নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খ্যাপাটে , দেশকে নিয়ে স্বপ্নবাজ , উচ্চতা ভীতি এবং নারী ভীতি রয়েছে ।

জাবের তুহিন

নামেই আমার পরিচয়

জাবের তুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নী [গল্প]

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৩২

মোবাইলে দিয়ে রাখা এলার্মে ঠিক সাড়ে ছটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো । আড় মোড়া ভেঙ্গে বিছানায় উঠে বসলাম । বাইরে মেঘ করেছে , সকাল নাকি রাত বুঝতে পারা বেশ কষ্টের হয়ে গেছে । লাইট জালাতে হলে বিছানা থেকে উঠে পাক্কা তিন কদম হেঁটে সুইচ বোর্ডের কাছে যেতে হবে । এখন ইচ্ছে করছে না । বিছানায় বসেই মেঘের মৃদ্যু গর্জন শুনছি । বৃষ্টি এলে বারান্দায় যাবো , তার আগে বিছানায় বসে যতক্ষণ থাকা যায় , জানালা দিয়ে দু তিনটে শালিকের ছোটাছুটি দেখলাম । ভয় পেয়ে দুটা চড়ুইকে বারান্দায় এসে ভিড়তে দেখলাম । বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে । এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে আলসেমির খোপা বেঁধে বারান্দায় চলে গেলাম । চড়ুইগুলো একপাশে চেপে গেলো , আমাকে একটু কমই ভয় পেলো বোধ হয় । গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে , রাস্তার আরেক প্রান্ত থেকে মতিকে দৌড়ে আসতে দেখলাম , ঝড় – বৃষ্টির সময় আমাদের বাসার নিচে এসে বসে থাকে । আর সকালবেলা এমনিতেই আমার বাসার নিচে এসে চুপচাপ বসে থাকে ।
ভার্সিটিতে ক্লাস থাকলে আমি সকালে একটা পরোটা খেয়ে আরেকটা পরোটা ভাজি দিয়ে মুড়িয়ে যাওয়ার সময় মতিকে দিয়ে যাই । আর ছুটির দিনগুলোতে একটু সমস্যা হয়ে যায় । বাসার কেউ আমার এই কাজ সম্পর্কে জানে না । ছোটভাইটার চোখ এড়ানো কঠিন হয়ে গেছে ইদানিং । হয়তো মা ওকে এই কাজ করতে বলেছে না হয় ও নিজ থেকেই করছে । ছুটির দিনে তাই ছাদে যাওয়ার নাম করে কিংবা অন্য কোন অজুহাতে বাসা থেকে কয়েক মিনিটের জন্য বের হওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলি । এলাকার বেশিরভাগ মানুষই মতি পাগলকে ভয় পায় । ভয়টা কিসের জন্য ঠিক জানি না । এখনকার সময় মানুষ নীরবতাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। নীরব সত্যের আরেক নাম কি ?
আমার ভয়ের অনুভূতি কবে যেন বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল , ঠিক খেয়াল নেই । নাহলে হয়তো আমিও মতিকে দেখে ভয় পেতাম ।
ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে । মতি নিবিড় দৃষ্টিতে বৃষ্টি দেখছে । হয়তো না , ওর দৃষ্টি সবসময়ই সামনের দিকে থাকে । কি দেখে ? পৃথিবীর প্রতিটা বস্তুই ওর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ , সমান কৌতূহল নিয়ে তাকে পরখ করে দেখে ।
আজকে যখন খাবার দিতে নিচে নামলাম মতি তখন কাক ভেজা হয়ে বসে আছে । খাবারটা হাতে নিয়ে একটু সরে গেলো । এটা ওর ধন্যবাদ কিংবা ভদ্রতা প্রদর্শন । আমি না যাওয়া পর্যন্ত ও খাওয়া শুরু করবে না । ওকে খেতে দেখার দৃশ্য কেমন তা দেখার চেষ্টা করেও সুফল পাই নি ।
মোবাইল বেজে উঠলো , সুমন ফোন করেছে ।
“সুশ্মী , ১১ টার দিকে বাসার নিচে থাকিস ” বলেই লাইন কেটে দিলো । এটুকুই যদি বলবি তাহলে ফোন করার দরকার কি ছিল ? ম্যাসেজ করে দিলেই হতো । কোথাও হয়তো ঘুরতে যাবে সবাই । কোথায় যাবে তা কোনদিন বলে না । নিজে জানলে না বলবে । নিজের গাড়ি আছে একটা । সবাইকে তাদের বাসা থেকে তুল একদিকে যাওয়া শুরু করে । যখন মনে হয় গাড়িতে শুধু ফেরার মতো গ্যাস আছে তখন গাড়ি থামায় আর এক মুহুর্ত আগে নয় ।
ভার্সিটিতে ওঠার পরই বাসায় জানিয়ে দিয়েছি , পাখাটা বড্ড জ্বালাতন করছে । ও-দুটোকে আর কষ্ট দিবো না । একটু মেলে ধরতে চাই । বাবার পোস্টিং ঢাকার বাহিরে , মা যেন আমাকে তার দু’টো পরে থাকা পাখাও আমাকে দিলেন । চার পাখা মেলে উড়ার অনুমতি পেলাম যেন ।
এখন বাজে ১০ টা , এক ঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে নিতে হবে । হালকা বাদামী রঙের একটা সালোয়ার কামিজ ছিল পরে নিলাম । সকালে থেকে চোখে চশমাটা দেয়া হয় নি । চশমা চোখে দিয়ে কপালে যেই টিপটা পরতে যাবো , দেখলাম মশার কামড়ে ঠিক দুই ভ্রুর মাঝে লাল একটি বিন্দু আঁকা হয়ে গেছে । সাদা জামা পড়লে হয়তো আর আলাদা করে টিপ দিতাম না এটা দিয়েই চালিয়ে দিতাম । কিন্তু এই জামার সাথে কালো টিপ মানাবে ।
১১ টার কথা বলে ১১:১০ এই গাড়ি নিয়ে হাজির হলো সুমন । গাড়িতে দেখি সৌম, তামিম , নাজিরা আগেই ছিল । তার মানে আমাকে সবার পরে উঠাতে এসেছে । কোথায় যাচ্ছি এখন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না । জিজ্ঞেস করলেও সুমন উত্তর দিবে না ।
কিছুক্ষণপর সুমন নিজ থেকেই বললো – “বিক্রমপুর যাচ্ছি । জগদীশ চন্দ বসুর বাড়ি না যাদুঘর কি যেন একটা আছে । সবচেয়ে বড় কথা রাস্তাটা খুবই ভালো আর এই সময় এলাকাটা দারুন হবে দেখতে । ”
শহর পেরুতেই গাড়ির এসি বন্ধ করে গ্লাস নামিয়ে দিলাম । সুমন গাড়ি চালাচ্ছ , গাড়িতে গান ছেড়েছে , সামনের সিটে আমি বসে মাথা বাহিরে দিয়ে চুল উড়াচ্ছি । পিছনের গুলো মোবাইল টিপছে ।
আবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে , আমার পাশের জানালা ছাড়া বাকিগুলো বন্ধ হয়ে গেলো মুহুর্তেই । বৃষ্টিতে জামার হাতাটা ভিজে যাচ্ছে । চশমাতেও বৃষ্টির পানি এসে বসে আছে , তবুও মুছে ফেলতে ইচ্ছা করছে না । অনেকটা হুট করেই গাড়ির বন্ধ করে দিলাম । নাজিরা অনেক সুন্দর রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইতে পারে । ওকেই গান গাইতে বললাম । কোন প্রকার নাটক ছাড়াই ও গান ধরলো , প্রকৃতির সাথে অল্প অল্প করে মিশে যাচ্ছি ।
জগদীশ চন্দ্র বসুর যাদুঘর আজ বন্ধ । তাই গাড়ি হাকিয়ে সুমন এবার চললো পদ্মার পাড়ে । এপাড় হতে পদ্মার আরেক প্রান্ত দেখা যাচ্ছে না , তবে সবুজ কিছু চোখে বাঁধছে ।
চায়ের কাপ এসে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যে । এইরকম জায়গায় মাদুর বিছিয়ে গল্পের বই পড়তে পারলে ভালো লাগতো ।
বিকেল পর্যন্ত ওখানেই ছিলাম , দুপুরে এক হোটেলে আলু ভর্তা , ডাল , পিয়াজ ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে নিলাম ।
সূর্যের আলোর সাথে পাল্লা ধরে গাড়ি ছুটলো ।
নামানোর সময় আমাকেই সবার নামানো হলো । নামার সময় গাড়ির লুকিং গ্লাসে দেখলাম রোডের গেটের এক ফাঁক দিয়ে মতি এই দিকে তাকিয়ে আছে । অন্ধকারের মধ্যে জ্বল জ্বল করতে থাকা দুট চোখই শুধু দেখা যাচ্ছে । ঐ চোখে ভয় আছে , আছে কাছ আসতে চাওয়ার প্রবল ইচ্ছা ।
পিছন ঘুরতেই দেখি সে মিলে গেছে অন্ধকারে । ও , ওর মতো থাক আমি আমার মতো । প্রয়োজন হলে খাবার দিবো , হাত বাড়ালেও মতি পিছিয়ে যাবে প্রতিবার ।
নীরবতা আসলেই প্রাণ ঘাতক ব্যাধী । কারো খুব কাছে আসতে চাইলেও পারা যায় না ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.