নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I\'m learning a lot about myself being alone, and doing what I\'m doing.

তুষার দেবনাথ

আমি নিজেই জানিনা, আমি আসলে কি।

তুষার দেবনাথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা নিরন্তর !!!

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫১

১.
তনয়া, এই শহরের প্রতিষ্ঠিত গাইনোলজিস্ট। প্রতিদিন বিকাল থেকে রোগী দেখা শুরু হয়। চলে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। একটানা কাজের ফাঁকে দম ফেলার ফুসরত নেই বললেই চলে। রোগীর বিশাল সিরিয়ালের মধ্যে তনয়ার সবচেয়ে ফেভারিট পেসেন্ট অবশ্য একজন জলজ্য্যান্ত মানসিক রোগী। একজন গাইনোলজিস্টের কাছে মানসিক রোগী বেশ বেমানানই বলা চলে। কিন্তু বেমানান যতই হোক এই রোগী পুরোপুরি ফিক্সড। ঝড়, বৃষ্টি-বাদল, হরতাল-অবরোধ যাই-ই হোক এই পাগলটার সিরিয়াল ধরাই লাগবে।

তনয়ার বিয়ে হয়েছে চার বছর হলো। ডাক্তারি ক্যারিয়ার তিন বছর। এই মানসিক রোগীটাকে সে আট বছর পাগলের মত ভালোবেসেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সম্পর্কের প্রণয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে সে এবং সে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আর যাই হোক ভালোবাসাটাকে সে আজও বুকে ধারণ করে আছে সমহিমায়, চিরভাস্বররূপে। এতটুকু কমতি সে করে নায়। আর করবেও না।

রাত ১০টা বেজে গেছে। রোগীর সিরিয়াল শেষের পথে। আজ এখনও মানসিক রোগীটার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন সুইচড অফ বলছে। বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে তনয়া। এর আগে কখনো তো এমন হয়নি। আজ যে কি হলো বুঝতে পারছে না একেবারেই। রোগী দেখা শেষ। মিনিট বিশেক পায়চারি করে হামিদ চাচাকে ডাক দেয় তনয়া।

-চাচা, বাইরে আর কোনো রোগী আছে?
-না, মা।
-ফোনে নিলয় নামের কেউ সিরিয়াল দিয়েছিল?
-নাহ। এই নামে তো আজ কেউ সিরিয়াল দেইনি।
-চাচা, আপনি একটু ভাল করে মনে করে দেখুন তো।
-নাহ মা। আমার যতদূর মনে পড়ে কেউ ফোনও করেনি। কোনো সমস্যা? বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তোমাকে।
-নাহ চাচা। আপনি এককাপ চা খাওয়াতে পারবেন আমাকে?
-আচ্ছা, আনছি মা।

১১টা বেজে গেছে। বাসার দিকে রওনা দিতে হবে। প্রত্যর্থী (তনয়ার একমাত্র মেয়ে) এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। গাড়ি বের করে রওনা দেয় তনয়া। আজকের মত এত দুঃশ্চিন্তা, এত খারাপ তনয়ার কক্ষনোই লাগেনি। গাড়ির গ্লাসে মাথা রেখে অঝোরে খানিকক্ষণ কেঁদে নিল ও। বাসায় যেয়ে কাঁদার উপায় নেয় মোটেও।

২.
রাত ৯টা ৪৫মিনিট। অফিস থেকে বের হতে বেশ লেইট হয়ে গেছে আজ। অফিসের বসটা খুবই খচ্চর টাইপ। ভাবতে ভাবতে বের হয় নিলয়। তনয়ার আবার বাসায় যেতে লেইট না হয়ে যায়। নিশ্চয় অপেক্ষা করে বসে আছে মেয়েটা।

বাইক বের করে তড়িঘড়ি করে রওনা দেয় ধানমন্ডি। ইবনে সিনার উদ্দেশ্যে। বাইকের মিটারের কাঁটা ৭০-৮০কিমি/ঘন্টা অতিক্রম করে ৯০কিমি/ঘন্টা ছুঁইছুঁই। অন্যমনস্ক থাকায় হঠাতই সামনে আসা ট্রাকের সামনাসামনি সজোরে ধাক্কা দেয় নিলয়ের বাইক।

নিলয়ের বন্ধু-বান্ধব বেশ ব্যতিব্যস্ত। ঢাকা মেডিক্যালের এপাশ আর ওপাশ করে বেরাচ্ছে। পাগলের মত। ফোনের পর ফোন যাচ্ছে। সবজায়গাতে। প্রচুর রক্ত লাগবে, প্রচুর। হেলমেট না থাকায় মাথার আঘাতটা বেশ গুরুতর। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বমি হয়েছে বেশ কয়েকবার। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। কিছুতেই না। ডাক্তারেরাও খোলসা করে বলছে না কিছুই। কিছুক্ষণ আগে নাকি কান দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। অবস্থা আসঙ্খাজনক।

বৃষ্টি হচ্ছে তুমুল বৃষ্টি। নিলয়ের বন্ধু-বান্ধব সবাই ভিজছে। কেন ভিজছে কেউই জানে না। হয়তবা অকারণেই। হয়তবা চোখের জল আর বৃষ্টির জল এক করে দেওয়ার জন্যই।

রাত ১২টা প্রায়।।

তনয়ার মোবাইলে এসএমএসের বিপ টোন। এসএমএস সেন্ডার নিলয়ের বন্ধু শাওন।

“Tonoya, tomar okhane jauar pothe Niloy bike accident korechilo…amra sobai DMC tei asi….o r nei….we tried our best to save him,but failed. Sorry.”

টেক্সট পুরোটা পড়তে পারে না তনয়া। তার আগেই ঝাপসা হয়ে আসে চোখ। শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে তনয়ার। বুক ভেঙ্গে কান্না আসছে। দৌড়ে ওয়াশরূমে যায় তনয়া। বাইরে থেকে শুধু শোনা যায় বালতি ভর্তি হওয়া পানির অনবরত উপচে পড়া শব্দ। সঙ্গী হয় বাইরের অজস্র শ্রাবণ। তুমুল বৃষ্টির শব্দ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:১৭

অবুজ বালক বলেছেন: অসাধারণ........

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩১

তুষার দেবনাথ বলেছেন: ধন্যবাদ @অবুজ বালক

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

আমিনুর রহমান বলেছেন:



সুন্দর +++

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার দুঃখনীয় গল্প । পড়ে ভাল লাগলো । :)

৫| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:২১

তুষার দেবনাথ বলেছেন: ধন্যবাদ @আমিনুর রহমান এবং কলমের কালি শেষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.