নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতই আসুক, দুঃখ আঘাত,অন্ধ দু\'চোখ যতই বাধার সামনে দাড়াকবন্ধু তোমার স্বপ্ন দেখার, মনটা ধরে রেখো।

টি এম মাজাহর

Bangladesh

টি এম মাজাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিক এনিমেল ফার্ম। প্রথম পর্ব

২৫ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:০৬

আধুনিক এনিমেল ফার্ম। (প্রথম পর্ব)
মূল ভাবনা -জর্জ ওরওয়েল।
শান্ত শহর। শহরের এক প্রান্তে পশুর খামার। নদীর তীরে গাছগাছালিতে পূর্ণ। বিভিন্ন পশুশাবক এখানে ওখানে ইতস্তত ঘোরাঘুরি করে বেড়ায়। মদ্যপ মালিককে সব পশুর দল একাট্টা হয়ে তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরাই দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে। পুরোন অধিবাসী হিসেবে সিংহ, ক্যাঙারু, শুয়োর, কিউই পাখি, ঘোড়া, গরু, গাধার ও ছাগলের সাথে নতুন করে এসেছে জিরাফ, বেবুন, আর বাঘ। হঠাৎ একদিন জরুরী সভার ডাক দিলেন বুড়ো ঘোড়া- বেনজামিন- মানুষ পরবর্তী যুগে যে ঘাম পানি করে খামারটিকে দাড় করিয়েছে। সভার শুরুতে গলা খাকাড়ি দিয়ে শুরু করলো বেনজামিন- আসলে শুয়োর আজ সকাল থেকেই আমাকে বারবার করে তাড়া দিয়ে এই সভার কথা বলছিলো। ওর বােধ হয় কিছু বলবার আছে।
- আমি শুরু করছি
অনুমতির ধার না ধরে শুয়োর বলা শুরু করলো।
- খামারে আমাদের যথাযথ সম্মান দেয়া হচ্ছে না।
সবাই মুখ চাওয়াচায়ি করলো। যতদূর জানে সবাই, শুয়োরদের বেশ ভি আইপি মর্যাদা দিয়েই খামারে রাখা হয়।
গাধা উঠে বললো, কেন তোমাদের তো নদীর ধারের সবচেয়ে সুন্দর এবং নতুন ঘরেই থাকতে দেয়া হচ্ছে।
- তোরা আসলেই গাধা,
বিরক্তমুখে খেকিয়ে উঠল শুয়োর।
- থাকতে দেয়াটাই কি সম্মানের নাকি?
কিউই বলল
- খাবারের চালান আসার সাথে সাথে তোমাদের কাছেই তো আগে পাঠানো হয়। তারপর বাকীগুলো আমরা ভাগ করে নেই।
- বেশ করো, তাতে কি ধেই ধেই করে নাচবো?
আবারও ক্ষেপে উঠলো শুয়োর।
- বেকুব পশুর দল, তোমাদের কাছে থাকা বা খ্ওায়াটাই তো সব।
ছাগল মিনমিন করে বলে উঠলো, কেন পানি তোলার দামী কুপটা তো তোমাদের কাছেই আছে।
সভার সবাই চুপ মেরে গেলো। খামারের অলিখিত নিয়ম, বছরের সবচেয়ে দক্ষ ও নিবেদিত পশুকে বছরে একবার আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হয় এখানকার সবচেয়ে দামী সম্পদটিকে। একই সাথে সবাই এও জানে, গত বছর গাধা এর জন্য নির্বাচিত হলেও, শেষ মুহুর্তে খামারের শান্তির জন্য গাধাকে বুঝিয়ে এবং খাতা কলম ওলট পালট করে শুয়োরের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছিলো।
শুয়োর এবারও চুপ রইলো না, বলে উঠলো- সেটাতো আমার যোগ্যতা বলেই হয়েছি। কথা সেটা না, কথা হলো, তােমরা বলতো, খামারের সবচেয়ে বেশী অর্থ আনে কে?
এবারও সবাই চুপ, কারণ উত্তর টা সবাই জানে, খামারের সবচেয়ে বেশী উপার্জন এই শুয়োরের দলের কাছ থেকেই আসে। খামারের সবাই উদয়াস্ত পরিশ্রম করলেও বাজার চাহিদার জন্য এই শুয়োরদের জন্যই বেশিরভাগ অর্থ আসে, সেটা নিয়ে কারও দ্বিমত নাই।
- এখনতো কারও মুখে কোন কথা নাই। আমাদের ছাড়া এই খামারের কােন উপায় নাই, তাই আমাকে তোমাদের মূল্য দিতেই হবে।
বুড়ো বেনজামিন কেশে উঠে বললো- আমরা তোমাদের কোন জায়গায় কম মূল্য দিচ্ছি?
- মূল্যই যদি দিয়েছো, তাহলে ওই চেয়ারে তুমি কেন?
একটা গাঢ় গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। ফার্মের আরেকটা অলিখিত নিয়ম হচ্ছে প্রতিবছর একটি করে পশুর প্রতিনিধি পালাক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে।
সিংহ হুঙ্কার দিয়ে উঠলো, - তার মানে তুমি বলতে চাইছো সভাপতি নির্বাচনের নিয়ম তুমি মানতে চাও না?
- আহাহা,, চট করে কথা ধরে উঠছো কেন? আমি যা বলতে চাচ্ছি তা খুব সিম্পল। যেহেতু ফার্মের সিংহভাগ উপার্জন আমার কাছ থেকে আসে সেহেতু আমি নেতৃত্ব দিবো, এটা তো অন্যায় দাবী নয়। তাছাড়া, আমি ঠিক করেছি, সিংহ এবং ক্যাঙারু আমার সাথে থাকবে। অর্থাত মূল দায়িত্বে থাকবো আমরা তিন জন।
ক্যাঙারু এক লাফে সিংহের পাশে এসে দাড়ালো, তারপর দুজন ফিসফিস শুরু করলো।
খামারের বিড়ালটি পায়ে পায়ে দৌড়ে এলো, তাহলে আমার কি হবে, আমার তাে এ বছরই সভাপতি হ্ওয়ার কথা ছিলো।
ঘটনা সত্যি। নতুন যােগ দেয়া বাঘের দলের প্রতিনিধি হিসেবেই বিড়ালটিকে আগামীবারের সভাপতি করবার পালা।
- কি ঝামেলায় ফেললো,
কপট রাগ দেখিয়ে শুয়োর শুরু করলো- তোমাদের সভাপতি হবার এতো শখ! যাও বাবা, সভাপতি হবার প্রতি আমার কােন লােভ নেই, তােমরা পালাক্রমেই সভাপতি থাকো, আমাকে নতুন একটা পদ দাও, সেটার নাম খামার প্রধান। সত্যি বলতে কি, তোমাদের পদের নামটা খুব সুন্দর, আবার আরামে থাকতে পারবা, কােন কাজই নেই। আমাকেই সব করতে হবে।
- বন্ধ করো এই তামাশা,
গাধা চিৎকার করে উঠলো।
- এতোদিন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে সব। দরকার হলে তুমি একাই থাকো, আমরা সবাই বের হয়ে যাবো।
কযেক মুহুর্ত পিনপন নীরবতা। সিংহ ও ক্যাঙারু গুটিগুটি পায়ে হেটে এগিয়ে আসলো, কিন্ত গাধার দিকে না এসে শুয়োরের পাশ ঘেষে দাড়ালো।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো শুয়োর।
- বাকিরা?
ময়লা দাত বের করে বলে উঠলো সে।
বেবুন আর গরুর দল কি করবে না বুঝে বসে রইলো। বিড়াল বাঘের দিকে এগিয়ে আসাতে বাঘ একটু নিশ্চিন্ত বােধ করলো। বিড়ালের ওপর তাদের অগাধ আস্থা। নিশ্চয়ই এমন সিদ্ধান্তই নিবে সে যা বাঘদের উপকারে আসবে।
- আমি তাে আছি, তােমরা নিশ্চিন্তে থাকো। যদি খামার থেকে বের হয়ে যেতে হয় তাহলে যাবো। আমার সভাপতি পদ গেলে যাক, কুছ পরোয়া নেহি। আর ওরা গেলে যাক, আমাদের কি ওদের পেছনে থাকতে হবে নাকি? তবে, যদি খামারে থেকে যেতে পারো, তাহলে খামারে লাভের হিস্যা আমি তােমাদের পাইযে দিতে পারবো, এতে কােন সন্দেহ নাই। শুয়োরের বাসার ছাদে দীর্ঘদিন ছিলাম, সম্পর্কতো একটা আছেই, ফেলেতো দিতে পারবে না, কি বলো?
- মনে হয় ? ঠিকই বলছে।
বাঘের দল নিজেদের মধ্যে বলে উঠলো।
- তাছাড়া, বিড়াল কি আমাদের কখন্ও খারাপ চাইবে? ওর সভাপতি পদটাই কেন মিস হতে দিবো। বেচারা আমাদের ভুলের জন্য একটুর জন্য সভাপতির সম্মান হারাতে বসেছিলো।
ওদিকে, গাধার সাথে জড়ো হ্ওয়া ঘােড়া, ছাগল, জিরাফ, কিউই পাখি প্রতিবাদে মুখর হয়ে আছে। ছাগল মিনমিন করে বলে উঠলো, গাধা তাে নিজেই গরীব মানুষ, ও কি আমাদের দায়িত্ব নিতে পারবে?
তাই তাে? গাধার আন্তরিকতা আর উদয়াস্ত পরিশ্রম করার সামর্থ নিয়ে কারওও দ্বিমত নাই। কিন্ত প্রতিবাদী চেতনা দিয়ে তাে পেট চলে না, এই বাস্তবতাও সবার মাথায় ঢুকে গেছে। ক্যাঙারু হাতে ইশারায় কিউই পাখিকে ডাকলো, কিউই গেলেই বলে উঠলো,
- আরে বােকা, আমি আর তুমি পাশাপাশি কত বছর ধরে আছি। আমি দায়িত্বে থাকা আর তুমি থাকা একই কথা। আমি যতক্ষন শুয়োরের সাথে আছি, কথা দিচ্ছি, সর্বোচ্চ আর্থিক সুবিধা তােমায় দিতো পারবো।
কিউই পাখি ক্যাঙারুর কথা ফেলে দিতে পারলো না। সত্যি বলতে কি, এই ক্যাঙারুরর হাত ধরেই সে হাটি হাটি পা করে এতো দূর এসেছে। সে উঠে আবার ক্যাঙারুর সাথে সভায় প্রবেশ করলো। দল ভেঙে যাচ্ছে বুঝে জিরাফ্ও আস্তে আস্তে শুয়োরের সামনে বসে পড়লো যেমনটা ভৃত্য বসে মনিরে সামনে। ছাগল ডানে বায়ে তাকিযে জিরাফের পথ ধরাটাই শ্রেয় মনে করলো। গাধা আর বুড়ো বেনজামিন দীর্ঘসময় একে অপরের চােখের দিকে তাকিয়ে রইলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুড়ো বেনজামিন সভাস্থলে এগিয়ে গেলো। পিছু ধরা গাধার চােখে কি কান্নার ঝলক?
এনিমেল ফার্মে শুরু হলো নতুন যুগের সূচনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.