নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৈশিষ্ট্যহীন একজন মানুষ।

মোটা ফ্রেমের চশমা

বলার মতো কিছু হতে পারিনি এখনো

মোটা ফ্রেমের চশমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টির একাল-সেকাল

০৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৩৬

রাত ১।৫০

চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে লেখা শুরু করলাম। বৃষ্টি নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখেছেন, লিখছেন। আমিও লিখলাম। লিখতাম না। একটু আগে তীব্র মেঘের গর্জনের সাথে বৃষ্টি পড়ে গেল। যথারীতি আমাদের সবার ভেতরের রবিঠাকুর জেগে উঠলেন। আমিও ব্যতিক্রম না।

শুরু করি।

আকাশে মেঘ জমা শুরু করলেই কেন জানি ছোট বেলা থেকেই আমার মন খুশি খুশি লেগে যেত। মনে হত যে যত কিছু কাজ আছে সব থেকে মুক্তি পেয়ে যাব বৃষ্টি পড়া শুরু হলেই। কখন শুরু হবে, কেন শুরু হচ্ছে না! আরে, এত বাতাস কেন? মেঘ তো থাকবে না! আপদের বাচ্চা বাতাস দূর হ। বৃষ্টিটাকে পড়তে দে না! যখনই এমন হত, বাতাসের জন্য মেঘ গুলো অন্য কোথাও চলে যেত। আর একটু পর ফের শুরু হয়ে যেত গরম, রোদ। আসি আসি করেও আসল না বৃষ্টি। মনটাই যেত খারাপ হয়ে। ধুর!

তবে সব সময় এমন হত না। যখন সত্যি সত্যি পড়া শুরু হয়ে যেত, টিপ টিপ করতে করতে ঝুম ঝুম করে, কি যে খুশি লাগত ভাবলেই হাসি চলে আসে এখন। কারন এখন আর এত খুশি লাগে না কেন জানি। আসছি সে কথায়।

আমার ছোটবেলা পুরোটাই কেটেছে গ্রামে। গ্রাম বলতে অজপাড়া গাঁ না যদিও। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দের আনন্দই অন্যরকম। আমি, আমার ভাই-বোন চেয়ার নিয়ে বসে যেতাম দরজার সামনে আর দেখতাম মাটিতে বৃষ্টির ফোটা পড়ে বুদবুদ তৈরি হতে। কয়েক সেকেন্ডেই মিলিয়ে যেত। কারন পানি পড়ছে তো পড়ছেই আকাশ থেকে। তাদের বুদবুদকে জায়গা দিতে হবে না? অদ্ভুত সুন্দর সেই দৃশ্য। আব্বা বাসায় থাকলে তার ছোটবেলার কোন কাহিনী বলত। কিংবা আব্বা না থাকলে আমরা ভাই-বোনরাই নিজেরা নিজেরা কথা বলতাম।

সকাল বেলার বৃষ্টি মানে ছিল আম্মার চিন্তা, সব কাজ একা একা করতে হবে। কারো সাহায্য পাওয়া যাবে না। আর আমার খুশি ইস্কুল কামাই দেয়ার একটা মোক্ষম অজুহাত পাওয়া। আর বেলা গড়ানোর আগে খাবার রান্না করা শুরু হত। বৃষ্টির দিনে গরম ভাত; গরম ডাল দিয়ে খাওয়ার কি স্বাদ! ক্ষুধা না থাকলেও গরম ডালের ঘ্রাণে খাওয়ার ইচ্ছে এমনিতেই চলে আসত।

আর বিকেলের বৃষ্টি মানে স্পেশাল নাস্তার উপলক্ষ। গরম পেঁয়াজু অথবা হাতে বানানো পুরি। বা মুড়ি ভর্তা। আর এসবের সাথে চা না থাকলে চলে? এসব বানানো শুরু হত বৃষ্টি থামার পর পরেই। থামার পরে বাতাস থাকলে গ্রামের ছেলেরা ঘুড়ি উড়ানো শুরু করত। সেটা অবশ্য ঘুড়ির মৌসুম হলে।

গ্রামে বৃষ্টি মানেই প্যাচ-প্যাচে কাদা মাটি। ইটের টু্করা বিছিয়ে দেয়া হত যাতে হাটা যায়। আর তাতে পা দেয়া মাত্রই পচ করে লাফিয়ে উঠত কাদা-পানি। আর হাফপ্যান্ট-ফুলপ্যান্ট-লুঙ্গির বারোটা বাজাত। বয়স্করা সাবধানী বলে লুঙ্গি কিছুটা হাত দিয়ে উঠিয়ে চলত।
হঠাত চোখ চলে যেত গাছ-গাছালির দিকে। উঠানে ছিল পেয়ারা আর লেবুর গাছ। যেন সবাই গোসল করে পরিস্কার হয়ে গেছে। পাতা গুলো চকচক করত। আর গাছের গোঁড়ায় জমে থাকত পানি। গাছ ধরে নাড়া দিয়ে দৌড় দিয়ে সরে যেতাম কখনো কখনো। পাতা থেকে পানি ঝরে পড়ত শরীরে সময়মত সরতে না পারলে।

আসলে শৈশবে আনন্দ খুঁজতে খুব বেশি কারন লাগত না। আর এখন আনন্দের কথা ভাবতে গেলেও কারন খুঁজে নিতে হয়।

একালের কথা আসি।

ছোট থেকে বড় হওয়ার সাথে সাথে আনন্দ, আবেগ-অনুভূতি গুলোও হাঁটা দেয় উলটো পথে।

দিনের বেলায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে কপাল কুঁচকে আসে বিরক্তিতে। রাস্তার পানিতে সাঁতার দিয়ে পৌছাতে হবে গন্তব্যে। একটা রিকশা পেতে হলে ঘুরতে হবে মিনিমাম ৮-৯টার কাছে। তাও কাকুতি-মিনতি করে, ডাবল ভাড়ার লোভ দেখিয়ে চড়ে বসতে পারলে মনে হয়- ‘পাইলাম। আমি ইহাকে পাইলাম’

আর বিকেলের বৃষ্টি মানে হল সারাদিন ঘরে বসে থাকা। আর জানালার গ্লাস বন্ধ করে রুমে বসে থাকা। খুললেই বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়বে ঘরে। পানি পরে মুছবে কে? তবে জানালা বেয়ে বৃষ্টির ফোটার অন্য ধরণের মুগ্ধতা আছে। এখন বৃষ্টির আনন্দ থেমে গেছে অই জানালার ফোঁটাতেই।

তবে, জীবন পুরোটাই তিক্ততায় ভরা না। এখন আনন্দ খুঁজে পাই রাতের বৃষ্টিতে। একা একা। অন্ধকারের পর্দা ভেদ করে পড়ে বৃষ্টি। তৈরি করে নিজের আবছা পর্দা। কানে হেডফোন দিয়ে কোন বিষণ্ণ গান শুনি বা বৃষ্টি নিয়ে লেখা কোন গান শুনি আর তাকিয়ে থাকি অন্ধকারের দিকে। ওয়ারফেজের ‘বৃষ্টি নেমেছে’ কিংবা লিঙ্কনের ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে’ বা সজীবের ‘কালো মেঘ’ গান গুলো মনে করিয়ে দেয় পুরানো কোন সৃতি বা প্রিয় কারো কথা। না বলা কথা গুলো তখন মনে হয় বলে দিই। কি হবে চেপে রেখে। কিন্তু না, মুহুর্ত পরেই হাত থেকে ফোনটা রেখে দিই। ফিরে আসি বাস্তবতায়।

আসতে হয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: লেখাটা ভালই লাগলো।


(পরামর্শঃ- http://www.somewhereinblog.net/blog/gameChanger/30079740 এই পোস্টে আপনার কাজে আসতে পারে)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৮

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: পড়েছি আপনার পোস্টটি। আমার মত নবীনদের জন্য অনেক হেল্পফুল একটি পোস্ট।

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:২২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটি ভাল লাগল , বিশেষ করে এ কথাট
জীবন পুরোটাই তিক্ততায় ভরা না।
এ যেন জীবনেরই কথা ।
ভাল থাকার শুভ কামনা রইল ।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০২

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: জীবনে শুধুমাত্র তিক্ততাই খুঁজে পেলে সেটা নিজেরই সমস্যা বলে ধরে নিতে হবে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের জীবনটা দিয়েছেন সাজিয়ে নেয়ার জন্য। অল্পকিছুদিনের জন্যই তো আসা। তিক্ততাকে ঝেড়ে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তো আমাদেরই।


আপনিও ভালো থাকুন। আজকে নয়, সব সময়।।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:২২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটি ভাল লাগল , বিশেষ করে এ কথাট
জীবন পুরোটাই তিক্ততায় ভরা না।
এ যেন জীবনেরই কথা ।
ভাল থাকার শুভ কামনা রইল ।

৪| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ভাল লাগল কথাগুলি শুনে ।
ভাল থাকার শুভ কামনা রইল।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩২

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.