নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৩২ পৃষ্ঠায় খড়, ৩৩ পৃষ্ঠায় অাগুন

টোকন ঠাকুর

কবিতা গল্প লিখি, ছবি আঁকি-বানাই, একাএকা গান গাই...

টোকন ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাসুক হেলালের \'মুখ ও মুখোশ\' গ্রন্থাকারে প্রকাশিত

১২ ই মে, ২০১৭ ভোর ৪:৫০

মাসুক হেলালের 'মুখ ও মুখোশ' গ্রন্থাকারে প্রকাশিত
টোকন ঠাকুর


গতশতকের অাশির দশক এমনকি নব্বুই দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত 'দৈনিক বাংলা' হাউস থেকে প্রকাশিত 'অানন্দ বিচিত্রা'ই ছিল দেশের প্রধানতম বিনোদন ম্যাগাজিন। অামরা পড়তাম, ঢাকার বাইরে বসে। 'অানন্দ বিচিত্রা' ছিল অার্ট কলেজ থেকে পাশ করা এবং ১৯৭১ সালের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ চৌধুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক 'বিচিত্রা'র সহযোগী পাক্ষিক প্রকাশনা। শাবানা, ববিতা, সুচরিতা, রাইসুল ইসলাম অাসাদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, হুমায়ুন অাহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, অাফজাল হোসেন...মূলত টেলিভিশন-সিনেমার লোকেদের সৃজনকর্ম-জীবনকাহিনী-গসিপিং ছবিসহ ছাপা হতো 'অানন্দ বিচিত্রা'র পাতায়। অামাদের বালকবেলার পুরোটা জুড়েই তো উন্মাতাল অাশির দশক, পাড়ার বড় ভাইদের জেনারেল এরশাদ বিরোধী অান্দোলন, গান, গল্প-কবিতা-অাবৃত্তি-পথ নাটক-মঞ্চ নাটক, ছবি অাঁকা, দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার-চিকা...অার এর মধেও রাজ্জাক-কবরী, অাল মনসুর, লুৎফুন নাহার লতা, অঞ্জু ঘোষ, হাশেম খান, রফিকুন নবী, কাইয়ূম চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ুন অাজাদ, সেলিম অাল দীন, অাবুল হাসান, নির্মলেন্দু গুণ, ফরহাদ মজহার, অাহমদ ছফা, এসএম সুলতান, বিড়ি-সিগারেট, শ্মশানঘাটে রাত্রিবেলায় একটা-দুইটা পুরিয়া, মাঝেমাঝে কম দামের পানি খাচ্ছিলাম এবং মফস্বলে বসেও ঢাকার দিকে নজর রাখছিলাম। অনেক কিছুর মতো চম্পা-শম্পা রেজার দিকেও বা বলা যায় বিনোদন ম্যাগাজিন বলতে 'অানন্দ বিচিত্রা'র দিকেও যে নজর রাখছিলাম, সেই কারণেই, সেই মিড-এইটটিজ মানে অামাদের মহান ইচড়েপাকা সোনালি বালকবেলা থেকেই অামরা, অামরা মানে এই অামি বা অামার বন্ধুরা, তাকে চিনি। তাকে বলতে সেই অার্টিস্টকে। অার্টিস্টের নাম মাসুক হেলাল। তখনকার তরুণ তারকাদের পোর্ট্রেট অাঁকতেন মাসুক হেলাল। হয়তো অাঁকলেন তরুণ অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর 'বর্তমান' (এই 'বর্তমান' বলতে অাশির দশক) বয়েসী মুখ এবং হুমায়ূন ফরিদীর যখন ষাট-পয়ষট্টি বছর বয়স হবে, তখনকার কল্পিত বৃদ্ধ ফরিদীর মুখ। মাসুক হেলালের অাঁকানো একই তারকার তরুণ ও কল্পিত বৃদ্ধ মুখ বা পোর্ট্রেট পাশাপাশি ছাপা হতো 'অানন্দ বিচিত্রা'র পাতায়। সেই সঙ্গে শিল্পীর লেখা কিছু একটা থাকত সেখানে, ছো্ট্ট গদ্য। অামরা পড়ে ভারি মজা পেতাম। তখন তো অার ব্যক্তিগত মাসুক হেলালকে চিনতাম না, মাসুক হেলালও একজন তারকা শিল্পী। তারপর সেই 'অানন্দ বিচিত্রা'যুগ পার হয়ে গেল। মিডনাইনটিজে তো পাক্ষিকটা দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা'র সঙ্গে বন্ধই হয়ে গেল। কিন্তু মাসুক হেলালের অাঁকাঅাঁকি তো অার বন্ধ হবার নয়, বইয়ের প্রচ্ছদ করে যাচ্ছেন তিনি শতসহস্র,সিনেমায় শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন। অাঁকার মাধ্যেমে ছোট ছোট করে নিরীক্ষায় তার হাতে সক্রিয় অাছে।

পরবর্তীতে শেখ রেহানা সম্পাদিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা'তেও তিনি কাজ করেছেন সাংবাদিক বেবী মওদুদের সঙ্গে। কিন্তু মাসুক হেলাল ঠিক তার 'অানন্দ বিচিত্রা'র সৃষ্টিশীল ভঙ্গিটা যেন ফিরে পাচ্ছিলেন না। বাংলা দৈনিক প্রথম অালো'তে এখন কাজ করছেন মাসুক হেলাল। অাবার দেখছি তিনি ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন, বাঁক নিচ্ছেন। কাগজটিতে সুন্দর সুন্দর অলঙ্করণের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন্ সময়ে দেশের প্রত্যন্তের কোনো সাধারণ মানুষের মুখ এঁকেছেন, সেই মানুষটার সঙ্গে সুখ-দুঃখের গল্প করেছেন, সেই গল্প টুকে নিয়ে লিখে তার অাঁকা মুখটা দৈনিক প্রথম অালোতে ছাপা হয়ে অাসছে দীর্ঘদিন ধরে। এরকম মুখের অাঁকানো প্রতিকৃতি ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে তার অসংখ্য। ড্রইংবেইজড সেই অসংখ্য পোর্ট্রেটের গল্পগুলো বাছাই করে প্রকাশিত হয়েছে যার প্রচ্ছদে ছাপা অাছে 'বাছাই, মুখ ও মুখোশ' 'অাঁকা ও লেখা মাসুক হেলাল'। ড্রইং দিয়েই যে কীভাবে একটি মুখের ভাষা ধরা যায়, তা দক্ষ হাতে এঁকেছেন শিল্পী মাসুক হেলাল। খুবই সৃদৃশ্যমানের, ভালো কাগজ-ছাপা-বাঁধাই হয়েছে 'মুখ ও মুখোশ' গ্রন্থটির। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী অাফজাল হোসেন। বইটার একটা চমৎকার ভূমিকা লিখেছেন শিল্পী রফিকুন নবী। ফ্ল্যাপের ছোট্ট লেখাটি লিখেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। মাসুক হেলালও শিল্পীর বংশধর।

'মুখ ও মুখোশ' অাঁকা-লেখাগ্রন্থের কনটেইন্টও খুব মজার। যেমন, 'রমিজ রওশনের নাটুকে জীবন' 'সুরত অালীর চপ-বেগুনি' 'পথের মানুষ রেবেকা' 'রাশেদ রানার প্রেম' 'মসলা পেটেন মমতাজ নূরী', নাগরিক নাওয়ের মাঝি' 'পালাগানের শিল্পী শেফালি' পাখিওয়ালা ফিরোজ মিয়া' 'গেটলক বাসের চালক রকিব' 'শাখাশিল্পী নারায়ণচন্দ্র ভদ্র' 'রাহেলা বেগমের পইখ-পাখি' ...এই রকমের একশো ত্রিশটা অার্কিটাইপো মানুষের অাঁকানো মুখ ও তাদের থেকে কুড়িয়ে নেওয়া জীবন্ত গল্প। এতে উঠে এসেছে একদম সহজ-সরল মানুষের জীবনের ছাপচিত্র। নিঃসন্দেহে মাসুক হেলালের এই বাছাই 'মুখ ও মুখোশ' ব্যয়বহুল গ্রন্থটি প্রকাশ করে পারিজাত প্রকাশনী একটি ভালো প্রকাশনা উপহার দিল অামাদের। যে কোনো গ্রন্থপ্রেমিকই উৎসাহী হবেন বইটি হাতে পেতে, পড়তে, দেখতে। ভালো পোর্ট্রেট অাঁকাতে চাওয়া তরুণ অাঁকিয়েদের জন্যেও বইটি সংগ্রহযোগ্য বলে বিবেচিত হবে দেখামাত্রই। অামি অবশ্য মাসুক হেলালের কাছ থেকে 'মুখ ও মুকোশ'এর এক কপি উপহার পেয়েছি ব্যক্তিগত সম্পর্কের বুনিয়াদে। তাই বলে তো প্রকাশক এই বই প্রকাশ করেই লাটে উঠে যেতে পারে না, সেদিকটাও দেখা দরকার।

এই সুদৃশ সাইজের বইটির ভূমিকায় লেখক-শিল্পী মাসুক হেলাল জানাচ্ছেন, 'অামার মা চোখে ভালো দেখতেন না। অামার 'মুখ ও মুখোশ' লেখাটি পত্রিকায় বেরুলে অামার বউ মাকে পড়ে শোনাতেন। অনেক সময় 'মুখ ও মুখোশ'-এর পাত্রপাত্রীদের বাসায় ধরে নিয়ে অাসতাম। তাদের ছবি অাঁকতাম, ইন্টারভিউ নিতাম। অামার মা খুব যত্ন-অাত্মি করতেন। খাওয়াতেনও। অামার বউ টাকা-পয়সা দিতেন। 'মুখ ও মুখোশ' বেরুচ্ছে অধচ মা নেই, বউও গেছেন তার পিছু পিছু। বাবা গেছেন তা্রও অাগে। অামার দশ বছরের মেয়ে চর্যা সারাদিন একা বাসায়। রাতে বাসায় গিয়ে দেখি তার মা'র জন্যে কাঁদতে কাঁদতে সোফায় ঘুমিয়ে অাছে। তোমরা থাকলে অার চর্যার জীবনটা এরকম হতো না। তোমরা ভালো থেকো।'

বাছাই 'মুখ ও মুখোশ' এর মূল্য ৫০০ টাকা। কমিশন অাছে হয়তো, অামি ঠিক জানি না। এ জাতীয় প্রকাশনাতে কমিশন রাখাও মুশকিল। প্রোডাকশন মূল্য বেড়ে যায়। অার্ট-গ্লোসি পেপারে ছাপা হওয়া 'মুখ ও মুখোশ' গ্রন্থের জনক শিল্পী মাসুক হেলালকে ধন্যবাদ, এমন সুন্দর একটি কাজ পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার জন্যে। পরিশ্রমী ও ব্যয়বহুল কাজ। ধন্যবাদ পারিজাত প্রকাশনীকে। এবং শেষ ধন্যবাদ দেব, যারা বইটি সংগ্রহ করে অানন্দ পাবেন, তাদের, পাঠকের, দর্শকের...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৭ ভোর ৪:৫৬

মাসুক আলম নোটন বলেছেন: - ভাই আমার নামে?! :`>

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.