নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতই আসুক, দুঃখ আঘাত,অন্ধ দু\'চোখ যতই বাধার সামনে দাড়াকবন্ধু তোমার স্বপ্ন দেখার, মনটা ধরে রেখো।

টি এম মাজাহর

Bangladesh

টি এম মাজাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

দগদগে ঘায়ে মলমের প্রলেপ

১৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৩

মাশরাফি আগের দিন বলেছিলো বিশ্বকাপের সেই ঘটনা তারা একটা দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছে। আর ধোনী বললো, ওই ঘটনা নাকি তার মনেই নাই! গ্যালারীতে সব রকম ব্যানার নিষিদ্ধ করেছিলো বিসিবি। বিশ্বকাপের সেই অন্যায়ের প্রতিবাদে ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের সন্তানের ছবি সরিয়ে দড়িতে পা ছোয়ানো ধাওয়ানের ক্যাচের ছবি দেয়া সেই সব লোকেরা ইদানিং আবার সন্তানের ছবি প্রোফাইল পিকচারে ফিরিয়ে এনেছে, সব মিলিয়ে সবাই বিশ্বকাপের ওই ঘটনা আলাদা করেই দেখানোর চেষ্টায় রত ছিলো। কিন্তু মাঠে খেলা গড়ানোর সাথে সাথে বোঝা গেলো, বিশ্বকাপের সেই চুরি-চামারীর মাত্র তিন মাসের পুরোন ইতিহাস কেউই ভোলে নাই। শুরু থেকেই তামীম আর সৌম্যর "চোর পিটানো" স্টাইলে শুরু হওয়া মাইর, গ্যালারীর কানায় কানায় পূর্ণ হওয়া পচিশহাজার মানুষের বজ্রনিনাদী হুঙ্কার, রাস্তা পাশে টিভির দোকানগুলো হয়ে গেছিলো একেকটা গোটা স্টেডিয়াম। রাত আটটায় বন্ধ হয়ে যাওয়া শো রুম গুলো রাত এগারোটায়ও বন্ধ করবার সাহস পায় নি। প্রথম তারাবীর নামাজে অংশ নেয়া মানুষগুলো নামাজ শেষ হতে না হতেই টিভির সামনে দৌড়, কদিন আগেই পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করে ফেলে খেলোয়াড়দের সেই দেখানো নির্লিপ্ততা ভেঙ্গে মাশরাফি তাসকিনের সেই বজ্রকোলাকুলি সবই বলে দিচ্ছিলো, মাস তিনেক আগের বিশ্ব আসরে দেয়া সেই অন্যায় আঘাতের দগদগে ঘা কোন বাঙালীর মন থেকে মুছে যায় নি। "ভুলে গেছি" বললেও মাহেন্দ্র সিং ধোনী যে খুব পরিস্কার করেই জানে যে, যোগ্যতা নয় বরং চুরি করে, বাংলাদেশের সাথে অন্যায় করেই তারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট। আর আলীমদার আর ইয়ানগোল্ডের অভাব বোধ করে, সেই অসহায়ত্বেই তার অর্ধেক বয়সের মোস্তাফিজকে খেলায় না পেরে পায়ের তলায় পিষে আহত করবার চেষ্টা (বিশ্বমোড়লের দেশের অধিনায়ক বলেই ধোনির গুরুপাপে লঘুদন্ড আর দুর্বল মোস্তাফিজকে পাপ না করেও গুরুদন্ড দিয়েছে ম্যাচ রেফারী)।
এগারোজন তরুণের উপর চাপিয়ে দেয়া সেই অন্যায়ের শাস্তি ষোল কোটি মানুষের (হাতে গোনা অল্প কয়জন বাদে অবশ্য) হৃদয়ে দগদগে ঘা হয়ে বেড়ে উঠছিলো এই তিন মাস। মুখের ভেতরে দলা পাকানো থুথু বয়ে বেড়িয়েছে এই তিন মাস। পরাজয়ের ভয় বাঙালী পায় না। আমাদের খেলে হারিয়েছে অনেক দেশই। এই ইন্ডিয়াই প্রায় অনেক বারই আমাদের খেলায় হারিয়েছে। আমরা ওদের হারানোর মতো শক্তিশালী ছিলাম না, কিংবা খেলার দিন তারা আমাদের চেয়ে ভালো খেলে হারিয়েছে, এমনটা মেনে নিতে আমাদের আপত্তি নাই। এমনকি আম্পায়ারদের দুএকটা অনিচ্ছাকৃত ভুলে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছি, এমন ঘটনাও আমরা মনে রাখি নাই। কিন্তু তিনমাস আগের সেদিন আমাদের অন্যায়ভাবে পরাজিত করতে তারা সবধরনের আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। দুই আম্পায়ার সহ্ আইসিসিকে তারা কিনে নেয়, আইসিসি প্রেসিডেন্ট এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে পর্যন্ত অপমান করে তারা- এতোসব ভুলে যায় কিভাবে এই জাতি?

আর আমাদের মধ্যে দুএকজন ব্যতিক্রম থাকবে এটাই স্বাভাবিক, যেমন, আজ মনে পড়ছে উতপল শুভ্রের সেই দম্ভোক্তি করা খবরের হেডিং- " মুশফিক ভালো, কিন্তু কোহলী আরও ভালো। " এতো নরম শরম লেখা কেন ভাই, ভারত জিতলে তো উল্লাসর শব্দভান্ডারের অভাব হয় না। বিশ্বকাপের ভারতের করা অন্যায়ের ম্যাচে একমাত্র তার লেখায়ই ভারতের চুরি চামারীর কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি, বরং হাসিমুখে সেমিফাইনাল ম্যাচ কাভার করতে গেছিলেন ! আনন্দবাজারের চেয়ে বেশী ভারতপ্রেমী রিপোর্ট দিনের পর দিন করে চলেছেন।

দিবারাত্রির ম্যাচ তিনটায় শুরু হওয়ায় শেষ হবার কথা পৌনে এগারোটায়, তার ওপর একঘন্টা বৃষ্টিতে তা বারোটায় শেষ হয়। প্রথম রোজার কারণে নগর বাসী একটু আগে ঘুমানোর কথা থাকলেও মিরপুর থেকে কিভাবে বাসায় যাবে, এই চিন্তা না করেই পরিবারের সদস্যদের সাথে স্টেডিয়ামের বাইরে এই গভীর রাতেই আনন্দ মিছিলে যোগ দেয় হৃদয়ে মলম পড়া এই লোক গুলো। এরকম জয় আমাদের কাছে ডালভাত হয়ে যাওয়ায় আজকাল পাড়ার গলিতে মিছিল আর হয় না, সেই পাড়ায় গতকাল বুনো মিছিল বলে দেয়, তিনমাসের বয়ে চলা অপমান কতটা পোড়াচ্ছিলো তাদের। ইতিহাস বলে, সিকিম দখলের সময় রাজধানীর একজন মানুষও রাস্তায় নামেনি, বরং মাত্র ৫০ মিনিটেই দেশটি বেদখল হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বাঙালীকে থাবড়া মেরে দখল এতো সোজা নয়, কালকেই তার প্রমাণ দিলো তারা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭

মিতক্ষরা বলেছেন: শুনলাম ভারতীয়দের জন্য হোটেলে নাকি নিরামিশ আইটেম দেওয়া হচ্ছে না। বাংগালীর এ কিরকম আচরন?

২০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৪৫

টি এম মাজাহর বলেছেন: অতিথি পরায়ন হিসেবে বাঙালী জাতির তুলনা কারও সাথে হয় না। আমি বাঙালী হয়ে নিজে এই ব্যপারে শতভাগ নিশ্চিত। গ্রামে একবার বৃষ্টির জন্য এক বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেই অল্প সময়ের মধ্যেই সেই বাড়ির লোক তার ছোট্ট খোয়াড়ের একটি মুরগি জবাই করে খাইয়েছিলো, শতবার মানা করবার পরও। জিম্বাবুয়েতে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম মানের হোটেলে রেখে পেট্রোল মেশানো পানি ব্যবহারে বাধ্য করেছিলো আমাদের ক্রিকেটারদের। পানি কিনে পান করলেও সেই পেট্রোল মেশানো পানি দিয়ে গোসল করতে বাধ্য হয়েছিলো আমাদের ক্রিকেটার রা। এর প্রতিদানে আমরা ওদের দেশের একনম্বর হোটেলে রেখে সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদান করেছিলাম ফিরতি সফরে। এবার আমার নিজের কথাই বলি। অফিসিয়াল কাজে তিনজন মধ্যম শ্রেনীর ভারতীয় অফিসার আমাদের অফিসে এসেছিলেন, তাদের দুজন দক্ষিন ভারতীয় ছিলেন, যারা কিনা প্রবল নিরামিষ ভোজী- অর্থাৎ পূর্বানী হোটেলের ভেজিটেবল আইটেমও তারা খেতে পারেন না। অনেক খোজ খবর করে আমরা স্বামীবাগে একটি ইস্কন এর সন্ধান পাই, যার খাবার ওনারা খেতে পারবেন। সেখান থেকে প্রতিবেলার টাটকা খাবার আমরা তাদের জন্য নিয়ে আসি (আমাদের অফিস থেকে সেখানে প্রতিবার যাতায়াত বাবদই দেয়া লেগেছিলো সাড়ে চারশো টাকা করে)। আর সেখানে ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য বাংলাদেশের সেরা হোটেল সোনারগা ভেজিটেবল দেয়া হবে না!!! মনে রাখবেন, সেদিন এই ঘটনা ঘটবে, যেদিন পুরো বাংলাদেশের কোন বাজারে এক পিস ভেজিটেবল খুজে পাওয়া যাবে না। বাঙালীর অনেক দোষ আছে মানি, কিন্তু অতিথি পরায়নহীনতার কথা বললে কাওকেই বিশ্বাস করাতে পারবেন না।

২| ২০ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:১৩

বাংলার জামিনদার বলেছেন: একটা ফাইভষ্টার হোটেলে দুনিয়ার সব পদের খাবার পাওয়া যায়। ফাপর লওয়ার আর যায়গা পাওনা??? এতই যদি মুখে না রোচে তাহলে রাস্তার ওপারে কাওরানবাজারে প্রচুর চিতই পিঠার দোকান আছে, খাইয়া লইবেন।

২০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:০০

টি এম মাজাহর বলেছেন: ভারত কে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হারিয়েছে এই অসীম আনন্দে দুই দিন ভাসছিলাম, কিন্তু আজ সকালে হঠাৎই কারও একটি লেখা ফেসবুকে চোখে পড়লো, ইনিয়ে বিনিয়ে লেখার মূল সারমর্ম হলো "সেই ম্যাচে ধোনির আচরণ নিয়ে কিছু লোক অযথাই ভারত বিরোধিতার কাজে লাগাচ্ছে, ধোনীর আসলে যেরকম অপরাধ, সেই মুস্তাফিজেরও নাকি একই অপরাধ, আসলে ভারতকে ঘৃণা করা উচিত না, সত্যিকারের ঘৃণা করা উচিত পাকিস্তান কে এব্ং পরিশেষে কিছু মুখস্ত কথা"
যেই দেশের একজন নাগরিক এরকম লেখা লিখতে পারে সেই দেশ কিভাবে নিজের পায়ে দাড়াবে আমার মাথায় আসছে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.