নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতই আসুক, দুঃখ আঘাত,অন্ধ দু\'চোখ যতই বাধার সামনে দাড়াকবন্ধু তোমার স্বপ্ন দেখার, মনটা ধরে রেখো।

টি এম মাজাহর

Bangladesh

টি এম মাজাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রিকেট এবং বিভিন্ন প্রকার বাংলাদেশ

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৩

ক্রিকেট কে ঘিরে গত কয় দিন কিছু মজার জিনিস চোখে পড়লো।

সুত্রপাত- খেলা শেষ হবার মুহুর্তে এক বন্ধু ধরে নিয়ে গেলো।

বলল, " আমরা জাতি হিসেবে কি এরকম দিনেও এক থাকতে পারবো না? আজকে যদি ২০ জন ইন্ডিয়ান / অন্য কোন দেশের লোক একসাথে খেলা দেখতো আর ওদের বিরুদ্ধে এরকম ঘটনা ঘটতো, এই ২০ জন ই এক টোনে প্রতিবাদ করতো, এতে কোন সন্দেহ নাই।"

ঘটনা হচ্ছে এরকম, একের পর এক বাজে আম্পায়ারিং এ যখন আমরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছি তখন আমাদের মাঝেরই দুই এক জনের গলায় হাপ ছেড়ে বাচার চাপা আনন্দ। একজন আবার যুক্তি ও দিলেন, ২/৩ টা ভুল ডিসিসন হইসে তো কি হইসে, বাকীদের যোগ্যতা থাকলে জিতে দেখাক। অপর জন হিশাব কষে বুঝিয়েও দিলেন, রায়নার অতিরিক্ত ৪৭ রান বিয়োগ করে আর মাহমুদুল্লাহর ৬ রান যোগ করে ও তো জিতার মতো অবস্থা তৈরী করতে পারলোনা। ওনার কথাটা ধরার মতন না, কিন্তু ধরলাম এজন্য, যে তিনি ক্রিকেট খেলতেন এবন ভালো ক্রিকেট বোঝেন, ঊনিই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন খেলার মাঝে এরকম সিদ্ধান্ত হলে মানসিক অবস্থা কি হয়। আমরা তো টিভিতে দেখেই মাথা গরম করি, আর ওদের খেলা টা এরকম অবস্থায় ও শেষ করে আসতে হয়।

যাই হোক এবার প্রসঙ্গে আসি, খেলা শেষের পর দুইদিন ধরে বিভিন্ন প্রকার ফেবু স্ট্যাটাস দেখে বুঝতে পারলাম, এই দেশে তিন ধরেনের লোক আছে, প্রথম ধরেনের- ইন্ডিয়া ঘেষা বাংলাদেশি, এরকম খেলায় ও চাপা উল্লাসের পাশাপাশি, পুরা খেলায় এদের একমাত্র মূল্যায়ন হল, খেলাটিতে পাকিস্তানী আম্পায়ার আলীম দার ছিলো- ওই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কল দিয়েছে, আই সিসি, বিগ থ্রি বা ভারতীয় ক্রিকেট দল সম্বন্ধে এরা খুবই নিশ্চুপ এবং নিস্পাপ ধারণা পোষণ করে। প্রথম আলোর উৎপল শুভ্রের ম্যাচ রিপোরর্টগুলো পড়লেও এদের সম্বন্ধে বেশ ধারণা পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয় দল, পাকি প্রেমী বাংলাদেশি, ৯৯ সালে ওনাদের কারো কারো মুখে আফসোস ও দেখেছিলাম। এবারের ঘটনায় ও এই দলের মধ্যে বেশ ঊল্লাস চোখে পরলো। কারণ টা যতনা বাংলাদেশ এর অপমান, তার থেকে বেশি হলো এই সুযোগে ইন্ডিয়া কে ইচ্ছা মতন গালাগাল করবার সুযোগ। আপনি আলীম দার এর ভুল নিয়া ওনার সাথে কথা বলতে যাবেন? ঊনি আপনাকে অনেক যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিবেন আলীম দার আসলে নিস্পাপ, সব নষ্টের গোরা ওই Third uমppire.

আর তৃতীয় দলটি হলো চিরচারিত সহজ সরল সত্যিকারের বাংলাদেশি বা বাঙ্গালী যাই বলুন না কেন।

সুখের কথা যে প্রথম দুই দলের চেয়ে তৃতীয় দলটি সংখ্যায় অনেক বেশি। কিন্তু এখানেই আপনি যদি নিশ্চিন্ত হন, তাহলে ভুল করছেন, ওই দুই অংশের সংখ্যা অনেক কম হলেও সমাজের শিক্ষিত এবং চিন্তার দিক থেকে প্রভাবশালী অংশের লোকেরাই এদের অংশ। তার চেয়েও বড় কথা হলো, বাংলাদেশের সত্যিকারের দেশপ্রেমিক যারা, তারা শুধু দেশকে ভালোবাসে বলেই দেশপ্রেমিক। প্রত্যেকে হয়তো জীবন ও জীবিকার তাগিদে কিছু না কিছু করেন, কোন প্রতিদান ছাড়াই দেশপ্রেমের আদর্শকে বুকে ধরে রাখেন। অন্যদিকে, বাকী দুই ভাগের লোকেদের মধ্যে প্রায় পুরাটাই পেশাজীবি- অর্থাৎ পাকপ্রেমী বাংলাদেশী বা ইন্ডিয়াপ্রেমী বাংলাদেশী হওয়াটা তাদের প্রফেশনালিজমেরই একটা অংশ। আমি বা আপনার দেশপ্রেম প্রমাণ করবার জন্য আপনার-আমার পকেটে কিছু ঢোকে না, দেশপ্রেমের এই চেতনা বিক্রি করবার কথা আমার আপনার মাথায়ই আসবে না অন্যদিকে ওই দুটি অদ্ভুতুড়ে (পাকপ্রেমী বাংলাদেশী বা ইন্ডিয়াপ্রেমী বাংলাদেশী ) চেতনার অবস্থানের জন্য তাদের পকেট বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় ভারী হয়, আর প্রয়োজনমতো চেতনা বিক্রি করাটাই তাদের পেশার অংশ। আপনার আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম অত্যন্ত পবিত্র এবং সম্মানের সাথে বুকে আগলে রাখি। অন্যদিকে এই দুই (পাকপ্রেমী বাংলাদেশী বা ইন্ডিয়াপ্রেমী বাংলাদেশী ) চেতনাবাদীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ আর ধর্ম হলো স্রেফ দুটি ব্যবসার পুজি মাত্র। একদল প্রয়োজনমতো মুক্তিযুদ্ধ কে বিক্রি করে খায়, অন্যদল প্রয়োজনমতো ইসলাম ধর্ম বিক্রি করে খায়।

আমি জানি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের সাড়ে ১৫ কোটিই আমার আপনার মতো হলেও এই জাতীয় লেখার বিরোধীতা হবে অত্যন্ত বেশী, কারণটা আগেই বলেছি। সাড়ে ১৫ কোটি মানুষের মনে দেশপ্রেম থাকলেও তাদের বেশীরভাগই গুছিয়ে বলতে শিখেনি, গুছিয়ে লিখতে শিখেনি নিজের মতবাদ অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে শিখেনি, কিন্তু ওই যে দুই চেতনাবাদীদের ছোট অংশের প্রত্যেকেই গুছিয়ে বলতে পারে, লিখতে পারে, পারে নিজের মতবাদকে অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে। বলা বাহুল্য, এদের একটা বড় অংশের কাছে এটাইতো জীবিকা, সুতরাং এই কাজে তাদের পারফরম্যান্স ভালো হবে, এটাই স্বাভাবিক।

এটা স্বীকার করেই নিচ্ছি, যে একটি খেলা দেখবার রিএকশন কে ঘিরে একটি বড় জাতীয় বিভেদকে হাইলাইট করাটা হয়তো অতি সরলীকরন হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই ব্যাপারটা প্রতিনিয়ত, প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের মনে প্রশ্ন এবং ক্ষুব্ধ করে তোলে। জাতি হিসেবে খুব সামান্য কিছুই আমাদের খুশী করে তোলে, আবার অনেক বড় ইস্যুতেই অনেক ধৈর্য ধরেই অপেক্ষা করি। যেমন, গণজাগরণের ইমরানের ফেসবুক পোস্ট। ইমরানকে বছরের পর বছর শাপশপান্ত করা লোকগুলোকে দেখেছি, ফেসবুকে কোন এক ইন্ডিয়ানের সাথে ওর লড়াইয়ের পোস্ট (যেখানে সেই ইন্ডিয়ান একপর্যায়ে ওকে হুমকি দেয় এই বলে যে ইমরান পালানোর সময় নাকি ইন্ডিয়ানরা ওকে জায়গা দিবে না ইত্যাদি ইত্যাদি) দেখে এক ঝটকায় ইমরানের আগের অপরাধ (!) মাফ করে দিলো। আবার একের পর এক ডানপন্থী মন্তব্য শেয়ার দেয়া সাইট থেকেও দেখেছি পাকিস্তানী এক চ্যানেলের বাংলাদেশী ক্রিকেটকে অপমান করা অনুষ্ঠানের কঠোর প্রতিবাদ।

আমাদের জাতীয়তা বোধ মনে হয় অনেক ভেঙেচুড়ে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত ঘুরে এখনও কোন একটা জায়গায় দাড়াতে পারেনি। জাতীয় ইস্যুগুলোতে এক হতে না পারা এই জাতি কীভাবে যেন হঠাৎ করে একটা পয়েন্টে দাড়িয়ে পড়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.