নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সময় বয়ে যায়, ক্ষয়ে যায় জীবন, মন, সৃষ্টি, ক্লেদের গ্লানি জমা হোল যত যথাপি ঝরে যায় বৃষ্টি।
টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা ও বাংলাদেশ।
তিন দশক আগে থেকে বাংলাদেশে সরকার সমূহ অতি দরিদ্রদের খাদ্য সাহায্যর লক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি কার্য্যকর করে আসছে। প্রকৃত অর্থে খুবই সামান্য উত্পাদনশীলতার অর্জনে তাদের খাদ্য যুগিয়ে বাচিয়ে রাখাই এ সকল কর্মসূচির মূল লক্ষ্য বলা যেতে পারে। কর্মসূচি সমূহ হচ্ছে টেস্ট রিলিফ, VGD(Vulnerable Group Development), VGF(Vulnerable Group Feeding)কাজের বিনিময়ে খাদ্য। এবং বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদ কালে বয়স্ক ভাতা, দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান কর্মসূচি চালু করেছে। এ সমস্ত কর্মসূচির আওতায় পরিত্যক্ত ও দুস্থ মহিলা, বিধবা, এতিম ও বয়স্কদের নগদ ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিশেষে নিদৃষ্ট অঙ্কের সন্মানী প্রদান করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছর গুলিতে উন্নত দেশ সমূহে সামাজিক নিরাপত্তা বেশ জোরে শোরে আলোচিত হয়ে আসছে। তারই ফলশ্রুতিতে উন্নয়নশীল দেশ সমূহে সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছে। দারিদ্র দূরীকরণে বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই উল্লিখিত কর্মসূচি সমূহ অনুসরণ করে আসছে, যার বর্তমান সঙ্গায়ন সামাজিক সুরক্ষা বা সামাজিক নিরাপত্তা। এই সংজ্ঞার আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা সুচক (Social Protection Index ) নির্ণিত হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব দেশে। বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা সূচকের পাশাপাশি অন্যান্য মানব উন্নয়ন কর্মসূচি পরিসংখ্যান সন্তোষজনক নয়। যদিও সামাজিক নিরাপূতার বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে মাঝারি গড়ে অবস্থান করছে। কিন্তু তা দেশের মানব উন্নয়নের আশাব্যান্জক প্রতিফলন নয়। এদেশে SPI এবং HDI (Human Development Index ) এর মধ্যে তফাত -১২ যা খুবই নিরুত্সাহজনক। মজার বিষয় হোল উপরোক্ত কর্মসূচির আওতায় জনসংখ্যার পরিমান কিন্তু বিশাল। মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ফিজির মত দেশগুলোতে সামাজিক নিরপত্তার আওতাভুক্ত জনসংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম কিন্তু তাদের দেশের মানব উন্নয়ন সুচক অনেক অনেক উপরে।
বছরের পর বছর এদেশে অধিক সংখ্যক জনগনকে খয়রাতি সাহায্যের আওতায় এনে দেশের সুসমন্বিত ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যাবেনা। বিরূপ জলবায়ুর কারণে সাইক্লোন, জ্বলোচ্ছাস, ঘুর্নিঝড়, বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গন সহ বিভিন্ন কারণে প্রতি বছর জ্যামিতিক হারে খয়রাতি সাহায্য প্রত্যাশী জনসংখ্যার পুনপৌনিক বৃদ্ধি অমূলক নয়। এসব কারণে সামাজিক নিরাপত্তার আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশে নতুন করে পলিসি নির্ধারণ, কার্য্যকরী কর্মসূচি নিদৃষ্ট করে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেমন শ্রম বাজার কর্মসূচি বাংলাদেশে সর্বনিম্ন। যা ADB (Asian Development Bank) এর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যে অন্যান্য দেশসমূহের মধ্যে শতকরা মাত্র ছয় ভাগ। শ্রম বাজার উন্নয়নের পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামোর স্থায়ী উন্নয়ন, গ্রামীন ও শহরতলির জীবন উন্নয়ন বাংলাদেশকে এনে দিতে পারে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুদৃঢ় ভিত্তি।
ঢালাও ভাবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় ক্রমাগত জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্তি দেশের কোন লাভ তথা রাজস্ব যোগ হবেনা, এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিও বয়ে আনবে না। বরঞ্চ তা দেশের জন্য ধংসের কারণ হয়ে উঠতে পারে যদি বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে অতশত বিপুল জনগোষ্ঠিকে অর্থের ঘাটতি অথবা যোগানের অভাবে তাদের বিভিন্ন ভাতা নিয়মিত প্রদান অসাধ্য হতে পারে। কল্পনা করা যায় হঠাত করে এক বিশাল জনগণ (অনুত্পাদনশীল) নগদ অর্থ ও খাদ্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হলে পরিস্থিতি কি হতে পারে! খয়রাতি সাহায্য না দিয়ে টেকসই উপায়ে সমন্বিত ভাবে দেশের দারিদ্র দূর করতে হবে, তাতেই খাদ্য নিরাপত্তা ও পুস্তি নিশ্চিত হতে পারে।
টেকসই সামাজিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় মানব উন্নয়ন কর্মসূচি, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি বয়ে আনবে। নতুন নতুন উদ্ভাবন যেমন Cluster Cooperative Approach (CCA ), ইতিমধ্যে গৃহীত National Service Scheme সমন্বিত স্বেচ্ছাশ্রম (Integrated Voluntary Effort ) এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প যেমন উপকূলীয় বেড়ি বাধ, নদী ও খাল খনন, গ্রামীন রাস্তাঘাট নির্মান এর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তার ফলককে এক লাফে বহুগুন বির্দ্ধি করে দিতে পারে। স্বচ্ছতার জন্য যে কোন প্রকল্প বা কর্মসূচির বিস্তারিত জনগনের জানার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সব তথ্য অনলাইনে দিতে হবে এবং তা হতে হবে সকলের জন্য উন্মুক্ত। এর নিরিখে উপজিলা পরিসংখ্যান অফিসারকে উপজিলা তথ্য অফিসার অভিহিত করে সকল তথ্য তার কার্যালয়ে সন্নিবেশ করতে হবে। তিনি হবেন জনগনকে সকল তথ্য অবহিত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। সন্তোষজনক হারে দরিদ্রতা কমে আসলে খয়রাতি সাহায্য গ্রহনের সংখ্যা অনেক কমে আসবে, তখন কার্য্যকরী ভাবে অতি দরিদ্রদের কার্য্যকরী সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, ক্যালরি গ্রহণ তথা সর্বোপরি জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের আলোকে সামাজিক নিরাপত্তার সুচক উন্নত করতে হলে শক্তিশালী প্রশাসন অবকাঠামো, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এ সকল বিষয় পরে বৃহত আকার বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বি: দ্র: ( লেখাটিতে বিভিন্ন সূত্র হতে তথ্য গৃহীত হয়েছে। এবং এটি পরে প্রকাশিতব্য মূল লেখার সংক্ষিপ্ত রূপ।)
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৫
সামাইশি বলেছেন: আমি পেসিমিস্টিক ধারণা থেকে কিছু যুক্তি দিয়েছি মাইনুল ভাই। আমি বলতে চাচ্ছি মানব উন্নয়ন সূচকের উন্নতি না করে নিয়মিত
খয়রাতি সাহায্য দিয়ে দেশের sastainable উন্নয়ন হবেনা। ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০২
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
সামাজিক নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন প্রসঙ্গে আপনার যুক্তিসমূহ ভালো লাগলো। তবু কোথায় যেন ঘাটতি আছে! পরবর্তি পর্বে পুষিয়ে দেবেন, আশা করছি! সেখানে নিজের কিছু অভিমত দেবার চেষ্টা করবো