নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I\'m learning a lot about myself being alone, and doing what I\'m doing.

তুষার দেবনাথ

আমি নিজেই জানিনা, আমি আসলে কি।

তুষার দেবনাথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেরুপ্রভা এবং হিমু..............

১৪ ই জুন, ২০১৪ রাত ৩:৫০

ঢাকার গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা। সন্ধ্যা ৭টার মতো বাজে। এখান থেকে নুহাশ পল্লী কতদূর কে জানে !!! জায়গাটা একেবারেই অপরিচিত হিমুর কাছে। কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যেতে পারে।



-ভাইসাহেব, সিগারেটটা দেওয়া যাবে?



আচমকা এমন কথায় ভ্রু কুচকে তাকায় টং দোকানে বসে মনের সুখে সিগারেট টানতে থাকা অপরিচিত লোকটি। এমন বদখৎ পোশাক পরিহিত অজাগতিক টাইপ লোক আগে কখনো দেখেনি সে। তারপর আবার খালি পায়ে। হিমুকে কিছু সময়ের জন্য তার কাছে মানসিক বিকারগ্রস্থ বলে মনে হয়। শেষপর্যন্ত কিছুটা অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় এগিয়ে দেয় অর্ধেক সিগারেট।



-ধন্যবাদ, ভাইসাহেব।



-কে আপনি? এলাকায় আগে তো কখনো দেখিনি আপনাকে।



-আমি হিমু।



-আগেপিছে কিছু নায়?



-না। তবে আসল নাম হিমালয়। বাবা রেখেছিলেন।



-ভাইসাহেব, এখান থেকে নুহাশ পল্লী কতদূর?



-এখান থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশপল্লী। ওখান থেকে আরো মিনিট বিশেকের পথ। তা ভাইজান কি ঘুরতে এসেছেন?



-না, আমি হুমায়ূন স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছি।



-স্যার তো মারা গেছেন, বছর দুয়েক হল।



-কি বলেন আপনি !!! স্যারের সাথে তো আমার গত সপ্তাহেও কথা হয়েছে। আজ দেখা করার কথা।



লোকটা চরমমাত্রায় বিভ্রান্তিকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পড়েছে বলে মনে হয় না বেচারি। জোর পায়ে হাঁটা শুরু করে হিমু। হিমুর আচার আচরণ খুবই বিভ্রান্তিকর। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার প্রতিক্রিয়া অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে। এবং এই বিভ্রান্ত করা হিমুর অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ।



নুহাশ পল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল। মধ্যবয়স্ক। কাঁচা-পাকা দাড়িতে বয়সের ছাপ সুস্পস্ট।



-আসস্লামুয়ালাইকুম, বুলবুল সাহেব। আমি হিমু। স্যার আমাকে আজ দেখা করতে বলেছিলেন।



-কে হিমু? ঐসব হিমু ফিমুকে আমি চিনি না।



-দুঃখিত। আমি ফিমু না, হিমু। আসল নাম হিমালয়। স্যার আমাকে চিনেন। স্যারের সাথে আমার প্রায়ই কথা হয়।



-আজাইরা ফালাইয়ান না তো। পাগল-ছাগল যত্তসব। যান আমি কাউরে চিনি না। চিনতেও চায় না। ২০০টাকা দেন। তাইলে ভিতরে ডুকতে দিমু। নাইলে রাস্তা মাপেন।



হিমু বুঝতে পারে সত্য বলে কোন লাভ নায়। কেননা মিথ্যার শক্তি অনেক বেশি। সুন্দর, সত্য বাণীর চেয়ে এ কারণেই গুজব আগে ছড়ায়। উপরন্তু এই বুলবুল অত্যন্ত বদমেজাজি। স্যার যে কেন এই বাজে লোকটাকে নুহাশ পল্লীর ম্যানেজার বানিয়েছে বুঝে পায়না হিমু। চিন্তায় পড়ে যায় সে। গভীর চিন্তায়। ২০০টাকা এখন সে কোথায় পাবে। হঠাৎ মনে পড়ে আসার সময় বাদল তাকে ৫০০টাকার একখানা নোট দিয়েছিল। যাক ভিতরে ঢোকার একটা উপায়ান্তর হল শেষমেষ।



ঢোকার সময় চিন্তা করে হিমু, স্যার যদি জানতেন তার স্বপ্নের নুহাশ পল্লী নিয়ে কি ধরণের ব্যাবসা শুরু হয়েছে তাহলে কতটায় না কষ্ট পেতেন। তবে স্যারের সাথে দেখা হলে এই কথা গোপন রাখবে মনস্থির করে হিমু। অযথা স্যারকে কষ্ট দিতে আসেনি সে এখানে। তবে স্যারের অভূতপূর্ব সৃষ্টি হিমুকেও টাকা দিয়ে নুহাশ পল্লীতে ঢুকতে হয়েছে!! ব্যাপারটা যতটা না কষ্টের ঠিক ততটাই আত্মসম্মানের।



নুহাশ পল্লীতে এবারই প্রথম হিমু। ঘুরে দেখে স্যারের অপার সৃষ্টিকর্ম। ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে এই বাগানবাড়ি। সবুজ ঘাসের গালিচা, ঔষধি, মসলাজাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ, স্যারের আবক্ষ মুর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, লীলাবতী দীঘি, শান বাধানো ঘাট, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, টি-হাউসসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য দেখে চোখ ও মন দুইই জুড়িয়ে যায় হিমুর।



রাত ২টা। হিমু শুয়ে আছে। স্যারের খুব কাছে। একদম পায়ের কাছে। হিমু বিশ্বাস করে স্যার মরে নি। স্যার কখনো মরতে পারে না। স্যার তার সৃষ্টিকর্মে চিরভাস্বর। সদা জাগ্রত। স্যারের সমাধিস্থলের পায়ের দিকটাতে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে হিমু। স্যার আজ হিমুকে দাওয়াত দিয়েছেন একসাথে জ্যোৎস্না দেখবেন বলে। পাগলদের মাঝে নাকি চন্দ্রাকর্ষণের প্রভাব একটু বেশী বেশী। যায় হোক, স্যারের দাওয়াত উপেক্ষা করার সাহস হিমুর নেয়। গুরু আর শিষ্যের এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন। আত্মার বন্ধন।



আজ মেরুপ্রভা। মেরুপ্রভা প্রকৃতির এক সৌন্দর্যের নাম। জ্যোৎস্না রাতে আরও মায়াবী হয়ে ফুটে উঠেছে মেরুপ্রভা। আকাশে ভরা চাঁদ, জ্যোৎস্না ঢেলে দিচ্ছে নুহাশ পল্লীর আনাচে-কানাচে, দিঘী লিলাবতীর বুকে জ্যোৎস্না প্রতিফলিত হওয়ার ফলে মনে হচ্ছিল হিমু জ্যোৎস্নার গন্ডী পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে কোনো এক বৈকুণ্ঠের দিকে।



হিমুর কানে ভাসে তার খুব প্রিয় একটা কবিতার লাইন-



"তোরা কে যাবি বল জ্যোৎস্না স্নানে,

আয় আয় আয়।

সে এক চাঁদনী পশর রাতে

ছুটি টলমল পায়ে,

সে যে ডাকে ধরা তলে

আয় আয় আয়।।"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.