নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৩২ পৃষ্ঠায় খড়, ৩৩ পৃষ্ঠায় অাগুন

টোকন ঠাকুর

কবিতা গল্প লিখি, ছবি আঁকি-বানাই, একাএকা গান গাই...

টোকন ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাশ্বেতা দেবী অামর রহে

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০১

'হাজার চুরাশির মা' মহাশ্বেতা দেবী অমর রহে

২০০২ সালে কোলকাতার গলফ গ্রিনে, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট মহাশ্বেতা দেবীর বাসায় তার সঙ্গে অামাদের দেখা হয়েছিল। অামি অার শাহনাজ মুন্নী তরুণ কবি বা লেখক হিসেবে অামন্ত্রিত হয়ে কোলকাতায় গিছলাম। সেই অামার প্রথম 'কলিকাতায় যাওয়া'। তো সাহিত্য অাকাদেমির পক্ষ থেকে অারুণি চক্রবর্তী যেমন সঙ্গে ছিলেন, অারেকজন অপরিচিত লোক ছিলেন ট্যাক্সিতে, যিনি অামাকে সিগারেট দিচ্ছিলেন অার অামাদের দেখা বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। ট্যাক্সি প‌ৌঁছুল গলফ গ্রিনে, মহাশ্বেতা দেবীর বাসায়। কোলকাতায় পিএইচডি করতে যাওয়া নরসিংদীর শ্রীকান্ত চন্দ্রও সেদিন ছিলেন অামাদের সঙ্গে।
দোতলা বাড়ির নিচতলার খুবই শাদামাটা ড্রইংরুমে অামরা অপেক্ষা করছি। ট্যাক্সিতে অামাদের সঙ্গে থাকা মিডলঅাপ এজের লোকটা মহাশ্বেতা দেবীর ড্রইংরুমে বসেই নিজে সিগারেট ধরালেন, অামাকে সাধলেন। অামি বললাম, 'মহাশ্বেতা দেবী ঢুকবেন না এখন?'
উনি বললেন, 'অসুবিধা নেই, ধরান।'
অামি সিগারেট ধরালাম এবং তক্ষুণি বাসার ভেতরের এক ঘর থেকে ড্রইংরুমে ঢুকতে ঢুকতে মহাশ্বেতা দেবী বললেন, 'কই, অামার বাংলাদেশের তরুণ লেখকরা কই?'
অারুণি দা অামাকে অার মুন্নীকে দেখিয়ে দিলেন--'এরা দুজন'। অার তক্ষুণি, মহাশ্বেতা দেবী অামার থুতনিতে হাত দিয়ে ধরে অাদর করে বললেন, 'তুমি তো অামার নাতির বয়সি মনে হয়।'
অামার হাতে সিগারেট, অামি একটু বিব্রত হচ্ছি হয়তো, সেটা দেখে, মহাশ্বেতা দেবী বললেন, 'টানো, বাপ্পা তো অামার সামনেই খায়। এটা তো তোমার নেশা, অামার জন্যে অফ রাখার কি অাছে?'
তখন জানলাম, বাপ্পা বলতে ট্যাক্সিতে বা এই ড্রইংরুমে বসে অামাকে যিনি সিগারেট দিলেন, তিনিই এবং তিনি মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র ছেলে। মানে তিনি নবারুণ ভট্টাচার্য, 'নবান্ন'র বিজন ভট্টাচার্যের সন্তান। মৃত্যু উপত্যকাকে দেশ বলতে অস্বীকৃতি অাছে যার। 'ফ্যাতাড়ু'র সম্পাদক নবারুণ দা তো গতবছরই চলে গেলেন। অাজ, ৯০ বছর বয়সে চলে গেলেন তার মা, মনীশ ঘটকের মেয়ে বা ঋত্বিক ঘটকের ভাতিজি মহাশ্বেতা দেবী।

সেদিন, গলফ গ্রিনের সেই বৈঠকখানায় ঋত্বিকের কথা উঠেছিল, ঋত্বিকের যমজ প্রতীতি দেবীর কথা উঠেছিল। মহাশ্বেতা দি তার বাবা মনীশ ঘটকের জন্মশতবর্ষের অনেক জার্নাল, লিটল ম্যাগাজিন দিয়েছিলেন অামাদের।

ঢাকায়, সিদ্বেশ্বরীতে মেয়ের বাসায় থাকেন শহীদ রাজনীতিবিদ ধীরেন দত্তের পুত্রবধু, সন্দিপ দত্তের স্ত্রী প্রতীতি দেবী। প্রতীতি দি'র সঙ্গে গল্পে গল্পে মহাশ্বেতা দেবীর কথা শুনেছি--' ও খুকু? খুকু অার অামার-ঋত্বিকের বয়সের পার্থক্য মাত্র ৩ মাসের। খুকু অংক পারত না।'

খুকু হচ্ছেন মহাশ্বেতা দেবী। প্রতীতি দি ভবি, ঋত্বিক হচ্ছেন ভবা। ভবা-ভবি যমজ, কিন্তু '৪৭-এর দেশভাগের ফলে ভবা হয়ে গেলেন ইন্ডিয়ান, ভবি পূর্ব-পাকিস্তানি। তাই ঋত্বিকের চেয়ে দেশভাগের জ্বালা কে অার বেশি পেয়েছেন? ঋত্বিকের মতো দেশভাগ এত ভালো কে অার ধরেছেন?

১৯২৫ সালে ঋত্বিক-প্রতীতি ও ১৯২৬ সালে মহাশ্বেতা ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এই যমজের ভাইঝি প্রয়াত হলেন।
'হাজার চুরাশির মা', মহাশ্বেতা দেবী অমর রহে।

২৮ জুলাই, ২০১৬, ঢাকা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২২

ইন্দ্রনাথ বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন, ঠাকুর! প্রিয়তে রাখলাম যত্ন করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.