নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I\'m learning a lot about myself being alone, and doing what I\'m doing.

তুষার দেবনাথ

আমি নিজেই জানিনা, আমি আসলে কি।

তুষার দেবনাথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমুর হারিয়ে যাওয়া.........

১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

রাত ১১টা ৪৯মিনিট। ঢাকা মেডিকেলের সামনে জমজমাট অবস্থা। ঘাম আর ময়লাতে নষ্টপ্রায় ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে নিল হিমু। সময়টা ভালো না। ১১ এবং ৪৯ দুইটাই বিজোড় সংখ্যা। বিজোড় সংখ্যা হিমুর প্রতিকূলে কাজ করে। জোড় সংখ্যাও যে খুব একটা অনুকূলে কাজ করে তা নয়। যেমন ২ সংখ্যাটা হিমুর জন্য বেজায় খারাপ একটা সংখ্যা । সস্তা ঘড়িতে বিশ্বাস নেয়। চায়ের দোকানদার রুবেলকে জিজ্ঞাসা সময়টা করে শিওর হয়ে নিল হিমু। বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। আজই সারতে হবে এইগুলো।



রাকিবের মোবাইলের দোকানের সামনে এসে দাড়ালো হিমু।



-হিমু ভাই, স্লামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন?-ভালো। তুমি কেমন আছো?



-এই তো আল্লাহ্‌ রাখছে কোনরকম।



গরীব মানুষের এই একটা সমস্যা এরা কথায় কথায় আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে। কথা বাড়ায় না হিমু।



-রাকিব, মোবাইলটা একটু দাও তো। জরুরী একটা কল করতে হবে।



-জ্বে ভাই, এই যে লন।



মোবাইল নিয়ে হিমু ফোন করে রূপাদের বাসায়। একবার, দুইবার, তিনবার। নাহ ফোন ধরে না রূপা। সুন্দরী মেয়েদের এই এক সমস্যা এরা প্রয়োজন হোক অথবা অপ্রয়োজন যথাসময়ে ফোন ধরে না। ৪র্থ বারে ফোন ধরল রূপা।



-হ্যালো রূপা, কেমন আছো?



-ভালো। তুমি কেমন আছো?



-আমিও ভালো। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে, ৩০ মিনিট পর একটু বারান্দায় আসবা?



-হুম।



-আচ্ছা রাখি। আমি আসছি।



ফোন কেটে দেয় হিমু। রূপা জানে দেখতে আসা আসল ব্যাপার না। হিমুর টাকা লাগবে। পাঁচ লাখ টাকা। এর আগে এমন কিছুরই আভাস দিয়েছিল হিমু। রূপা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে। সুন্দরীরা সাধারণত এমন হয় না। রূপা ব্যতিক্রম।



ঢাকা মেডিকেল থেকে সেগুনবাগিচা বেশি দূরের পথ নয়। হাঁটা শুরু করে হিমু। রাস্তার পিচগুলো টগবগ করে ফুঁটতে বাকি। ইদানীং খালি পায়ে হাঁটায় যায় না রাস্তায়। ফোস্কা পড়ে যায় পায়ে। হুমায়ূন আহমেদ স্যার সুস্থ থাকলে নিশ্চয় একটা স্যান্ডেলের ব্যবস্থা করে দিতেন। এইসব ভাবার সময় এখন হিমুর নেই। অনেককাজ বাকি পড়ে আছে।



আজ জ্যোৎস্না রাত। অসম্ভব সুন্দর, মনোমুগ্ধকর। সুন্দরে সুন্দরে আরও মোহময় হয়ে উঠেছে সেগুনবাগিচার ৬নং রোডের রূপাদের বাসার বারান্দা। রূপাকে কিছুক্ষণ দেখে পাঁচ লাখ টাকার চেক নিয়ে মতিঝিলের দিকে রওনা দেয় হিমু। পেছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছা করে হিমুর। কিন্তু তাকায় না। আবেগকে প্রশ্রয় দিলে কষ্ট বাড়ে। জোর পায়ে হাটা শুরু করে হিমু। আজ কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে হিমুর। কাঁদতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু হিমুদের কাঁদতে নেই। কখনোই নেই।



বাংলাদেশ ব্যাংক। রাত ১২টা ৫৫ মিনিট। প্রহরী মজিদ মিয়া বসে ঝিমুচ্ছে।



-মজিদ মিয়া।



-হু, কে কে?



-আমি হিমু।



-ও স্যার। আসসালামুয়ালাইকুম।



-কিরাম আছেন স্যার?



-এই তো ভালো। তোমার মেয়ে কেমন আছে? ঐ যে অসুস্থ ছিল।



-জ্বে স্যার। আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে, আর আপনের দোয়ায় ভালোই আছে।



-মজিদ মিয়া। এই নাও।



-কি এইডা, স্যার?



-পাঁচ লাখ টাকার চেক।



হতভম্ব হয়ে যায় মজিদ। হিমু প্রায়ই আসে এখানে। আকাশের খুব কাছ থেকে জ্যোৎস্না দেখতে ভালো লাগে হিমুর। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বহুতল ভবনের ছাদে উঠে প্রায়ই জ্যোৎস্না দেখে। আর ব্যাংকের প্রহরী মজিদ মিয়া মেইন গেইট খুলে উপরে উঠতে সাহায্য করে।



-মজিদ মিয়া।



-জ্বে স্যার।



-এক কাপ চা খাওয়ায়তে পারবা?



-অবশ্যি স্যার।



আরাম করে চা খাচ্ছে দুইজন। শব্দ করে। হিমু আর মজিদ মিয়া। শব্দ করে চা খেতে ভালো লাগে হিমুর।



-তুমি এক কাজ কর মজিদ মিয়া। এই টাকা নিয়ে বাড়ি চলে যাও। তোমার এই চাকরী করতে হবে না।



-জ্বে স্যার। আপনি যা বলেন।



-ধন্যবাদ। আচ্ছা এখন গেইট খুলে দাও। আর হ্যা শোন, বাইরে থেকে আটকে দিও।



সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে হিমু। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে মজিদ মিয়া। সে কিছু বুঝতে পারছে না। অবশ্য সে কখোনই হিমু স্যারকে বুঝতে পারেনি।



তালা লাগানোর শব্দ শুনতে পায় হিমু। হিমু জানে মজিদ চাইলেও আজকের পর এই চাকরি সে আর টিকিয়ে রাখতে পারবে না।



আজ ২০১২ সাল, ১৯ জুলাই। রাত একটা প্রায়। ১৯ এবং ১ দুইই বিজোড় সংখ্যা। খারাপের আভাস পায় হিমু। চিৎ হয়ে শুয়ে জ্যোৎস্না দেখছে হিমু। হিমুর মন ভালো নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। চোখ বুজে নিস্তব্ধ নিরবতা উপলব্ধি করছে হিমু। নস্টালজিক হতে ইচ্ছা করছে। হিমুর চোখে ভাসছে গাছপালা শোভিত সবুজ অরণ্যানী, কানে আসছে বিটোফেনের সুরের মতন টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ।



১টা বেজে ২০ মিনিট। স্যারের সাথে টেলোপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করে হিমু। স্যারের সাথে অন্তরের টান হিমুর। অবিচ্ছেদ্য টান।



-স্যার, আপনি কেমন আছেন।



-ভালো না রে। শোন তোরা সবাই ভালো থাকিস। আমার সময় হয়েছে যেতে হবে। বহু দূরের পথ। সময় অল্প। যাই রে। ভালো থাকিস তোরা সবাই।



-স্যার, স্যার। হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন আমাকে।



নিগুঢ় নিস্তব্ধতা। রেলিংয়ের ধারে এগিয়ে যায় হিমু। আরেকবার তাকিয়ে দেখে নেয় চান্নি পশর রাত। শেষ রাত। শেষ জ্যোৎস্না। এরপর আস্তে করে নিজেকে ভাসিয়ে দেয় হাওয়ায়।





* ২০১৩ সাল। বইমেলাতে গিয়েছিলাম। অন্যপ্রকাশে প্রচন্ড ভিড় দেখেছি। হিমুকে খুঁজে পাইনি। ঢাকার রাস্তায় হলুদ পাঞ্জাবি আর খালি পায়েও আর কোনোদিন হিমুকে দেখা যায়নি। কখনো দেখা যাবেও না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.