নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খ্যাপাটে , দেশকে নিয়ে স্বপ্নবাজ , উচ্চতা ভীতি এবং নারী ভীতি রয়েছে ।

জাবের তুহিন

নামেই আমার পরিচয়

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশা [গল্প]

৩০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:১৮


সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার প্রথম কাজ হলো বারান্দায় গিয়ে গোলাপ গাছে পানি দেয়া । এই পানি দেয়ার জন্য হলেও ভোরে ঘুমটা ভেঙ্গে যায় নিজ থেকেই । গোলাপ কবে ফুটবে সেই প্রত্যাশায় প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠি , গাছে পানি দিই । আবার পরের দিনের জন্য অপেক্ষা করি । অপেক্ষাটা মধুরই লাগে , কোন কিছু দেখার জন্যই তো অপেক্ষা ।
আজ অনেকদিন পরে ছুটি পেয়েছি , সারাদিন বাসায় থাকতে পারবো । অফিসে যেতে হবে না । চাকরিতে ঢুকেই এক সপ্তাহ টানা অফিস করেই হাঁপিয়ে উঠছিলাম । এখনো এক মাস পূর্ণ হয় নি চাকরির ।
প্রতিদিনের মতো আজো গাছে পানি দিয়ে ফের ঘুমাতে চলে গেলাম । ঘুম থেকে যখন উঠেছি তখন ঘড়িতে বাজে দুপুর দু’টা । বাহিরে তুমূল বৃষ্টি হচ্ছে , চট্টগ্রামের ঐডিকে সম্ভবত ঝড় হচ্ছে । এইজন্য ঢাকার এই অবস্থা । ছোট বোনের ক্লাস দুপুরে ছিল , বৃষ্টির জন্য যেতে পারে নি । মা আর ও মিলে খিচুড়ি রেঁধেছে । আমি পছন্দ করি গলা খিচুড়ী আর ওরা একেবারে ঝড়ঝরা খিচুড়ি খাবে । কি আর করার তাই গিলতে হয় । সাথে আছে ধনেপাতা ভর্তা , কালোজিরা ভর্তা আর ডীম ভাজা । ভরপেট খেয়ে দেয়ে আবার ঘুমানোর পালা ।
আছরের আযানের সময় ঘুম ভাঙ্গলো । ততক্ষণে বৃষ্টি থেমেছে কিন্তু একটু পর পর দমকা বাতাস চোখ রাঙাচ্ছে মনে হয় । আকাশটা হালকা লাল দেখাচ্ছে , যা প্রতিবার দেখে মুগ্ধ হই । ঘুম ঘুম চোখে আরো ঘুম এনে দেয় । পাশের ঘরে যেয়ে দেখি শতস্রী ঘুমাচ্ছে । ওর আমার মতো ঘুমের স্বভাব নেই , তবুও এই আবহাওয়া ওকে ঘুমাতে বাদ্য করেছে ।
ঘুম থেকে ডেকে তুললাম ।
“বাইরে হাঁটতে যাবি ?”
“কোথায় যাবি, এই ঝড় বৃষ্টি মধ্যে ? ”
“দেখি কোথায় যাওয়া যায় । বাতাসটা গাঁয়ে না লাগালে ঠিক শান্তি পাচ্ছি না।”
“একা গিয়ে শান্তিতে ডুব মেরে আয়, আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে কেন ?”
“আরে উঠ , তাড়াতাড়ি ।”
মনের বিরুদ্ধেই ভায়ের আবদারেই তৈরি হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো , ভাই-বোন ।
এলাকার রাস্তা পেরিয়ে যখন মূল সড়কে উঠলাম , আহ কি শান্তির বাতাস । আমি চোখ বন্ধ করে মাথা একটু উপরের দিকে ফিরিয়ে হাঁটছি । একটু পরে চোখ খুলে শতস্রীর দিকে তাকিয়ে দেখি – এই ওড়না ঠিক করছে নয়তো চুল । নাহ , আমাকে দেখতে বড্ড বাজে লাগলেও , বোনটা হয়েছে দেখার মতো । ওর দিকে তাকালেও মনটা খুশিতে ভরে উঠে ।
একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ওকে চুলটা ভালো করে বেঁধে নিতে বললাম আর ওড়নাটাও যেন ভালো করে মাথার সাথে পেঁচিয়ে নেয় , যেন আর সমস্যা না হয় ।
“কিছু বলতে চাইলে বলে ফেল । এই বাতাস এখন অসহ্য লাগছে ।”
নাহ মেয়ের বুদ্ধি অনেক , মিথ্যে ভণিতা না করে শুরু করা যায় ।
“আমরা বেঁচে থাকি কেন ?”
“দম বন্ধ হয়ে আসে না সে জন্য”
“দম বন্ধ হওয়াই কি মৃত্যু ? নাকি মৃত্যুর অন্য কোন ধরন আছে । মানে ঐ জিনিসটাকেও মৃত্যু বলা যায়”
“হুম , আশা ফুরালে ঐ মানুষকে মৃত বলা যায় । ”
“আমি কি মৃত তাহলে ?”
“নাহ । কখনোই নাই ।”
“কেন ?”
“পরে বলবো । আর কিছু বলবা ?”
“আমি মরলে তুই তো আমার খাটিয়া তুলতে পারবি না । আমার কবরে মাটিও দিতে পারবি না । কষ্ট পাবি ? ”
“তুমি মরলেই কষ্ট পাবো । এগুলার কথা এখন বলতে পারতেছি না । তোমার কপালে চুমু খাওয়ার ইচ্ছা আছে । সুযোগ পাবো নাকি জানি না ।”
হাঁটা থামিয়ে নিজের মাথাটা এগিয়ে দিলো ওর দিকে ।
“ইচ্ছা এখনই পূরণ কর ।”
এই চুমুতে কতটুকু ভালোবাসা ছিল তা কি মাপা সম্ভব ? নাহ মাপার প্রয়োজন নেই । বেঁচে থাকার ইচ্ছা সঞ্চয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তি এতে আছে ।
ওরা এবার বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলো ।
“ভাইয়া ”
“হুম , বল ।”
“যে মানুষ মেহেদী গাছে প্রতিদিন সকালে উঠে পানি দেয় কোনদিন গোলাপ ফুটবে বলে তার আশা কোনদিন শেষ হতে পারে না ।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.