নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উননুর

সামাইশি

সময় বয়ে যায়, ক্ষয়ে যায় জীবন, মন, সৃষ্টি, ক্লেদের গ্লানি জমা হোল যত যথাপি ঝরে যায় বৃষ্টি।

সামাইশি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৩




বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার
২০১৫ সালেও বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতির প্রধান খাত হচ্ছে কৃষি। জনসংখ্যার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োজিত। মোট কৃষি উত্পাদনের জিডিপিতে অবদান ১৭% ও মোট শ্রম শক্তির ৪৮% এতে নিয়োজিত। মোট কৃষি উত্পাদনের ৭২% শস্য, ১৭% গবাদি পশু ও ১০% বনজ উত্পাদন। কৃষি খাত দেশের দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্ত্যা ও কর্ম সংস্থানে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে। বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় জমির স্বল্পতা। এ দেশে দিনে দিনে আশংকা জনক হারে চাষাবাদ যোগ্য জমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। তাই একর প্রতি সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথা ইতিমধ্যে তা বহুলাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এখনো তা সর্বোচ্চ পরিমানে নয় অর্থাত ফলন অর্জনের বিপুল ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে। উত্পাদন বৃদ্ধির জন্য এ দেশের কৃষক তাঁর নিজের প্রয়োজনে কৃষিপণ্য উৎপাদনে নানা বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছেন। পৃথিবীর এক হাজার ভাগের এক ভাগ ভূমি আছে বাংলাদেশে, তার বিপরীতে জনসংখ্যা আছে এক হাজার ভাগের ২৪ ভাগ। তা সত্ত্বেও নানা উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে কৃষকেরা এ দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও এদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে সরকার ও তার বিভিন্ন সংস্থা (গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহ), শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারী সংস্থা সমূহ নতুন নতুন নানা পদ্বতি উদ্ভাবনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এই সমস্ত প্রয়াস যাতে কৃষকের কাছে সঠিক উপায়ে সঠিক সময়ে নিশ্চিত করে পৌছানো যায় তার জন্য কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ কৃষি তথ্য সংস্থা খবরের কাগজ টিভি রেডিও নিয়োজিত রয়েছে। তা সত্ত্বেও এ সকল প্রয়াসের সীমাবদ্ধতা পরিস্ফুটমান। যেমন অপেক্ষাকৃত উচ্চমূল্যে ভোগ, ভৌত অবকাঠামো স্বল্পতা এবং অনেক ক্ষেত্রে দুরুত্ব।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির চরম উত্কর্ষের যুগে তথ্য সরবরাহের এক অসীম দুয়ার খুলে গেছে মুঠো ফোনের আবির্ভাবের মাধ্যমে। মোবাইল ফোনের স্বল্প মূল্য ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর ব্রিস্তৃতি কৃষি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি কৃষকের দোর গোড়ায় ব্যক্তিগত ভাবে পৌছানো খুবই সহজ হয়েছে। এই নতুন তথ্য ও প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় সঠিক ভাবে পৌছাতে ও আত্মস্থ্ব করতে পারলে বাংলাদেশের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যমান অন্যান্য উপায় হতে মুঠো ফোনের মাধ্যমে কৃষক অল্প খরচে নিজের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পেতে পারে বিশেষ করে তাদের বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার মাধ্যমে। এতে করে কৃষকের মধ্যে প্রযুক্তি গ্রহনের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে অনেক সংখ্যক প্রতিবেশীর সাথে প্রযুক্তি চাক্ষুষ করার মাধ্যমে। কৃষি উত্পাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে মাটি, আবহাওয়া, কীটপতঙ্গ, রোগ বালাই, ফসল সংগ্রহ, গুদামজাত ও বাজারজাত করণ এর বিচিত্রতা এবং আরো নানাবিধ কারণে কৃষকের নিকট বিভিন্ন তথ্য খুবই জরুরি। বিশেষ করে কোন নতুন প্রযুক্তি গ্রহনের বেলায়। কৃষি সম্পর্কিত যে কোন তথ্যকেই কৃষি তথ্য বলা যেতে পারে। যেমন কৃষি সম্পদ: জমি, মাটি, পানি ও আবহাওয়া কৃষি বিনিয়োগ: মূলধন, শ্রম, বীজ, সার, কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি এবং শস্য উত্পাদন প্রযুক্তি, গবাদি পশু ও মত্স্য পালন, খামার ব্যবস্থাপনা, শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আরো অন্যান্য কৃষি পণ্য সমূহ। কৃষি উন্নয়ন ও উত্পাদন বৃদ্ধিতে তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে যাতে কৃষক, কৃষি গবেষনাগার ও সম্প্রসারণ কর্মীর মধ্যে মেলবন্ধন রচনা হতে পারে। সঠিক সময়ে কৃষক সঠিক ও নিশ্চিত তথ্য পেলে তার সিদ্বান্ত গ্রহণ সহজ হয় ও তার তুলনামূলক পারদর্শিতা বৃদ্ধি পায় যা কিনা বর্ধিত কৃষি উত্পাদন ও উত্পাদনশীলতা বাড়ানোর সহায়ক। স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত তথ্য ও কারিগরী জ্ঞানের অভাবে নিশ্চিতভাবেই ফলন কম হয়। বাংলাদেশের চাষীদেরকে সাহায্য করার জন্য কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের স্বার্থে তাই তথ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে বা গুরুত্বের দাবি রাখে। একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে চাষীদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে সর্বশেষ তথা সর্বাধুনিক তথ্য তাদের কাম্য।
এখন দেখা যাক বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের জনগনের কি কি তথ্যের চাহিদা থাকতে পারে। সবচেয়ে প্রথমে বলা যায় বাজারজাত তথ্য যেমন মূল্যের উঠানামা চাহিদা ও সরবরাহের পরিমান। সঠিক তথ্যের অভাবে বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রামান্চলেই কৃষকেরা পানির দরে তাদের পণ্য ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে দেয়। তারপরে বলা যায় জমির দলিলের তথ্য ভান্ডারে প্রবেশাধিকার ও অনলাইন রেজিস্ট্রিকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ। বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে কত সাধারণ মানুষ টাউট বাটপারের খপ্পরে পড়ে তাদের সর্বস্ব জমি জমা খুইয়েছে তার ইয়ত্তা নাই। তারপর পর্যায়ক্রমে তাদের যে সমস্ত চাহিদার কথা বলা যায় যেমন "ফাক" অর্থাত প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও তার উত্তর। তাদের নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কিত তথ্য ও সরকারী বরাদ্দের পরিমান। আবহাওয়ার পূর্বাভাস যথা ঝড় বন্যা বৃষ্টি খরা। বিভিন্ন শস্য চাষাবাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্বতি ও তাদের সমন্বিত উত্পাদন ব্যবস্থার তথ্য, শস্য সংগ্রহের পরবর্তী করণীয় প্রযুক্তি সমূহ, কৃষি সম্পর্কিত সাধারণ খবর সমূহ, কৃষি খামার ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, কৃষি উপকরণের মূল্য ও সহজলভ্যতা, রোগ ও পোকা মাকড়ের আগাম সতর্কতা ও দমনের উপায়, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম ও মাটি পরীক্ষণ। এখন বাংলাদেশে তথ্য সরবরাহের পরিস্থিতি নিরীক্ষণ করা যাক। আগেই বলা হয়েছে এ দেশে কৃষি ফলন বৃদ্ধির এখনো সুপরিসর অবকাশ রয়েছে। সম্ভাব্য উপায় হচ্ছে উন্নততর প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন উন্নত মানের বীজ, সুষম সার, সমন্বিত রোগ বালাই দমন, ও সর্বাধুনিক শস্য উত্পাদন কৌশল। সেই সুপরিসর অবকাশের মধ্যে আমরা বলতে পারি এখনো বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে তথ্য ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পল্লী উন্নয়নের সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী উপকরণ হচ্ছে বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞান। এই তথ্য ও জ্ঞান এ দেশের খাদ্য নিরাপত্ত্যা নিশ্চিত করতে পারে ও পল্লী উন্নয়নে ভুমিকা রেখে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনে সহায়ক ভুমিকা রাখতে পারে। পল্লী উন্নয়ন কেবল কৃষি উন্নয়ন নয় বরঞ্চ কৃষি, শিল্প, সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করে গ্রামের জনগনের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সেই সাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জিডিপি ও মাথা পিছু বার্ষিক আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে। ছোট আমাদের এই বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উত্পাদন ও সম্প্রতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন প্রমান করে গ্রামের জনগনকে তথ্য, জ্ঞান ও সেবা পৌছানো নিশ্চিত করতে পারলে তারা কৃষি উন্নয়ন ও তার পরিধি বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে। আজকে চল্লিশ বছর আগের কৃষি আর এখনকার কৃষির তুলনা করলেই তা পরিস্কার হবে।
দেশে বিদ্যমান প্রচলিত সম্প্রসারণ ব্যবস্থায় সরকার অনেক দিন থেকেই মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তির বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু তা কখনই সর্ব পর্যায়ে ও সর্বস্তরে পৌছায় নাই ও কার্য্যকরী ও গ্রহনের মাত্রা খুবই কম। প্রচলিত গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য বিস্তার আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে বেশ সাফল্য লাভ করেছে। মাধ্যমে সমূহের মধ্যে রয়েছে প্রিন্ট মিডিয়া, রেডিও, টেলিভিশন, ভিডিও, তথ্য চিত্র, স্লাইড, পোস্টার, লোকনাট্য, সভা, আলোচনা, মাঠ ভ্রমন, মাঠ দিবস ও প্রদর্শনী। দু:খজনক হলেও সত্য, প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশন ব্যতিরেকে সরকারের অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে কৃষি ও গ্রাম উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ ততটা সাফল্য লাভ করে নাই। এর নানাবিধ কারণ রয়েছে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে যা সহজেই অনুমেয়। যেমন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের একজন সম্প্রসারণ কর্মীর যে কাজের পরিধি তাতে করে সে নিশ্চিত করেই হাজার হাজার চাষীর ব্যক্তিগত নানা বিচিত্র রকমের কৃষি পরামর্শ প্রদানে অক্ষম। অন্তর্জাল এক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে আমাদের চোখের সামনে। গ্রামের জনগণ চায় অত্যন্ত সঠিক সময়ে কম খরচে সুনিদৃষ্ট ভাবে তার জিজ্ঞাসার উত্তর বা তথ্য। বর্তমান অন্তর্জাল দুনিয়ার তথ্য প্রযুক্তি প্রচলিত গণমাধ্যমের সাথে একত্রিত হয়ে দিতে পারে আমাদের সে সমস্যার সমাধান। ইন্টারনেট ব্যবহার ও সম্প্রতি মোবাইল ফোনের দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে যাওয়ায় গ্রামের জনগনের নিকট সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। এতে সবচেয়ে যে সুবিধা হোল, একজন কৃষক তথা গ্রামের মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহনের সঠিকতা। তাছাড়া বাজার পর্যবেক্ষণ যা কৃষকের উত্পাদিত পণ্যের সুলভ মূল্যের জন্য খুবই জরুরি, গ্রামীন জনগনকে সুসংঘটিত করা ও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগে গ্রামীন জনগনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীন অনেক মহিলা গ্রামীন ব্যান্ক থেকে স্বল্প পরিমানে ঋণ নিয়ে মুঠো ফোন কিনে টেলিফোন সেবা দিচ্ছে পাশাপাশি নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করছে। যার অধিকাংশ ফোন কলই কৃষি ও কৃষি ব্যবসা সম্পর্কিত, প্রবাসী অর্থ ও কর্ম সংস্থানের সুযোগের খবর। এখন দেখা যাক আমরা অন্তর্জাল তথা তথা প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য কতটুকু তৈরী। কয়েক বছর আগে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশ সমূহের মধ্যে নেটওয়ার্ক রেডিনেসের সূচকে ৭১ তম। অর্থাত সক্ষমতার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা, স্বাক্ষরতার নিম্ন হার, দুর্বল টেলিকমুনিকেসন ভৌত অবকাঠামো, অপর্যাপ্ত ও অকার্যকর টেলিকমুনিকেসন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ও নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমূহ এর কারণ। কাকতলীয় ভাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের সুচক ৭৩। অর্থাত নেটওয়ার্ক রেডিনেস তথা তথ্য প্রযুক্তির বিস্তার লাভ করাতে পারলে আমাদের মানব উন্নয়ন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এখন তথ্য প্রযুক্তি খাত সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপ বা গৃহীত নীতি কিছুটা আলোকপাত করা যাক। বর্তমান সরকার এ খাতকে থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে আইটি নীতিমালা প্রনয়ন করা হয়েছে। নীতিমালায় এ দেশে ২০১০ সালের মধ্যেই সমস্ত দেশে তথ্য প্রযুক্তির বিস্তার করার কথা বলা হয়েছে। যাতে করে যাতে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ তথ্যের প্রবেশাধিকার পায়। তথ্যের কার্য্যকরী আদানপ্রদান কৃষি উন্নয়ন ও উত্পাদনে ভুমিকা রাখার পাশা পাশি কৃষক, কৃষি বিজ্ঞানী, ও সম্প্রসারণ কর্মীর মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন তৈরী করে। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বলা যায় সমন্বিত গ্রাম ভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন সকল সংস্থা যেমন সরকারী, বেসরকারী ও বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে তরান্বিত হতে পারে। এই প্রসঙ্গে টিভি চ্যানেল গুলোর কথা বলা যেতে পারে, কিছু চ্যানেল বিশেষ করে চ্যনেল আই এর কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এ দেশের কৃষি উন্নয়নে, গ্রামীন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে, বিনোদনে, শক্তিয়ায়নে এক অভাবনীয় ভুমিকা পালন করছে। এ অনুষ্ঠানটির কল্যানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিদৃষ্ট ফসলের ক্ষেত্রে এক একজন লিজেন্ড আমরা দেখতে পাচ্ছি। শুধু তাই নয় কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্রেই, অর্থনীতি, ব্যবসা, গবেষণা, সম্প্রসারণ এ ভুমিকা রেখে চলেছে। চ্যানেল আইয়ের সাফল্যকে মাথায় রেখে পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা ও সরকারকে সমন্বিত করে সারা দেশে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ বিস্তার করা উচিত।
কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি নিন্মোক্ত ক্ষেত্র সমূহে প্রয়োগ হতে পারে। যেমন কৃষি উত্পাদকেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গ্রামীন সমাজের উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগ, শিক্ষা ও গবেষণা, অন লাইন শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রকল্প পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন, নিরীক্ষণ, সমস্যা সনাক্তকরণ ও সমাধান প্রদান। তাছাড়াও গণমাধ্যমের নেটওয়ার্ক, গবেষক, সম্প্রসারণ কর্মী, ও কৃষকের মধ্যে সংযোগ। কৃষি পণ্যের ই ব্যবসা, পল্লী এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন সুনিদৃষ্ট বিষয়ের তথ্য ভান্ডার তৈরী, টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে কৃষককে শিক্ষা দান, ও বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট এর মাধ্যমে সম্প্রসারণ কর্মীর জন্য সর্বশেষ তথ্যের উপস্থাপনা। বাংলাদেশ সরকার প্রায় এক দশক আগে থেকেই দেশের কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। কৃষি তথ্য সংস্থার পাশা পাশি রেডিও ও টিভিতে কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, কমুনিটি রেডিও, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রর মাধ্যমে কৃষক ও গ্রামীন মানুষের সেবা দিয়ে আসছে। কৃষি তথ্য সংস্থা ২০১০ সালে বাংলা লিঙ্ক ও UNDP এর সহায়তায় SMS ইনফরমেসন সার্ভিসের সুচনা করে। এর আগে ২০০৩ সালে ICT টাস্ক ফোর্সের সাহায্য নিয়ে কৃষি তথ্য ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়, তবে তা ডাটাবেসের স্বল্পতা ও অন্যান্য কারণে সাফল্যের মুখ দেখে নাই। ২০০৮ সালের অক্টোবর হতে ই-কৃষি যা ই-কৃষক নামে পরিচিত এর উদ্যোগ নেয়া হয় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কম খরচে সেবা দানের। ২০০৯ সালে কৃষি মন্ত্রনালয় UNDP এর সহায়তায় দেশের ২০ টি অঞ্চলে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করে, পাশা পাশি কৃষি তথ্য সংস্থা ওই সমস্ত এলাকায় ১০ টি কৃষক জনগোষ্ঠি ভিত্তিক কল সেন্টার চালু করে (ইবাংলাদেশ এক্সপো ২০১৩) । এতদসত্তেও বাংলাদেশের কৃষকগণ এখনো হাল নাগাদ তথ্য ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা আরো সহজ উপায়ে তথ্য পেতে চায়। এক্ষেত্রে মোবাইল আয়াপস হতে সুদুর প্রসারী সমাধান। তবে এ ক্ষেত্রে খরচের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তথ্যের তিনটি মৌলিক উপাদান সহজ লভ্যতা, প্রবেশাধিকার ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে আমাদের দেশে। এবং তা করতে হলে আমাদের দেশের গ্রামীন জনগোষ্ঠিকে শিক্ষিত, দক্ষ, সর্বত্র ভৌত অবকাঠামো, সাশ্রয়ী ও দেশ জুড়ে কৃষি তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি হচ্ছে একটি যোগাযোগের মাধ্যম বা কৌশল যা রেডিও, টিভি, কম্পিউটার, সেল ফোন, নেটওয়ার্ক হার্ডওয়ার, সফটওয়ার, ভিডিও কনফারেন্সিং, ও দূর শিক্ষণ সমন্বিত। উপরোক্ত আলোকে তাই বলা যায় বাংলাদেশে সরকার ও তার বেসরকারী সহযোগী NGOs , উন্নয়ন সংস্থা প্রত্যেকে এক যোগে বিদ্যমান ব্যবস্থা (resource ) ব্যবহার করে, দক্ষ জন শক্তি তৈরী করে কার্য্যকরী যোগাযোগ ও গ্রামীন জনগনকে সুনিদৃষ্ট মান সম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্যোগ উত্তরোত্তর আরো এগিয়ে যাবে। যাতে করে আমাদের দেশের লক্ষ্য সমূহ নিদৃষ্ট সময়সীমার মধ্যেই অর্জিত হয় কাঙ্খিত ৭/৮% প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে, যার অনেকাংশই নিশ্চিত ভাবে আসবে কৃষি ও গ্রামীন খাত থেকে। যা কেবল তথ্য প্রযুক্তির সুসমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে সম্ভব।
(লেখাটিতে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য গৃহীত হয়েছে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


ছবিতে বিলিওনিয়ার 'কৃষক'দের দেখছি।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৬

সামাইশি বলেছেন: ধারণা করছিলাম এমন মন্তব্য কেও করবেন।

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


সুট-কোট-পরা কৃষকদের ছবিটা সরায়েছেন কেন?

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮

সামাইশি বলেছেন: আপনার প্রথম মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। শুভেচ্ছা।

৩| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: সামাইশি ,




খুব সুন্দর তথ্য ও তত্ত্ববহুল পোষ্ট ।
দেশে বিদ্যমান প্রচলিত সম্প্রসারণ ব্যবস্থায় সরকার অনেক দিন থেকেই মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তির বিস্তারের চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু তা কখনই সর্ব পর্যায়ে ও সর্বস্তরে পৌছায় নাই ও কার্য্যকরী ও গ্রহনের মাত্রা খুবই কম।
কথাগুলো সত্য । অনেক ক্ষেত্রে পৌঁছে দেয়াও হয়নি । আমার মনে হয় কৃষি অধিদপ্তর তেমন করে মোটেও ভাবেন নি যেমন ভাবনার কথা আপনার লেখায় দেখা গেলো ।
এই প্রয়াসটি পাঠকের দৃষ্টির গোচরে আসুক , কিছুটা সচেতনতা তৈরী হোক , এই কামনা রইলো ।

৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯

সামাইশি বলেছেন: আপনার সু পর্যালোচনা প্রসূত মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.