নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৈশিষ্ট্যহীন একজন মানুষ।

মোটা ফ্রেমের চশমা

বলার মতো কিছু হতে পারিনি এখনো

মোটা ফ্রেমের চশমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসমাপ্ত

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:২৬

সময়টা সম্ভবত ১৯৯৯ থেকে ২০০১/০২

দুপুর গুলো খুব অলস ভাবে যেত। খাবারের পর হয়তো আম্মার পাশে শুয়ে ঘুম দিতাম। আর না ঘুমালে ফাইনাল পরীক্ষার পরে আব্বার কিনে দেয়া ‘একশো ভূতের বাক্স’ নামের গল্পের বইটায় ডুব দিতাম। সাধু ভাষায় লেখা কোন কিছু দেখলেই এখন বিরক্তিতে চোখ কুঁচকে যায় কেন যেন। কিন্তু তখন সেই সাধু ভাষায় লেখা কলকাতার লেখকদের গল্পগুলোই গোগ্রাসে গিলতাম। বহুবার পড়া সত্ত্বেও আবার পড়তাম গল্প গুলো। একটা গল্পের কথা মনে পড়ে- বাচ্চা একটা ছেলেকে, অদ্ভুত দর্শক এক লোক তাকে একটা ফ্লপি ডিস্ক দেয়। গেমের। সেটা খেলতে গিয়ে ছেলেটা গেমের জগতে ঢুকে যায়। শেষটায় দেখা যায় যে বাচ্চাটা চিৎকার করে স্ক্রিনের অপর পাশ থেকে বের হওয়ার জন্য দুমাদুম কিল মারছে কাঁচের দেয়ালে, কিন্তু বেরিয়ে আসতে পারছে না। আরেকটা গল্পের নাম মনে আছে- ‘ভূতের যদি থাকে খুঁত।’ ভূতটা লেজকাটা টিকটিকির রূপ ধারন করে থাকে। সম্ভবত পা কিংবা হাত কাটা ছিলো বলে। এরকম আরো বহু গল্প ছিলো। পড়তে পড়তে ঢুলুনি আসলে বইটা বালিশের পাশে রেখেই ঘুমিয়ে যেতাম। কিংবা ক্যাসেটে হেমন্ত,মান্না দে, সতীনাথের গান শুনতে শুনতে ঘুমাতাম। এগুলো অবশ্য আম্মা শুনতো।

একটা বই পড়েই বছর কাটিয়ে দিতাম। টাকা কিংবা কেনার সুযোগ কোনটাই থাকত না বলতে গেলে। পুজোর সময় কলকাতার প্রকাশকরা বই বের করতেন, একক, সংকলন। সেটা চলে আসতো দেশে। কদাচিৎ আমার হাতে।

গ্রামের ছোট্ট একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। পরীক্ষা ছাড়া স্কুলে যেতাম না। বিরক্ত লাগতো। ডাকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- স্কুলের নাম। গ্রাম থেকে বেরুলেই উল্টো দিকেই স্কুল। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা খুব ভালো ভাবেই চিনতেন আর আদর করতেন। ক্লাস ১-৪ পর্যন্ত ফার্স্ট বয় ছিলাম বলে। কিংবা স্কুলের অফিসে আমার আঁকা একটা ছবি টানানো ছিলো বলেই কিনা- কে জানে। হয়তো দুটোই। ক্লাস ফাইভে তারা প্রচন্ড চেয়েছিলেন যাতে আমি বৃত্তি পাই। কিন্তু আমার তখন দরকার ছাড়া বাড়তি পড়াশোনা করতে কোনই আগ্রহ ছিলো না। বলতে গেলে কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষা দেই। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়।

টু-ইন-ওয়ান প্লেয়ার ছিলো আমাদের একটা। ঐ আমলে এমন কিছু থাকা মানে অনেক বড় কিছু। ক্যাসেট ছিলো ভাইয়ার অনেকগুলো। আর্কের হাসান, পঞ্চম, টুটুল-আইয়ুব বাচ্চু- নগর বাউল (তখন ভাবতাম ঝাকড়া চুলের ভারি গলার গায়কটার নামই নগর বাউল। বেশ পরে জেনেছি আসল নাম) কিংবা খালিদ ,ওয়ারফেইজ, নোভা, ফিডব্যাক, উইনিং। আর মাঝে মাঝে রেডিওতে ভেসে আসা ভিনদেশী ইংরেজি গান। বুঝতাম না একলাইনও। মাইকেল জ্যাকসনের ‘জাস্ট বিট ইট’কে বলতাম- ‘জাষ্ট পিরে!’ তবুও শুনতে ভালো লাগতো। তখন ক্রেজ ছিলো টাইটানিক। ‘মাই হার্ট উইল গো অন’ বলতে গেলে জাতীয় সঙ্গীতের মত বাজে রেডিওতে। বড় বোনকে দেখতাম, সুদর্শন চেহারার কয়েকটা গায়কের একটা ব্যান্ডের পেপার কাটিং জমাতে। পরে কিনেই নিয়ে আসে ফিতার ক্যাসেট- ‘নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড’; ব্যান্ডের নাম তখনো জানি না ঠিকমত। পরে জানলাম- এনসিঙ্ক। ধীরে ধীরে আরো চিনলাম- ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ, জেনিফার লোপেজ। আরেকটা গান ভাল্লাগতো- জিনি ইন অ্যা বটল। তিন গোয়েন্দার সাথে পরিচয় বড় বোনের হাত ধরেই। চুরি করে পড়তাম বইগুলো। বুবু ঘুম থেকে উঠার আগেই ভোরে উঠে পড়তাম যাতে ও জাগার আগেই অল্প হলেও কয়েকপাতা পড়তে পারি। বা স্কুলে চলে গেলে তখন পড়তে পারি। ধরতে দিতো না বলে। ক্যাসেটগুলো-ও থাকতো ড্রয়ারে লুকানো। চাবি খুঁজে খুঁজে বের করে চুরি করে শুনতাম ইংরেজি গানগুলো। মনে আছে, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে নিউমার্কেটের একটা দোকান থেকে ক্যাসেট রেকর্ড করে নিয়ে আসে ভাইয়া। সবগুলো গানই বড় দুজনের পছন্দ মত ছিলো। চাঁদ রাতে বাজাবে বলে- এই একটা উপলক্ষের কারনেই সারা মাস ধৈর্য্য ধরে ছিলাম।
যাই হোক।

২০০৩ দিকে বাসায় ডিশলাইন নেয়া হয়। দুপুর-বিকেলটা যেত অনেকটা আগেরমতই। খাওয়ার পরে টিভি দেখতাম। তিনটা থেকে সোয়াট ক্যাটস দেখাতো যদ্দুর মনে পড়ে। আঁকা-আঁকি করতে ভালো লাগতো। নেশাটা আগে থেকেই ছিলো। কত যে খাতার পৃষ্ঠা নষ্ট করেছি সোয়াট ক্যাটসের প্লেন আঁকতে গিয়ে। আব্বা-আম্মা বা পরিবারের কারোরই উৎসাহের কমতি ছিলো না আঁকা-আঁকির ব্যাপারে। আব্বা ড্রইং খাতা, এ-ফোর সাইজের পেপার এনে দিতো চকবাজার থেকে। ছোট চাচাও দিতেন মাঝে মাঝে। জন্মদিনে উপহার পেতাম রঙপেন্সিল, প্যাস্টেল কালার। আমির খানের একটা অ্যাড দেখাতো টিভিতে (সেটা ২০০৩ এর আগের কথা)। ডাবল রোল ছিলো। একে অন্যকে তাড়া করে মারামারি করত- বা এরকম কিছু। সেটাও এঁকেছিলাম। হাহ! হাহ! যদিও কাকের ঠ্যাং-বগের ঠ্যাং বলা যায় না। আবার ৯ বছর বয়সের কেউ পিকাসোর মত আঁকবে সেটা ভাবাও ঠিক না।

পশ্চিম বঙ্গের চ্যানেল গুলোয় দেখাতো উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা। হসপিটাল, অগ্নিপরীক্ষা, শাপমোচন, হারানো সুর- অনেক গুলোরই নাম মনে আসছে এখন। আধা-আধি করে দেখা আছে সবগুলোই। সাদা-কালো আর খড়খড়ে সাউন্ডের সিনেমা দেখতাম বিরক্ত মনে আর চিন্তা করতাম কখন কার্টুন দেখতে পারবো।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৪২

ঢাবিয়ান বলেছেন: ভাল লেগেছে খুব পোস্টটা। কৈশোর ও তারুন্যে চলে গিয়েছিলাম এক ছুটে। আপনার মত করে পার করেছি সময়টা।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৭

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য। হুট করেই ছোটবেলার স্মৃতি কাতরতা জেঁকে ধরেছিলো।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৪২

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: আহা শৈশব !

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৭

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: আহা! কোথায় গেলো সেই দিনগুলি! :(

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:০২

শায়মা বলেছেন: আহা হারিয়ে যাওয়া দিন.....

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৮

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: শায়মাপু, কেমন আছো?
অনেকদিন পরে কিছু লিখতে ইচ্ছে করলো। ব্লগে আর আসা হয়না আগের মত। দিন গুলো খুব ভালো যাচ্ছে না তেমন।

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:০৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


শৈশবটাই শ্রেষ্ঠ সময়।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৮

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: একদম ঠিক!

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:১৮

সুমন কর বলেছেন: আহা পুরনো স্মৃতি !!! ভালো পোস্ট, অনেক কিছু মনে পড়ে গেল। (আমিও ২ দিন ধরে পুরনো কিছু গান শুনছি)
+।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৯

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য গানের চাইতে শ্রেষ্ঠ উপায় আর নেই।

৬| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমার সেই ভাবে বই পড়া শুরু হয় এস.এস.সি.-র পর। যদিও পত্রিকা আরো আগে থেকে নেয়া হত বাসায়। তবে গান শোনা, রেকর্ডিং করা হাই স্কুলে গিয়েই শুরু হয়...

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৭

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: আমার অবশ্য বই পড়া আগে থেকে শুরু হয়েছে আরো আগে থেকে। বড় ভাই বোন থাকায় আমার জন্য ব্যাপারটা সহজ হয়ে গিয়েছিলো।

৭| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে মনটা বিষন্নতায় ভরে গেল।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৭

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: :(

৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্টটা পড়ে- ফীলিং নাইস এন্ড নস্টালজিক! পোস্টে ভাল লাগা + +

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:০৮

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: আমার স্মৃতিচারণ পড়ে ভালো লেগেছে জেনে আমারো খুব ভালো লাগছে। আসলে ব্লগে আপনাদের মত লেখক-পাঠকদের জন্যই এখনো লিখতে ইচ্ছে করে। যাদের সাথে নিজের কথা গুলো শেয়ার করতে পারেই স্ক্রিনের অপর পাশে বসেও।

ধন্যবাদ আপনাকে।

৯| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৪০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: সুন্দর

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া। তোমার পহেলা বৈশাখ নিয়ে লেখাটা পড়লাম। লেখনীর উন্নয়ন চমৎকার! আরো লিখে যাও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.