নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খ্যাপাটে , দেশকে নিয়ে স্বপ্নবাজ , উচ্চতা ভীতি এবং নারী ভীতি রয়েছে ।

জাবের তুহিন

নামেই আমার পরিচয়

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবছা নীল [গল্প]

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:০১

বাহিরে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে , বারান্দায় বসে সেই বৃষ্টির দিকে একাগ্র চিত্তে তাকিয়ে আছে অবনী । রেলিঙ্গে দু এক ফোঁটা পরে গাঁয়ে ছিটকে আসছিল । হাতের উপরে তেমন দু একটি বিন্দু ঢের জায়গা করে নিয়েছে । অন্যদিন হলে হয়তো বৃষ্টি এভাবে দেখা হয় না , দেখা হলেও এতো গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতে হয় না । আজও বিশেষ কোন দিন নয় । তবে আজকে বিশেষদিনের আগের দিন । কাল এমন দুপুর বেলা “বউ” সেজে বসে থাকতে হবে শত শত মানুষের সামনে । ক্যামেরার ফ্ল্যাশ চোখ ঝলসে দিবে ক্ষণে ক্ষণে । ভারী গহনা , বউয়ের বেনারসি শাড়ি – ছোটবেলার শখ আজ বড্ড বেরসিকভাবে বাস্তবতার রূপ পাচ্ছে । সকালে সারা গাঁয়ে হলুদ মাখালো , গোছল দিলো ।
চিন্তায় বাঁধ সাজলো রাফি , অবনীর ছোট ভাই । ক্লাস ফোরে পড়ে ।
“আপু ছাদে চল না , আজকে শেষবারের মতো ছাদে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজি ।”
অবনীর মা কোথা থেকে যেন দৌড়ে এলো ,
“ কাল বিয়ে আর আজকে ছাদে বউ ভিজতে যাবে । কি আবদার ? কোথাও যাবি না , ঘরে বসে থাক ।”
রাফির কথায় হয়তো অবনী রাজি হতো না কিন্তু মায়ের বারণ শুনে কেন যেন ভিজতে ইচ্ছা করছে , বিছানা হতে ওড়নাটা টুকে নিয়ে রাফির সাথে বেরিয়ে গেলো । অবনীর মা আর কিছুই বললো না , হয়তো এমনটি হতে পারে তার চিন্তাতেই ছিল না ।
ছাদে কেউই ছিল না । ওরা দুই ভাই-বোন বেশ কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলো । ইচ্ছা ছিল বৃষ্টির তীব্রতা কমলে ফিরে আসবে অথচ বৃষ্টির থামার কোন নাম গন্ধই নেই ।
বোনের বিয়ে উপলক্ষে ছোট ভাইয়ের আনন্দ দেখে কে । ও আরেকটু বড় হলে হয়তো বিয়ের দিনের আনন্দের মলাটের নিচে লুকিয়ে থাকা দূরে সরে যাওয়ার কষ্টটাও অনুভব করতো ।
বাসায় এসে অবনী আবার গোসল সেরে নিলো , একদিনে বেশ কয়েকবার গোছল করা হয়ে গেলো এই নিয়ে ।
ওর ঐ পুরোদিন বাসার সাথে যে অলিখিত বিচ্ছেদ ঘটতে চলছে তা চিন্তা করেই কেটে গেলো , বর নিয়ে কোন চিন্তাই ওর নেই । যেমনই হোক মানিয়ে নিবে ধরনের সিদ্ধান্ত আগেই নিয়ে রেখেছে ।
বিয়ের দিন ,
অবনীর বাবা সরকারী চাকরিজীবি হিসেবে বেশ সময় মেনে চলেন । ২ টার দিকে সবাইকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার কথা তাই হয়েছেন । মেয়েকে পার্লার থেকে গাড়ি করে নিয়ে গেলেন ২:৩০ টার মধ্যে কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে গেলেন ।
বরাবরের মতোই বর যাত্রী দেরি করে এলো , হৈ-হুল্লোড় হলো । রাফিটা দুলাভাইকে পেয়ে যেন খুশিতে আটখানা । অবনী পুতুল সেজে স্টেজে বসে আছে । হালকা বিরক্তির ছাপ চোখে মুখে স্পষ্ট ।
ও আচ্ছা , বরের নাম কৌশিক । কোন একটা ভার্সিটির লেকচারার যেন । ভদ্রলোকের মুখে কৃত্তিম হাসি , দেখেই বোঝা যায় । কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজী তার কাজ সম্পন্ন করে চলে গেলেন । বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে বর আর কনেকে পাশাপাশি বসানো হলো ।
চারদিকে হাসির ধ্বনি । এরপর “ফটোসেশন” শুরু , একেরপর এক দল স্টেজে উঠছে ছবি তুলছে ।
এক ফাঁকে কৌশিকের ছোটবোন শিরিণ কি কাজে ফটোগ্রাফারকে ডেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেলো । স্টেজে যারা ছবি তুলতে উঠেছিল তারা মন বেজার করে আবার নেমে গেলো ।
অবনীর হাতে টোকা দিয়ে কৌশিক ডাকলো
“ কেমন লাগছে আপনার ?”
এমনেই বেশ বিরক্ত ছিল অবনী তার উপর এমন বেখাপ্পা প্রশ্ন শুনে ক্ষেপেই গেলো – মুখের কথার দাড়া না বুঝিয়ে চোখের চাহনী দিয়েই বুঝিয়ে দিলো কি বলতে চাচ্ছে ।
কৌশিক মৃদ্যু হেসে উঠলো ।
“ শুনুন , আপনার যতটুকু বিরক্ত লাগছে আমার তার থেকে কম লাগছে না । হাতে সময় কম , আমার বোন ফটোগ্রাফার মশাইকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে যেন স্টেজ ফাঁকা থাকে আর আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারি । আমার ইচ্ছা আপনাকে নিয়ে আমি এখন থেকে এখন পগারপাড় হবো । আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু আছে ওরা সাহায্য করবে । আপনার বান্ধবীদের তেমন সুবিধার মনে হয় নি এজন্য ওদের জানায় নি । স্টেজের ঠিক পিছনে একটা দরজা আছে ঐ দরজা দিয়ে ই বিল্ডিং থেকে বের হওয়ার একটা ব্যবস্থা আছে । সেন্টারের লোকের সাথে আগেই কথা বলা আছে । আর ও-প্রান্তে আমার বন্ধুরা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবে । আমি একা পালাতে পারছি না আপনাকে নিয়েই যেতে হবে । আপনি রাজী ?”
এই পরিস্থিতিতে কি উত্তর দিবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না অবনী । বেশ ঘোলাটে অবস্থা ।
“মৌনতা সম্মতির লক্ষ্মণ ।” বলেই কাকে যেন ফোন করলো কৌশিক । এরপরেই হলে ঠিক মাঝখানেই কি যেন গোলমাল শুরু হলো , সবাই দৌড়ে ওদিকেই যেতে লাগলো পরিস্থিতি দেখার জন্য । এই ফাঁকে অবনীকে সাথে করে কৌশিক আর কৌশিকের ছোট বোণ শিরিণ পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো । বেশ দ্রুতই ঘটলো ঘটনাটা ।
হঠাৎ অবনীর ওর মা-বাবার কথা মনে পড়ে – তারা কি ভাববে বা দুঃশ্চিন্তা করবে ।
“ আপনার ছোট ভাই আপনার মা-বাবাকে সব জানাবে চিন্তা করার কিছু নেই । আর আমার ছোট বোনের দায়িত্ব এইদিকটা সামাল দেয়া ।”
ছোটবেলার বন্ধু ধ্রুব এর গাড়িতে উঠলো ওরা ।
যাওয়ার সময় শিরিণ বললো – “ মনে রাখিস কিন্তু”। কৌশিক মৃদ্যু হেসে সায় দিলো । গাড়ি চলতে শুরু করলো ।
“ আচ্ছা , আমরা কক্সবাজার যাবো । তবে সবার আগে ওর মানে ধ্রুবর বাসায় যাবো । আমি এই শেরওয়ানিটা আর বইতে পারছি না , ক্রিম কালারের এই জিনিস আমার কালো শরীরে মানাচ্ছে না । চুরি করে পড়েছি মনে হচ্ছে ।”
কিঞ্চিৎ হাসির রেখা অবনীর ঠোঁটে দেখা গেলো ।
ও বলতে লাগলো – “ আপনি যা পড়ে আছেন বেশ অবাক হচ্ছি এই জিনিস পড়ে আপনি চলা ফেরা করছিলেন । আপনার জামার লাগেজ গাড়িতেই আছে । এই কাজও আপনার ছোট ভাইয়ের ।”
ছোটভাইটার সাথে আসার আগে দেখা করে আসা উচিত ছিল । যতো ছোট ভেবেছিলাম ততো ছোট নয় রাফি । এসব চিন্তা করে চোখের কোনে ঈষৎ পানি চলে এলো ।
কক্সবাজার যাওয়ার জন্য প্লেনের টিকেট আগেই কাটা ছিল । ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ওরা কক্সবাজার হোটেলেও পৌঁছে গেলো ।
কত দ্রুত যে সব কিছু ঘটলো , ওদিকটার কি খবর জানার ইচ্ছা জাগছিল কিন্তু এই রোমাঞ্চই বেশি প্রভাব বিস্তার করছে অবনীর ভিতরে । কৌশিক মানুষটাকে আরো জানতে ইচ্ছা করছে ।
কৌশিক কি কাজে যেন বাহিরে গিয়েছিল , ফিরে এসে দরজা বন্ধ করতেই অবনী যেন গুটিয়ে গেলো । কৌশিকের চোখ এড়ায় নি এই আচরণ ।
“ ভয় পাবেন না , আপনাকে না জানা পর্যন্ত আপনাকে ছোঁব না ।”
কিছুক্ষণের বিরতি নিয়ে আবার বললো – “আপনার উপর দিয়ে যথেষ্ট ধকল গিয়েছে আপনি ঘুমোতে পারেন ।”
“ এতো আগে ঘুমিয়ে অভ্যাস নেই । ঘুম আসবে না এখন ।”
“ ও , ভালো কথা আপনার কিছু জিনিস এনেছি ।” বলেই নিজের লাগেজের ভিতরে কি যেন খুঁজতে লাগলো কৌশিক । একটি শাড়ির বাক্স বের করলো , আর আরেকটি নীল কি ধরনের বাক্স যেন । শাড়ির বাক্স এগিয়ে দিলো অবনীকে , আর ঐ নীল বাক্স থেকে অপরাজিতা ফুলের মালা বের করলো ।
“আপনি যদি আপত্তি না করেন এগুলো পরে কি এখন একটু বেরুতে পারবেন ? আমার জানামতে এটা আপনার শখের লিস্টে বেশ মোটা হরফেই লিখা ছিল । ”
এইবার অবনী অবাক হলো না , ঐ রাফির কাজই বোধ হয় আবার । কৌশিকের সাথে ভালোই সখ্যতা হয়েছে ।
তখন রাত প্রায় ১০ টার মতো বাজে , দুইজন খালি পায়ে হাঁটছে তীর ঘেষে । একজনের পরনে কালো শার্ট – প্যান্ট আরেকজনের খোপায় অপরাজিতা আর পরনে আবছা নীল রঙের শাড়ি । এতো বাতাসেও শাড়ির বেশ নিয়ন্ত্রণই রেখেছে অবনী ।
হঠার কি মনে করে যেন অবনী হালকা হাসছিল , সেই হাসি দেখে কৌশিকও হেসে দিলো । শুরুটা বেশ ভালোই হলো ……………………….

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৫৩

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
যেহেতু গল্প এটা - তাই অনেকগুলো ভুলই চোখে পড়েছে।

লিখেছেন নিজের সৃষ্টি থেকেই। আমি সেটাকে সম্মান করছি।

তবে, প্লটটা খুব নতুন কিছু না। এরকম এই ব্লগেই যেন কার লেখায় পড়েছিলাম। এটা আপনার দোষ না। কিন্তু পাঠক হিসেবে একই ধরণের গল্প পড়লে প্রথমটার পর আর কোনটাই ভাল লাগে না।

আপনার লেখায় বেশ কিছু উন্নতি আনা দরকার। বানানে কিছু সমস্যা রয়েছে, বাক্য গঠনেও। সাধারণ আর্টিকেল হলে - ভুল গুলো বিবেচনায় আনতাম না। যেহেতু গল্প তাই চোখে পড়ে গেছে।

আশা করছি ভাল কিছু লেখা পাব আপনার থেকে। শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.