নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদ্যন্ত গৃহী। বইপোকা। লেখালিখিটা প্যাশন; তেমন বাছবিচার না থাকলেও থ্রিলার আর হরর জনরাতে স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। অল্প বিস্তর ছবিয়ালও। ইন্সটাতে shajus shot হিসেবে পাবেন। মুভি দেখতে ভালো লাগে, ভালো লাগে খোলা আকাশ, সাগরের পাড়ে চুপ করে বসে থাকা আর নিস্তব্ধতা। প্রিয়

মন থেকে বলি

জীবনের স্থায়িত্বকাল কত অল্প। কিন্তু কত কিছু যে ইচ্ছে করে করতে। তাই পারি আর না-ই পারি, ইচ্ছেগুলোর ডানা মেলে দিয়ে যাই - এই আমার আকাশের জানালায়।

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্যগল্পঃ কোহ সামুইএ কুকর্ম

১৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:৫২




১|

"কে কে যাইতে চাও ওই দূর সাগরে?' - প্রশ্নটি ছিটকাইয়া আসিল বব মার্লের মত দেখিতে আমাদের গাইড কাম ডুবুরির কাছ হইতে।

সমস্বরে হুংকার দিলামঃ "আমরা...আমরা"

সর্বাপেক্ষা আমার গলার স্বরই উপরে উঠিল।

পাশেই এক জোড়া বুড়া বুড়ি বসিয়াছিল। তাহাদের ভঙ্গি এমন, যেন আইল্যান্ড হপিংএ নহে, বরং বুদ্ধদেবের সমাধি পরিদর্শনে যাইতেছে। আচরনে ভক্তিভাব। যাত্রার প্রাক্কালেই তাহারে হালকা ঢুলিতেছিল। আমানিঃসৃত হুহুংকারে তাহারা আঁতকাইয়া উঠিল। পরক্ষনেই ধাতস্থ হইল। বিড়বিড় করিয়া গালই পাড়িল কি না কে জানে।

রসুন। মাঝখান হইতে শুরু করিয়াছি; ল্যাজামুড়া ধরিতে পারিবেন না। ঘটনাটি গোড়া বাঁধিয়াই বলি।

শ্যামদেশের একটি দ্বীপ - কোহ সামুই। গেল বৎসর স্বপরিবারে ভ্রমনে গিয়াছিলাম। যে রিসোর্টে থানা গাড়িলাম, তাহা ভালই। একটা ট্যুরিস্ট গাইড সার্ভিস আছে। দ্বায়িত্বে এক স্বাস্থ্যবতী মহিলা। তিনিই পরামর্শ দিলেনঃ "যাও, স্নরকেলিং করিয়া আইস। দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হইবে।"

আমরা উদ্বাহু হইয়া নাচিয়া উঠিলাম। আইল্যান্ড হপিং সহযোগে স্নরকেলিং। ইহাতো রথ দেখার সাথে কলা শুধু বেচাই হইবে না, খাওয়াও হইবে।

কিন্তু বিধাতাপুরুষ মুচকি হাসিয়াছিলেন। ট্যুরিস্ট গাইডের দ্ব্যর্থবোধক কথাটির অর্থ তখন বোধগম্য হয় নাই। পরে হাড়ে মজ্জায় বুঝিয়াছিলাম। অস্থির হইবেন না। ঘটনাটি বলিতেছি।

আগেই বলিয়া রাখি, আইল্যান্ড হপিং এর অভিজ্ঞতা আমাদের আগেই হইয়াছিল লংকাউইতে। দেশি ট্রলার জাতীয় এক ধরনের স্পিডবোটে ভ্রমন করিয়াছিলাম। কিন্তু এইখানে বিশাল ইয়ট-টাইপের স্পিডবোট। ৩০-৪০ জন হাসিয়া খেলিয়া সেঁধাইয়া গেল বোটের গহবরে। তিনজন গাইড আছে। আমরা প্রত্যেকেই লাইফ জ্যাকেট পরিহিত (ছবি দেখুন)। খুশিতে আমাদের দন্ত বাহির হইয়া গিয়াছে। মৃদুমন্দ বাতাসে সাগর পাড়ি দিয়া স্নরকেলিং করিব। উফ....! কি উত্তেজনা...!!

ইহার মধ্যেই গাইডের সেই আহবান - অভিযানের জন্য প্রস্তুত? আমরা সমস্বরে সায় দিলাম। ইহার পর হড়বড় করিয়া আরও কি যেন বলিয়া গেল সে। যাত্রার উত্তেজনায় কথাগুলান আমাদের কর্ণ স্পর্শও করিতে পারে নাই। ইহার ফল পরে ভোগ করিয়াছিলাম।

এরই ফাঁকে সহযাত্রীদিগের সামান্য বর্ণণা দিয়া লই। আগেই কহিয়াছি, আমার ঠিক পার্শে বুড়া বুড়ি। সামনে একটা ইউরোপিয়ান যুগল। বয়েস আমাদের হইতে কমই হইবে। আরও জোড়া জোড়া আছে, একাকীও আছে। আর আছে একটা শিশুকন্যা। মা- বাবার সাথে আসিয়াছে।

পুরুষগুলা সব তাগড়াই দেখিলাম। ইহার উল্লেখ কেন করিলাম, ক্রমশ প্রকাশ পাইবে।

যাত্রা শুরু হইল।

উত্তাল ঢেউএর মাথায় লাফাইতে লাফাইতে বোট ছুটিল। আর সেই সাথে ক্রমশ আমার 'ভিতর'টাও আস্তে আস্তে 'আন্দোলিত' হইতে শুরু করিল। এই আন্দোলন আর কিছু নহে। সক্কালবেলায় উদরপূর্তি করিয়া যাহা ঠাসিয়া লইয়াছিলাম, তাহারা মুক্ত হইয়া বাহিরে আসিবার জন্য আন্দোলন শুরু করিল। সোজা বাংলায় 'বমনেচ্ছা' যাহার উৎপত্তি 'সি-সিকনেস' হইতে।

কিন্তু পার্শেই গৃহিনী এবং দুই সন্তান নির্বিকার। মায় বুড়াবুড়ি পর্যন্ত অটল। মানে লাগিল। আড়চোখে সামনের যুগলের দিকে নজর ফিরাইলাম। মেয়েটি সঙ্গীর কাঁধেমাথা রাখিয়া চোখ মুদিয়া রহিয়াছে। বুঝিলাম, ইহার প্রায় হইয়া আসিয়াছে। বেশিক্ষন টিকিবে না। আমিও চক্ষুদ্বয় বন্ধ করিলাম মনটাকে ভুলাইয়া রাখিবার আশায়।

একটু ঢুলুনি বোধহয় আসিয়াছিল। চটকা মারিয়া ভাঙ্গিয়া গেল এক বিকট শব্দে এবং চক্ষু খুলিয়াই অপরূপ দৃশ্য দেখিলাম।


২|

"উওওওয়ায়াক! ওয়ায়াক!! " - বমি হইতেছে। আমার সামনের যুগলের একজন শুরু করিয়া দিয়াছে। নাহ! মেয়েটি নহে, বরং তাগড়া জোয়ানটি পলিথিনে মুখ গুঁজিয়া উগরাইয়া দিতেছে।

ইহা দেখাই বাকি ছিল আমার। অনুভব করিলাম, আমার ডাক আসিল বলিয়া। চটজলদি দুইটা পলিথিন লইয়া শুরু করিয়া দিলাম।

সেকি বমি রে দাদা!
পাকস্থলিতে যে এত কিছু ছিল, মর্মে মর্মে অনুভব করিতে লাগিলাম প্রত্যেকবার 'ওয়াক' তুলিবার সময়। ডাইনে বাঁয়ে তাকাইবার ক্ষমতা নাই কিন্তু কর্ণে আসিল আমার পুরা পরিবারই একই কর্মে লিপ্ত হইয়াছে। আর শুধু নিজের কথাই বা বলি কেন? বমনেচ্ছা হইতেছে প্রায় সবারই। কেহ কাহারও দিকে না তাকাইয়া নিজ নিজ পলিথিনে মুখ চাপিয়া রাখিয়াছে।

তবে হ্যাঁ। আমার বাম পার্শ্বে উপবিষ্ট বুড়া আর বুড়ি কিন্তু মৈনাক পর্বতের মত অটল। পরবর্তী দু'টি ঘন্টায় নৌকার প্রায় ৯০ ভাগ যাত্রীই ক্যাতরাইয়া পড়িলেও উহারা একটা ঢেকুরও তুলিল না।

আমার মনে হইতেছিল, এই যাত্রাই আমার শেষ যাত্রা। এর পরেরবার ওয়াক তুলিব আর অন্ত্র ছিঁড়িয়া বাহির হইয়া ভবলীলা সাঙ্গ করিয়া দিবে।

অবশেষে বোট ঠেকিল জেটিতে।

পকোঁকাইতে কোঁকাইতে একে একে সবাই নামিল। মায় আমার পুত্রদ্বয়ও। কিন্তু আমি আর সিট ছাড়িতে পারি না। বুড়া আমার দিকে একটা ব্যাঙ্গ দৃষ্টি ছুঁড়িয়া তাহার বুড়িকে লইয়া নামিয়া গেল। এইবার গাইড আগাইয়া আসিল আমাকে তুলিতে। কোনমতে জেটিতে নামিয়াই লম্বা হইয়া পড়িয়া গেলাম। বামে ঘাড় ধুরাইয়া দেখি গৃহিনীরও একই অবস্থা।

যাহা হউক, বিশ্রাম লইয়া বহু কষ্টে স্নরকেলিং পয়েন্টে পৌঁছাইলাম। ততক্ষনে একটু বল ফিরিয়া পাইয়াছি। কিন্তু মনে নিদারুন আতংক! এই পথ ধরিয়াই তো ফিরিতে হইবে। গৃহিনী দরদভরা কন্ঠে শুধাইলেনঃ

"বাই রোডে ফিরিলে হয় না?"

দ্বীপ হইতে সড়কপথে মূল ভুখন্ডে ফিরিবার কথা বলিতেছে। হাসিব, না কি কাঁদিব - বুঝিয়া উঠিতে পারিলাম না। সন্দেহ হইলো, ঠাট্টা করিতেছে না তো। উত্তর দিলামঃ

"হ্যাঁ, যাইবে না কেন? একটা জমি কিনিয়া বছর পনের বসবাস করি চল। ইহার মধ্যে নিশ্চয়ই কোহ সামুই এর সাথে ব্রীজ হইবে। তখন বাই রোডে যাইব।"

বউ আরেকবার কাতরাইয়া উঠিল।

কিছুক্ষন স্নরকেলিং করিলাম গুষ্টিশুদ্ধু। যেহেতু বারো মাসই আমার নাক সর্দি দ্বারা সিলগালা করা থাকে সেইহেতু স্নরকেলিং এর সময় ঘপাত ঘপাত করিয়া কয়েক ঢোক নোনাজল গিলিয়া ফেলিলাম। বমির পর মন্দ লাগিল না। মহানন্দে স্নরকেলিং করিতে থাকিলাম। এবং গ্যাপে গ্যাপে পানি গিলিতে থাকিলাম।

এইবার ফিরিবার পালা। আমার বুকটা ধড়াশ ধড়াশ করিতে লাগিল। আমাকে অবশ্য গাইড আগেই লক্ষ্য করিতেছিল। পুরা জাহাজে আমিই সর্বাপেক্ষা বেশি পলিথিন লইয়াছিলাম, ইহারই কাছ হইতে। সে আমার চেহারা দেখিয়া ডাকিলঃ

"আরে ইয়ার! চিন্তা কিসের? আমার কাছে বমি আটকানোর ঔষধ আছে তো। একটা খাইলেই মড়ার মত ঘুমাইয়া পড়িবে। টেরও পাইবে না কখন পৌঁছাইয়া গিয়াছ। এইজন্য আসিবারকালে আমি দেই নাই। দিলে তুমি এখনও ঘুমাইতে থাকিতে।"

মনটা খিঁচড়াইয়া উঠিল। শালা, দেখিতেছিলি আমি মরিয়া যাইতেছি, একবার তো বলিয়া দেখিতিস খাই, না কি স্নরকেলিং এর লোভে না খাই। মুখে অবশ্য হাসি ফুটাইয়া কহিলামঃ

"তাহলে স্যাঙ্গাৎ, দুইটি বড়ি এখনই দিয়া দাও। একদম হোটেলের কামরায় জাগিয়া উঠিব। এইবার যদি আর বমি হয় তাহা হইলে আমাকে আর খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।"

বড়ি পাইলাম। গিলিয়াও ফেলিলাম। অনুভব করিলাম, ক্যাপ্টেন আমেরিকার মত নব বলে বলিয়ান হইয়া যাইতেছি। এদিকে বোট স্টার্ট দিয়াছে।

তখনই শুনিলাম সেই অমৃত বাক্যঃ

"তবে একটা কথা। পেটে লোনা আনি ঢুকিলে কিন্তু রক্ষা নাই। ঔষধ কিছুই কাজ করিবে না। নিশ্চয়ই খাও নাই।"

আমি ভিড়মি খাইয়া মেঝেতে পড়িয়া গেলাম। সেইখান হইতেই ডাক ছাড়িলামঃ "ওরে, গোটা পাঁচেক পলিথিন এখনই দে। হইল বলিয়া।"

কাহিনীর আর তেমন কিছু বাকি নাই। শুধু নিচের ঘটনাগুলো পরপর ঘটিয়া গিয়াছিল।

১। ফিরিবার কালে একটিমাত্র মানুষ বমি করিয়া ভাসাইয়াছিল। সেইটি হইলাম আমি।

২। দুই ঘন্টা পরে জেটিতে আমাকে ধরাধরি করিয়া নামাইতে হইয়াছিল। কারন সমস্ত রস বাহির হইয়া গিয়াছিল।

৩। ভুল গাড়িতে উঠিয়া পড়িয়াছিলাম। বউ খুঁজিয়া না পাইলে উল্টাদিকের হোটেলে চলিয়া যাইতাম।

৪। হোটেলে ফিরিয়া ট্যুরিস্ট গাইডকে মা-বাপ তুলিয়া গালি দিয়াছিলাম। বেটি যদি সি-সিকনেসের কথা একবারও বলিত, আমি যাইতাম না।

(সমাপ্ত)


#গদ্যতাড়না

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:০৭

মাঝ আকাশে শিশুর জন্ম বলেছেন: ভাইয়ুমনিইইইইইইইইইইইইইই!!!!!!!

:(

এত্ত সুন্দর লিখেছ মুখ বাকা হয়ে গিয়াছে!!!!!!

২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৮

মন থেকে বলি বলেছেন: আমারও গিয়েছিল। আপনার বাঁকল কেন?

২| ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:১৬

মোসতাকিম রাহী বলেছেন:
ভালো লাগলো। লিখতে থাকুন। শুভেচ্ছা।

২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৯

মন থেকে বলি বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

৩| ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ২:৩৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আরে ভাই, সামান্য একটু "বমিই" তো।। তাতেই এত ভেঙ্গে পড়ছেন!!

২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:২৯

মন থেকে বলি বলেছেন: টানা তিন ঘন্টা চলেছিল। সামান্য বলছেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.