নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Wasiful Gofur Abir\n\nFacebook ID: Wasif Abir

দ্যা বান্দর

দ্যা বান্দর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তি

১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

[Disclaimer: গল্পের সব চরিত্র, ঘটনা ইত্যাদি কাল্পনিক। এগুলোর সাথে বাস্তব জীবিত বা মৃত ব্যক্তি, ঘটনা ইত্যাদির মিল খোঁজা পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত বলে বিবেচিত হবে। এজন্য লেখক কোনমতেই দায়ী নন।



আমি মনে করি গল্প কাল্পনিক হলেও কোন পরিস্থিতি, স্থান বা শ্রেণীর ক্লিশে বর্ণনা দিতে গেলে বাস্তবতার সাথে তার সামঞ্জস্য বজায় রাখাটা লেখকের দায়িত্ব। কারণ পাঠক কোন না কোনভাবে গল্পের বর্ণনায় প্রভাবিত হয়। আমাকে গল্পটার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই এরকম বর্ণনার জন্য বই, পত্রিকায় পড়ার পর কল্পনায় যে চিত্র ভাসে তার উপর নির্ভর করতে হয়েছে। তাই কেউ এ সংক্রান্ত কোন ভুল খুঁজে পেলে দয়া করে নির্দ্বিধায় জানিয়ে উপকৃত করবেন।]



শেষ ফোঁড়টা টেনে ফুলটার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল সুমি। কাপড়ের ওপর সুতোর ফুল- সুমির বিশ্বাসই হতে চায় না এইমাত্র এটা নিজ হাতে করল। কিশোর সংশোধনালয়ে আসার পর বুটিক ক্লাসগুলোই সবচেয়ে ভাল লাগে তার- যদিও প্রশিক্ষিকা যথেষ্ট সুবিধার না। সেলাইয়ের ব্যস্ততা তাকে সেই রাতটার কথা ভুলে থাকতে সাহায্য করে- যে রাতে আপা রক্তের ছিট লাগা চেহারা আর ছুরি নিয়ে তার ঘুম ভাঙিয়েছিল।



এই ‘আপা’ তার সহোদরা না, যে বাড়িতে সুমি কাজ করত তার মনিবকন্যা। ঘুম জড়ানো চোখে আপার রক্তমাখা চেহারা আর ছুরি দেখে যতটা না অবাক হয়েছিল, তার বেশি অবাক হল যখন শুনল আরও রক্ত তাকে পরিষ্কার করতে হবে। কাহিনী কী? আপা কি মুরগি জবাই করেছে? নাকি দুই দিন ধরে বিরক্ত করে আসা সেই ইঁদুরটাকে মারতে পেরেছে? মনে একগাদা প্রশ্ন নিয়ে সুমি দেখতে পেল কোন মুরগি, ইঁদুর না- খোদ পরাক্রমশালী খালু-খালাম্মার রক্তাক্ত নিথর দেহ মেঝেতে লুটিয়ে আছে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কোনমতে সে রক্ত মোছা শুরু করল। ওদিকে কানে আসছে ভাইয়া (মনিবপুত্র, আপার ছোটভাই) বাথরুমে আটকা পড়ে চেঁচাচ্ছে।



রক্ত মুছতে মুছতে ভয় কেটে গেল, আপা তার কোন ক্ষতি করবে বলে মনে হয় না। অনেকদিন ধরেই আপার সাথে খালু-খালাম্মার কী নিয়ে যেন ঝামেলা হচ্ছিল। মেয়ের কী তেজ রে বাবা! সমস্যাটা আসলে কী নিয়ে এখনও ঠিকমত বোঝে না সুমি। পাশের বাড়ির রহীমা জিজ্ঞেস করে করে ত্যক্ত করে ফেলেছে। থালা-বাসন ধুতে ধুতে শুধু চেঁচামেচির আওয়াজ শুনত সুমি। সমস্যাটা কী এমন পর্যায়ে গেল যে নিজের মা-বাপকে খুনই করে ফেলতে হবে!



ভয়ের জায়গা দখল করল আক্রোশ আর আনন্দ। চুল মুঠিতে নিয়ে হ্যাঁচকা টান, চোখে তারা দেখানো থাপ্পর, শ্বাস বন্ধ করা কিল- যেগুলোকে সে এতদিন মুরুব্বির শাসন গণ্য করে নিজেকে প্রবোধ দিত, এখন হঠা‌ৎ সেগুলোকে বরং অবিচার হিসেবে মানতেই মন চাচ্ছে। এই রক্তের ধারা যেন তার মনের কোন সুপ্ত জিঘাংসাকেই তৃপ্ত করছে। মনে কোত্থেকে যেন এল হঠাৎ আনন্দের জোয়ার, দ্বিগুণ উৎসাহে রক্ত মুছতে থাকল। আর ভয় কীসের! এখন তো তার মুক্তি।



চুল মুঠিতে নিয়ে হ্যাঁচকা টান, চোখে তারা দেখানো থাপ্পর, শ্বাস বন্ধ করা কিল থেকে মুক্তি।



রাতে আধঘন্টা হিন্দী সিরিয়ালের লোভে সারাদিন একটানা কাজ থেকে মুক্তি।



মনিব-পরিবার যখন দাওয়াতে যায়, তখন একা একা খালি বাড়িতে থাকার ভয় থেকে মুক্তি।



মনের কথা বলার মানুষের অভাব থেকে মুক্তি।



প্রতি ঈদে আম্মা-বা’জানের সাথে দেখা হবে কিনা- অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি।



আম্মা-বা’জানের কথা মনে হতেই বুকটা হু হু করে উঠল তার। গেল ঈদে যখন গ্রামের বাড়ি যাবার সুযোগ পেয়েছিল তখনই দেখা হয়েছিল। দেখেছিল অসুস্থ শরীর নিয়েই কীভাবে মা ঘরের সব কাজ সামলাচ্ছেন, ছোট ভাইবোনদের দেখে রাখছেন। বুবুর বিয়ে হবার পর থেকে সব কাজ মায়ের ওপর। যথাসাধ্য সাহায্য করেছিল সে সেবার। তারপর আঙুলের কড়ে গুণছিল আবার ঈদ আসতে কত দেরি।



এবার আর বাধা নেই। আপা, তার ভয়ংকর বন্ধু আর ভাইয়ার সাথে সিএনজিতে যেতে যেতে মুখে রাতের ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা যেন মুক্তির বার্তা বয়ে আনছিল।



কিন্তু এই মুক্তির কামনা হোঁচট খেল যখন আপা জানাল সুমি এখনই যেতে পারবে না। আজকের রাতটা কোনমতে কাটাতে হবে সিএনজিওয়ালার বাসায়। এরপর সব যেন ফাস্ট ফরোয়ার্ডের মত এগিয়ে গেল- সিনএজিওয়ালা-পত্নীর প্রবল আপত্তির মুখে কোনমতে রাত্রিযাপন, সকালে পুলিশের হঠাৎ আগমন, কারাবাস, সবশেষে এই সংশোধনালয়ে আসা। মুক্তির কামনা আবার হোঁচট খেল- বড় ধাক্কা।



পুলিশকন্যা আপা আর কাজের মেয়ে সুমিকে একই কাতারে নিয়ে আসল সংশোধনালয় । দুজন একই রকম বিছানায় শোয়, একই সাথে খায় আর একই কাজ করে। তারপরও আপা নিজের ক্লাস ধরে রাখতে চায় তার পোশাকে-আশাকে, সুমির উপর খবরদারি করে আর তার আত্মীয়-স্বজনের নিয়মিত আসা-যাওয়ায়। এদিকে সুমির তরফ থেকে কারও কোন খোঁজ-খবর নেই।



আপাকে পরবর্তীতে সংশোধনালয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলে হাফ ছেড়ে বাঁচে সুমি- এবার আর মাতব্বরি ফলানোর কেউ নেই। সেই সুযোগে অন্য বন্দীদের সাথে ভালভাবে কথা বলার সুযোগ পায় সে। কিন্তু তার তো এখানে চিরকাল থাকার ইচ্ছে নেই। আপা যতদিন ছিল সুমির ততদিন আশা ছিল আপার প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজন নিশ্চয়ই আপাকে ছাড়াতে পারবেন আর সেই সাথে সুমিরও একটা ব্যবস্থা হবে। সব কিছুর পরও সুমি আশার আলো জিইয়ে রাখে। প্রভাবশালী ধর্ষকের লিঙ্গ বটি দিয়ে কেটে জেলে আসা সাহসী জরিনার কথায় সে সাহস পায়। প্রতি শুক্রবারেই চাতক পাখির মত অপেক্ষা তার কখন বা’জান আসবে। তখনই ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে না পারুক অন্তত বুকে মাথা রেখে কাঁদতে তো পারবে। বা’জান কি তবে তাকেও দোষী মনে করছে? সে তো কোন দোষ করে নি, এ শাস্তি তো তার নয়।



প্রশিক্ষিকার চেঁচামেচিতে সম্বিৎ ফিরে সুমির, “হারামজাদী, ভাতারের চিন্তা করতাছিলা তুমি? তোমার লাে*র কথা ভাব? কাপড়টার এটা কী করলি তুই?”



সুমি অবাক হয়ে দেখে কাপড়টার উপর রক্ত দিয়ে ভরে ফেলেছে সে। ভাবতে ভাবতে কোন সময় আঙুল ফুটো করে ফেলেছে খেয়ালই করে নি সে। পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার সম্পর্কে অজ্ঞ প্রশিক্ষিকা তার খিস্তি-খেউড় চালিয়ে যেতে থাকে।

এমন সময় হঠা‌ৎ যেন ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন সুপারিনটেন্ডেন্ট আপা। হকচকিয়ে গেল প্রশিক্ষিকা। সুমির সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে আর সেজন্য ডাকতে এসেছেন তিনি। বা’জান তবে শেষমেষ এসেছেন! সুমির আশার প্রদীপ আবারও দেদীপ্যমান হয়ে উঠল।



না, বা’জান আসে নি। বরং কেতাদুরস্ত পোশাকের একজন চেয়ারে বসে আছেন। তার মুখোমুখি আরেকটা চেয়ার। লোকটা সুমিকে তাতে বসতে ইশারা করলেন। এ জাতীয় লোক সুমির বরাবরই ভয়ের উৎস। কিন্তু লোকটার দয়ার্দ্র চোখজোড়া তাকে অভয় দিচ্ছিল। চেয়ারে বসার পর লোকটা জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছ, সুমি?”



সুমির চোখ অশ্রুতে ভরে গেল। এই প্রথম এ শ্রেণীর কোন মানুষ তাকে “তুমি” বলে সম্বোধন করল। লোকটার যেন কথা বলানোর আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সব দ্বিধা টুটে গেল সুমির। এক নাগাড়ে সব সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাল তাকে, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব খুলে বলল, সে যে নির্দোষ- কথাটার উপর যথেষ্ট জোর দিল সে। যথেষ্ট মন দিয়েই সব শুনেছেন ভদ্রলোক- নিশ্চিত হল সুমি তার শোনার ভঙ্গী দেখেই।



ভদ্রলোক চেয়ারে বসেই সোজা হলেন- এর মানে কিছু বলবেন এবার। একটু কেশে তিনি বললেন, “তুমি কোন চিন্তা কর না সুমি। সব কিছুর সমাধানই করতে পারব আমরা। কিন্তু আমি এসেছি তোমাকে একটা খারাপ খবর দিতে।” একটু থেমে ভদ্রলোক আবার শুরু করলেন, “তুমি জান তোমার মা অসুস্থ। তোমার বাবা তাকে ঢাকায় এনেছিলেন চিকিৎসার জন্য। সুমি, তোমাকে শক্ত হতে হবে। সুমি, তোমার মায়ের ক্যান্সার হয়েছে।”



পুরো দুনিয়া স্তব্ধ হয়ে যায় সুমির। শিক্ষার দৌড় বেশি দূর না হলেও এই রোগের নাম সে শুনেছে। মানুষ মারা যায় এ রোগে, চিকিৎসায় লাগে প্রচুর টাকা।



“সুমি, তোমার খালু-খালাম্মা বেঁচে থাকলে হয়ত একটা উপায় হত। তোমার বড় বোনের বিয়েতে উনারা সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি ভিন্ন। আমি ঐশীর আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলেছি। তারা তোমার মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিন্তু তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।”



“তোমাকে খুনের দায় নিতে হবে সুমি।”



সুমির দুনিয়াটা যেন একটু দুলে উঠল। চারপাশের সবকিছু যেন ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে হল ঘরের দেয়ালগুলো যেন তার দিকে চেপে আসছে। সুমির মন চাইল একটা চিৎকার দিয়ে সবকিছু উড়িয়ে দিতে, এই দেয়ালগুলো ভেঙ্গে-চুড়ে দিতে।



“আমি খুন করি নি”, আর্তনাদ বেরিয়ে এল সুমির গলা চিরে।



সাথে সাথে লোকটা স্প্রিংয়ের মত লাফিয়ে সুমির মুখ চেপে ধরল।



এরকম কিছু লোকটা আশা করে নি। যদিও এখানকার সবাইকেই ম্যানেজ করা আছে, তারপরও রিস্ক নেয়া যায় না। গেটের দারোয়ানসহ সবাইকেই ম্যানেজ করা হয়েছিল যেন মেয়েটাকে তার বাবার সাথে দেখা করতে না দেয়া হয়। এখন কেচে গণ্ডুষ হতে দেয়া যাবে না।



লোকটার শক্তিশালী বিরাট থাবা সুমির দমবন্ধ করে আনে, চোয়াল ভেঙ্গে দিতে চায়। সুমির আর চিৎকার করা হয় না, সবকিছু উড়িয়ে দেয়া হয় না, দেয়ালগুলো ভেঙ্গে-চুড়ে দেয়া হয় না।



মুক্তি মেলে না।



মুক্তি মেলে না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: গল্পটা ভালো লাগল।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৫৩

দ্যা বান্দর বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৩:০৩

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:

লেখার জন্য ধন্যবাদ।

সুন্দর গল্প।

ঈদের আগাম শুভেচ্ছা....!

ঈদ মোবারক ! !

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৩৫

দ্যা বান্দর বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাকেও ঈদ মোবারক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.