নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৈশিষ্ট্যহীন একজন মানুষ।

মোটা ফ্রেমের চশমা

বলার মতো কিছু হতে পারিনি এখনো

মোটা ফ্রেমের চশমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যান্ত্রিক স্মৃতি

২১ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২

মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে আনন্দের উপলক্ষ খুব সহজে আসে না। আনন্দ করতে গেলেও একগাদা টাকা লাগে যা জোগাড় করতে গিয়ে আনন্দের মাত্রাটা কমে যায়। কিন্তু উপলক্ষটা চলে আসলে সেসব কষ্ট আর মনে থাকে না।

সাল ২০০৫।
আমি ক্লাস সেভেন এ পড়ি। ভাইয়া মেবি অনার্স ফাইনাল ইয়ার কিংবা মাস্টার্সে। দুদিন পর পাশ করে বেরুলে চাকরির বাজারে ঘোরা লাগবে। আর তার জন্য কম্পিউটার জানা আবশ্যক। আর ট্রেনিং সেন্টারে শিখে লাভ নাই। 'প্র্যাকটিস' থাকা লাগে। সুতরাং কম্পিউটার লাগবে।

এখন যেমন ক্লাস ওয়ান এর বাচ্চারা ১০-২০এমবিপিএস স্পিডে ডাউনলোড করে এফটিপি সার্ভার থেকে সেসময় আমি নেট তো দুরের কথা, ডাবল ক্লিকও করতে শিখিনি ঠিকমত। যাই হোক, পরের কথায় আসি। আব্বা দোকান ভাড়ার অ্যাডভান্সের ৫০,০০০টাকা জোগাড় করে দিলো কম্পিঊটার কেনার জন্য। তখন আমার আর ভাইয়ার মাথায় মহা গরম। দুনিয়ার না হোক, আশে পাশের এলাকার সবচাইতে 'শক্তিশালী' কম্পিউটার কেনা লাগবে এই টাকা দিয়ে (আমি সমান তালে উৎসাহ দিয়ে গেলাম। যদিও আমার পিসি সম্পর্কে জ্ঞান ছিল তখন এরকম- পেন্টিয়াম ৪, ৩.০ হইল সবচাইতে শক্তিশালী মাদারবোর্ড)

আমার এক কাজিনের বন্ধু কম্পিউটার এর ব্যবসা করতেন। ওনার সাথে আলাপ আলোচনা করল আমার ভাই। আইডিবি ঘুরে ঘুরে ভাইয়া আর আমার আরেকজন কাজিন কেসিং আর মনিটর পছন্দ করল(এই কেসিং আর মনিটর এখনো আছে :3 ) সেটা অই বন্ধুর দোকানে নিয়ে গিয়ে বাকি পার্টস লাগানো হল।

তারিখ আমার এখনো মনে আছে। ফেব্রুয়ারি ২৩,২০০৫। বাসায় কম্পিউটার আসবে, এই মহাআনন্দে আম্মা সাদা পোলাও আর গরুর রেজালা রান্না করল। ১২.৩০টার দিকে আগমন হল বরযাত্রার লোকজনের। দোকানের অই ভাইয়ের সাথে আমার মত মূর্খ পোলারও বিশাল খাতির হয়ে গেল। ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ হিসেবেও উনি অসাধারন। আম্মা ওনাকেও খাওয়ায়ে দিল।

কম্পিউটার কেনার পর আমাদের তিন ভাই-বোনের নেশা হয়ে গেল স্বাভাবিক ভাবেই। টাইম করে নিলাম। সকালে আমি, দুপুরে বুবু আর রাতে ভাইয়া। আর বেশি রাতে আমি আর ভাইয়া। কেনার পর বিশাল ধরনের গর্ব হতে লাগল এমন কম্পিউটারের ভাগিদার মালিক হওয়ার জন্য।

বলা দরকার যে তখন আমরা গ্রামে থাকি। কম্পিউটারের নেশায়(আসলে গেমের নেশায়) সারাদিন বসে থাকার পরেও নেশা মিটত না। তখন আমি আর ভাইয়া মিলে রাতে গেম খেলতে বসতাম। এমনও হইসে যে রাত ৩টা বেজে গেসে, তখনো খেলা চলতেসে। আর গ্রামে রাত ৩টা মানে ভয়াবহ ব্যাপার। আব্বা-আম্মার ঘ্যান ঘ্যান উপেক্ষা করে চালায়ে যেতাম আমরা। মাঝে মাঝে তিনজনও বসতাম একসাথে। ৫০টাকার আফতাব আইটির স্ক্র্যাচ কার্ডে নেট ইউজ করতাম তিনজন(স্পিড জিজ্ঞেস কইরেন না)। তখন নেট ইউজ করা মানে ওয়ালপেপার সার্চ করা। সব কিছুই একসাথে করতাম। আমি অথবা বুবু অথবা ভাইয়া টাইম ছাড়া একলা বসলে বিশাল ধরনের হাঙ্গামা হয়ে যেত।

একটা যন্ত্র আমাদের সবাইকে এক করে দিসিল(যদিও আমরা আগেও মিলে মিশেই থাকতাম)। আর এখন আমার ল্যাপটপ,ডেস্কটপ,আইপড সব কিছুই আছে। কিন্তু সব কিছুতেই একা। যে যার রাস্তায় চলে গেসে। আগের আবেগটা খুঁজে পাই না। যন্ত্র আছে, আবেগটা, মনের টানটা যেন কই হারিয়ে গেছে। আমরা তিন ভাইবোন শেষ কবে একজায়গায় বসছিলাম ১০মিনিটের জন্য, আমার মনে নেই। যে যার লাইফ নিয়ে ব্যস্ত। এক হওয়ার, এক সাথে থাকা কি আনন্দ সেটা এখন কেবল মনে করতে হয়। মাঝে মাঝে করতেও পারি না। কিন্তু আমি জানি, এই ভালো লাগা গুলো, সৃতিগুলো আমাদের পরিবারের সবারই মনে আছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে ভাবার, কথা বলার সময় নেই।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৯

গেম চেঞ্জার বলেছেন: শেষের কথাগুলি না হয় অন্য পোস্টেই দিতে পারতেন। পোস্টু ভাল্লাগসে। ১ম পিলাচ ;)

১২.৩০টার দিকে আগমন হল বরযাত্রার লোকজনের।

=p~

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: পয়েন্ট দেখিয়ে দিতে ভালো করেছেন। সামনের লেখায় আরো বুঝে লেখার চেষ্টা করব।

আমার ব্লগ ঘুরে দেখার জন্য ধন্যবাদ।

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৩৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: গল্পটি পাঠে নীজের কম্পিউটার কেনার কথা মনে পড়ল , সে কি রোমাঞ্চকর অবস্থা । সে ১৯৯০ সনের কথা ইউনিভার্সিটির কোরিয়ান বণ্ধু তার কোর্স শেষে তার কম্পি্‌উটার সস্তায় বিক্রি করে দিবে । হোক পুরাতন তাও তো কম্পউটার । শুরু হল শিখা লুটাস ১ ২ ৩ এখন যা অচল ।
যা হোক ভাল লাগল গল্পটি ।
শুভেচ্ছা রইল ।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: এখন তো কম্পিউটার-ল্যাপটপ সহজলভ্য হয়ে গেছে।তাই আগের মত আনন্দটা থাকে না।
এটা অবশ্য গল্প ছিলো না। আমার জীবনেরই ঘটনা।
সময় করে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩২

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার প্রথম পোস্টটা পড়ে গেলাম। ভাল লেগেছে। ২য় প্লাস + + ।
২০০৫ সালে কেনা প্রথম কম্পিউটার কিনে আপনাদের (ভাইবোনদের) মনে যে আনন্দানুভূতি বয়ে গেয়েছিল, তা ১৯৯৬ সালে কেনা আমার কমিউটার প্রাপ্তির আনন্দের কথা মনে করিয়ে দিল।

১৩ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: এত আগের পোস্ট ঘেঁটে ঘেঁটে কষ্ট করে পড়েছেন দেখে খুব খুশি লাগছে! ব্লগে প্রথম লেখাটাই ছিলো খুব বেশি ব্যক্তিগত একটা স্মৃতি। সবার সাথে হুট করে শেয়ার করার ইচ্ছে থেকেই পোস্ট করা।

অনেক অনেক ধন্যবাদ খায়রুল আহসান! শুভরাত্রি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.