নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিজেই জানিনা, আমি আসলে কি।
-স্যার, অনেক রাত হয়েছে। আপনার কি আরো লাগবে?
-হু, ও। তুমি! আচ্ছা, তোমাদের এখানে পেগ সিস্টেম নেয়, তাই না?
-না স্যার। হাফ লিটারের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে।
-আচ্ছা, যাও নিয়ে আসো।
-স্যার, কিছু মনে করবেন না। আজ আর না খেলে হয়না?
-শাট আপ। যা বলছি তাই করো। যাও।
পি-ককের লাল-নীল আলো আর ধোঁয়াশা টাইপ পরিবেশটা এই অবস্থার জন্য বেশ মানানসই বলা যায়। আমজাদ সাহেবের শেষ বোতল চলছে। গুলিস্থান থেকে বহু কষ্টে ম্যানেজ করা চার স্পিকারের বিশাল কর্কশ সাউন্ডের চায়না মোবাইলে একনাগাড়ে বেজে চলেছে সানি লিওনের 'বেবি ডল'। আমজাদ সাহেব এখানকার রেগুলার কাস্টমার। মাঝে মাঝে তার মনস্তাত্বিক মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালো লাগে। তাই এখানে আসেন।
আমজাদ সাহেব মরে গেছেন অনেক আগে। না শারীরিক মৃত্যু নয়, মনস্তাত্ত্বিক মৃত্যু। পৃথিবীর বিখ্যাত সব ব্যক্তি যাঁরা মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছেন তাঁরা সকলেই নাকি আলো জাতীয় কিছু না কিছু দেখেছেন। আমজাদ সাহেবও এখন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি; মনস্তাত্বিক মৃত্যুর। তবে তিনি কোনো আলোকপুঞ্জ, নক্ষত্ররাজি, অগ্নিকুন্ড কিছুই দেখতে পারছেন না। একটুখানি কষ্ট দেখতে পারছেন। এই কষ্টের কোনো রঙ নেয়, তবে অপূর্ণতা আছে। ভালোবাসা নেয়, তবে মায়া-মমতা আছে। কান্না নেয়, তবে বুক ফাটা আর্তনাদ আছে। লাশ নেয়, তবে তীব্র গন্ধ আছে। আছে বদলে যাওয়া মানুষের পচে তীব্র গন্ধ হয়ে উপচে ওঠা নাভিশ্বাস।
আমজাদ সাহেবের মতে, আধ্যাত্মিকতা কোনো বিশেষত্ব নয়। আধ্যাত্মিকতা বুঝতে মহাপুরুষ হওয়ার প্রয়োজন নেয়। অতি সাধারণ গোছের কেউ খুব অল্প সময়ের জন্য আধ্যাত্মিকতা অনুভব করতে পারেন। আমজাদ সাহেব এখন আধ্যাত্মিক লেভেলে আছেন। তবে তিনি মহাপুরুষ নন। তার ধারণা মহাপুরুষ সবাই হতে পারেন না। এর জন্য আলাদা যোগ্যতা লাগে। তিনি শিক্ষানবিস হিসেবে আছেন। উচ্চতর ডিগ্রী লাভের উদ্দেশ্যে নয়, অস্বাভাবিকতার মধ্যে স্রেফ সাদামাঠা স্বাভাবিকতা খুঁজতে।
আজ পনেরো বছর ধরে আমজাদ সাহেব কোনো স্বাভাবিকতা খুঁজে পাননি। এর মধ্য দিয়ে সময় গড়িয়েছে তার নিজস্ব নিয়মে, ঘনকালো মেঘ ঠিকই বৃষ্টি হয়ে অঝোরে ঝরেছে; কিন্তু স্বাভাবিকার্থে প্রকৃতির নিয়মে যার কাছে আসার কথা অস্বাভাবিকভাবে সেই হারিয়ে গিয়েছে অহেতুক। অসীম শূণ্যতায় অভাব নেয় কিচ্ছুর। স্বান্তনা নেই; আছে আধ্যাত্মিকতা। খুব স্বাভাবিক কিছু অস্বাভাবিকতা। যা অন্যকে সুখী রাখে অন্যের দ্বারা, নিজ অনিষ্টে ক্রমাগত। নিরর্থক কিছু বাক্যের অর্থ খুঁজতে পার করে দেয় অনেকটা সময়। তবু খোঁজা শেষ হয় না। পাছে যদি কিছু খুঁজে পায়; এই উদ্দেশ্যে। চলতে থাকে বহুদূর, আমজাদ সাহেবদের মহাপুরুষ হওয়ার পথে, আধ্যাত্মিক নিয়মে। শারীরিক নয়, মনস্তাত্বিক মৃত্যুতে। শেষ মৃত্যুতে। ক্রমাগত অন্তহীন দূর্গম পথে। সীমাহীন নষ্টাতীত ভবিষ্যত ছাড়িয়ে নক্ষত্রবেগে চক্রাকারে ঘুরে আসা স্মৃতি-সমুজ্জ্বল চিরচেনা উজ্জীবিত সেই অতীতের পথে। অনন্তকাল।
নিয়ন আলোয় ম্লান হয়ে যাওয়া চাঁদের আলো, অস্পষ্ট কিছু সুখের সাথে অ্যালকোহল মিশানো কিছু দুঃখ আর অতি পরিচিত রাস্তাটাও শেষমেষ হারিয়ে ফেলার সাথে বেড়ে চলেছে রাত। হাজার বছরের সেই পুরোনো রাত।
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:৩২
মহান অতন্দ্র বলেছেন: চমৎকার
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৩৯
তুষার কাব্য বলেছেন: ভালো লেগেছে...নামটাও দেখি মিলে গেছে...
৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৪২
তুষার দেবনাথ বলেছেন: ধন্যবাদ। @বাড্ডা ঢাকা এবং মহান অতন্দ্র।
আপনকেও ধন্যবাদ মিতা। @তুষার কাব্য।
৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:১০
কলমের কালি শেষ বলেছেন:
৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:১০
তুষার দেবনাথ বলেছেন: কি হলো ভাই। আপনি দুঃখিত কেন? @কলমের কালি শেষ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:০২
বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: চমৎকার লেখা