নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতই আসুক, দুঃখ আঘাত,অন্ধ দু\'চোখ যতই বাধার সামনে দাড়াকবন্ধু তোমার স্বপ্ন দেখার, মনটা ধরে রেখো।

টি এম মাজাহর

Bangladesh

টি এম মাজাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওরা কি কি দুষ্টু ছেলেদের চেয়েও খারাপ?

২৪ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫

"চাচ্চু, চাচ্চু, জামাত শিবির কি দুষ্টু ছেলেদের চেয়েও খারাপ?"

চমকে উঠে তাকালাম, ছোট্ট শিশু শিহাব। ক্লাস সেভেনে পড়ে। প্রচুর গল্পের বই পড়ে। গেমস খেললেও তা এডিক্টেড পর্যায়ে না। আর খেলা দেখার প্রতি চরম আগ্রহ। এই আমার সাথেই মিরপুর স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে গিয়েছে সাতআটবার। ওর সাথে আমার একটা সহজ আন্ডার স্ট্যান্ডিং তৈরী হয়ে গেছে। অবশ্য শিশুদের সাথে আমার সবসময়ই সম্পর্ক খুব ভালো থাকে, এই বয়সেও বাচ্চাদের সাথে ব্যাটবল হাতে নেমে পড়ি, লুডু খেলায় চিল্লাচিল্লী করে অংশ নেই। যাই হোক, ভার্সিটির সিনিয়র ব্যাচের ভাই আর আপুর এই সংসারে সাধারণভাবেই আমি চলে আসি প্রায় প্রতি উইকএন্ডে। শিহাবকে আমার এই গেমস খেলুড়ে জেনারেশনের ছেলেদের তুলনায় বেশ ভালো লাগে। বয়সের তুলনায় চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরী হচ্ছে বলে মনে হয়, আবার কখনও অকালপক্কও মনে হয় না। কিন্তু যে কোন যুক্তিতেই হোক না কেন, ওর কাছ থেকে এ ধরণের একটা কথা আমি কখনই আশা করিনি। অন্তত যার বাবা মা দুজনই প্রগতিশীল ধ্যান ধারণ করেছেন এবং সেভাবেই তাদের শিশুকে পালন করেছেন, এরকম একজনের কাছ থেকে তো কখনই নয়।

ভার্সিটিতে ওর বাবা মায়ের সাথে আমার পরিচয়টা শুধু ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই বোন হিসেবেই নয় বরং আরও বেশী করে তৈরী হয়েছে আমাদের সংস্কৃতিমনা পরিচয়ের জন্যও। ক্যাম্পাসের ছোট্ট পরিসরে আমাদের গড়ে তোলা সেই সংগঠনটি আজ ঐ ক্যাম্পাসের অন্যতম বড় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আমাদের হাতে জন্ম নেয়া সেই সংগঠনটিতে আমরা অল্প কয়জন মিলে কাজ শুরু করেছিলাম যেখানে, ব্যানার টানানো থেকে রিকশায় মাইকিং, অনুষ্ঠানের পারফর্ম করা থেকে দাওয়াত পত্র বিলি, সব আমাদেরই ভাগ করে করতে হতো। আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো ক্যাম্পাসের কোন শিক্ষক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল/ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি, কাওকে ভয় না পাওয়া এবং কারও কব্জায় নিজেদের নিয়ে না যাওয়া। মাইকিং করতে গিয়ে জহির রায়হানের নাম বলবার জন্য তৎকালীন ক্ষমতাশীন দলের ক্যাডাররা আমাদের রিকশা ভেঙে দিয়েছিলো, কিন্তু আমাদের প্রতিবাদের ভাষা ছিলো অটল, সেই অনুষ্ঠান আমরা করেই তবে মঞ্চ ছেড়েছি। দেশবিরোধীদের গাড়িতে পবিত্র জাতীয় পতাকা তুলে দেয়ার প্রতিবাদে আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে গেছি, প্রকাশ্যে/ইঙ্গিতে প্রবল ধমকি হুমকি উপেক্ষা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সংস্কৃতিচর্চার মূলশক্তি হলেও কোন দলের কাছে বিক্রি হয়ে তাদের দলীয় প্রোপাগা্ন্ডা প্রচারের মাধ্যম আমাদের মঞ্চকে করতে পারেনি কেউ। সময় গড়িয়ে গেছে। ছাত্রত্ব শেষ হবার পর আমরা জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ি। সারাজীবন বাঙালী জাতীয়তাবাদ আর মুক্তিযুদ্ধের ধারক বাহকের প্রচারণা করেছি, শ্রম দিয়েছি রাতের পর রাত আড্ডা দিয়েছি। ক্যাম্পাসে কোটায় ভর্তি হওয়া ব্যাকবেঞ্চার বন্ধুরা সেই আড্ডায় থাকলেও কথা বলতে সাহস পায় নাই, অনেকের সেই আড্ডায় কথা বলবার মতো ন্যুনতম যোগ্যতা ছিলোনা বলেও মেনে নিতো, কিন্তু চাকরীর বাজারে সেই আমাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে অদ্ভুত আর অসম প্রতিযোগিতায়। চাকরীর পরীক্ষায় কয়েকশত জন পিছনে থেকেও সেই ব্যাকবেঞ্চার বন্ধুরা হাতের তুড়ি বাজিয়ে যোগ দিয়েছে পুলিশ/ম্যাজিস্ট্রেটের মতো ক্রীম ক্যাডারে আর তিনবার ভালো পরীক্ষা দিয়েও ক্রীম ক্যাডার না পেয়ে, শেষবারে বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষাটা দেয়ায় অন্তত "মহান আত্নত্যাগের" ক্যাডারে ঢোকার ভাগ্য হয়েছে, যদিও তা পরিণত হয়ে গেছে "পায়ে ধরা" ক্যাডারে।
যা হোক, ক্লাসমেট বড়ভাই আর আপু নিজেদের জীবন গুছিয়ে নিয়েছেন, ভাইয়ের "সুযোগ" থাকার পরও কোটার সুবিধা না নিয়ে প্রাইভেট সেক্টরে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে দাড়িয়ে গেছেন। আমাদের আড্ডা আজও আগের মতোই। গণজাগরণ মঞ্চে আমরা আগের প্রেরণা নিয়েই গিয়ে স্লোগান দিয়েছি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে। লাল-সবুজ পোষাক পরিয়ে শিহাবকে আমরা সেই চেতনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বারবার নিয়ে গিয়েছি সেখানে। শিহাবের উপহারের তালিকায় আমাদের চেতনা সমৃদ্ধ বই এর কখনই অভাব ছিলো না। আজ সেই শিহাবের মুখে এ কি কথা?

হুট করে ধমক না দিয়ে ওর সাথে বিভিন্ন কথা বলে বুঝতে চাইলাম এ প্রশ্নের ভিত্তিটা কি? যতটুকু বুঝতে পারলাম তাতে যথেস্টই আশঙ্কিত এবং চমৎকৃত হলাম। বুঝলাম, শিশুমনের গঠন তৈরী করার চেষ্টা করলেও আসলে তা কিনে নেয়া যায় না। এই শিশুটিকে দিনের পর দিন ইতিহাস, একাত্তরের নৃশংসতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলেও তা দেখাতে পেরেছি কেবল বইয়ের পাতায় আর আমাদের গল্পে, কিছু নাটক, গান আর কবিতায়। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় শিহাবের শিশুমন নিজের চোখে দেখেছে টিভিতে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে একটি মানুষকে মেরে ফেলা, দেখেছে শিবির নামে পরিচয় দিয়ে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে মারার দৃশ্য, মতিঝিলে প্রায়া লাখ মোল্লাকে এক ঘন্টার মধ্যে খেদিয়ে দিয়ে মতিঝিলের রাস্তায় রক্ত পরিস্কার করার দৃশ্য। দেখেছে নারায়নগঞ্জে ৭ খুনের রহস্য সম্বলিত টিভি রিপোর্ট। পত্রিকায় পড়েছে নয়ন বাছার নামের ছেলেটিকে মৌলবাদী পরিচয় দিয়ে গুলি করার ঘটনা, সেই সাথে ৫ জানুয়ারী আর ২৮ এপ্রিলের দুটি মার্কামারা নির্বাচন। পয়লা বৈশাখের নারীদের হেনস্থা করবার দৃশ্য এবং পরিচয় সম্বলিত বিশাল পত্রিকায় রিপোর্টের পরও তাদের দুষ্টু ছেলে বলে ইনডেমনিটি করাবার ঘটনাও সে পড়েছে, আমাদের কাছ থেকে এসব ঘটনার ব্যাখ্যা আলাদা করে শোনবার দরকার তার হয় নাই অথবা যেভাবেই ব্যাখ্যা করি না কেন, ওর নিজের চোখে দেখা ঘটনাগুলো থেকে নিজেই ব্যাখ্যা তৈরী করতে সে পেরেছে। মৌলিক গণতন্ত্র নামের আইয়ুব খানের প্রহসন যখন সে পড়েছে, নিজে থেকেই সে তার সাথে তুলনা করেছে "অল্প গণতন্ত্রের"। মুক্তিযুদ্ধের খেতাব পাওয়া কাদের সিদ্দিকী আর একে খন্দকারদের গণহারে নব্য রাজাকার পরিচয় পাওয়াটাও ওর চোখ এড়ায় নি। পেট্রোলবোমার নৃশংসতার মার্কেটিং আমরা আপ্রাণ করতে পারলেও সেই ঘটনাগুলোকেও তা ছাপিয়ে যায়নি ওর মনে।

এসব দেখে ওর চোখে নৃশংসতা আর বিচারহীনতার একটা স্ট্যান্ডার্ড দাড় করিয়ে দিয়েছে। অন্ততপক্ষে এখনও পর্যন্ত ও বিশ্বাস করছে যে, মৌলবাদীরা এই স্ট্যান্ডার্ডের চেয়েও খারাপ, কিন্তু চোখের সামনে একের পর এক ঘটনা দেখে কতক্ষন আর বইয়ে লেখা আর আমাদের মুখে শোনা গল্পগুলো টিকে থাকবে জানি না। মিডিয়ার আরাফাত, মুন্নী সাহা, নবনীতাদের নতুন করে বানানো ব্যাখ্যা ইতিহাস আমাদের বলবার মতো কিছু যুক্তি মুখে তুলে দিলেও এই জেনারেশনের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী করতে পারবেনা বলেই মনে হয়। শিহাবের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, সেই "ক্যামেলিয়া" কবিতার কথা-একটা কোন বিপদ আসে না কেন, একটা নিরীহগোছের ভাল্লুক ও কি নেই এ তল্লাটে! এই জামাত শিবির আবারও কিছু নৃশংসতা করুক। তা ছাপিয়ে যাক পয়লা বৈশাখকে, ছাপিয়ে যাক বিশ্বজিত আর মোল্লাদের হত্যাকান্ডকে, ছাপিয়ে যাক ৫ জানুয়ারী আর ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনকে। শিশুদের সামনে আমাদের চেতনা, গল্প, কথাগুলোর কিছু মূল্য ফিরে পাক।

------অনুলিখন

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭

জনতার রায় বলেছেন: আপনি কি জবাব দিলেন?

আমি হলে বলতাম, "অবশ্যই খারাপ। দুষ্টু ছেলেদের বিচার দূরে থাক, পুলিশ গ্রেফতারও করতে চায়না
আর জামাত শিবির দেখলেই পুলিশ পিস্তল-বন্দুক-টিয়ার শেল-পেপার স্প্রে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে, থানায় নিয়ে একবার আর রিমান্ডে নিয়ে আরেকবার হাত-পা ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেয়।
চাদাবাজি করে জামাত শিবিরের পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে দেয়
জামাত নেতাদেরকে ধরে ধরে বিচারের নামে ফাঁসী দেয়
ফাঁসী না হলে রাস্তা আটকে দিনের পর দিন বিরানী খাইয়ে আন্দোলন (!) করায়"

তাহলে কারা বেশি খারাপ, বলতো বাবু!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.