নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I\'m learning a lot about myself being alone, and doing what I\'m doing.

তুষার দেবনাথ

আমি নিজেই জানিনা, আমি আসলে কি।

তুষার দেবনাথ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের ডায়েরী

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৪

১.

শনিবার; রাত ৩টা ৩০মিনিট।

স্মার্টফোনে নোকিয়া ৩৩০০ এর কর্কশ রিংটোনের অ্যালার্ম অফ করেই তড়িঘড়ি করে আবার ঘুমিয়ে পড়ার ভান ধরলাম। রুমের দরজা সামান্য খোলা থাকায় রান্নাঘর থেকে হাড়ি-পাতিলের শব্দ কানে আসছে। অভ্যাসবশত ভালো না লেগে অসম্ভব খারাপ লাগছে।


-বাবুরে, ওঠ। ৪টা বেজে গেছে। (মিথ্যা কথা)

-না। যাও তো। ডিস্টার্ব করো না। উঠতে ইচ্ছা করছে না।

১৫ মিনিট পর...

-ওঠ...ওঠ। আর টাইম নেই।

-মা, তুমি না। এত তড়িঘড়ি করার কিছু নাই তো।

-ওঠ বাবু। খেয়ে নে। গরম ভাত। ভাল্লাগবে। এতটা পথ জার্নি করবি। ওঠ, খেয়ে নে।


চোখে-মুখে অসম্ভব বিরক্তি নিয়ে উঠে প্রথমেই চোখ পড়ে গোছানো ব্যাগটার দিকে। চলে যেতে হবে। কেন যেন যাওয়া-আসার এই নিরন্তর মায়াটাই আমি অভ্যেসে পরিণত করতে পারলাম না। প্রতিবারের খারাপ লাগা পূর্বের খারাপ লাগাকে যাচ্ছেতাই ভাবে হার মানায়।

-(খাওয়ার সময়) বাবুরে, একটু ভাত-তরকারী দিয়ে দিই। খালা আসবে কি আসবে না।

-দেখ মা। এইসব টানা-হ্যাঁচড়া আমার একদম ভাল্লাগে না।

-আরে দেখবি তো। এমন ভাবে দিব তোর কোন প্যারায় লাগবে না। খুলে খেয়ে নিবি।

-না মা। কোন দরকার নেই।

-(কিছুক্ষণ পর) একটু ঘি দিয়ে দিই। একদম খাঁটি ঘি। তোর বাবাকে দিয়ে নিয়ে আসাইছি।

-আচ্ছা দাও।

-আমাদের তো দুইটা চার্জার লাইট। একটা দিয়ে দিছি।

-ঢাকায় কারেন্ট যায় না। কি দরকার ছিল! বুঝি না।

-ব্যাগের সাইড পকেটে শ্যাম্পু দিয়ে দিছি কয়েক প্যাকেট।

-বোতল ভর্তি শ্যাম্পু আছে। তারপরেও!!!

-শীতের জামা-কাপড়ও সব দিয়ে দিছি। (আমি ভুলেই গেছিলাম!)

-ভালো করছ। আমার তো মনেই ছিল না।


বাড়ি থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত এই প্যানপ্যানানি চলতেই থাকবে অবিরাম। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে সোজা রাস্তা বড় রাস্তার সাথে মিলেছে। ভোর বেলা রাস্তা ফাঁকা থাকায় মা রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। আমি ধমক দিয়ে বাড়ির ভিতরে যাওয়ার কথা বলেই পা বাড়ায়।
পুরোটা রাস্তা অতিক্রম করার সময় আমি একটি বারের জন্যেও পিছনে তাকায় না। একটি বারের জন্যেও না। আমার যে অনেক ভয় আছে। অনেক ভয়। অনেক কষ্ট! অনেক মায়া! পিছনে না তাকিয়ে আমি সব মায়া অস্বীকার করি। কিন্তু আমি পিছনের সব কিছু পরিস্কার দেখতে পারি।


২.

শনিবার; রাত ৩টা ৪৫মিনিট।

বাবা ঘুম থেকে উঠে পায়চারী করছে। এত ভোরে সচরাচর তিনি ওঠেন না। তার নাকি কয়েকদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে (মিথ্যা কথা)। কিছুক্ষণ পর পায়চারী থামিয়ে দিয়ে বাইরে চৌকির উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। মিনিট পাচেক পর উঠে। কি বিশাল এক অস্থির হাহাকার কাজ করছে তার ভিতর। আমি যেন বুঝেও বুঝতে চাইছি না।


-বলছি, আমি যাই তোর সাথে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত।

-না লাগবে না। আমি কি এখনও ছোট আছি নাকি। বাস কখন আসে না আসে ঠিক নাই। এতক্ষণ অপেক্ষা করা লাগবে না। আমি একাই যেতে পারব।

-না যাইই। রাস্তা ফাঁকা। কি হয় না হয়। একা একা যাবি।


বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। বাবা ঘড়ি দেখছে বারবার। আমার বাস ৪টা ৩০ এ।

৪টা ২৫ এর দিকে...

-আচ্ছা আমি যাই। খেয়াল রাখিস নিজের দিকে।

-ঠিক আছে বাবা।

-বলছিলি চাকরি-বাকরি না হলে আসা কমিয়ে দিবি। ওসবের দরকার নাই। আমরা তো কখনোই কোন চাপাচাপি করি নাই। প্যারা নেওয়া লাগবে না। যখন খুশি চলে আসিস। পূজাতে না আসলেও শীতের ভিতর আসিস।

-আচ্ছা আসব।


বাবা হাঁটা শুরু করেছে। আমি জানি বাস ছাড়া পর্যন্ত সে থাকতে পারবে না। এই অসীম শক্তি সৃষ্টিকর্তা তাকে দিয়ে পাঠান নি। লোকটা বুড়ো হয়ে গিয়েছে। যে টানটান চামড়ার উপরে মাথা দিয়ে একদিন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছি সে চামড়া বড্ড বুড়িয়ে গিয়েছে।

বাবার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমি সিগারেট ধরালাম। আমি জানি সে পিছনে তাকাবে না। আমার নিকোটিনের খুব বেশিই দরকার ছিল। পারছিলাম না। কি নিষ্ঠুর মাইন্ড গেম! মর্মান্তিক! সবাই সবার থেকে নিজেকে লুকিয়ে বাঁচতে চাইছে। কিন্তু কেউই সফল নয়। তাও সবাই জানে। অসাধারণ!!!

৩.

আগের দিন, শুক্রবার; রাত ৮টা ৩০মিনিট।

-দোস্ত, বাসায় ঢুকতে হবে।

-আরে চলেই তো যাবি। থাক কিছুক্ষণ।

-না দোস্ত, বাসায় রাগারাগি করবে।

-আরে দশ মিনিট। আরেকটা সিগারেট টেনে ঢোক।

-দে।

-পূজায় তো আসবি না। মন খারাপ থাকবে। আচ্ছা যা, আমিই আসব নে।

-ওকে আসিস।

-শীতের ভিতর আসবি তো?

-জানি না।


প্রতিদিনের মত সরাসরি বাড়ির রাস্তায় বাইক না ঢুকিয়ে আরও কিছুক্ষণ একসাথে থাকার প্রচেষ্টা হিশেবে পুরো শহর ঘুরিয়ে তারপর বাসায় দিয়ে আসবে। এইসব সম্পর্কের ভিতরে যে মায়া, এতদূরে এসেও আমি তা একবিন্দু উপেক্ষা করতে পারি না। আমার ভাল্লাগে না। কষ্ট হয়। খারাপ লাগে।


৪.

শনিবার; দুপুর ১২টা ৩০মিনিট।

ঢাকায় পৌঁছেছি। যথারীতি খালা আসে নায়। খাবার রেঁধে খেতে হবে। বাসায় কেউ নেই। বারবার মায়ের কথাটা মনে আসছিল, “বাবুরে, একটু ভাত-তরকারী দিয়ে দিই। দেখিস, এমনভাবে দিব তোর কোন সমস্যায় হবে না। শুধু প্যাকেট খুলে খেয়ে নিবি”

আমার মন খারাপ হচ্ছে। অসম্ভব মন খারাপ। একা একা লাগছে। জানি, ইহাই নিত্তনৈমত্তিক; ইহাই চিরন্তন। কিন্তু ওই যে, এত মায়া উপেক্ষা করার মত অসীম ধৈর্য্য, অশেষ ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়নি। সময়ের খেলায় সবই ভুলে যাব যেমন ঠিক, অনেক কিছুই আছে যা কখনোই ভুলতে পারব না সেটা আরো বড় ঠিক। অনেক বড় ঠিক।

আমার মন খারাপ! আমার কষ্ট হচ্ছে। বাড়ি থেকে চলে আসার জন্য নয়; চরম অনিশ্চয়তা অমানিশায় হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট। পরাজিত হওয়ার কষ্ট। মন খারাপের কষ্ট!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৩

বোরহাান বলেছেন: দীর্ঘশ্বাস!

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪২

তুষার দেবনাথ বলেছেন: জ্বি ভাই, দীর্ঘশ্বাস। :(

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪০

খায়রুল আহসান বলেছেন: হৃদয়স্পর্শী!

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪৪

তুষার দেবনাথ বলেছেন: বাড়ি থেকে বের হয়ে আসা অনেকের গল্প।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, ভাই। :)

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:২২

মেহেদী হাসান জাহিদঅ বলেছেন: আসলেই খারাপ লাগার মতো

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪৫

তুষার দেবনাথ বলেছেন: :(

৪| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: খারাপ লাগার কথাই।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৫০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
গল্প পড়ে আমি সাধারণত মন খারাপ করিনা। কিন্তু এই লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। প্রতিটা ঘটনার সাথে নিজেকে মিলাচ্ছিলাম।
অদ্ভুত একটা শূন্য অনুভূতি ভর করেছে নিজের উপর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.