নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কানাই তুমি খেড় খেলাও কেনে?

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ২:০৯

হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট বলতে আপনি কী বোঝেন?

আমার ধারণা, এই বিশেষ টার্ম চোখে পড়ার সাথে সাথে ৮০-৯০ শতাংশ মানুষের মনে নাৎসি বাহিনী/ রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট/ ক্লোনিং/ স্ল্যাশার মুভির দৃশ্যের মতো কাটাছেড়া/ টর্চার - এই ব্যাপারগুলোর কথা চলে আসে। কিন্তু হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট বলতে কী মুখ্যভাবে এই ব্যাপারগুলোকেই বোঝানো উচিত? আমার মনে হয় না।

ফিকশন/ সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্টের ধারণা থেকে বের হয়ে আসুন। আসলে হিউম্যান এক্সপেরিমেন্টের সবচেয়ে বড় উদাহরণ আপনি, আমি, আলি এক্সপ্রেসের জ্যাক মা, আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প, রামপুরা ব্রিজের কাদের পাগলা, মহাখালির ইউনুস ফকির; পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ। বাস্তব জগতে পা দেয়ার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে আপনি বিশাল বিশাল এক্সপেরিমেন্টের গিনিপিগ হিসেবে ভূমিকা পালন করেন নিজের অজান্তেই।

বিশ্বাস হচ্ছে না? একটু ভালো করে ভাবুন- স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, অফিস- যেসব ইন্সটিটিউট এর সাথে আপনি ইনভলভড, প্রতিক্ষেত্রেই আপনি সেখানে নানারকম যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে থাকেন। সেখানে এচিভমেন্ট থাকে, ফেইলিউর থাকে, স্ট্রাগল থাকে; সেই সাথে থাকে নীতি নির্ধারক, যারা নিত্যনতুন পলিসির মাধ্যমে আপনাকে কন্ট্রোল করেন। আবার তারা নিজেরাও কিন্তু কন্ট্রোলড হচ্ছেন সিস্টেমের গ্যাড়াকলেই।

ইন্সটিটিউটকে পাশ কাটিয়ে পার্সোনাল/সোশাল লাইফের দিকে আসা যাক। আপনার প্রতিটা ইমোশন, বন্ডিং, কমিউনিটি বিহেভিয়ার, রিলিজিয়াস ভিউ, লজিক, এন্টি লজিক, হাউজহোল্ড ম্যানার- সবকিছুই কিন্তু আপনাকে আলাদা একজন মানুষ হিসেবে ডিফাইন করে। নিজেকে এই "স্বতন্ত্র মানুষ" হিসেবে দেখানোর জন্য আপনি নিজেকে ভাঙেন, গড়েন; আফসোস করেন, অনুতপ্ত হন, পরিতৃপ্ত হন - এই প্রত্যেকটা ধাপে আপনি নিজেই নিজের এক্সপেরিমেন্টের সবচেয়ে বড় গিনিপিগ। বেশি ঘাটাতে গেলে ব্যাপারটা একটু জটিল হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু বাস্তবতা যেন কীসের মতো তিতা?

জটিলতা থেকে সরে আসি। সহজ টপিক হিসেবে মানবিক সম্পর্কের হিসেব-নিকেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ধরি, আপনি একজন আটাশ বছর বয়স্ক বিবাহিত পুরুষ। বাবার কাছে আপনি সন্তান, নিজের সন্তানের কাছে বাবা, স্ত্রীর কাছে স্বামী, ভাইয়ের কাছে ভাই, বন্ধুর কাছে বন্ধু, কলিগের কাছে কলিগ, অধীনস্থের কাছে উচ্চপদস্থ, উচ্চপদস্থের কাছে অধীনস্থ। মোট কথা সমাজের একশ রকম শ্রেণিতে আপনার অস্তিত্ব একশ রকম, অথচ মানুষ হিসেবে আপনি একজন। এই প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজেকে প্রেজেন্ট করা কী নিজেকে এক্সপেরিমেন্টাল সাবজেক্ট হিসেবে স্টাবলিশ করা নয়? ভেবে দেখুন।

ভরা পূর্ণিমার রাতে রাজার কুমার সিদ্ধার্থ ঘর ছেড়ে বেডিয়ে পড়ে; সিড ব্যারেট বুদ হয়ে থাকে লাইসার্জিক এসিড ডাইইথিলামাইডে; আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মুখের ভেতর আশ্রয় নেয় পরম বন্ধু শটগান, ছিটকে বেরিয়ে আসে থকথকে গ্রে/হোয়াইট ম্যাটার - কোনটাকে এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে অস্বীকার করবেন?

রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনীতি, ধর্মীয় অনুশাসন, রীতিনীতি, স সংস্কৃতি-সভ্যতা প্রতিনিয়ত আপনাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে যাচ্ছে৷ টিভি খুলুন, রাস্তায় আশেপাশে তাকান, ইউটিউব চালান, এমনকি পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটে ঢু মারুন- চারদিক থেকে হাজার রকমের বিজ্ঞাপন। প্রতিক্ষেত্রেই আপনি ব্রেইন ওয়াশড হচ্ছেন। রাধুনি তেল বাছাইকৃত সরিষা দিয়ে বানানো, আবার সুরেষ তেলের ঝাজ সবচেয়ে বেশি - দুই ব্যাপারেই আপনি কনফিউজড। হালকা করে দেখার মতো ব্যাপার? কী মনে হয়?

মিডিয়া থেকে শুরু করে ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স- সবকিছু আপনাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে, করতেই থাকে। আপনি মেনে নেন, কারণ আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে বুঝিয়ে দেয়- এটাই সিস্টেম। অথচ এই সিস্টেম বলতে আপনি যেই ব্যাপারটাকে ভেবে নিচ্ছেন, সে-ই আপনাকে ক্রীতদাস বানিয়ে রেখে দিচ্ছে।

আপনি টার্গেট সেট করেন, এচিভমেন্ট এর জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে এগোতে চান। সাফল্য আসার পর কী হয়? থেমে থাকেন, শতভাগ আত্মতুষ্টির দেখা মেলে? না। একটার পর একটা টার্গেট ফিক্স করে আপনি ছুটতে থাকেন। রেসের ঘোড়া হোক অথবা মোটো জিপির বাইক- একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে সে থামতে জানে। আপনি কিন্তু জানেন না, নির্দিষ্ট জায়গা বলতে আপনার/আমার জীবনে কিছু নেই। এই এক্সপেরিমেন্টও আমরা প্রতি বেলায় করে যাই নির্দ্বিধায়, এক জীবনে অসংখ্যবার।

আপনার জন্ম ছিল বিবাহিত এক দম্পতির এক্সপেরিমেন্টের ফসল; যারা সেই দাম্পত্য জীবনকে এডপ্ট করে নিয়েছিল এক্সপেরিমেন্ট করেই। আবার জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা শারীরিক চাহিদা মেটাতেও অসংখ্য পদ্ধতি, এক্সপেরিমেন্ট। প্রতিবার যেন নতুন করে চ্যালেঞ্জ।

মৃত্যু কী- এই নিয়ে আমরা সাধারণত ভাবি না, আবার ভাবতে গিয়ে উত্তর পাই না। এই দুই কনফ্লিক্টের মাঝে ব্যালেন্স করতে গিয়ে একদিন আমরা হুট করে মরে যাই। কোন পদ্ধতিতে সৎকার করা যায়, কীভাবে মমি বানানো যায় থেকে শুরু করে কোন কাঠের কফিন টেকসই বেশি, কোন পাত্র ছাই জমাতে সহায়ক- এই এক্সপেরিমেন্টও চলে এসেছে সৃষ্টির শুরু থেকে
আবার মৃতদেহ নিয়ে কাটাছেড়া, জিনোম স্টাডি, রোগের প্রকৃতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে প্রতিষেধক আবিস্কার - সবকিছুই এক্সপেরিমেন্ট। মরণোত্তর দেহ দান করতে চান? আপনার চোখ দিয়ে দেখবে নতুন কোন গিনিপিগ, আপনার হার্ট ব্লাড পাম্প করবে নতুন কোন টেস্ট সাবজেক্টের শরীর জুড়ে। তথাকথিত "সিস্টেম" অথবা প্রকৃতি দ্বারা পরিচালিত নতুন কোন এক্সপেরিমেন্ট!

"কানাই তুমি খেড় খেলাও কেনে?
রঙ্গে রঙ্গিলা কানাই, কানাই তুমি খেড় খেলাও কেনে?"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ২:২২

রাজীব নুর বলেছেন: শিরোনামঃ কানাই তুমি খেড় খেলাও কেনে?
সম্ভবত শব্দটা খেইড় হবে।

২| ২৮ শে মে, ২০২০ ভোর ৬:১৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: পড়লাম কিন্ত মুল ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.