নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনানন্দ রচনাবলি

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৪

"আলো-অন্ধকারে যাই—মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে;"
- জীবনানন্দ দাশ

নিজের প্রিয় সাহিত্যিকের ব্যাপারে কথা বলতে গেলে অনেক রঙ চড়িয়ে বলাটা অপরাধের কিছু নয়। তবে জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কথা বলার সময় আমি সাদামাটা স্বীকারোক্তি-ই করব। ছোটবেলায় আমি একটু কাঠখোট্টা বই পড়তে পছন্দ করতাম ঠিক, তবে ছন্দ-কাব্য-কবিতা নিয়ে বিশেষ অনুরোগ ছিল বলে মনে পড়ে না। নিঃসংকোচেই বলতে পারি, কবিতা পড়ে আমি তেমন আনন্দ পাইনি কখনও (রাবীন্দ্রিক ভাষায় বলতে গেলে, কাব্যে আমার বিশেষ অভিরুচি নেই)। অথবা ব্যাপারটাকে এভাবেও বলা যায়, কবিতার প্রকৃত রস আস্বাদনের মতো স্বাদগ্রন্থি আমার মস্তিষ্কে কখনও পরিপক্ক হয়ে ওঠেনি। অবশ্য, আমার যৎসামান্য লেখালেখির জীবনের শুরুটা হয়েছিল কবিতা দিয়েই। ক্লাস ফোরে পড়ার সময় দৈনিক জনকণ্ঠে আমার একটা কবিতা ছাপা হয়েছিল, তারপর স্কুল ম্যাগাজিন, দৈনিক যুগান্তর.... সে ইতিহাস আপাতত ধামাচাপা থাকুক!

আমার দুর্ভাগ্যই বলা যায় যে জীবনানন্দ দাশের সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্য বাংলা বইয়ে (আবার সৌভাগ্যও বলা যায়। কারণ, তার আগে জীবনান্দকে উপলব্ধি করার মতো যোগ্যতা ছিল- সেটা ভাবাও অপরাধ)। 'আবার আসিব ফিরে' পড়ার সময় প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করেছিলাম, 'ও আচ্ছা! কবিতা এমনও হয়!' হুমায়ূন আহমেদের হিমু যেমন কল্পনার ময়ুরাক্ষী নদীর তীরে বসে শীতল হাওয়ায় গা জুড়োত, আমার কাছে জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি নদী অনেকটা সেভাবেই ধরা দিয়েছিল তখন। মোহাচ্ছন্ন হয়ে ভাবতাম, শঙ্খচিল, ভোরের কাক অথবা কিশোরীর ঘুঙুর পরা লালপেয়ে হাঁস হয়ে আকাশে উড়ছি। শিমুলের ডালে বসা লক্ষ্মীপেঁচার ডাক শুনতে শুনতে মিশে যাচ্ছি ধবল বকের ভিড়ে।

আমার কবিতার স্বাদটা সেবারই বদলে গেল। এদিক ওদিক হাতড়ে জীবনানন্দের বই খুঁজে খুঁজে পড়া শুরু করলাম। রাতের বেলা বিছানায় এপাশ ওপাশ ফিরতে ফিরতে অবাক হয়ে ভাবতাম, নিতান্তই গোবেচারা একজন শিক্ষক অথবা ব্যর্থ সাংবাদিক কী রহস্যময়ভাবে হাজার বছর ধরে পথ হেঁটেছেন পৃথিবীর বুকে। নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে হাত বাড়িয়ে ডেকেছেন সুরঞ্জনাকে। এক নক্ষত্রের নিচে বসবাসরত সঙ্গিনীকে খুঁজতে খুঁজতে ক্ষয় হয়েছে পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা। তাইতো আবার ফিরে আসতে চেয়েছেন কোনো এক শীতের রাতে, একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে। অথচ এতসব রহস্য কতোই না অভিমানে ট্রামের তলায় চাপা পড়ে বিলীন হয়ে গিয়েছিল কোন এক কার্তিকের পঞ্চম দিবসে, দুই থোকা ডাব হাতে!

জীবনানন্দ দাশকে শুধু কবি হিসেবে আখ্যায়িত করলে বরং বাংলা সাহিত্যকেই অপমান করা হয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পূর্ণাংগ, অসমাপ্ত কতো গল্প-উপন্যাস আছে, তার সঠিক হিসাব আদৌ কি কারও জানা আছে? গত কয়েক বছরে যখনই একটা-আধটা গল্প বা উপন্যাস পেয়েছি, ছুঁয়ে দেখেছি মরুভূমির পথিকের মতো। আর হাত বাড়িয়ে খুঁজেছি আরও নতুন কিছু। আমাদের দেশের কয়েকটি প্রকাশনী থেকে জীবনানন্দ দাশের কবিতাসমগ্র, উপন্যাস সমগ্র এমনকি অগ্রন্থিত রচনাসংকলন-ও পাওয়া যায়। সেগুলোর বেশির ভাগই নেড়েচেড়ে দেখেছি, কিনেছি, পড়েছি। তবুও আফসোস থেকে গেছে, ইশ! যদি কোনো গোছানো পূর্ণাংগ রচনাবলি থাকতো!

গত মাসে ছয় খণ্ড রচনাবলি প্রকাশের ঘোষণা দেখার পর থেকে অস্থির হয়ে ছিলাম। এগারো বছরের অপেক্ষা, সহজ কথা নয়! ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হওয়া এই রচনাবলির কথা আমার জানা ছিল না; জানা ছিল না যে তা আবার ২০১২ সালে বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখিয়েছে। ২০১৭ তে এসে তা আবার নতুন আঙ্গিকে পুনর্মুদ্রণ হতে যাচ্ছে; নতুন মুদ্রণে ৭২০০ টাকা মুদ্রিত মূল্যের এই সীমন্ত হীরা অল্পকিছু সহযোগী পাঠক ২৪০০ টাকায় পাবেন- এই কথা জানার পর কী আর অপেক্ষা করা যায়?

ঐতিহ্য Oitijjhya প্রকাশনীকে আক্ষরিক অর্থেই বাংলা প্রকাশনার গৌরব বলা সাজে। বই নির্বাচন, বিষয়বস্তু, পৃষ্ঠার মান, বাঁধাই - সবদিক থেকেই তারা প্রশংসার দাবিদার। তবে কিছুটা হলেও শঙ্কিত ছিলাম, যথাসভব কম দামে ছয় খন্ডের এই রচনাবলির পৃষ্ঠার মান কী তাদের নিয়মিত প্রকাশনার মতো উন্নত মানের হবে? মনকাড়া প্রচ্ছদ হলেও কী তার বাঁধাই অথবা ছাপার মান ঠিকঠাক পাব? ছয় খন্ড রচনাবলির ভেতরের সাহিত্যকে আবার এলোমেলো ভাবে সাজানো হলো না তো?

অবশেষে, প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বইয়ের প্রাপ্যতার ঘোষণা এলো। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিনাক্লেশে হোম ডেলিভারি হবে জেনেও নিজেকে সামলাতে পারলাম না। একরকম ছুটে গিয়েই কাঁটাবন বিক্রয় কেন্দ্র থেকে নিজের বাক্সটা বুঝে এনেছি আজ দুপুরে।
কাঁপা কাঁপা হাতে শক্ত কার্ডবোর্ডের বাক্স খোলার পর ছয় খন্ডের যে অমূল্য রতন বেরোলো তার প্রশংসার ভাষা আমার জানা নেই। জীবনানন্দ দাশ বেঁচে থাকলে তিনি নিজেই বোধহয় এর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারতেন। ঐতিহ্যের সেই চিরচেনা মজবুত বাঁধাই, ঈষৎ ঘোলাটে অথবা হলুদাভ সাদা উন্নত মানের কাগজ, আর ঝকঝকে ছাপার অক্ষর! স্বর্ণোভাণ্ডে অমৃত ধারণ বললে অত্যুক্তি হয় না!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ঐতিহ্য প্রকাশনীকে ধন্যবাদ
অসাধ্য সাধন করার জন্য,
যদিও দীর্ঘ সময় ..............

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩২

করুণাধারা বলেছেন: জীবনানন্দ দাশ আমার প্রিয় কবি। কিন্তু তিনি গল্প উপন্যাস লিখেছেন জানতাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.