নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খ্যাপাটে , দেশকে নিয়ে স্বপ্নবাজ , উচ্চতা ভীতি এবং নারী ভীতি রয়েছে ।

জাবের তুহিন

নামেই আমার পরিচয়

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুনতে পাও ?[গল্প]

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৯

সারাদিন ক্লাস করে ক্লান্তির বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম । ক্লান্তির সাথে টুকরো টুকরো কষ্টের বোঝা আছে , প্রাপ্তি - অপ্রাপ্তির ডালি আছে । বাসায় আসার সময় যে বাসে একটু ঘুমুতে ঘুমুতে আসবো তার জো নেই । বাসের কন্ডাক্টরের সাথে কারো না কারো ঝগড়া বাঁধবেই , সেই রেশ টেনে ধরে রাখা হয় বাস থেকে নামার আগ পর্যন্ত ছেড়ে দিলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে হয়তো ।
বাস থেকে নেমে বাসায় হেঁটে আসতেও ১০ মিনিটের মতো সময় লেগে যায় । পথের কুকুরটিকে দেখেও তখন বেশ হিংসে হয় । ময়লা শরীর নিয়ে দিব্যি মাঝ রাস্তায় ঘুমোচ্ছে বিকেলবেলা । কারো জন্য অপেক্ষা নেই , “সময় চলে যাচ্ছে” মাথার ভিতর এই কথার চর্কা অবিরত ঘুরছে না । দিব্যি বেঁচে আছে ।
এতো সব নিয়ে ঘরে ঢুকেই মস্ত বড় শরীরটাকে খাটের কাছে সমর্পণ করে দিলাম , ঘুম দিয়ে আমাকে মাখিয়ে খাবলে খেয়ে ফেল । ঐ সময়টুকুই যে সুখের । সুখের সুতো গভীর রাতে কেটে গেলো , ঝাপসা চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১ টা বাজে । ঘরের বাতি জ্বালানো , ক্যাচর ক্যাচর শব্দ করে মাথার উপরে পাখা ঘুরছে । ঘামের আদরে ভিজে থাকা শার্ট , প্যান্ট কোনটাই বদলানো হয়নি এসে । বিছানা থেকে উঠে কাপড় বদলে নিলাম । আবার যখন বিছানা ডাকছে তার কাছে , খেয়াল করলাম জানালার কাছে কিছু একটা আছে । ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম , একটা দাঁড় কাক ঘরের দক্ষিণ দিকে মুখ করে থাকা জানালায় বসে আছে । ভাবলাম ঘুমের ঘোরে হয়তো ভুল দেখছি , চোখ কচলে নিলাম । না ভুল দেখছি না , একটি দাঁড় কাক দিব্যি আছে । ঘুমে এতোটাই কাতর ছিলাম বেশিক্ষণ চিন্তা করতে ইচ্ছা করছিল না এ নিয়ে , ঘুমিয়ে পড়লাম পরের দিন আরো কিছু বোঝা টুকিয়ে বাসায় নিয়ে আসার জন্য । পড়ার টেবিলে একটা ডায়েরি আছে , কালো মলাটের । প্রতিদিনের কষ্টের বোঝাগুলি কথার সাথে বেঁধে পাশাপাশি ফেলে রাখি । আর কয়েক পৃষ্ঠা বাকি আছে কেবল । মা প্রতিদিন জিজ্ঞেস করে , দুপুরে খেয়েছিস ? রাতে কি খাবি ? পড়ছিস তো ঠিক মতো ? একটিবার যদি জিজ্ঞেস করতো , বাবা ,ভালো আছিস ? তবেই ডায়েরির সব পাতা খুলে দেখাতাম , জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম যেভেবে কেঁদেছিলাম আব্বা যখন অংক না পারার কারণে মেরেছিল । কাঁদতেও পারি না যেভাবে কাঁদতে চাই ।

সকাল হতেই নতুন দিনের শুরু পুরোতনভাবে । গণিতের ক্লাস জুড়ে থাকে অসহায়ত্ব , সেই অসহায়ত্বের কারণেই কখনো চোখ পাখার ঘুর্ণি দেখে কখনো রাস্তায় আটকে থাকে গাড়ি । সেই সুবাদেই চোখে পড়লো রাতের সেই কুচকুচে কালো দাঁড় কাকের । রোদের আদরে গা থেকে রূপ নিংড়ে পড়ছে ।
সারাটি দিন প্রতিটা জায়গায় দাঁড় কাক আমাকে তাড়া করে ফিরলো , কাউকে বলতেও পারলাম না “আমি ভয় পাচ্ছি, খুব ভয় পাচ্ছি । একটু সাথে থাকবা ” । একজনকে একবার বলেছিলাম , হাত ধরতে হবে না , ভালোবাসতে হবে না , শুধু ভয় পেয়ে কিংবা একাকীত্ব খুব জোরে জড়িয়ে ধরলে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু একবার বলো – “ভয় পেয়ো না।” । আমার ডাক সে শুনে নি , কেউ কোনদিন শুনে নি । আজকেও কেউ শুনবে না , কেনই বা শুনবে ?

বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসলাম , যদি আজকে মা জিজ্ঞেস করে কেমন আছিস ? তোর মুখ ওমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন ? কি হয়েছে , ভয় পেয়েছিস ?
মা দরজা খুলেই জিজ্ঞেস করলো – “খেতে দিবো? তোর পছন্দের ডিমের কোরমা করেছি ।” না করে দিলাম , ভাত আজ গলা দিয়ে নামবে না । মা’র ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় একটা মরিচ গাছ ছিল , অনেকদিন এখানে আসা হয় না ।
মরিচ গাছটাও মরে গেছে , ওর কাছ থেকে একটু সাহস নিতাম – তাও আর সম্ভব হলো না ।

পড়ার টেবিলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান বইটা প্রথম সেমিস্টারে কেনা JAVA: How To Program এর বইটা মেলে ধরলাম । তাতে মুখ গুজে ক্লান্তির কাছে স্বানন্দ্যে পরাজয় বরণ করলাম ।
আবারও রাতে ঘুম ভাঙলো , দাঁড় কাক আমার জন্য অপেক্ষাই যেন করছিল । খাটের নিচে পরে থাকা ছোটবেলার ধুলো জমা ক্রিকেট ব্যাট বের করে কাক তাড়াতে চাইলাম । কাক উড়ে চলে যায় আবার আমি সরে গেলেই আগের জায়গায় চলে আসে । পড়ার টেবিল থেকে চেয়ারটা টেনে কাকের দিকে ফিরে বসলাম । যেন আমার সব অপ্রাপ্তি , কষ্টগুলো চোখ রাঙাচ্ছে । ওরা বলছে আমাদের তুই তাড়াতে পারবি না , আমি তোদের ছাড়বোই না । অনেকদিন পরে মনে হয় চোখের নালা খুলেছে তবুও পুরো না , দু’চোখ হতে দু’ফোটা পানি এসে থেমে গেলো । ঝাপসা কাক চেয়ে আছে ।
মরতে পারলে খুব শান্তি হতো , হয়তো লাশের উপরে বসে থাকতো কাকটি । দুই হাতে দু’টি ক্যাপ খোলা কলম ছিল । সজোরে চোখের ভিতরে গেঁথে দিলাম , আর কষ্ট দেখতে দেবে না এই চোখকে , আরো কাউকে দেখার জন্য রাস্তায় উঁকি দিতেও দেবো না । চোখ দু’টোকে কবর দিয়ে দিলাম ।
শান্তিতে থাকুক ওরা , খুব সুন্দর কিছু জিনিস দেখিয়েছে জীবনে , ওদের মনে থাকবে । ব্যাথার মাঝেও টের পেলাম কাকটি উড়ে যাচ্ছে , ডানা ঝাপ্টানোর শব্দ আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেলো । সাথে কষ্টটাও কি ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.