নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম পর্ব http://bit.ly/1gVUCIp
সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে ছিল ঠগীরা, ব্যতিক্রম ছিল না বাংলাও। আরও ভাল করে বলতে গেলে, কলকাতার কালীঘাট ছিল সমস্ত ঠগীদের তীর্থক্ষেত্র। লুটের মাল থেকে কিছুটা অংশ সব সময় সরিয়ে রাখা হত কালীঘাটে নিবেদনের উদ্দেশ্যে।
এছাড়া বাংলার ঠগীরা ছিল বাকিদের থেকে আলাদা। কারণ তারা শিকার ধরত নদীপথে।তাদের অন্য ঠগীরা বলত পাঙ্গু। ফাঁস দেয়ার জন্য তারা রুমালের পাশাপাশি দড়িও ব্যবহার করত। আগেই আলোচনা করেছি, মানুষ হত্যা ছিল ঠগীদের পবিত্র ধর্মীয় আচার। তাই মৃতদেহ কবর দেয়ায় ছিল নানা আচার অনুষ্ঠান। কিন্তু বাংলার ঠগীদের এসবের বালাই ছিল না। তারা মৃতদেহ পানিতে ভাসিয়ে দিত। তাদের বিশ্বাস ছিল, বাকি কাজ মা কালী নিজেই করবেন। তারপরও বাংলার ঠগীরা ঠগীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কারণ, তারাও ঠগীদের নিজস্ব সাংকেতিক ভাষা "রামসী" ব্যবহার করত। তাদেরও দেবী ছিল মা কালী। আর প্রতিনিয়ত মাটির ঠগী মিশে যেত পানির ঠগীদের সাথে, নিপুণ দক্ষতায় এক সাথে খুন করত।
ঠগীরা সব সময় ছোট ছোট দলে বেড়িয়ে যেত। দলের সবচেয়ে বয়স্ক আর দক্ষ ঠগী হত দলনেতা। যখন তারা কোন টার্গেট ঠিক করত তখন দলনেতা দল থেকে দুই তিন জনকে টার্গেট এর উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য পাঠাত। রামসীতে এদের বলা হত তিলহাই।
তারপর মূলদল মিশে যেত টার্গেটের সাথে। কোন এক অসতর্ক মূহুর্তে দলের সরদার "ঝিরণি" অর্থাৎ খুন শুরু করার আদেশ দিতেন। এরপর মিনিট খানেকের মাঝে সব শেষ। আরও বিস্তারিত নাহয় বলব অন্য কোন দিন। শেষ করছি বুকুত জমাদার নামে এক দূধর্ষ ঠগীর জবানবন্দি থেকে কিছুটা অংশ নিয়ে -
"শরৎকালের কথা। আমরা পাঁচজন বেড়িয়েছি। আমি, ঠাকুরি, ধোকুল, পান্ডে আর মোকলাল। ঝাঁসি, ভিলসা, রোলি হয়ে আমরা ভূপাল চললাম। কিন্তু ভূপাল গেলাম না। শহর ডানে রেখে নর্মদা পার হলাম। চীপানেরে গাঁয়ের পাশে নদী, গাঁয়ের ধারে মস্ত পাকুড় গাছ। হঠাৎ চোখে পড়ল কিছুদূরে অনেক লোক জটলা পাকিয়ে আছে।
আমাদের একজন খবর নিয়ে এল, ওরাও আমাদের মতোই, দেবীর সন্তুষ্টির জন্য পথে নেমেছে। কিন্তু আমাদের মত ওরাও এখনো কোন শিকার পায় নি।
সে দলে প্রায় তিন কুড়ি । কিছু ছিল রোসন জমাদারের লোক, কিছু গুলাব খাঁয়ের, কিছু মাদারি শেখের, কিছু মুরলি ঠাকুর এর।
আমরাও জুটে গেলাম। নাগপুর আর জব্বলপুরের মাঝখানে পেলাম প্রথম শিকার, মুন্সী শেখের দল। সংখ্যায় তারা দু কুড়ির কিছু কম। মুন্সীর অনুমতি নিয়ে তাদের সাথে চলতে লাগলাম।
দুদিন পর খবর এল, সেপাই আসছে। সাথে গোরা সাহেব। শুনে ঘাবড়ে গেলাম, সিদ্ধান্ত হল, আজ রাতেই ঝিরণি উঠবে।
সন্ধ্যার দিকেই সেপাই চলে এল।
সন্ধ্যা হতেই সাদি খানকে মুন্সীর তাঁবুতে পাঠানো হল সাদি খান কে। সে ভাল সেতার বাজাতো, কারণ মুন্সীর বিবির গানবাজনা র শখ ছিল।
শুরু হল গান। আমরা মুন্সীর কোমড়ের তলোয়ারটা একটু দেখব বলে কথায় কথায় চেয়ে নিলাম। মুন্সীর বিবি আর ছেলেমেয়েরা তখন সেতারে মশগুল। এই সময় রোসন জমাদার ঝিরণি দিল। কি করে যেন মুন্সী মুহূর্তে সব বুঝে গেল। সে আমাদের ঠেলে ফেলে খুন খুন বলে দে ছুট। কিন্তু দু পা যাওয়ার আগেই তাকে শুইয়ে দেয়া হল।
মুন্সীর বিবি আর চাকরগুলো অবশ্য গলায় রুমাল ধরার আগ পর্যন্ত কিছু টের পায় নি।
এছাড়া যখন এসব হচ্ছিল তখন গুলাব খাঁয়ের লোকজন চেঁচিয়ে গান ধরেছিল, যাতে সিপাইরা টের না পায়। আমরাও মাঝেমধ্যে ফাঁক পেলে গাইছিলাম বৈ কি।
এছাড়া দুটো ঘোড়া ইচ্ছে করে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সেপাইদের তাঁবুর আশেপাশে কয়েকজন চেঁচামেচি করতে করতে তাদের পিছু ছোটাছুটি করছিল।
এই তালেগোলে সেপাইরা কিছু টেরই পায় নি। সেপাইদের কথায় মনে হল, একবার ফিরিঙ্গিয়ার দলের সাথে চার সেপাই আর এক ইংরেজি সাহেবের ঝিরণি দিয়েছিলাম। শুনবেন না কি সে ঘটনা? "
( বিঃদ্রঃ উল্লেখিত জবানবন্দিতে কোন কল্পিত অংশ নেই। পুরোটাই আদালতে ঠগীদের বিচার চলার সময় এক ঠগীর নিজ মুখে দেয়া জবানবন্দি।
** ফিরিঙ্গিয়া ছিল সমগ্র ভারতের সবচেয়ে দুধর্ষ আর হিংস্র ঠগী। হাজার হাজার খুন করা ঠগীদের মাঝেও সে ছিল কিংবদন্তী। তাকে ইংরেজরা কখনোই ধরতে পারে নি।
তাই শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা ফিরিঙ্গিয়ার মা ও স্ত্রীকে ধরে নিয়ে অত্যাচার চালায়। এখবর পেয়ে ফিরিঙ্গিয়া স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে। সে গল্প অন্যদিন বলব। তবে সে সত্যিই কোন সাদা মানুষকে খুন করেছিল কি না তার কোন ঐতিহাসিক দলিল নেই। তবে না করার সম্ভাবনাই বেশি )
২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১০
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: জানলাম !
৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৫
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল জিনিস জানলুম। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
আছিফুর রহমান বলেছেন: দারুন হয়েছে। আমার কাছে ঠগীরা উপমহাদেশের ভাইকিংস
৫| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০১
পাউডার বলেছেন:
ব্যাপক এডভেন্চারাস!
৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:২২
েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: ভেরী ইন্টারেস্টিং!!
৭| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৬
সোজা কথা বলেছেন: নতুন কিছু জানলাম।ঠগীদের কাহিনি চলতে থাকুক।
৮| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৯
শরবত বলেছেন: ভালো লিখেছেন। এর সম্পর্কে আমাদের জেমেস বন্ড ব্রুস্নান এর করা একটা মুভি আছে। নাম The Deceivers (1988) । সময় হলে দেখবেন আশারাখি। এখানে ইউটিউব এর একটা লিঙ্ক দিলাম
the decevers 1988
৯| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৫
মৃতু্চিন্তা বলেছেন: ভেরী ইন্টারেস্টিং!!
১০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৯
ফয়সাল হিমু বলেছেন: চমৎকার! এদের সম্পর্কে প্রথম পড়েছিলাম সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার একটা বই এ। প্রথম পর্বটা পড়া যাচ্ছেনা। ওটা পড়া গেলে আরও ভাল লাগত।
১১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৩
HHH বলেছেন: মারাত্মক!!!
অনেক অজানা রোমাঞ্চকর কাহিনী থাকার কথা। মাত্র একটা বলেছেন। আরো শুনতে চাই
১২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
বিদ্রহী মন বলেছেন: So interesting
১৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৫৪
সাকী শওকত বলেছেন: বিষয়টি অনেক উপভোগ করলাম , দারুন , অন্যরকম লাগছে।
১৪| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৯
মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: গল্পে ঠগীদের কথা পড়েছি। তথ্যবহুল পোস্ট দেখে ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা।
১৫| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩১
রুপালী সিংহ বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য। আগামী পর্বে আলোচনা করব কিভাবে একটা টিনএজ ছেলে বাপ দাদার হাত ধরে ঠগী হয়ে উঠত
১৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫
বটের ফল বলেছেন: বিষয় টি সমন্ধে বেশি কিছু জানা ছিলনা।
ভালো লাগলো।
+++++++++++++++++++++
১৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
ইছামতির তী্রে বলেছেন: ভয়ংকর সুন্দর! ঠগদের সমন্ধে নানা কথা শুনেছিলাম। বিস্তারিত জানা গেল। ফিরিঙ্গিয়া সম্মন্ধেও জানা গেল। চমত্কার।
আরো জানার ইচ্ছে প্রকাশ করলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩২
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ভেরী ইন্টারেস্টিং!!