নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সমসাময়িক কালে বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক নিয়ে অনেকে অনেক কথাই লিখছেন এই ব্যাপারে আমিও কিছু অনুভূতি টের পেলাম মগজে। নাটক ভালো হচ্ছে না, সব কিছু রসাতলে চলে যাচ্ছে, মানুষ ভারতীয় চ্যানেল এর দিকে ঝুঁকে পড়েছে, কত কত আক্ষেপ আমাদের ! আমাদের বর্তমান সময় এর টিভি নাটকের যে দুঃসময় চলছে তা নিয়ে আমি একমত। কিন্তু সংকটটা আসলে কোথায়, দোষটাই বা কার ! সংকটটা বোধকরি উদ্দেশ্য এবং ব্যবস্থাপনায়। অধিকাংশ নাটক দেখলেই মনে হয় নির্মাতা জানতেনই না তিনি কেন এটা নির্মাণ করলেন, কি বুঝে করলেন, কি দেখে করলেন। গল্প নির্বাচনের আগে হাজার বার ভাববার দরকার আছে আমি কেন এই গল্পটি নিয়েই কাজ করবো, এই গল্প আমাকে কী দেবে আর দর্শকই বা কী পাবে এখান থেকে? মানলাম দর্শক চায় বিনোদন। বিনোদন আসলে কি, এটা কি কেউ ভেবেছেন কখনও? বিনোদন হলো এমন কোনও কর্মকাণ্ড যা আপনার প্রাত্যহিক জীবনের ভাবনার ক্লান্তি দূর করে, প্রশান্তি দান করে এবং আগামীর কাজের শক্তি যোগায়। চাহিদা ভেদে বিনোদনের ধরনেও ভিন্নতা থাকে অনেক। সবই নির্বিবাদ সুস্থ কর্মকাণ্ড , যা সমাজ স্বীকৃত ।
ফেইসবুকে স্ট্যাটাস লিখতে লিখতে বন্ধুদের বাহবা পেয়ে একজন ভেবে বসল নাটক লিখে ফেলি, অমনি তিনি লিখে ফেললেন নাটকের গল্প! গল্পের গরুও গাছে উঠতে শুরু করল। কাহিনী বিন্যাস, সংলাপ, সব কিছু মিলিয়ে বোঝা যায় এদের কারোরই সাহিত্যপাঠের অভ্যাস নাই !
যে গল্পটিই দেখি মনে হয় এটি কি আদৌ আমাদের গল্প। ক্রমাগত হিন্দি অথবা ইংরেজি ছবির মতো ছবি বানানোর প্রবণতা আমাদেরকে নিঃস্ব করে ফেলছে। মানলাম অবাধ আকাশ সংস্কৃতির কারণে ভিনদেশী সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গের অনুপ্রবেশ এখন সময়ের দাবি। কিন্তু সেটা নিজস্বতা বিকিয়ে দিয়ে নিশ্চয়ই নয়।
অনেক রগরগে গল্প দেখি যা আমাদের সমাজের বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বেশি কিছু নয়, কিন্তু দেখানো হচ্ছে এটাই বাস্তবতা। গল্পের নায়কের মুখে নীতি-আদর্শের কথা যে, কতকাল শুনিনা, তার কোনও ঠিক নাই! ভাবখানা দেখলে মনে হয় বাস্তব জগতের তরুণ সমাজ নীতি বিবর্জিত ! বাস্তব প্রেক্ষাপটের তরুণ-তরুণী মানেই তামাশা প্রবণ,দায়িত্ব জ্ঞানহীন অগভীর কোন প্রজন্ম। বিনোদনের একমাত্র উদ্দেশ্য যেনও যেকোনও উপায়ে মানুষকে হাস্যরসের যোগান দেওয়া, অথবা অবৈধ যৌনাচারের ইঙ্গিতপূর্ণ সুড়সুড়ি দেওয়া। চরিত্র রুপায়ণের ক্ষেত্রে বাস্তবতার ছাপ রাখার নামে হবুচন্দ্র গবুচন্দ্র ধরনের ছেলে মেয়েকে ধরে এনে নায়ক-নায়িকা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদের অভিনয় কলার কোনও প্রশিক্ষণ নেই। ফলে উচ্চারণে জড়তা, অভিব্যক্তিতে আত্মবিশ্বাসের অভাব, চরিত্রে বিশেষত্ব না থাকার ঘটনা অহরহ ঘটছে।
একারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাটক আর নাটক থাকে না, অর্থহীন প্রলাপে পরিণত হয়। যেহেতু অভিনয় কলার কোনরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই দেশে অভিনয় শিল্পী হিসাবে দ্রুত প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়, তাই এই জাতীয় প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কাউকে খুব একটা আগ্রহী হতে দেখা যায় না। ফলে গুটিকতক চিন্তাশীল নির্মাতা একটা ঠিকঠাক চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়েন।
এবার আসি নাটকে ভাষার ব্যাবহার প্রসঙ্গে। এখন আর কারও অজানা নেই যে, গেল দশ বছর ধরে আমাদের টিভি নাটকে কথ্য ভাষার নামে একধরনের উদ্ভট ভাষা শৈলীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। নাটক দেখতে দেখতে চোখ বন্ধ করে যদি সেই সকল সংলাপ আপনি শোনার চেষ্টা করেন তখন আপনার মনে হবে অমার্জিত অশ্রাব্য কিছু আপনি শুনছেন। এখনও এই সংকট থেকে উত্তরণ পাওয়া যেত যদি টিভি চ্যানেলগুলো সুস্পষ্ট নীতিমালা মেনে চলত। গ্রেডিং পদ্ধতি থাকাটা খুবই জরুরি। তাহলে মান সম্পন্ন কাজ আর নিম্নমানের কাজ সহজেই আলাদা করা যেত।
©somewhere in net ltd.