নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পত্তির মালিক হয়েও যে সব ভুলের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৩৮


ক্রয় সূত্রে বা উত্তারাধিকার সূত্রে সম্পত্তির মালিক হলেই হয় না বরং মালিকানা অর্জনের পর কিছু নিয়ম কানুন আছে। এসব নিয়ম কানুন না মানার ফলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। জমি/ফ্ল্যাট/প্লট ক্রয়ের আগে যেমন কিছু করণীয় আছে তেমনি জমি যে কোন দলিলের মাধ্যমে বা উত্তরাধিকার সুত্রে জমি প্রাপ্তির পর কাজ শেষ হয়ে যায় না। জমি ক্রয়ের পরে/মালিকানা অর্জন করার পর কেনার পর করণীয় গুলো হল:

১) সম্পত্তিটি পরিমাপ করে সীমানা বুঝে নিনঃ
জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে একজন অভিজ্ঞ আমিন দ্বারা সম্পূর্ণ জমি পরিমাপ করে জমির পূর্বের মালিকের কাছ থেকে দখল বুঝে নিতে হবে। জমি মাপার সময় ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয় সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।

২) সম্পত্তির দখল প্রতিষ্ঠা করুনঃ

সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিতকরণের জন্য তথা জমিতে আপনার দখল প্রতিষ্ঠার জন্য জমির প্রকৃত ব্যবহার তথা চাষাবাদ, গাছপালা রোপন, ঘরবাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি করুন।এমনকি সাইনবোর্ড দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে যে, আমি এই জমির বর্তমান মালিক।

৩) মালিকানার দলিল সংগ্রহ করুনঃ

রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল সংগ্রহ করতে হবে এই ক্ষেত্রে মূল দলিল পেতে দেরি হতে পারে। এজন্য যতক্ষণ না মূল দলিল হাতে পাওয়া যায় তার পূর্বে মূল দলিলের অনুলিপি বা নকল এর সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে নিতে হবে।

৪) সম্পত্তিটির নামজারির আবেদন করুনঃ

আপনি জমি ক্রয়ের পরেও জমির মূল মালিকের নাম কিন্তু বিক্রেতার নাম ই থেকে যায়। এই জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল নামজারির (mutation) আবেদন করতে হবে।দলিলের নকল প্রাপ্তির পর দ্রুত সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আবেদন করে নিজ নামে নামজারি/খারিজ (মিউটেশন) করুন, কারন দখল এবং নামজারি করতে দেরি করলে অসাধু বিক্রেতা আপনার ক্রয়কৃত জমি অন্যত্র বিক্রয় করতে পারে।

৫) নামজারি খতিয়ান, ডিসিআর, কর কপি সংগ্রহ করুনঃ

সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারি হলে নামজারি খতিয়ান নিতে হবে। সরকারি অন্যান্য খরচ বাবদ যে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে তার ডি,সি,আর(DCR) রশিদ এবং নতুন হোল্ডিং এ ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করে তার দাখিলার কপি সংগ্রহ করতে হবে। এইসব কাগজ এবং দলিলপত্র শুধু সংগ্রহ করলেই হবে না তা সংরক্ষণও করতে হবে।

৬) খাজনা পরিশোধ করুনঃ

নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করুন।

৭) মূল মালিক মারা গেলে ওয়ারিশগণ বন্টননামা করে নামজারী নিশ্চিত করুনঃ

নামজারিটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘নামজারি’ বলতে-কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় ভূমি/জমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নামে রেকর্ড আপটুডেট (হালনাগাদ) করাকেই নামজারি বলা হয়। কোন ব্যক্তির নামজারি সম্পন্ন হলে তাকে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী উল্লেখ থাকে। উক্ত হিসাব বিবরণী অর্থাৎ খতিয়ানে মালিকের নাম, কোন্ মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত হিস্যা ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।

নামজারি করা কখন প্রয়োজন হয়:

• ভূমি মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নাম সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়;

• জমি বিক্রি, দান, হেবা, ওয়াকফ, অধিগ্রহণ, নিলাম ক্রম, বন্দোবস্ত ইত্যাদি সূত্রে হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়;

• দেওয়ানী বা সিভিল কোর্টের রায় বা ডিক্রীমূলে মালিকানা লাভ করলে সে রায় মোতাবেক নামজারির আবেদন করা যায়।
নামজারি আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

একটি পূর্ণাঙ্গ নামজারি আবেদনের জন্য আপনার নিচের কাগজপত্রগুলি থাকতে হবে:

• মূল আবেদন ফরম্ (এটি বাধ্যতামূলক)

• ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্যও প্রযোজ্য) (বাধ্যতামূলক)

• সর্বশেষ খতিয়ান (যাঁর নিকট হতে জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তাঁর খতিয়ান) (এটি বাধ্যতামূলক) [খতিয়ানের একটি ফরম্যাট দেখতে এখানে ক্লিক করুন]

• ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি (বাধ্যতামূলক)

• ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত মূল ওয়ারিশন সনদ (শুধুমাত্র ওয়ারিশগনদের জন্য বাধ্যতামূলক)। এর সাথে মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩B ধারা মোতাবেক কোন রেকর্ডিয় মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশগণ নিজেদের মধ্যে একটি বন্টননামা সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি করবেন। উক্ত রেজিস্টার্ড বন্টননামাসহ নামজারির জন্য আবেদন জানাবেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য-বেশিরভাগ ওয়ারিশগণ এই নিয়মটি প্রতিপালন করেন না এবং ভবিষ্যতে সমস্যার মুখোমুখি হন।

• জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জাতীয়তা সনদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যুকৃত) (বাধ্যতামূলক)

• ক্রয়সূত্রে মালিক হলে দলিলের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (ক্রয়সুত্রে মালিক হলে বাধ্যতামূলক)

• বায়া/পিট দলিলের ফটোকপি (একাধিকবার উক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে সর্বশেষ যার নামে খতিয়ান হয়েছে তার পর থেকে সকল দলিলের কপি প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক)

• চলতি বঙ্গাব্দ (বাংলা সনের) ধার্যকৃত ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) বা খাজনার রশিদ (বাধ্যতামূলক)

• আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)

উল্লেখ্য, উপরোক্ত কাগজপত্রের সবগুলিই যে আপনার জন্য প্রয়োজন হবে, তা নাও হতে পারে। কোনভাবে আপনি মালিকানা লাভ করেছেন তার উপর নির্ভর করবে কোন্ কোন্ সংযুক্তি আপনার প্রয়োজন হবে



- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.