নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদ্যন্ত গৃহী। বইপোকা। লেখালিখিটা প্যাশন; তেমন বাছবিচার না থাকলেও থ্রিলার আর হরর জনরাতে স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। অল্প বিস্তর ছবিয়ালও। ইন্সটাতে shajus shot হিসেবে পাবেন। মুভি দেখতে ভালো লাগে, ভালো লাগে খোলা আকাশ, সাগরের পাড়ে চুপ করে বসে থাকা আর নিস্তব্ধতা। প্রিয়

মন থেকে বলি

জীবনের স্থায়িত্বকাল কত অল্প। কিন্তু কত কিছু যে ইচ্ছে করে করতে। তাই পারি আর না-ই পারি, ইচ্ছেগুলোর ডানা মেলে দিয়ে যাই - এই আমার আকাশের জানালায়।

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

হরর থ্রিলারঃ পার্টনার

২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১:১৩


১।

- "এই তাহলে তোমার শেষ কথা? বুঝিয়ে দেবে না তাহলে আমার টাকা? ওহ...সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না দেখছি।"

ক্রুদ্ধ জহিরুদ্দিন সরকার প্রশ্নটা যেন ছুঁড়ে দিল মিনহাজ আব্দুল্লাহর দিকে। মিনহাজও যথেষ্ট উত্তেজিত। তা-ও নিয়ন্ত্রন করল নিজেকে। সে জহিরুদ্দিনের মত মাথাগরম লোক নয়। মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে বলে তার সুনাম আছে। তার আজকের অবস্থান এই ঠান্ডা মাথার জন্যই। সে ভাল করেই জানে, টাকা হলে লোকের মাথা গরম হয়। আর বেশি টাকা হলে হয় পাছা গরম। জহিরুদ্দিনের এই পরেরটাই হয়েছে।

মিনহাজ তাই আজও শান্ত ভাবেই উত্তর দিল।

- "দেখ জহির, আমরা ব্যবসা করছি ছয় বছর হলো। এতদিন কোন সমস্যা হলেও নিজেরা মিটিয়ে নিয়েছি, তাই না? আজ তোমার এরকম এগ্রেসিভ কথা আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।"

- "এগ্রেসিভ হতে তুমিই আমাকে বাধ্য করছ। গত ছয়মাসের হিসাব তুমি গোপন করেছ। লাস্ট বছরে আমাদের ৬ কোটি টাকা লস দেখাচ্ছে। কেন? আমি মার্কেটিং আর সেলস দেখি। আমার হিসাব তো বলে সব বাদ দিয়ে হলেও চার কোটি নেট প্রফিট থাকার কথা। সে টাকা কোথায়?"

দম নেওয়ার জন্য থামল জহিরুদ্দিন। তারপর আগের কথার খেই ধরলঃ

- "আমি সাফ সাফ বুঝতে পেরেছি। আর তুমিও বুঝেছ টাকা কার কাছে। মিনহাজ, আমার টাকা বের কর। তুমি আমার গড়া ব্যবসায় লালবাতি জ্বালাতে চাইছ মিনহাজ। এ আমি কোনমতেই মেনে নেব না। এই আমি তোমাকে বলে দিলাম।"

বরাবরের মতোই মিনহাজ ঠান্ডা গলায় জবাব দিলঃ

- "শোন জহির, চা এর ব্যাবসা মন্দা যাচ্ছে। আমিও যেমন জানি, তুমিও তেমন জানো। কয়টা কন্ট্র‍্যাক্ট গত ছয় মাসে বাতিল হয়েছে? বল তুমি আমাকে? আমি বলিনি, ব্যবসার স্ট্র‍্যাটেজি পাল্টাতে। বরং তুমিই কান দাও নি। ধারে সাপ্লাই দিয়েই গেছ, দিয়েই গেছ। এক মানসুখ ভাটিয়ার কাছেই পাওনা তিন কোটি। তুমি বেচেছ, এখন তুমি উদ্ধার কর সেই টাকা। আমার কাছে গরম দেখাতে আসবে না। খবরদার।"

এতক্ষনে মিনহাজ আব্দুল্লাহও কন্ট্রোল হারাল মেজাজের। ঝড়ের বেগে সে বেরিয়ে গেল জহিরুদ্দিনের কামরা থেকে। আর কি অদ্ভুত! ঠিক সেই মুহূর্তেই দু'জনের ভাগ্যও যেন অলক্ষ্যে নির্ধারিত হয়ে গেল।

জহিরুদ্দিন সরকার আর মিনহাজ আবদুল্লাহ - যারা একদিন আগেও বন্ধু ছিল, এখন একে অন্যকে চরম প্রতিপক্ষ ভাবছে। আসলে ওদের বন্ধুত্বটাও অদ্ভুত ধরনের। জহির অস্থির, অল্পতেই রেগে যায়। অন্যদিকে মিনহাজ ঠান্ডা মাথার মানুষ। জহিরের পরিবারে বউ আর দুটো ছোট মেয়ে। পরিবার অন্তপ্রান ব্যক্তি যাকে বলে। আর মিনহাজ বিপত্নীক। একাই থাকে। ছেলে মেয়ে কিছু নেই। এমনকি আত্মীয়স্বজন বলেও কেউ আছে বলে কখনও শোনেনি জহির। বাড়িতে মালি, কেয়ারটেকার আর ড্রাইভার - এই তিন নিয়ে মিনহাজের পরিবার। একটা শারিরীক অসুস্থতা আছে মিনহাজের। সেটা হলো দূর্বল হার্ট। এরমধ্যে একবার তার ব্লক অপসারন করা হয়েছে। তাই উত্তেজনা তার একদম মানা। আরও একটা অদ্ভুত শিশুতোষ ব্যাপার রয়ে গেছে মিনহাজের মধ্যে। এই মধ্যবয়সে এসেও সে ভুতের ভয় পায়। যেমন তেমন না, ভালই ভয়কাতুরে সে। কতাই একা শুতে পারেনা। তার বেডরুমের দরজার সামনেই মালী শোয় রাত্রে। দরজা খোলাই থাকে। যত যাই হোক, এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনা। জহির এ নিয়ে কতবার ঠাট্টা করেছে মিনহাজকে। মিনহাজ হাসত না সেই ঠাট্টায়। শুধু শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকত বলে এক সময় জহির নিজেই এ নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।


যাই হোক, সেইদিনের পর আরও তিনদিন পার হয়ে গেছে। দু'জনেই একসাথে বসে ঠিক করেছে, শেষ কনসাইনমেন্টটার পর তারা 'টি কিং' নামের চায়ের ব্যবসার কোম্পানীটা আলাদা করে নেবে। ভাগ হবে ৪০ঃ৬০ এই অনুপাতে। জহিরের ৪০ ভাগ আর মিনহাজের ৬০ ভাগ। অনেক তর্কাতর্কির পর এই হিসাব ঠিক হয়েছে। জহিরের দাবী ছিল ৬০:৪০, নিদেনপক্ষে ফিফটি-ফিফটি। কারন যদিও মিনহাজের ইনভেস্টমেন্ট বেশি ছিল, ব্যবসাটা বাড়িয়েছে সে-ই। ক্লায়েন্ট খুঁজে আনা, ডিল পাকা করা, ক্লায়েন্ট ধরে রাখা - সবই সে করেছে গত ছয় বছর। মিনহাজ তো শুধু একাউন্টস আর অফিস এডমিনিস্ট্রেশনটা দেখত। ব্যবসা বাড়ানোতে তার অবদান কতটুকু - এ প্রশ্ন এতদিন জহিরের মনে না আসলেও এখন দানা বাঁধছে। সেদিন সে এই কথাটাও তুলেছিল। কিন্তু মিনহাজকে বাঁকাতে পারেনি। নিজের দাবী থেকে মিনহাজ একচুলও নড়েনি। তার বক্তব্য পরিষ্কারঃ টাকা সে বেশি ঢেলেছে, ব্যবসা ভাগও হবে সেইভাবে। এর থেকে তাকে টলাতে পারেনি ধুরন্ধর সেলসম্যান জহির।


২।

দু'জনেই দু'জনের কামরায় বসে ভাবছে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো।

জহির ভাবছে মানসুখ ভাটিয়ার কথা। শেষ চালানও যাবে তার কাছে। বান্দরবনের অলিখিত ডন এই মানসুখ ভাটিয়া। পরিচয় মিনহাজের মাধ্যমে হলেও এতদিনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে জহিরুদ্দিনের সাথে। এখন প্রায় এক গেলাসের ইয়ারের মত হয়ে গেছে দুইজন। তাই ক্রমাগত বাকিতে মাল দিতে অরাজি হয়নি জহির। যদিও মিনহাজের আপত্তি ছিল। কিন্তু মানসুখ তাদের প্রথম দিককার ক্লায়েন্ট। ব্যবসা আজ যে পর্যায়ে এসেছে, তার পিছনে মানসুখের অবদানও কম নয়। একজন ভাল ক্রেতার মতই সে এতদিন সে মাল নিয়েছে আর দাম দিয়েছে। কিন্তু কি যে হলো লাস্ট এক বছরে! তিন তিনটা চালানের দাম বাকি ফেলে দিল। আর তাতেই তাদের ব্যবসাটা টলে উঠল। আর সেই থেকেই মিনহাজ আর তার এতদিনের বন্ধুত্বটাও ভেঙ্গে গেল। যদিও মানসুখ কথা দিয়েছে এবার পুরো বাকিটাই সে মিটিয়ে দেবে। দেখা যাক। এইই তো শেষ নয়। আরও কত ক্লায়েন্ট আছে তার হাতে। ভাগ হওয়া ব্যবসা সে ঠিকই দাঁড় করিয়ে ফেলবে। শুধু বুকের জ্বালাটা কমছে না। শালা মিনহাজ। এতগুলো টাকা মেরে দিল! আর সে টেরই পেল না। আচ্ছা, সে-ও দেখে নেবে তার টাকা কিভাবে আদায় করতে হয়।

ওদিকে মিনহাজের চিন্তাভাবনা একদম পরিষ্কার। কিছুদিন ধরেই সে টের পাচ্ছিল জহিরের মনে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। এই শো-অফটাই কেবল বাকি ছিল। তাও হয়ে গেল গত পরশু। মিনহাজই আসলে চাইছিল না একসাথে আর চলতে। কিন্তু কিভাবে ব্যবসা ভাগ করা যায়, সেই বুদ্ধিটাই আসছিল না। হুট করে তো আর বলা যায় না যে কাল থেকে পথ আলাদা। তাতে হাজার ঝামেলা। এরমধ্যে একাউন্টস চেক করতে গিয়ে সে মানসুখের কাছে বাকির ব্যাপারটা খেয়াল করে। অবশ্য বাকিতে যে তারা মাল দেয়, এটা মিনহাজ আগে থেকেই জানত। কোন ব্যবসায়েই না বাকি দিতে হয়? কিন্তু এই 'বাকি'টাই তাকে পথ দেখায় নিজের প্ল্যান কার্যকর করার। মানসুখের সাথে তার পরিচয় অনেকদিনের। ইদানিং ব্যবসার খাতিরে যোগাযোগটা জহিরুদ্দিনের সাথেই বেশি হচ্ছিল যদিও। মিনহাজ ঠিক করে এই মানসুখকে দিয়েই পথের কাঁটা সরাতে হবে। গোপনে সে প্ররোচনা দেয় মানসুখকে, টাকা বাকি ফেলার জন্য। আর এর জন্য চুক্তিও করে মানসুখের সাথে, টাকার একটা বড় অংশ তার ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা হতে থাকে। এভাবেই আজকের পরিস্থিতিটাকে ঘোলাটে করে তোলে মিনহাজ।

ভাবতে ভাবতেই আরেকটা প্ল্যান এসে গেল মিনহাজের মাথায়। সহজ সরল প্ল্যান। ব্যবসা ভাগ করার দরকার কি? ঝামেলাটাকে সরিয়ে দিলেই তো হয়। তাহলে পুরোটাই তার রয়ে যাবে। ব্যবসা কিভাবে রমরমা চালাতে হয়, সেও জানে। খামাখা একটা কম্পিটিটরকে রাখার কোন মানেই হয়না। সুতরাং....জহিরুদ্দিনের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেল। এই দুনিয়ার আর দরকার নেই জহিরকে। আর এটা ঠিক করবে মিনহাজ। কাজে লাগাতে হবে ভাটিয়াকে। মানে মানসুখ ভাটিয়াকে। এখন শুধু ঠিক করতে হবে কিভাবে সে ঘটনাটা ঘটাবে। ভাবতে ভাবতে সে মোবাইলটা তুলে নিয়ে ডায়াল করে মানসুখের নম্বরে। শুনতে পায় রিং হচ্ছে। একসময় অপরপ্রান্তে ভারী গলা শোনা যায়ঃ

- হ্যাঁ, মিনহাজ ভাই, বোলো ক্যিয়া হালচাল হ্যায়?

- মানসুখ ভাই, আমি ঠিক আছি। কিন্তু একটা কাঁটা বিঁধে আছে গলায়। তোমার সাহায্য দরকার।

- গলা মে কাঁটে..! আরে কেয়া বাত..!! ঘাটনা কি বোলো তো হামাকে।

- ঘটনা জহিরকে নিয়ে।

- জহির ভাই..!!! তাজ্জব কি বাত...!! হুয়া কেয়া?

- সামনাসামনি বলব। আজ সন্ধ্যার ফ্লাইটে চিটাগাং আসছি। সী ক্রাউনেই উঠব। এই সাড়ে আটটা নাগাদ দেখা করতে পারবে?

- জরুর। হামি চলে আসবে।

মিনহাজ লাইন কেটে দেয়। কিছুক্ষন ভাবে। বরাবরই সে দেখেছে, ক্রিটিক্যাল টাইমে তার মাথা দারুন কাজ করে। মোবাইল রেখে এবার সে ইন্টারকম তুলে নেয়। ডায়াল করে জহিরুদ্দিনের নম্বরে।

- হ্যালো জহির।

- হ্যাঁ বলো।

- শোনো, আমি আজ সন্ধ্যায় চিটাগাং যাচ্ছি। ট্রাই করে দেখি ভাটিয়াকে মানাতে পারি কি না বাকি শোধ দেওয়ার। তুমি তো পারলে না। আমি একটা শেষ চেষ্টা করে দেখি বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছু করতে পারি কি না।

- "ঠিক আছে। তুমি যদি তাই মনে কর।" জহির বলল।

- আর শোনো, অবস্থা প্রতিকূল দেখলে তোমাকে ফোন করব। তুমিও চলে এসো। দু'জনে চেপে ধরলে যদি কাজ হয়। ঠিক আছে?

- ওকে। আমি চলে আসব।


৩।

ফোন রেখে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইল মিনহাজ। জহিরর গলার স্বরটা তাকে একটু দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে। ভেবেছিল, জহির আপত্তি করবে। কিন্তু এত সহজে তার কথায় সায় দিয়ে দিল, অন্তত সেইদিনের পর - মিনহাজের কেমন যেন খটকা লাগল। তারপর হঠাৎই সব পরিষ্কার হয়ে গেল ওর কাছে। জহির আসলে ভয় পাচ্ছে মিনহাজ ঠিক মত ব্যবসা ভাগ করে কি না। যা লস করেছে, সে আর উটকো তর্কে গিয়ে মিনহাজকে খ্যাপাতে চাইছে না। তাই এত সহজে রাজি হয়ে গেছে। আর রাজি না হয়ে ওর উপায়ই বা কি। ভাবতে ভাবতে মিনহাজ ফোন করে ওর ট্র‍্যাভেল এজেন্টকে। চিটাগাং এর টিকিট কাটতে বলে দেয়।


সী ক্রাউনের বার।

মিনহাজের হাতে স্কচ। মানসুখের সামনে এক বোতল বিয়ার। ভাটিয়া বিয়ার ছাড়া আর কিছু খায়না, মিনহাজ আগেও দেখেছে। কিছুক্ষন আগে মিনহাজ পুরো ঘটনাটা বলেছে। মানসুখ চুপচাপ শুনে গেছে। এবার সে মুখ খুললো।

- তুমি তাহলে জাহিরকে হাটিয়ে দিতে চাইছ?

- হটিয়ে নয়, সরিয়ে দেবার কথা বলছি। এর জন্য পাঁচ লাখ দেব আমি।

- হুম..বুঝলাম। এবার বল আমায় কি করতে হবে?

মিনহাজ তার মুখটা ভাটিয়ার কানের কাছে এগিয়ে আনে।

মানসুখ ভাটিয়া একা বসে আছে। বসে ভাবছে একটু আগে বলে যাওয়া মিনহাজের প্ল্যানটা। প্ল্যান খুব সিম্পল। পাহাড়ের ওপর একটা বাংলো আছে মানসুখের। একপাশে প্রায় দুশো ফুট গভীর খাদ। জহিরের সাথে মিটিংটা করা হবে ওই বাড়িতে। জহির অবশ্য আগেও এসেছে ওই বাড়িতে। মিটিং শেষে ধাক্কা দিয়ে ওই খাদে ফেলে দেওয়া কোন ব্যাপারই না। তবে ব্যাপারটা দেখাতে হবে দূর্ঘটনার মত করে। আর যখন জহির ওই খাদে 'পা পিছলে' পড়বে, সেই সময়টা মানসুখ আর মিনহাজের সেখানে থাকা চলবে না। এই ব্যাপারটা কিভাবে সমাধান করবে, তা-ও বলে দিয়েছে মিনহাজ আবদুল্লাহ। যেহেতু মিটিংটা হবে বিকেলে, শেষ হতে হতে রাত হয়ে যাবে। তাই সে রাতটা জহির আর মিনহাজ ওই বাংলোতেই কাটাবে। কিন্তু মিটিংএর শুরুতেই মিনহাজের প্রচন্ড পেটব্যাথা হবে বলে সে মানসুখের গাড়িতে করে শহরে ফিরে আসবে ডাক্তারের কাছে। আর কিছুক্ষন পর মানসুখও জরুরি তলব পেয়ে বেরিয়ে পড়বে। মিটিং স্থগিত হবে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত। এরপরই হবে আসল খেলা। চায়ের সাথে ঘুমের অষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলার দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে কেয়ারটেকারকে। এই কেয়ারটেকার আর দারোয়ান হলো মানসুখের সবচে বিশ্বস্ত লোক। জহিরুদ্দিনের অজ্ঞান দেহটাকে পাথুরে খাদে ফেলে দিলে যে অবস্থা হবে তাতে পরবর্তীতে পোস্টমর্টেম করার মত অবস্থাই থাকবে না ডেডবডির। পুলিশকে বলা হবে বেড়াতে গিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে জহির ব্যালান্স রাখতে পারেনি। তাছাড়া মানসুখের প্রভাবও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে অনেকটা। লোকাল পুলিশ তেমন একটা ইনভেস্টিগেশন যেন না করে, সেটা দেখবে মানসুখ। শুনতে কিছুটা অদ্ভুত মনে হলেও প্ল্যানটা কাজ করবে বলেই মিনহাজের দৃঢ় বিশ্বাস। এখন শুধু অপেক্ষা জহিরের পৌঁছানোর। এক ঢোকে গ্লাসের বিয়ারটা শেষ করে উঠে দাঁড়ায় মানসুখ ভাটিয়া। ড্রাইভারকে ফোন করে গাড়ি আনতে বলে হোটেলের সামনে।


৪।

মিনহাজ চলে যাওয়ার ঠিক দু'দিন পর জহির তার ফোন পায়। চিটাগাং যেতে বলছে মিনহাজ। যেরকম ভেবেছিল, কথাবার্তা আশানুরূপ আগিয়েছে মানসুখের সাথে। তবে জহিরের সাহায্য পেলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ব্যাপারটা শেষ করে আনা যাবে এই ট্রিপেই। জহির জানিয়ে দেয়, আগামীকাল দুপুরে সে রওনা দেবে। বিকেলে পৌঁছে সন্ধ্যায় মিটিং করে রাতটা ওখানেই কাটাবে। তার পরদিন দু'জনে একসাথে ফিরবে ঢাকায়।

জহির জানতে চাইল মিনহাজ কোথায় উঠেছে। উত্তরে মিনহাজ জানালো সে সী ক্রাউনে রুম বুক করেছে। আসলে মিনহাজ আছে মানসুখের বাংলোতেই। বলা যায় অনেকটা বাধ্য হয়েই উঠেছে। কারন ওই যে, সে একা থাকতে পারে না। তা না হলে সে কখনই এই বাংলোতে আসত না। তার কারনও আছে। বাংলোটা একটা ছোট পাহাড়ের ওপর। পাশাপাশি দুটো গাড়ি চলতে পারে এমন একটা রাস্তা বাংলো থেকে সমতলের সাথে মিশেছে। রাস্তাটা আধ মাইলের মত হবে লম্বায়। মিনহাজের সমস্যা এই রাস্তায়। কারন রাস্তাটা যেখানে সমতলের সাথে যুক্ত হয়েছে সেখানে একটা অনেক পুরোনো গোরস্থান। এখন আর কেউ কবরটবর তেমন দেয় না। তবে একদম বন্ধও না। কদাচিৎ কোন কোন লাশ এখানে গোরস্থ করা হয়। মানসুখের বাড়িতে আসলে হলে ওই গোরস্থানটা পাশ কাটিয়ে আসতে হয়। যেহেতু পাহাড়ের ওপরে, তাই বাংলো থেকেও দেখা যায় ওটাকে। মিনহাজ মানসুখের সাথে শলাপরামর্শ করার জন্যই ওই বাড়িতে আস্তানা গেড়েছে। অন্যথায় সে হোটেলেই থাকত। তবে সে বাড়ির উলটো দিকের একটা কামরা নিয়েছে যেন জানালা খুললে গোরস্থানটা চোখে না পড়ে। আরেকটা ব্যাপার সে লুকিয়ে রেখেছে মানসুখের কাছ থেকে। তার ভৌতিক এলার্জির কথাটা। এই বয়সে এসে সে নতুন করে হাস্যস্পদ হতে চায় না।

জহিরের আসবার খবর পেয়ে মিনহাজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ঘটনা তার প্ল্যানমাফিকই এগোচ্ছে। মানসুখকে সে জানায় জহিরের আসার খবরটা। শেষ মুহূর্তে প্ল্যানের খুঁটিনাটি আবার ঝালিয়ে নেয় দু'জন। নাহ...! কোন ফাঁক রাখেনি। এই যাত্রাই জহিরের শেষ যাত্রা।

রাতে ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে এইসব কথাই ভাবছিল মিনহাজ। আগামীকাল..... আগামীকালই তার উদ্দেশ্য সফল হতে চলেছে। কত বড় সাহস! তাকে হুমকি দেয়। কে কার আঙ্গুল বাঁকা করে, এবার বুঝবে জহিরুদ্দিন। ঘড়ি দেখে একবার মিনহাজ। সাড়ে এগারটা বাজে। এই অঞ্চলে সন্ধ্যাবেলাতেই শুনশান হয়ে যায়। মানসুখ ভাটিয়ার বেডরুম বাড়ির অন্যদিকে। মিনহাজ ইচ্ছা করেই কেয়ারটেকারের পাশের ঘরটা নিয়েছে। মানসুখ অবাক হলেও কিছু বলেনি।

হঠাৎ করেই মিনহাজের মনে পড়ে যায় একটা কথা। আজ দুপুরে যখন সে লনে বসেছিল তখন কেয়ারটেকারটাও সেখানে ছিল। ওর নাম জগমোহন। কথা না বলে এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। সেই গল্প করছিল। এই বাড়িটা তার মালিক কিনেছে বছরখানেক হলো। তার নোটেও পছন্দ না বাড়িটা। নাহ...বাড়িতে জোন সমস্যা নেই। সমস্যা হলো ওই গোরস্থানটা। ওটা না কি ভাল জায়গা না। আর বাড়িটাও এমন জায়গায় যে ওটার পাশ দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। মানসুখ রাত বিরেতে ড্রাইভার নিয়ে বা কখনও নিজে একাই ওই পথ দিয়ে ফেরে। কিন্তু জগনোহন মরে গেলেও সন্ধ্যার পর বাইরে যায় না। ওই পুরোন গোরস্থানে 'খারাপ জিনিস' আছে। কি খারাপ জিনিস, তা আর ভেঙ্গে বলেনি জগমোহন। তবে একটা দেহ নাকি ঘুরে বেড়ায় কাফন পরে। অনেকেই নাকি দেখেছে। এতটুকু শুনেই মিনহাজের মনে ঠিকই একটা ভয়, অথবা বলা ভাল অস্বস্তি ঢুকে গেছে। ব্যাটা জগমোহন। গল্প করার আর বিষয় পেল না, বিরক্ত হয়ে ভাবে মিনহাজ। আগে জানলে কখনই এই বাড়িতে থাকত না সে। শহরের মধ্যে হোটেলেই থাকত।

এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মিনহাজের চোখ বুঁজে আসে একসময়। ঘড়িতে তখন রাত বারোটা।

আধ ঘন্টা সময় পার হয়েছে। মিনহাজ গাঢ় ঘুমে। হঠাৎ কি এক অস্বস্তিতে সে জেগে ওঠে। ঘুটঘুটে অন্ধকার বলতে যা বোঝায়, তার কামরায় অন্ধকার ততটা নয়। জানালা খুলে শুয়েছে বলে বাইরের চাঁদের আবছা আলোয় ঘরের আঁধারে যেন দুধ মেশানো। হঠাৎ মিনহাজের মনে হলো, সে কামরায় একা নয়। অন্য কেউ অথবা অন্য কিছু একটা প্রবেশ করেছে তার কামরায়। সে তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে। অনুভব করতে পারছে তার নড়াচড়ায় কাপড়ে যে মৃদু খসখস শব্দ হয় সেটা। মিনহাজের হৃদপিন্ড ধড়াশ করে ওঠে। কারন 'জিনিসটা' তার মশারির ঠিক বাইরে দাঁড়ানো এখন। একটা বোঁটকা পচা গন্ধ এবার তার নাকে এসে ঢোকে। মিনহাজের হার্টবিট তখন পাগলা ঘোড়ার মত লাফাচ্ছে। ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে অজানা আতংকে। এরপরই আতংকটা তীব্রতর হয়ে ওঠে একটা ঘড়ঘড়ে শব্দে। বাইরের ওই জিনিসটা হাড় চিবানোর মত শব্দ করছে। মশারীটাও যেন একটু টেনে ধরল। মিনহাজ অজ্ঞান হওয়ার প্রান্তসীমায় থেকেও শরীরের সমস্ত শক্তি একত্র করে মোবাইলের টর্চটা জ্বালায়। মশারীর জালের ভেতর দিয়ে সে যা দেখতে পায় তা না দেখলেই তার জন্য ভাল হতো। সাদা কাপড় জড়ানো একটা দেহ যাতে লাল রক্তের ছোপ। কাপড়টা কাফন। তার বাইরে যে মাথাটা বের হয়ে আছে সেটার একপাশ থ্যাঁতলানো। বিভৎস একটা চেহারা। এতটুকুই দেখার বাকি ছিল। একটা অস্ফুট গোঙ্গানীর সাথে সাথে মিনহাজের হৃদপিন্ডের ড্রামবিটও বন্ধ হয়ে যায়। নিষ্প্রান দেহটা লুটিয়ে পড়ে বালিশের ওপর। মোবাইলটা তখনও জ্বলছে। সকালে যখন তার লাশ আবিষ্কৃত হবে তখন ব্যাটারি ফুরিয়ে বাতিটা নিভে যাবে নিশ্চয়ই। কেউ জানবে না, কিসে সে মারা গেল।


৫।

পরদিন সকাল।

জহির যখন এসে পৌঁছেছে ততক্ষনে মিনহাজের কামরার দরজা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। পুলিশ এবং ডাক্তারও এসে গিয়েছে। মুখ শুকনো করে মানসুখ ভাটিয়া দাঁড়িয়ে আছে পাশেই। বোঝা গেল পুলিশ কিছুটা হলেও তাকে জেরা করেছে।

যাইহোক, সব দেখেটেখে ডাক্তার রায় দিল ঘুমের মধ্যে হার্ট এটাকে মারা গেছে মিনহাজ। জহির পৌঁছানোর পর সেও পুলিশকে জানালো মিনহাজের দূর্বল হার্টের কথা। লাশ নিয়ে পুলিশ চলে গেল। পোস্টমর্টেম হবে।

দুপুরের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া গেল। ডাক্তারের প্রাথমিক কথাই সঠিক। হার্ট এটাক। লাশ ফেরত পাওয়া গেল সহজেই। জহির ছাড়া অন্যকোন নেক্সট টু কিন না থাকায় বিকেলের মধ্যেই সেই পুরোনো গোরস্থানে দাফন করা হলো মিনহাজের লাশ। এরপর জহির আর মানসুখ ফিরে এলো বাংলোয়।

সেইদিন রাত্রের কথা।

ড্রয়িংরুমে বসে আছে মানসুখ ভাটিয়া। হাতে বিয়ারের গ্লাস। মুখোমুখি বসা জহিরুদ্দিন সরকারের হাতেও গ্লাস। তাতে ভদকা। দু'জনেই গ্লাস ধরা হাত উঁচু করে বলে উঠল, 'চিয়ার্স'।

প্ল্যান সাকসেসফুল। ঘটনা বোঝার জন্য ফিরে যেতে হবে কয়েকদিন আগে। মিনহাজের সাথে ঝগড়ার সাথে সাথেই জহির ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয় - মিনহাজকে খুন করবে। এমনভাবে যেন কোন প্রমাণ না থাকে। সেই প্রথমে মানসুখ ভাটিয়ার সাথে যোগাযোগ করে। জহির অনুমান করেছিল মিনহাজ হয়তো যোগাযোগ করবে। তা-ই সে করেছে। যদি নিজে থেকে যোগাযোগ না করত, তাহলে মানসুখই তাজে ডেকে পাঠাতো। জহিরই বুদ্ধি দেয়, মিনহাজের দূর্বল হার্ট আর ভূত-ভীতির কথা জানায় মানসুখকে। সে আগে থেকেই জানত ওই গোরস্থানের কথা। কেয়ারটেকার জগমোহন এই ক্ষেত্রে অনেক বড় ভুমিকা রেখেছে। সেই গল্পটা শুনিয়ে রেখেছিল মিনহাজকে, মানসুখেরই নির্দেশে। আর রাতের বেলা ড্রাইভার সাজে উঠে আসা জিন্দালাশ। মেকাপটা ভালই করেছিল। জহির নিশ্চিত ছিল এতে কাজ হবেই। আর হয়েছেও। কেউ বিন্দুমাত্র সন্দেহ করার সুযোগ পায়নি। ঘটনার সময় সে ছিল ঢাকায়। সুতরাং সন্দেহের কোন ছিটেফোঁটাও তার দিকে যায় নি। তার ধুরন্ধর মস্তিষ্ক আর মানসুখ ভাটিয়াকে ব্যাবসার পার্টনার করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি - এই দুইই তার কাজ সহজ করে দিয়েছে। এখন রাস্তা ক্লিয়ার। ব্যবসার পুরোটাই তার হাতে। তাই এই আনন্দ উদযাপন।

পরদিন সকালেই জহির ঢাকা ফিরে এলো। মিনহাজকে সরিয়ে দেবার পর আর চিটাগাংএ থাকার দরকার নেই। ঢাকায় অনেক কাজ। অফিসে বসে সে সারাদিন অসম্ভব ব্যস্ত সময় পার করে। মানসুখের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখাও একটা রিস্কি ব্যপার। তাকে বিশ্বাস করা যায় না। আবার হাত ছাড়াও করা যাবে না। মানসুখ ছাড়া তার প্ল্যানটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হত। এইসব ভাবতে ভাবতে একটু বেশি রাতেই বাড়ি ফেরে সেদিন জহির। বউ তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে দিন দুয়েকের জন্য বাপের বাড়ি গেছে। জহিরের জন্য রান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে। সে বের করে খেয়ে নিল। তারপর এক পেগ হুইস্কি নিয়ে টিভিটা চালিয়ে বসল। টিভিতে একটা হরহ ফিল্ম হচ্ছে। জহির উঠতে পারছে না - এমনই জমাট গল্প। বন্ধু খুন করে বন্ধুর লাশ চাপা দেয়। তারপর কবর ঠেলে সেই লাশ উঠে এসে প্রতিশোধ নেয়। জহিরের হাসি পেল হঠাৎ। এইসব বাচ্চাদের জিনিস দেখে ভয় পেত মিনহাজ। সেই ভয়ই ওকে খেল।

রাত ভালই হয়েছে। জহির উঠে দাঁড়ায়। ঘুমাবে। টয়লেটে ঢুকে ভাল করে হাত মুখ ধুয়ে বেডরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন নিজেকে দেখে। তারপর বিছানায় শুয়ে পড়ে। ঘুমও এসে যায় তাড়াতাড়ি। হঠাৎ তার ঘুম ভেঙ্গে যায় একটা শব্দে। শব্দটা জোরে জোরে শ্বাস টানার মত। আসছে তারই খাটের তলা থেকে। জহির কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায় প্রথমে। কিন্তু সে ভীতু নয়। খাট ত্থেকে কাত হয়ে নাটিতে ভর দিয়ে মোবাইল টর্চের আলো ফেলে খাটের নিচে। ইঁদুরই হবে।

কিন্তু....

ইঁদুর নয়। সে দেখে মিনহাজ শুয়ে আছে হামাগুড়ির ভঙ্গিতে। সেই কাফন পরা। কাফনে মাটি লেগে আছে। এই কয়দিনেই দেহটা পচে ফুলে উঠেছে। মাংস পচার বিকৃত গন্ধ পুরো ঘরের আবহাওয়াটাকে বিষাক্ত করে তোলে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হয়না জহিরের। এই লাশ সে নিজ হাতে তিন দিন আগে দাফন করে এসেছে। তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে নির্ঘাত। নিজেকে বোঝায় সে। কিন্তু তার আগেই মিনহাজের লাশ মাংস খসে পড়া আঙ্গুল দিয়ে জহিরের পা চেপে ধরে। উফ...কি প্রচন্ড শক্তি। জহির প্রানপন চেষ্টা করে পা ছাড়াবার। কিন্তু সে ভৌতিক শক্তির সাথে পেরে ওঠে না। জহির তখন মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। আস্তে আস্তে মিনহাজের লাশ চেপে বসে ওর দেহ্ব্র ওপর। পচা গলা হাতে গলা টিপে ধরার আগ মুহূর্তে জিজ্ঞেস করে ঘড়ঘড়ে গলায়ঃ

"কেমন আছিস পার্টনার?"

(সমাপ্ত)


#গদ্যতাড়না
#পার্টনার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৫০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন!!!

লোভে পাপে মৃত্যু.....

হররে হরর, :) বেশ জমেছে শেষটায়

++++

২১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৪৯

মন থেকে বলি বলেছেন: মজা লাগলেই লেখার সার্থকতা।
ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.