নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানি লন্ডারিং মামলা কি? মানি লন্ডারিং মামলা কেন হয় এবং মানি লন্ডারিং(Money laundering) হলে আসামী হিসেবে আপনার করণীয়

২৯ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩৪


মানি লন্ডারিং(Money laundering) কি?
যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে সেই সম্পদের আংশিক বা পূর্ণ অংশ রুপান্তর বা এমন কোন বৈধ জায়গায় বিনিয়োগ করা হয় যাতে করে সেই বিনিয়োগকৃত সম্পদ থেকে অর্জিত আয় বৈধ বলে মনে হয়, তাকে আর্থোশোধন বা মানি লন্ডারিং বলা হয়। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।

সাধারণত, এক খাতের টাকা আরেক খাতে নিয়ে, সেই টাকা আবার আরেক খাতে নিতে নিতে বিষয়টি এমন দাড়ায় যে মূল উৎস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে যায়। ফলে আইনের লোকজনের পক্ষে অবৈধ উৎসটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। মানে মানি লন্ডারিং হলো অবৈধ বা কালো অর্থকে লেনদেন চক্রের মাধ্যমে বৈধ করা বা স্বচ্ছতাদান করার একটি প্রক্রিয়া। অন্য কথায় সংগৃহিত অর্থের উৎস গোপন করে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উক্ত তহবিলকে পর্যায়ক্রমে বৈধ আয় হিসেবে পরিগণিত করা। অর্থাৎ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে যে সব অর্থ আসছে সেগুলিকে ব্যাংকের মাধ্যমে ডিডি, টিটি, এমটি করে অথবা বিভিন্ন নামে এ্যাকাউন্ট খুলে তা পরবর্তীতে অন্য কোথাও বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করার যে প্রক্রিয়া তাকে মানি লন্ডারিং বলে।

মূলত অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে তবে সে আয়ের উৎস গোপন করা এবং বৈধ অর্থনৈতক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই মানি লন্ডারিং করা হয়ে থাকে।

**যেসব কারণে মানি লন্ডারিং মামলা হয়ে থাকেঃ-

(১) দেশের বিদ্যমান আইনের ব্যত্যয় ঘটাইয়া দেশের বাহিরে অর্থ বা সম্পত্তি প্রেরণ বা রক্ষণ করলে ; বা

(২) দেশের বাহিরে যে অর্থ বা সম্পত্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রহিয়াছে যাহা বাংলাদেশে আনয়ন যোগ্য ছিল তাহা বাংলাদেশে আনয়ন হইতে বিরত থাকিলে; বা

(৩) বিদেশ হইতে প্রকৃত পাওনা দেশে আনয়ন না করা বা বিদেশে প্রকৃত দেনার অতিরিক্ত পরিশোধ করলে ; এসব কর্মকান্ড মানি লন্ডারিং হিসেবে বিবেচিত হইবে।

আইনের ভাষায় মানি লন্ডারিং এর সহজ সংজ্ঞাটা হলো এমন-

** বৈধ বা অবৈধ সম্পত্তি জ্ঞাতসারে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তরঃ

** অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন বা ছদ্মাবৃত্ত করা; অথবা

** সম্পৃক্ত অপরাধ সংগঠনে জড়িত কোন ব্যক্তিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ হইতে রক্ষার উদ্দেশ্যে সহায়তা করা;

** বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিদেশে পাচার করা;

** জ্ঞাতসারে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করিবার উদ্দেশ্যে উহার হস্তান্তর, বিদেশে প্রেরণ বা বিদেশ হইতে বাংলাদেশে প্রেরণ বা আনয়ন করা;

** কোন আর্থিক লেনদেন এইরূপভাবে সম্পন্ন করা বা সম্পন্ন করিবার চেষ্টা করা যাহাতে এই আইনের অধীন উহা রিপোর্ট করিবার প্রয়োজন হইবে না;

**সম্পৃক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচিত করা বা সহায়তা করিবার অভিপ্রায়ে কোন বৈধ বা অবৈধ সম্পত্তির রূপান্তর বা স্থানান্তর বা হস্তান্তর করা;
**সম্পৃক্ত অপরাধ হইতে অর্জিত জানা সত্ত্বেও এই ধরণের সম্পত্তি গ্রহণ, দখলে নেওয়া বা ভোগ করা;

**এইরূপ কোন কার্য করা যাহার দ্বারা অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করা হয়;

** উপরে বর্ণিত যে কোন অপরাধ সংঘটনে অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ত থাকা, অপরাধ সংঘটনে ষড়যন্ত্র করা, সংঘটনের প্রচেষ্টা অথবা সহায়তা করা, প্ররোচিত করা বা পরামর্শ প্রদান করা;

** নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক বা ডিজিটালসহ অন্য যে কোন প্রকৃতির দলিল বা ইন্সট্রুমেন্ট যাহা কোন সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব বা মালিকানা স্বত্বে কোন স্বার্থ নির্দেশ করে;

এসব অপরাধে কেউ সম্পৃক্ত হলে এবং তদন্তে ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করা হয়। আইনে ৪ থেকে ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ধারা অনুযায়ী ।

** মানি লন্ডারিং এর তদন্ত কার্যক্রমঃ

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলা আগে তদন্ত করত শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু তদন্ত নয়, মামলা দেখাশোনাও করত দুদক। তবে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশের পর থেকে দুদুকসহ পাঁচটি সংস্থা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায়। দুদক ছাড়া অপর চারটি সংস্থা হলো- পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
-মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নামে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট প্রতিষ্ঠান বিধান রাখা হয়েছে আইনে।


মানি লন্ডারিং(Money laundering) মামলা হলে আপনার করণীয় কি?

মনে রাখতে হবে, আপনি অপরাধী, না নিরপরাধ, সেটি মামলায় অভিযুক্ত হলেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। আইনের চোখে আপনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিরপরাধ। ধরুন, আপনার বিরুদ্ধে একটি মানি লন্ডারিং(Money laundering) মামলা হলো, আপনি দোষী বা নির্দোষ, সেটি পরে প্রমাণিত হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে আপনি যেন এ মামলা সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে পারেন, সেই চেষ্টা করতে হবে। যদি আপনার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং(Money laundering) মামলা হয়, তাহলে এজাহারের কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করুন। মামলার এজাহারে দেখতে হবে।
অভিযোগ তেমন গুরুতর না হলে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারেন (মানি লন্ডারিং-Money laundering মামলা মানেই গুরুতর অভিযোগ!) ।আবার আপনি চাইলে হাইকোর্ট বিভাগে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই নিম্ন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হয়। আদালতে প্রতি তারিখে হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আপনার জামিন বাতিল করে দিতে পারেন আদালত। আগাম জামিন সাধারণত পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার আগেই চাইতে হয়। তবে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আপনার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে, তা প্রমাণের চেষ্টা করুন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন। চার্জশিট বা অভিযোগপত্র হয়ে গেলে আপনার মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি হবে। অভিযোগ গঠনের দিন আপনাকে হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। তখন আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।

মনে রাখতে হবে,
আইনের চোখে আপনার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিরপরাধ এবং অবশ্যই মামলা হলে আইনীভাবে লড়তে হবে। যথাযথভাবে আপনার যুক্তি উপস্থাপন করতে পারলে আপনি কবকুসুর খালাসও পেতে পারেন। আবার আইনে ৪ থেকে ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ধারা অনুযায়ী এবং আপনার বিনা উপস্থিতিতে মামলা পরিচালিত হলে আপনি সর্বেোচ্চ সাজাও পেয়ে বেসতে পারেন। সুতরাং, মামলা হলে অবশ্যই একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর শরণাপন্ন হোন।

- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইনজীবী
০১৭৩৩৫৯৪২৭০
[email protected]


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৩৭

মোগল সম্রাট বলেছেন: গত ১০ বছর যাবৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় দেশের সব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রায় প্রতি বছর মানি লন্ডারিংয়ের উপর লাগাতার প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। তারপরও শুনি ফরিদপুরের ওমুক এক পাতি নেতা এতো হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। সে বিষয়ে কিছু লেখেন। বিদ্যমান আইনের কি কি লিমিটেশন দেখা যাচ্ছে। সেগুলো বন্ধ করার সুপারিশ গুলো কি কি হতে পারে?

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১১

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
দুর্নিতিবাজরা বাদেও সাধারন প্রবাসিরা আইনত কোন টাকা দেশের বাহিরে পাঠাতে পারে না।
বৈধ অর্থ হলেও আইনত যে কোন অর্থ বাহিরে পাঠালেই সেটা পাচার হিসেবে গন্য হয়।
দেড়-দুই কোটি মানুষ দেশের বাহিরে থাকে।
অনেকেই ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকায় ভাল অবস্থান নিয়ে আছে। বাংলাদেশে যত ইচ্ছা ডলার আনা যায়। কিন্তু বৈধ ভাবে কোন অর্থই বিদেশে নেয়া যায় না।
অনেকেই বৈধ অর্থ প্রপার চ্যানেলে পাঠাতে ব্যার্থ হয়ে হুন্ডি ইত্যাদি ভিন্ন রাস্তায় পাঠায়।
পাচারের অর্থের পরিমান বড় হওয়ার এটাও একটি কারন।
২০১৯ এ আমার একটি লেখা view this link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.