নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৩২ পৃষ্ঠায় খড়, ৩৩ পৃষ্ঠায় অাগুন

টোকন ঠাকুর

কবিতা গল্প লিখি, ছবি আঁকি-বানাই, একাএকা গান গাই...

টোকন ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

হক কে নিয়ে লেখা

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩

'ধরো, কে চলে যাই'

টোকন ঠাকুর

একেকটা সময় অাসে, সময়কে চিনতে পারি না। সময়ের ভাষা পাঠ বড় দুরুহ। সময় অামাকে নিয়ে যায় এমন কোনো ইমেজের মধ্যে, সেই ইমেজের পাশে হয়তো অারেক সময়। তাই এই সময়ের মধ্যে বসেই চলে যাই অারেক সময়ের কাঁটায়। কেমন যেন লাগে! কেমন লাগে? ঠিকঠাক বলতে পারব না। যেমন এখন, এই মুহূর্তে বৃষ্টি হচ্ছে। সমস্ত শহর ভিজে যাচ্ছে বর্ষণে বর্ষণে। এমন তো নয় যে, এটা বর্ষাকাল। শ্রাবণ পেরিয়ে গেছে কবেই। শরৎতো তো যায় যায়। এসময়, এত বৃষ্টি হয়! হয় না, এখন হচ্ছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে মেট্টোপলিটন, বৃষ্টিতে ভিজছে না মন। মন কি ভেজে, এত সহজেই? ঘরের বাইরে ছাদের কোণে চুপ করে বসে অাছে একটি শালিক। শালিকের মন ভালো নেই? কেন? শালিক কি অামার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে--মন ভালো নেই কেন তার? কবি শুয়ে অাছেন হাসপাতালের বিছানায়, কবিতা শুয়ে অাছে কবির বালিশের নিচে, কবির শরীরে ক্ষয় লিখে যায় কর্কট-বিছে! সৈয়দ শামসুল হক বিদেশী হাসপাতাল থেকে ফিরে ঢাকার হাসপাতালে শ্রশ্রুষায় অাছেন। অপেক্ষা করছি, দ্রুত তিনি সুস্থ হয়ে গুলাশান ১ এর ৬ নম্বর রাস্তার ৮ নম্বর বাড়ি, 'মঞ্জুবাড়ি'তে ফিরবেন। কবি বাড়িতে ফেরার পর এবারের অাড্ডা হবে বৃশ্চিকের জাল নিয়ে, হেমন্তের প্রথম কুয়াশা নিয়েও অাড্ডা হবে। সৈয়দ হকের সঙ্গে অাড্ডার স্বাদ পেতে মন ছটফট করছে। কবিতা, চিত্রকলা, সিনেমা নিয়ে অাড্ডা অামার হকের সঙ্গে, যে হক সব্যসাচী, যে হক রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে সবচেয়ে বহুমুখি সৃজনে বিস্তৃত। সৈয়দ শামসুল হক একদিন কথায় কথায় বললেন, 'সেই ১৯৪৯ সালে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় এলাম। সেদিনের সেই ছিমছাম ছোটমোটো ঢাকা শহরকে এক বিরাট ব্যাপ্ত মহানগরীতে পরিণত হওয়া দেখলাম চোখের সামনেই।' বলাই যায়, ঢাকা শহরের মতোই ছোট্ট থেকে পরিব্যাপ্ত, বিশাল, বিস্তৃত হয়ে উঠলেন গতশতকের পঞ্চাশের দশকের তরুণ কবি সৈয়দ শামসুল হক, যিনি এই মুহূর্তে অাছেন হাসপাতালে, বয়স তিনি অতিক্রম করে যাচ্ছেন বিরাশি বছর। মনে, সৃজনে সদা তরুণ, মননে দৃপ্ত তিনি সফল চাষা। চাষ করলেন বাংলা ভাষা। প্রকাশিত হল কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, কাব্যনাটক, মঞ্চনাটক, শিশুসাহিত্য, নানারকম উৎকর্ষ-ভাবনার টেক্সট। অনুবাদ করেছেন। চিত্রকলা নিয়ে কাজ করেছেন। সিনেমা নির্মাণ করেছেন। সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছেন, গান লিখেছেন। এত ভাবে তিনি নিজেকে ঢেলেছেন কাগজে, ক্যানভাসে, চিত্রে-বৈচিত্রে, তাকে সবাই সব্যসাচী বলে থাকেন, ডাকেন। এবং এরকম সব্যসাচী লেখক, রূপকার বাংলা সাহিত্যে বিরল। সংষ্কৃতির এত শাখায় বিচরণ এই মানুষটির, ভাবলে অবাক হতেই হয়। যা অনেকের জন্যে অবাক করে দেয়, সৈয়দ হক তাই সৃষ্টি করেছেন একের পর এক। সেই কবি, সেই লেখক অসুস্থ এখন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সমাজের নানান স্তরের মানুষ বিচলিত, হওয়ারই কথা। কবির শুশ্রুষা চলছে। ডাক্তার, নার্স, ঔষুধ কবির চৌদিকে পাহারা বসিয়েছে। দেশের গণমাধ্যম সৈয়দ হকের অসুখ কিম্বা চিকিৎসা নিয়ে বেশ সতর্ক। যদিও তাদের এই সতর্কতার মধ্যে একটি ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মনোবৃত্তি লুকিয়ে অাছে। সমকালীন বাংলাভাষার এত বড় এক সম্পদ, সৈয়দ শামসুল হক, এই সম্পদের শক্তি তো ভালো করেই জানে গণমাধ্যমের লোকেরা। ফলে, তারা একটু বাড়তি লেন্স তাক করে রেখেছে হাসপাতালের রোগী সৈয়দ শামসুল হকের দিকে। এসব অামার চোখ এড়াচ্ছে না। সোসাল নেটওয়ার্কের রিপার্কেশন এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী, সেখানে তরুণরাই লিড করে। ফেসবুকসহ নানারকম অনলাইন ব্লগেও সৈয়দ হকের রোগব্যাধির খবর নিয়ে সবাই টানটান নজর রাখছে। এও সত্য, এতে করে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিচ্ছে সবাই। এটা সফল শ্রষ্ঠার সৃজন কর্তৃত্বের খেলা। সৈয়দ শামসুল হক অামাদের দেখা এমন এক কবি বা নাট্যকার বা ঔপন্যাসিক বা গল্পের লেখক, তাঁকে সৃজনে ঈর্ষা করার সমতুল্য বর্তমান বাংলা সাহিত্যে অার তো কেউ নেইই। অাগেই বলেছি, সফল চাষা তিনি, বাংলা সাহিত্যে। তাঁকে অামাদের শ্রদ্ধা জানাই। শিগগিরই তিনি সুস্ত হয়ে বাড়িতে ফিরবেন, এটা খুব চাই। কারণ, হক ভাইয়ের সঙ্গে অামার কিছু কাজ রয়ে গেছে। তিনি সুস্থ হয়ে ফেরার পরই অামি তাকে নিয়ে সেই কাজ সমাপ্ত করতে চাই। সেই কাজ, সিনেমা বানানো। সিনেমার নাম, খেলারাম খেলে যা, যেটা সৈয়দ হকের সবচেয়ে নন্দিত-নিন্দিত-বিতর্কিত-বেশি পঠিত সাহসী উপন্যাস।


অামি খেলারাম খেলে যা নিয়ে ছবি বানাব, এ নিয়ে হকের সঙ্গে দুতিন বছর অালাপ-অালোচনা চলছে। এমনিতেই এই কবির সঙ্গে অামার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্কের বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেকবছরের লেখালেখির পাঠশালায়। অামি তাঁর লেখার ভক্ত পাঠক মাত্র। শিখি তাঁর কাছে। লেখাকে, মানুষের জীবনকে দেখা শিখি তাঁর সঙ্গে অাড্ডা দিতে দিতে। এ অামার ভাল্লাগে। অামি একটি সাহিত্য-সংষ্কৃতির সংকলন 'সামান্য কিছু, ইংরেজিতে যার নাম, 'অ্যা লিটল বিট'-এর সম্পাদক। 'সামান্য কিছু'র একটি সংখ্যাই প্রকাশিত হয়েছে ২০১৩ তে, সেটা সৈয়দ শামসুল হক স্মারক সংখ্যা। সৈয়দ হকের ৭৯ তম জন্মদিন উদযাপন করেছিলাম বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে, 'সামান্য কিছু' সেই অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রকাশিত। ক্রাউন সাইজ, ২৫ ফর্মা। সৈয়দ হক অামাদের সেই অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত নায়কের মতো উপস্থিত থেকেছেন, যেভাবে তিনি বাংলা সাহিত্যেও নায়ক হয়েই অাছেন।


অামি 'খেলেরাম খেলে যা' উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্য শুরু করলাম। এই নিয়ে হক ভাইয়ের সঙ্গে অামার অালোচনাও হলো কয়েকপ্রস্থ। সৈয়দ হক জানালেন, '১৯৭০ এ 'সন্ধানী'তে প্রকাশের পরপরই জহির রায়হান উপন্যাসটি নিয়ে ছবি বানাতে চেয়েছিলেন এবং এরপর অার কেউ এটিকে নিয়ে ছবি বানাবার কথা বলেননি তাঁকে। প্রায় চারদশক পর অামি ফের ছবি বানানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম। কিন্তু অামি 'খেলারাম খেলে যা' উপন্যাস থেকে চিত্রনাট্য শুরু করলাম বটে, অর্থাৎ বাবর অালী অাখ্যানকে চিত্রনাট্যে ধরলাম বটে, এ নিয়ে একদিন হক ভাইকে বললাম, 'খেলারাম খেলে যা' নিয়ে ছবি বানাব বটে, বাবর অালীর মনোজগৎ-বহির্জগৎ প্রজেকশন করা হবে বটে, বাবর অালীর গার্লফ্রেন্ডদেরও দর্শক দেখবে বটে, কিন্তু অামি একটু এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই।'
সৈয়দ হক জানতে চান, 'কি রকম?
তাঁকে বলেছি এবং অামার চিত্রনাট্য অামি যেভাবে গড়েছি যে, বাবর অালীকে দেখানো হবে ১৯৭০ সালের ঢাকা শহরের একটি চরিত্র হিসেবে যেমন, তার সঙ্গে স্ক্রিনে দর্শক দেখতে পাবে বাবর অালীর নির্মাতা স্বয়ং সৈয়দ শামসুল হককেও। অর্থাৎ সৈয়দ হককে স্ক্রিনে থাকতে হবে প্রামাণ্য চরিত্র হিসেবে। হক ভাই বললেন, 'তোমার চিত্রনাট্য লেখা শেষ হলে দেখিও তো।'
চিত্রনাট্য লেখা শেষ। সরকারি অনুদানের ছবি শহীদুল জহিরের 'কাঁটা' নির্মাণে সময় বিলম্ব হওয়ায় অামি 'খেলারাম খেলে যা'র চিত্রনাট্য কম্পোজের পর প্রিন্ট অাউট করিয়ে হক ভাইয়ের কাছে যেতেও পারছি না, এ নিয়ে অামার মধ্যে একটা চাপ তৈরি হয় বা হচ্ছে। হলেও, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত 'কাঁটা' শেষ না করে তো অামি বেরুতেও পারছি না। একদিন কথায় কথায় হক বললেন, 'হুম, 'কাঁটা' শেষ করো। মাধ্যমটি তো অামার অজানা নয়।'

হক ভাই এও বললেন, 'তোমার খেলারাম খেলে যা' চিত্রনাট্যে অামাকে স্কৃিনে রাখতে চাও, রেখো, বেশি রেখো না। ধকল তো!'

প্রথম কথা, অাদ্যোপান্ত সৈয়দ হকের উপরে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছে দুজন ছেলেমেয়ে। তারা গুলশানের চমৎকার বাড়িতে এসে এসে হকের উপরে ক্যামেরা ফেলে কাজ করছে। এই দুজন কি শুধুই দুজন সহকর্মী? না, দেখে তা মনে হয় না। বাড়তি সম্পর্ক অাছে তাদের। সেই বাড়তির নাম, ভালোবাসা। ভালোবাসাই তো সব। সৈয়দ হকের উপরে ডকুমেন্টরি করতে অাসা যুবক-যুবতী, তারা হয়তো প্রেমিক-প্রেমিকাও এবং তারা সৈয়দ হকের লেখার ভক্ত। তারা ডকুমেন্টরি করতে সৈয়দ হককে বাড়ির ভেতরেও ক্যামেরায় ধরে, কখনো কখনো তারা হক সাহেবকে নিয়ে বাড়ির বাইরে যাবে। বিউটি বোর্ডিং যাবে? হ্যা, যাবে। সেকালের বুড়িগঙ্গায় যাবে? যাবে। কিন্তু সেটা পাবে কোথায়? তা নির্মাতারা জানে। নির্মাণ করে নেবে। নির্মাতা তো এই জন্যেই। যেরকম, সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যের এক বড় নির্মাতা। তো সেই ছেলেমেয়ে 'সৈয়দ হক-প্রামাণ্যচিত্র' নির্মাণকালিন 'খেলারাম খেলে যা' প্রসঙ্গে গিয়ে বাবর অালীতে মজে যাবে। বাবর অালী তো সেভেনটিজ থেকে এখন পর্যন্ত পাঠকের কাছে এমন এক ফেনোমেনা প্রোটাগনিস্ট, যার প্রতি পর্যবেক্ষণ অামাদের বাড়িয়ে দিতেই হয়। সে অধ্যায়ে একাধিক নারীর সঙ্গে বাবরের যৌনতা হাজির, তীব্রভাবেই। অাবার দেশভাগও সেখানে একটা ফ্যাক্টর। ফলে, হলো কি? সৈয়দ হক নিজেই কি বাবর অালী--এই লক্ষ পাঠকের প্রশ্নও ক্যারি করছিল প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতারা। সৈয়দ হক নারীদের কাছে এক যাদুকর। বাবর অালীর মধ্যেও সেই যাদুর শক্তি দেখা যায়। তাই যে প্রশ্নে সৈয়দ হককে ঘায়েল করতে চেয়েছিল মেয়েটি, ডকুমেন্টরি করতে অাসা এই মেয়েটিও প্রেমে পড়ে গেল ফের, সৈয়দ হকের। এই নিয়ে তার ছেলে বন্ধুর কী গোস্বা! শুরু হলো কী তার দহন! ফলে, তাদের যৌথভাবে 'সব্যসাচী সৈয়দ হক' প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে গতি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। বলা যায়, ভালোবাসা এসে বাঁধা দেয় কাজে। ভালোবাসা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায়...

এই অবস্থায় 'খেলারাম খেলে যা' চিত্রনাট্য এগিয়েছে। এমন কি ১৯৭০ সালের প্রোটাগনিস্ট বাবর অালীর সঙ্গে ২০১৬ কি ১৭ সালের, বয়সে ৮০ উত্তীর্ণ সৈয়দ হকের দেখা হবে এক নদীর ব্রিজের নিচে্য়। তাদের বাতচিৎ হবে। স্ক্রিনে। সৈয়দ হক সেখানে প্রণেতা, পিতা, বাবর অালী হচ্ছে প্রণয়ন। মজা অাছে। সৈয়দ হকের হাতে থাকবে সেলফোন। বাবর অালী সেলফোন দেখে মজা পায়। কারণ, ৭০ সালে সেলফোন ছিল না। কিন্তু বাবর ছিল ১৯৭০ সালে ঢাকা শহরে চল্লিশ ছুঁই প্রতিষ্ঠিত পুরুষ। যে ভালোবাসত না, কিন্তু নারীসঙ্গ ভোগ করত। হক ভাই খুব অানন্দিত, বাবর অালীকে মানুষ ছবিতে দেখবে। বললেন, 'তাইলে বলছ বাবর অালীর অস্তিত্ব এখনো অাছে?'
বললাম, অাছে। বাবর অালীর সংখ্যা বেড়েছে হক ভাই।'

হক ভাইয়ের বাসায় অাড্ডা অামার। লেখক অানোয়ারা সৈয়দ হক অামার অনেক অাপন জন, অামরা যশোরের মানুষ। সম্পর্ক বেশি। হক ভাইকে নিয়ে অানোয়ারা অাপার সঙ্গেও অামার কথা হয় মাঝেমধ্যে। তিনি লৈখকের স্ত্রী, পেশায় মনোরোগের ডাক্তার। মাঝেমধ্যেই অামাকে বলেন, 'বাসায় এসো তো। হক সাহেবের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না, তুমি এসে অাড্ডা দিলে উনি খুব নড়েচড়ে বসেন। অঅমিও যাই। হক ভাইয়ের সঙ্গে অাড্ডা মানেই অামার কিছু শেখার সুযোগ, কারণ এক জীবন্ত লাইব্রেরি তিনি। হকের বন্ধু জহির রায়হান, অালমগীর কবির, কাইয়ুম চৌধুরী, শামসুর রাহমান, সুনীল গাঙ্গুলি, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, অাবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। হকের বন্ধু অামিও, অামারও এক পিতৃতুল্য শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক বন্ধু সৈয়দ হক। অাই ফিল ইট। গতমাসে, কলকাতায়, রবীন্দ্রসদনে ছোটকাগজ 'অহর্নিশ' এর কুড়িবছর পূর্তির অনুষ্ঠানে 'জীবনানন্দ সভাঘর'এ কবিতা পড়ার ফাঁকে পাশে উপবিষ্ঠ শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, বললাম, 'হক ভাই তো লন্ডনে, শরীরে ক্যান্সার।' শঙ্খ ঘোষ বললেন, 'ফোনে কথা হয়েছে।' তো সেদিন কথায় কথায় বললেন, 'কি তোমার
'কাঁটা'র খবর কি?'
'চলছে'
'খেলরারাম খেলে যা'র কি অবস্থা?
'চিত্রনাট্যের কাজ এগুচ্ছে। অাপনাকে অ্যাক্টিং করতে হচ্ছে।'
হক ভাই হা হা করে হাসলেন। হাসতে হাসতেই বললেন, ধরো, কবে চলে যাই।'

এখন, অামি 'কাঁটা'র কাজ করছি। 'কাঁটা' শেষ করে 'খেলারাম খেলে যা' ধরব। হক ভাই তার প্রামাণ্য চরিত্রে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন। একদিন হক ভাই বললেন, 'অাচ্ছা, বাবর চরিত্রে কাউকে ভেবেছ?'
'খুঁজছি।'
'পেলে একদিন ওকে বাসায় নিযে অাসো, দেখি। কথা বলি।'

এরকমই এগিয়ে যাচ্ছি অামরা। এর মধ্যেই অসুখ, সৈয়দ হকের। কিন্তু অসুখ থেকে তাকে সুস্থ হতেই হবে। হক ভাই সুস্থ না হলে অামি 'খেলারাম খেলে যা' ধরব কিভাবে? চিত্রনাট্যে বিশেষ পরিবর্তন অানতে চাই না, হক ভাই। সেটা অাপনাকে বুঝতে হবে। তা না হলে অামি বাবর অালীকে ধরব কীভাবে?

কিন্তু হক ভাই চলে গেলেন অামাদের ছেড়ে। অামরা তাকে ধরে রাখতে পারলাম না। অামিও তাকে ক্যামেরায় ধরতে পারলাম না। তিনি চলে গেলেন ২৭ সেপ্টেম্বর। অামি হাসপাতালে গেলাম ২৫ সেপ্টেম্বর, কিন্তু দেখা হয়নি। অানোয়ারা সৈয়দ হক, লেখকের স্ত্রী কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে জানালেন, শরীরের অবস্থা এখন একটু একটু বেশি খারাপ। তুমি দিনের বেলায় নন-ভিজিটিং অাওয়ারে অাসো। তোমার হক ভাইকে দেখে যেও। পরদিন যেতে পারিনি। তারপরদিন বিকালেই তিনি অামাদের ছেড়ে চলে গেলেন। সৈয়দ হক চলেই গেলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর তাকে সমাহিত করা হলো কুড়িগ্রামে, কবির জন্মতীর্থে।

হক ভাই, 'খেলারাম খেলে যে' চিত্রনাট্যে পরিবর্তন অানতেই হবে অাপনার অনুপস্থিতিতে। অাপনাকে তো অার লাইভ পাচ্ছি না। সেটা না হয় অানলাম অগত্যা। কিন্তু অামার কানে চিরকাল বাজবে ওই শব্দ, 'ধরো, কনে চলে যাই।'

অার কষ্ট পেতে থাকব। কারণ, ভালোবাসলে তো কষ্ট পেতেই হবে, মেনে নিয়েছি। অামি সারাজীবন জানব, বাতাসে অাপনার কণ্ঠস্বর বাজছে, ধরো, কনে চলে যাই।'

১.১০.২০১৬, ঢাকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.