নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নজরুল ইসলাম টিপু

নজরুল ইসলাম টিপু

আমি একজন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। আমি চাই আমার দেশটি সুনাম ও সুখ্যাতি সহকারে দুনিয়ার বুকে গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে উঠুক। আমার দেশের প্রতিটি যুবক আলস্য ও হিনমন্যতা ঝেড়ে সকল কাজে দুই হাতকে কাজে লাগাতে শিখুক। আমিও সে সব যুবকের একজন হতে চাই, যারা নিজের কর্ম ও উদ্দীপনার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় চেতনাকে সজাগ করতে সদা ব্যস্ত। আমি আমার দেশকে ভালবাসি হৃদয়ের সমস্ত শক্তি উজাড় করে।

নজরুল ইসলাম টিপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বদমাশ জ্বিনের কবলে আবদুল কাদের! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-৭ (রোমাঞ্চকর কাহিনী)

০২ রা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৪১

এমনি সময় ঘর থেকে বের হয়ে এলেন ‘আবদুল কাদের’! সম্ভবত আমার বাবার ঘরেই ছিলেন! তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, বেয়াদব! এভাবে আমাকে আর কত জ্বালাবি। তোর অত্যাচারে আমার কোথাও সুখ হয়না। দেশ বাড়ি সব ছেড়েছি তোর কারণে। বুঝলাম, মনে হয় তিনিও পাগল হয়েছেন? কিছু বুঝে উঠার আগেই তিনি আমার মেঝ ভাইয়ের চুলের মুষ্টি ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গেলেন! রসি দিয়ে বাঁধলেন! বিড় বিড় করে কিছু পড়তে রইলেন! তিনি খুবই কড়া গলায় আমার আম্মাকে বললেন, সরিষার তৈল আর গোল মরিচ দেন! মেঝ ভাইও সমান তালে আবদুল কাদেরকে হুমকি দিতে রইলেন। সরিষার তৈল আনার পরে মেঝ ভাই যেন ভয়ে চিল্লাতে রইলেন! গোল মরিচে আগুন দেবার পর মাফ চাইতে থাকলেন এবং বলতে রইলেন এই কাজ আর করবেন না। এবারে বুঝতে পারলাম মেঝ ভাইকেও জ্বিনে ধরেছে আর আবদুল কাদের ও একজন বৈদ্য! এক পর্যায়ে জ্বিন ভয়ে আতঙ্কে পালালেন!



আবদুল কাদের সেই রাত্রিতে আমাদের বাড়িতে রইলেন। আমার একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুর ঘুর করছিল সেটার যোগসূত্র এই আবদুল কাদেরের কাছেই হয়ত থাকবে! মেঝ ভাইয়ের ঘটনার পূর্বে, আগে বর্ণিত সেই ভাবী সহ গ্রামের আরো এক ভাবী তিনবার জ্বিন দ্বারা পাগল হয়েছিল! এসব ঘটনা গুলোর ঘটার প্রতিদিন সন্ধ্যায় আবদুল কাদের আমাদের বাড়ীতে এসেছিল! আবদুল কাদেরকে আমাদের বাড়ীতে আসতেই হত, বাগানের ফল, সবজি, বাজারে বিক্রি করত। তাছাড়া তার পরিবারের জন্য চাউল, তৈল, লবণ বাড়ী থেকেই দেওয়া হত। এসব কাজেই আবদুল কাদের আমাদের বাড়ী হয়ে ঘুরে যেতেন। আমার দৃষ্টিতে লক্ষণীয় ছিল, সে যদি দিনে আসে কিংবা রাত্রিতে বাড়ি আসে তাহলে সমস্যা হয় না। সে সন্ধ্যা বেলায় যদি বাড়ীতে আসে কিংবা সন্ধ্যায় তার অবস্থান যদি আমাদের বাড়ীতে হত, তাহলে একটা অঘটন ঘটেই!



আবদুল কাদের আমার পছন্দনীয় ব্যক্তি। পরম বিশ্বস্ত মানুষ, কৌতুহল উদ্দীপক আচরণ, হাতে লোহার চুড়ি, গলায় তামার চেইন, লম্বা দাড়ি, বাবরী কাটা চুল, হাতে ও গলায় তাবিজের মালা! চোখ দুটো ঈষদুষ্ণ লাল, কারো দিকে তাকালে মনে হবে শরীরের ভিতরটা পরখ করছেন। কাঁচা পিয়াজ ব্যতীত কোন খাদ্য ধরেন না, রসুন ব্যতীত চা পান করেন না! মেঝ ভাইয়ের ঘটনায় রাত্রে একাকী তিনি আর বাড়ীতে যাবেন না। আমাদের কাছেই থাকবেন, ফলে তাকে কায়দা মত পেয়ে যাই।



তার উপস্থিতিতেই আমাদের বাড়ীতে জ্বিনের উপদ্রব হয়, ব্যাপারটা উল্লেখ করে তার মন্তব্য চাইলাম! তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন! এক পর্যায়ে আমার হাত ধরে বললেন বাড়ীর এসব অতি প্রাকৃতিক ঘটনা শুধুমাত্র তার কারণেই ঘটেছে! আমার হাত ধরা অবস্থায় বললেন কাউকে যেন এসব কথা না বলি। তিনি আগামী দুই একদিনের মধ্যেই আমাদের অঞ্চল ত্যাগ করে চলে যাবেন! তার এই ওয়াদায় আমি একেবারেই ভেঙ্গে পড়ি। তাকে বললাম আমি এসব কাউকে বলব না, তাছাড়া আপনি চলে গেলে আমার বাবার কষ্ট বেড়ে যাবে। তিনি বাগান পরিচর্যা কিংবা পাহারা দেবার জন্য আপনার চেয়ে বিশ্বস্ত কাউকে পাবেন না। তাকে জোড় করলাম যাতে আমার কাছে কিছু রহস্য প্রকাশ করে এবং জ্বিন তাড়ানোর মূল কৌশল আমাকে বাৎলে দেন! আমি শিখতে চাই!



আমার এই আগ্রহে তার ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে এলো। তিনি বললেন আসামের একটি গরীব পরিবারে তার জন্ম। পিতার ১১ সন্তানের তিনিও একজন। একটি সচ্ছল জীবন পাবার জন্য হেন কাজ বাকী নাই যা তিনি করেন নাই। সাপুড়ে সেজেছেন, গণক বনেছেন, পথে প্রান্তরে যাযাবরদের সাথে ঘুরেছেন, তান্ত্রিক হিসেবে কাজ করেছেন, রাজমোহিনী তাবিজের পসার সাজিয়েছেন, তান্ত্রিক বৈদ্যের সাথে লম্বা সময় কাটিয়েছেন। কোথায় ভাগ্যের চাকা ভালভাবে ঘুরেনি। পরে বাংলাদেশে চলে আসেন এবং চা বাগানে কুলির চাকুরী নেন।



অশিক্ষিত কুলীরা তার অর্জিত এসব বিদ্যাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে, ফলে তার পুরানা অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগিয়ে নিজেই তান্ত্রিক সেজে গেছেন। সব কুলিরা তাকে একবাক্যে পছন্দ করত বিধায় সর্দারের চাকুরীটি তার করায়ত্বে আসে। সর্দার হলেও, কুলির সর্দার তো! বন্দরের সর্দার হলে না হয় কথা ছিল। এই সর্দারি পেশাতেও তার জীবন সব্চ্ছল হল না, জীবনের অবস্থাও বদলায় না! সে চায় আরো অধিকতর সচ্ছলতা!



বাগানের এক মৌলভীর কাছে জানতে পারে, জ্বিন সাধন করলে অগাধ অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া যায়! আর জ্বিন সাধনের জন্য দরকার একাগ্রতা, সাহস, কঠোর অধ্যবসায়, নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা, মজবুত ইচ্ছা শক্তি। নিয়ম মাফিক আমল করতে থাকলে তিন মাসের ব্যবধানে কোন একটি জ্বিন বশ্যতা স্বীকার করে তার ইচ্ছার গোলামে পরিণত হবে। পরে সেই জ্বিনকে কাজে লাগিয়ে কিংবা মানুষের কিছু উপকার ঘটিয়ে ভাল আয় রোজগার করা যায়। মানুষের সম্মানও পাওয়া যায়।



যেই ভাবা সেই কাজ। মৌলভী সাহেব জ্বিন সাধন করার জন্য যত জিনিষের প্রয়োজনীয়তার কথা বলল, তার কোনটাতেই নগদ টাকা পয়সা খরচ করার দরকার নাই। দরকার শুধু দৃঢ় মনোবল, কঠিন সিদ্ধান্ত আর কঠোর সাধনা। যার সবগুলোই আবুদল কাদের করতে পারবে। মৌলভী থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নিয়ে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে তিনি জ্বিন সাধনের সিদ্ধান্ত নিলেন!



এই পর্যায়ে দীর্ঘক্ষণ বিরতি দিলেন....... হয়ত চিন্তা করছেন কথাটি আমাকে কিভাবে বুঝানো যায় অথবা আমার মত ছোট বয়সের কাউকে বলা উচিত হবে কিনা ইত্যাদি! আমি মতলব বুঝতে পেরে তাগাদা দিলাম, আমি আপনার কোন সমস্যা তৈরি করব না, আর আমিও অতি কৌতূহলী হয়ে বিপদের পথে পা দিব না, করলেও আপনার পরামর্শ নিয়েই করব।



তিনি কথার ধরণ পাল্টালেন। বললেন, দেখ! মানুষের মাঝে ভাল-খারাপ আছে, বুদ্ধিমান-বেকুব আছে, গোঁয়ার-ভদ্র আছে, অন্ধ কিংবা পাগল আছে।



উত্তর দিলাম, হ্যাঁ, আপনার কথা ঠিক!



বললেন! দেখো, তুমি যদি তোমার ক্ষমতা বলে কোন মানুষকে দীর্ঘ দিন তোমার গোলাম বানিয়ে রাখ। তার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্যায়ন না কর। তাকে বেতন না দাও, খানা না দাও এমনকি থাকার জন্য একটি বাসস্থান না দাও। সে মানুষটি কখনও তোমার বন্ধু হবে?



উত্তরে বললাম! বন্ধু তো হবেই না, শতভাগ নিশ্চিত যে, সে ব্যক্তি চরম শত্রুই হবে। পারলে ক্ষতিই করবে, হতেও পারে ক্ষোভের কারণে জীবন হানি হবে।



তিনি বললেন, ঠিক ধরেছ! আমি এই কথাটিই তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি। জ্বিন সাধন আসলে কষ্টকর একটা কাজ, শরীর ও মনের জন্য ক্ষতি হয়। জীবনটা অনিরাপদ হয়ে যায়, ঝুঁকি বাড়ে। এক কথায় জ্বিন সাধন হল উপরে বর্ণিত একজন বন্ধী মানুষের মতই। একটি জ্বিনকে বন্ধী করে, নিজের মত করে কাজে লাগানোতে ঝুঁকি ও বিপদ দুটোই আছে। কদাচিৎ, জ্বিন কখনও স্ব-ইচ্ছায় মানুষের বন্ধু হয়ে যায়, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। তবে সাধন করা জ্বিন বিপদজ্জনক হয়। সাধনের অর্থই হল, ‘কোন জ্বিনকে জোর জবরদস্তি করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের মত করে কাজে লাগানো’!



প্রশ্ন করলাম, তাহলে আপনি কি অবশেষে জ্বিন সাধন করতে সক্ষম হয়েছিলেন?



লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দিলেন। হ্যাঁ, একটি জ্বিনকে বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করেছি।



তবে, দুর্ভাগ্য যে সে জ্বিন যেমনি গোঁয়ার তেমনি বেতমিজ ও কিছুটা পাগলাটে স্বভাবের! তাকে সর্বদা শাসন করে দমিয়ে রাখতে হয়। তাকে আজ অবধি পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি! উল্টো সেই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়! কখনও সে আমাকে শাস্তি দিবার মতলবে, আমার কোন আত্মীয়ের উপর ভর করে। ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-নাতিদেরকে কষ্ট দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমি কোথাও কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে, সুযোগ মত সে বাড়ীর কাউকে বিরক্ত করে! উদ্দেশ্য আমাকে নাজেহাল করা। যেভাবে তোমাদের বাড়ীতে ঘটনা গুলো ঘঠে চলছে! কোন কারণেই হোক বেয়াড়া জ্বিনটি মানুষকে কষ্ট দেবার জন্য সন্ধ্যার সময়টাকে বাছাই করে! জ্বিন সাধন করে আমি তো সচ্ছল হতে পারলাম না, উল্টো সেই জ্বিনই মানুষ সাধন করার জন্য আমার পিছনে লেগে থাকে। এই বিষয়টি বিরাট মুসিবত হয়ে হয়ে আমাকে তাড়া করছে। আমি না পারি কাউকে বলতে না পারি পরামর্শ নিতে! আমি জ্বিনটাকে ছাড়তে চাইলেও সে আমাকে ছাড়ছে না। তার উত্তরোত্তর বিরক্ত উৎপাদন, উৎপীড়নে আমি কোথাও বেশীদিন থাকতে পারি না!



আগের পর্ব: আব্দুল কাদের যেখানে, জ্বিনের উৎপাত সেখানে! এক পিকুলিয়ার মানুষ, পর্ব-৬ পড়তে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:১২

মুহাম্মদ.অানোয়ার বলেছেন: জীন রহসের কিছুটা জট খুলল

০২ রা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯

নজরুল ইসলাম টিপু বলেছেন: জট খুলতে পারার জন্য আমার যেভাবে আনন্দ লাগছে, আপনাকেও সেভাবে ধন্যবাদ জানালাম। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

রিফাত হোসেন বলেছেন: +

০৩ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:১৭

নজরুল ইসলাম টিপু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৫১

মুদ্‌দাকির বলেছেন: সবগুলো পড়া শেষ। আগামী পর্ব গুলোর অপেক্ষায় থাকব! ভাই সত্যিই কি তারা আমাদের উপর ভর করতে পারে ???

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০

নির্বাক রূপক বলেছেন: আপনার সব লিঙ্ক গুলোতে http// এট দুবার দেয়া আছে। একটা রিমুভ করে দিলে বোধহয় ভালো হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.