নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতই আসুক, দুঃখ আঘাত,অন্ধ দু\'চোখ যতই বাধার সামনে দাড়াকবন্ধু তোমার স্বপ্ন দেখার, মনটা ধরে রেখো।

টি এম মাজাহর

Bangladesh

টি এম মাজাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্দোলন ছিনতাই

২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:১৯

বাড়ির বয়স্ক মানুষদের কাছ থেকে শুনেছিলাম, ইজ্জত যায় না ধুইলে, খাইছলত যায়না ম`লে।
সময়টা সম্ভবত ২০০৩ কি ৪। রাজা মহারাজাদের মল্লযুদ্ধের শিকার জানবিবির সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। দুই পক্ষের ভিসি হবার লড়াইয়ে টানা সাত আটমাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি থেকে পাঠানো টাকায় চলতে হয়। কোনমতে ডিগ্রীটা ধরে চাকরী ধরে পরিবারকে আকড়ে ধরতে হবে। অন্যদিকে ফাইনাল ইয়ারের শেষ কয়টি পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেক সার্কুলার মিস হয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি সময়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে জড়ো হয় ক্লাস পরীক্ষা শুরুর আবেদন করে। বিশ্বাস করুন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কিছুই চাওয়ার ছিলো না, শুধুমাত্র ক্লাস পরীক্ষা চালু হলেই তারা খুশি। সবগুলো হল থেকেই সবাই ছুটে এলো। কয়েকদিন পরে অনশন কর্মসূচী এলো। টানা অনশনে কয়েকজন অসুস্থ্য হয়ে পড়লো। মিডিয়া সরব হলো। এখনও মনে আছে, ২৮ ব্যাচের এক বড়ভাই সাংবাদিক মেহেরুন রুনীকে ইন্টারভ্যু দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন, যা দেখে মেহেরুন রুনীও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি। যাহোক, যে কথা বলছিলাম, তীব্র শীতের মধ্যে চলা ক্লাস পরীক্ষা শুরুর আন্দোলনে অনেকেই রুম থেকে লেপ, কাথা নিয়ে এসে অবস্থান করছিলাম। সত্যিকারের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন বলেই মাইকের সামনে কোন দলের নেতাকেই ডায়াসে দাড়াতে দেয়নি সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। এমনকি সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দলের একজন দাপটশালী শীর্ষ নেতা ঢাকা থেকে আন্দোলনের স্বপক্ষে কথা বলতে চাইলেও তাকে মাইক দেয়নি সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের ফলে বিবাদকারী দুই পক্ষই যখন নমনীয় হয়ে ওঠে তখন দেখা যায় ভিন্ন কিছু দৃশ্য। গত কয়দিন ধরে অবস্থান করা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের লেপ কাথার আশে পাশে চুপচাপ করে অবস্থান নিচ্ছেন আমাদের ই কিছু পরিচিত মুখ। তারা আন্দোলনের জন্যে জ্ঞান দেবার নামে অনেকের কানেই ফিসফিস করে আন্দোলনকে এন্টি ভিসি আন্দোলনে রূপ দেয়ার পরামর্শ দেয়া শুরু করলেন। কিন্তু সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নেতৃত্ব দেয়া ভাই ও আপুরা দ্রুত পরিস্থিতি বুঝে ফেলেন এবং সব সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই নিজনিজ স্থানে থাকার নির্দেশ দেন। কে ভিসি হবে না হবে সেটি নিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মাথাব্যাথা ছিলো না। আর এই আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপান্তর করে বড় কিছু উল্টে দেয়ার কোন রকম ইচ্ছাও ছিলো না তাদের। শুধু ক্লাসপরীক্ষা চালু করে শিক্ষাজীবন শুরু করবার ব্যাপারেই আকুল ছিলো সবাই। পরে বুঝতে পারি, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যানারের নেতৃবৃন্দের বিচক্ষণতার জন্যে একটি সফল আন্দোলন ছিনতাই হবার হাত থেকে বেচে যায় জানবিবি।
পরের ঘটনাটি তারও কয়েক বছর পরের ঘটনা। মুক্তমঞ্চে জলসিড়ির অনুষ্ঠান হচ্ছে। অনুষ্ঠানের মাঝপথে হঠাৎ করেই আমাদের সেই চেনামুখগুলোর একজন মঞ্চের বাইরে থেকে মঞ্চে উঠে মাইক হাতে নিয়েই ঘোষণা দিলো-" কিছুক্ষণ আগে অমুক হল ছাত্রশিবির দখল করে নিয়েছে। আপনারা সবাই চলুন আমরা হলটিকে রক্ষা করি" দর্শকরা হতবিহ্বল হলেও এই ক্যাম্পাসের সার্বজনিন শিবিরবিরোধী চেতনা থেকে ঐ হলের দিকে চলে যায়। সপ্তাহব্যাপী প্রস্তুতি নিয়ে তৈরী করা অনুষ্ঠানের অর্ধেক নিয়ে বসে থাকে জলসিড়ি। পরে জানা যায়, উক্ত হলের কোন এক গ্রুপের সাথে ব্যক্তিগত শত্রুতা মারামারিতে রূপ নিলে দল ভারী করবার জন্যে সেই চেনা মুখগুলো এই কৌশলের আশ্রয় নেয়। বলি হয় মুক্তমঞ্চ ও অনুষ্ঠান।
কেন এতো পুরোন কথা মনে হচ্ছে? গত দুই দিন ধরে রানা আর আরাফাতের মৃত্যু নিয়ে শোকাবহ ক্যাম্পাস টালমাটাল। রানার মৃতদেহ যখন ক্যাম্পাসে অপাংতেয় বলে ঢোকানোর অনুমতি দেয়া হয় না, তখনও আরাফাত চিকিৎসাধীন। পরে দুপুরে তাকেও রানার পথ ধরতে হয়। চোখের জল যখন শোক আর কষ্টে ভেসে যাচ্ছিলো, তখন সেই পরিচিত মুখগুলোর কাছে রানা, আরাফাতের মৃত্যু কোন গুরুত্বই পায় নাই। বরং কোন এক ভাস্কর্যের সম্মান রক্ষায় তারা মাতোয়ারা ছিলেন। পরদিন সেই শোক আর কষ্ট যখন ক্ষোভে পরিণত হতে যাচ্ছিলো, তখন তারা এগিয়ে আসলেন সেই পুরোন কৌশলে, সেন্টিমেন্ট ছিনতাইএর কাজে। সকালে কৌশলে বলে দেয়া হয়, ভাস্কর্য ইস্যু এবং রানা আরাফাতের মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলন হবে আজকে। ভাষাটা ঠিক এরকম "সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্দালয়ের ২ ছাত্রের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রদিবাদে ..." লক্ষ্য করুন, কিসের সাথে কি মেলানো হয়েছে? যেন মূল কারণ ভাস্কর্য সরানো, আর ফাও হিসেবে রানা আরাফাতের ঘটনা। এবার দুপুরের স্ট্যাটাসগুলো আরও অদ্ভুত। বিভিন্ন হল থেকে দলে দলে বের হয়ে আসা ছাত্রছাত্রীদের ছবিগুলো দেখিয়ে বলা হলো ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে নাকি সবাই জড়ো হচ্ছে! এ পর্যায়ের প্রপাগান্ডায় রানা আরাফাতের ঘটনার তাদের ঘোষিত কারণটিও বিন্দুমাত্র বলার প্রয়োজন তারা করলেন না। এবারে ছিনতাইয়ের শেষ পর্যায়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সাথে ভিসি ম্যাডামের কথোপকথনে যখন ম্যাডাম সব শর্ত মেনে নিলেন তখন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা রাস্তা ছেড়ে দেয়। সারাদিনের আটকে রাখা রাস্তায় অন্যান্য মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে তা সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা জানে এবং বোঝে। কিন্তু.... কিন্তু সেই পরিচিত মুখ, যারা সারাজীবন অন্যের তেলেই মাছ ভেজে অভ্যস্ত, তারা সিন ক্রিয়েট করাবার অপেক্ষায়ই ছিলো এবং ঘটিয়েই ছাড়লো। সন্ধ্যার দিকে তাদের অনেকের হাসিমুখের ছবি আপলোড হলো। হবেই তো। বিশাল ঘটা করে আয়োজন করে শাহবাগে ডাকা ভাস্কর্যের আন্দোলনে উপস্থিত মিডিয়ার লোকের অর্ধেকই যারা আনতে পারে নাই, তারা জানবিবি ক্যাম্পাসে রানা আরাফাতের শোকে ভাস্কর্যের তেনা পেচাইয়া, উপস্থিতি অনেক দেখাইতে পারলো। আর একটি ভিসি বিরোধী আন্দোলনের চুলকানি মারতে শুরু করলো।
২০০৩-০৪ এ সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নীরব ক্ষমতার মাধ্যমে আন্দোলন ছিনতাই রোধ করা গেছিলো। এবার কি সেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা শোক ছিনতাই ঠেকাতে পারবে না?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


পড়লাম, পোস্টকে টেনেটুনে লম্বা করে ফেলেছেন।

২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:৪০

টি এম মাজাহর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, আপনার মতো সিনিয়র ব্লগার আমার ব্লগে এসে পরামর্শ দিয়েছেন এজন্য কৃতজ্ঞতা।
পরের লেখাগুলোতে সংক্ষিপ্ত করবার চেষ্টা করবো। তবে, আন্দোলনের সাথীরা অনেকে আপ্লুত হয়েছে। কয়েকজন ফোন দিয়ে পুরানো কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ দিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.