নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নজরুল ইসলাম টিপু

নজরুল ইসলাম টিপু

আমি একজন বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক। আমি চাই আমার দেশটি সুনাম ও সুখ্যাতি সহকারে দুনিয়ার বুকে গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে উঠুক। আমার দেশের প্রতিটি যুবক আলস্য ও হিনমন্যতা ঝেড়ে সকল কাজে দুই হাতকে কাজে লাগাতে শিখুক। আমিও সে সব যুবকের একজন হতে চাই, যারা নিজের কর্ম ও উদ্দীপনার মাধ্যমে আমাদের জাতীয় চেতনাকে সজাগ করতে সদা ব্যস্ত। আমি আমার দেশকে ভালবাসি হৃদয়ের সমস্ত শক্তি উজাড় করে।

নজরুল ইসলাম টিপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন নকল প্রক্রিয়ায় ইন্তেকাল করি

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬


কাউকে ইন্তেকাল করার ডাক দেওয়া অন্যায়, অবৈধ! কারো আহবানে উত্তেজিত হয়ে কেউ ইন্তেকাল করলে ফৌজদারি আইনে সে অপরাধী হবে, তাকে গ্রেফতার করা হবে! তারপরও আমি ইন্তেকালের আহবান করেছি অন্য কারণে। কেননা ইন্তেকাল শব্দটির সাথে বাংলাদেশের ছেলে-বুড়ো সবাই একযোগে পরিচিত। প্রতিদিন পত্রিকাতে ইন্তেকালের খবর পাওয়া যায়। মুসলমান মারা গেলে ঐ ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন বলে ঘোষণা করা হয়। সেভাবে ইন্তেকালের বিপরীতে মৃত্যু বরণ, মারা যাওয়া, দেহত্যাগ, প্রাণত্যাগ, প্রাণ-বায়ুত্যাগ, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ, ইহলোক ত্যাগ, পরলোকগত ইত্যাদি বুঝায়। 'মোহসীন আলী আর নেই' বলে টিভি পর্দায় লেখা দেখে সবাই বুঝেছে, মাননীয় মন্ত্রী মুহসীন আলী ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যু সংবাদ প্রচারে এটা একটা নতুন সংযোজন! হাল আমলের কিছু মানুষ ইন্তেকাল শব্দটিকে পরিহার করে চলতে ভালবাসে! হয়ত সেই কারণে নতুন নতুন বাক্যের সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও আমরা অনেকেই জানিনা যে, পুরো জাতিই নিজের অজান্তে রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টায় ইন্তেকাল নিয়ে ব্যস্ত। বাংলাদেশের সর্বত্র এখন ইন্তেকালের জয় জয়কার।

ইন্তেকাল শব্দটি মূলত আরবি। এই শব্দের প্রকৃত অর্থ হল, অর্থকড়ি স্থানান্তর, পরিবহন। মোগল শাসনামলে এই শব্দটি দেওয়ানী আদালত ও রাজস্ব বিভাগের অন্যতম পরিচিত শব্দ হয়ে উঠে। ব্রিটিশ আমলেও সরকার সেই পরিভাষা পরিবর্তন করেনি। মানুষ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে ভূমির মালিকানা পরিবর্তন, সম্পত্তির হাত বদল, রাজস্ব খাতের এক অর্থকে অন্যত্র স্থানান্তর করার পদ্ধতিকে ইন্তেকালি বলে। গাড়ীতে করে মানুষ আনা নেওয়ার পদ্ধতিকেও আরবীতে ইন্তেকাল বলা হয়। আজকের দিনে জমির নাম জারি করা হয়, সে নাম জারির পদ্ধতিকে দেওয়ানি আদালতের ভাষায় ইন্তেকালি করানো বলা হয়। যাদের কাছে এখনও পুরানা দিনের দলিল-দস্তাবেজ আছে সেখানে ইন্তেকাল শব্দের বহু ব্যবহার দেখে থাকবেন।

আবার বাংলা ভাষায় যে নকল শব্দটি ব্যবহার হয়, সেটিও ইন্তেকালের প্রতিশব্দ অর্থাৎ ইন্তেকাল শব্দটি তৈরি হয়েছে আরবি ‘নকল’ শব্দ থেকেই। বর্তমান বাংলাদেশে নকল ছাড়া তো ও শিক্ষা ব্যবস্থাই অচল। পণ্যে নকল, শিক্ষায় নকল, উৎপাদনে নকল, মানুষে নকল, ব্যবসায় নকল, উন্নয়নে নকল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কোন জিনিষটাতে নকলের ব্যবহার নাই?

মূলত নকল শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল রাজস্ব বিভাগ থেকে। কারো মূল দলীল হারিয়ে গেলে কিংবা পুড়ে গেলে মহা সমস্যায় পড়তে হত। তখন তো আর ফটোকপি মেশিন ছিলনা। তাই রাজস্ব বিভাগে দরখাস্ত করলে, সরকারী হেফাজত খানায় রক্ষিত অন্য মূল দলীল দেখে, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আসল জিনিষটির বর্ণনা ও তথ্য হুবহু আরকে টি দস্তখত ও সিলের মাধ্যমে কাগজে লিখে দিতেন। দস্তখত ও সিল করা সেই দলীল কেই বলত ‘নকল’ কপি। সেখান থেকে আসল আর নকলের ব্যবহার শুরু হয়। শুধু তাই না, সরকারের রাজস্ব খাতে সরকারি বেতন ভুক্ত যে ব্যক্তিরা এই কাজ করত তাদের পেশার নামই ছিল ‘নকল’ পেশা। এসব কর্মকর্তারা আদালতে বসে ‘নকল’ করেন বলে অহংকারের সাথে বলে বেড়াত। সুতরাং বুঝা গেল, নকল হল সেই দলিল, যার মাধ্যমে আসল জিনিষের রূপ, পরিমাণ, গুন, স্থান ইত্যাদি প্রকাশ পায়। কিন্তু বর্তমানে নকলের সেই ঐতিহাসিক সম্মান-মর্যাদা নাই। বরং নকলে নকলে পুরো জাতি আজ বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত ও দিশেহারা।

বলছিলাম ইন্তেকালের কথা। যে অর্থে রাজস্ব মন্ত্রণালয়ে ইন্তেকাল শব্দের ব্যবহার, সে অর্থেই মানুষ মারা গেলে যে ইন্তেকাল বলে থাকে তা যথার্থ। কেননা মানুষ প্রকৃতই মরে না। সে জীবিত থাকে কিন্তু তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

মানুষ দুনিয়াতে আসার আগেও জীবিত ছিল,

আসার পরেও জীবিত থাকে

এবং মরার পরেও জীবন অব্যাহত থাকে

উপরোক্ত প্রতিটি ধাপে মানুষের একটি পর্যায়ের পরিবর্তন ঘটে, এই পরিবর্তনের নামই আরবি ভাষায় ইন্তেকাল তথা অবস্থার পরিবর্তন কিংবা স্থানান্তর।

কোন আবদুল্লাহ যখন মারা যায়, তখন ঘোষণা হয় মরহুম আবদুল্লা ইন্তেকাল করেছেন! অথচ তখনও আবদুল্লাহর মৃত দেহ সবার সামনে পড়ে আছে কিন্তু সেই দেহে আবদুল্লাহর প্রাণ নাই। সুতরাং বুঝা গেল সেই প্রাণের নামই আবদুল্লাহ, দেহের নাম আবদুল্লাহ নয়।

প্রাণ বাহন ছাড়া চলতে পারেনা, সেজন্য দুনিয়াতে আসার সময় আবদুল্লাহর সেই প্রাণকে দেহ নামক একটি বাহন দিয়ে চলতে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহর প্রাণ বহনকারী এই বাহনের মালিক আবদুল্লাহ নয়। সেজন্য দেহ হত্যা তথা আত্মহত্যা করার অনুমতি আল্লাহ কাউকে দেন নাই। যেভাবে ভাড়া করা গাড়ি কিংবা ভাড়ার বাড়ী ভাড়াটিয়া আগুন জ্বালিয়ে পুড়াতে পারেন না। তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

দেহ দুনিয়ার মাটি দিয়েই তৈরি, মাটির বিভিন্ন খনিজ উপাদান দিয়েই দেহ কোষের সৃষ্টি। সে জন্য দেহকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষকে মাটির উপর নির্ভরশীল হতে হয়। মানুষের প্রবৃত্তি ও দেহ চোখ, মুখ, জিহ্বা, নাক, কান মাটি থেকে সৃষ্ট জিনিষের প্রতি সর্বদা আকৃষ্ট থাকে। অবশেষে মানুষের ইন্তেকালের পরে সেই দেহটাকে মাটির কাছে সোপর্দ করে যেতে হয়। প্রাণটা প্রাণের জায়গায় জীবন্ত অবস্থায় ফিরে যায়, যেভাবে সে জীবন্ত অবস্থায় দেহে ফিরে এসেছিল।

ইসলামে রুহ তথা প্রাণের এই আসা যাওয়ার পর্যায়কে ইন্তেকাল বলে। মানুষ কখনও মরে না, তাকে তার হিসাবের মুখোমুখি হতেই হবে এই দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্তা আছে বলে ইসলামে মৃত্যু না বলে ইন্তেকাল শব্দের প্রয়োগ করা হয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮

সপ্ন বালক বলেছেন: পরিষ্কার লেখা। সুন্দর হয়েছে।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

নজরুল ইসলাম টিপু বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৯

মুদ্‌দাকির বলেছেন: ইন্তেকাল সম্পর্কে এত কিছু জানতাম না।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

নজরুল ইসলাম টিপু বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনি ভাল থাকুন।

৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


আরও বিস্তারিত জানবার ইচ্ছা রইলো।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

নজরুল ইসলাম টিপু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৫

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ইন্তেকাল বিষয়ে জেনে ভালো লাগলো।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০১

নজরুল ইসলাম টিপু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.