎ হঠাৎ তাঁর সবার নাম,তাদের সাথে দেখা হবার উপলক্ষ,তারিখ,বার সব মনে পড়ে;তখন তিনি তাদের একটা তালিকা করে ফেলেন,পারলে ছবিও রাখার চেষ্টা করেন।কিন্তু সেখানেও সমস্যা,কখনোই তিনি একবারে চার জনের বেশি মানুষ সম্পর্কে লিখতে পারেন নি।কারণ তথ্যগুলো বেশিক্ষণ থাকে না মাথায়,
ঘূর্ণিঝড় টেনে নিয়া যায়।
'চিন্তা মুক্তির ১০ উপায়'-এর দশম উপায়টার আশ্রয়-ই নিতে হবে কি না রোলিং চেয়ারে বসে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলেন!
...

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৭

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: হাঁ বয়স কখনো কাউকে ছাড় দেয় না। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম। মেনে নিতে মুন্চায়না।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪

দ্য নিশাচর বলেছেন: যথার্থ বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.